কালের আয়নায়-একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের আমলনামা by আবদুল গাফফ্ার চৌধুরী
গোলাম আযম তার রাজনৈতিক জীবনে কখনও জেলে যাননি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানি হানাদারদের কোলাবরেটর। বিএনপির শাসনামলে তিনি কয়েক দিনের জন্য প্রোটেকটিভ কাস্টডিতে জামাই আদরে ছিলেন। কিন্তু তাতে কি? সারাদেশের শ্রদ্ধেয় প্রয়াত জননেতা মওলানা ভাসানীর 'মজলুম জননেতা' খেতাবটি চুরি করে তিনি নিজের নামের আগে বসান এবং তার চেলারা তাকে মজলুম জননেতা আখ্যা দিয়ে স্লোগানে ব্যবহার করতে
থাকেন। এটা নিয়ে গণ-প্রতিবাদ শুরু হলে তিনি খেতাবটি ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য হন বাংলাদেশের গত চলি্লশ বছরের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের পর আমার মনে এই ধারণাটি বদ্ধমূল হয়েছে যে, জামায়াতে ইসলামী দলটি ইসলামের পবিত্র নামটি ব্যবহার করেছে বটে, আসলে তারা ইসলামের আদর্শে বিশ্বাসী নয়। তাদের বিশ্বাস, ত্রিশের দশকের জার্মানির নাৎসি দর্শনে। ইসলাম বলে, 'অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য বলা জিহাদ।' আর নাৎসিরা বলে, 'একটি মিথ্যাকে একশ'বার বলে সত্যে পরিণত করা যায়।' নাৎসিদের মিথ্যাচারিতার এই দর্শনের প্রবক্তা ছিলেন হিটলারের ঘনিষ্ঠ অনুচর গোয়েবলস। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষে নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের যখন বিচারের সম্মুখীন করা হয় তখন গোয়েবলস আত্মহত্যা করে বিচার এবং শাস্তি এড়িয়েছিলেন।
সম্প্রতি জার্মানিতে গিয়েছিলাম। আগেও বহুবার গেছি। কিন্তু এবার জার্মানিতে স্বল্পকালীন অবস্থানের সময়েও গোয়েবলস সম্পর্কে একটু জানাশোনার ইচ্ছে হয়েছিল। আমি কোথায় যেন গোয়েবলস ও নাৎসি-দর্শনের সঙ্গে গোলাম আযম এবং জামায়াতি রাজনীতির একটা মিল পাই। মিথ্যাচারে গোলাম আযম সম্ভবত গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছেন। আর জামায়াতের সন্ত্রাসী রাজনীতির মডেলও সম্ভবত জার্মানির ত্রিশের দশকের ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টি।
আমাকে কে একজন বলেছিলেন, জার্মান দার্শনিক নিৎসের দর্শন বা সুপারম্যান থিয়োরির অনুসরণে হিটলার নাৎসি পার্টি গড়ে তুলেছিলেন। এর কোনো প্রমাণ আমি পাইনি। এবারেও জার্মানিতে গিয়ে জার্মান বন্ধুদের মুখে বিপরীত কথা শুনেছি, নাৎসিরা নিৎসের অনুসারী ছিল, এর কোনো প্রমাণ তারা পাননি। বাংলাদেশেও জামায়াতিরা নিজেদের 'ইসলামের সোল এজেন্ট' বলে দাবি করে। তাদের হিংস্র এবং হত্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে কিছু বলা হলে তারা 'ইসলামের ওপর হামলা হয়েছে' বলে চিৎকার শুরু করেন।
কিন্তু জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদীর বিভিন্ন বই ও কিতাব, এমনকি তার পবিত্র কোরআনের তফসির যারা ভালোভাবে পড়েছেন, তারা জানেন, পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের কী ধরনের মনগড়া ব্যাখ্যা মওদুদী দিয়েছেন এবং সূরা বাকারা থেকে শুরু করে বহু সূরা সম্পর্কে কী ধরনের ধৃষ্ট উক্তি করেছেন। রসূলের (দ.) সাহাবা এবং পরবর্তীকালের কোনো কোনো খলিফা সম্পর্কেও তিনি অবমাননাকর উক্তি করেছেন। বস্তুত ইসলাম ধর্মের নাম ভাঙিয়ে তিনি তার রাজনৈতিক অশুভ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একটি পাল্টা পলিটিক্যাল ইসলাম খাড়া করার চেষ্টা করেছিলেন। হিটলার যেমন একটি ঘাতক ফ্যাসিবাদী দল গঠনের জন্য ন্যাশনাল সোশ্যালিজমের খোলস গ্রহণ করেছিলেন, মওদুদী তেমনি একই মডেলে ইসলাম ধর্মের খোলসে একটি ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী দল গঠন করে রেখে গেছেন।
জামায়াতি-রাজনীতি সম্পর্কে মোহমুক্ত এক সাবেক জামায়াতি বুদ্ধিজীবী (বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন) আমাকে বলেছেন, 'হজরত মোহাম্মদ (দ.) যে মানবতাবাদী ধর্ম প্রচার করে গেছেন, তাকে আমরা বলতে পারি দ্বীনে মোহাম্মদী। কিন্তু মওদুদী এবং তার চেলা গোলাম আযমেরা যে ধর্ম প্রচার করেন তা দ্বীনে মওদুদী। আল্লাহর মনোনীত এবং রসূলের (দ.) দ্বারা প্রচারিত পবিত্র ইসলামের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
জামায়াতিরা দাবি করে, আহমদীয়া জামায়াতের লোকেরা মুসলমান নয়। তারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করলে তাদের শাস্তি দিতে হবে। এ কথা মওদুদী জামায়াত সম্পর্কেই বেশি প্রযোজ্য। আহমদীয়াদের সঙ্গে জামায়াতিদের পার্থক্য এই যে, আহমদীয়রা ইসলামের মূলনীতিতে বিশ্বাসী এবং সারাবিশ্বে ইসলামের শান্তি ও কল্যাণের বাণী প্রচার করে। অন্যদিকে জামায়াতিরা ইসলামের মৌলিক নীতিতে (শান্তি, সাম্য ও সহাবস্থান) বিশ্বাসী নয়। তারা অশান্তি, সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড দ্বারা যে 'ইসলামী শাসন' প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তা পলিটিক্যাল ইসলামের মধ্যযুগীয় বর্বর শাসন। যার আলামত আমরা কিছু দেখেছি আফগানিস্তানে তালেবানি শাসনে। এই পলিটিক্যাল ইসলামের জন্ম মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও স্বৈরাচারী সৌদি রাজতন্ত্রের অর্থে এবং স্বার্থে।
ইসলাম বলে, 'তিনিই প্রকৃত মুসলমান, যার জিহ্বা এবং হাত থেকে আরেকজন মুসলমান নিরাপদ।' জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা মওদুদীর হাত পাঞ্জাবের ৫০ হাজার মুসলমানের (কাদিয়ানিবিরোধী দাঙ্গা) রক্তে রঞ্জিত। আর তার বাংলাদেশি চেলা গোলাম আযম গংয়ের হাত ত্রিশ লাখ বাঙালি এবং অসংখ্য বাঙালি বুদ্ধিজীবীর রক্তে রাঙা। ইসলামের সত্যবাদিতা নয়, ফ্যাসিস্টদের মিথ্যাচার এদের ধর্ম। গোলাম আযম বয়সের ভারে জর্জরিত, মাঝে মাঝে বলেন, তিনি স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়েও তিনি অনবরত মিথ্যাচার করে চলেছেন। এই সেদিন বলেছেন, তাকে কোনোদিন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী বলা হয়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে সমর্থন দানের পর থেকে তাকে যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে। গোয়েবলস যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তাহলে গোলাম আযমের কথাবার্তা শুনলে লজ্জা পেতেন।
গোলাম আযমকে যদি ২০০১ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী না বলা হয়ে থাকে, তাহলে নব্বই দশকের গোড়ায় শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের সময় ঘাতক, দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যে গণআদালত গঠিত হয় তাতে তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল কী অপরাধে? জনগণ কেন তার ছবি রাস্তায় ফেলে সক্রোধে, ঘৃণার সঙ্গে পায়ে মাড়াতে শুরু করেছিল? এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারই বা কেন তাকে জনগণের ক্রোধ থেকে বাঁচাতে তার নাগরিকত্ব সম্পর্কিত মামলার সময় তাকে প্রোটেকটিভ কাস্টডিতে (ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে) নিয়েছিল?
গোলাম আযমের এই সময়কার ভণ্ডামির একটা উদাহরণ দিই। আলেমের বেশধারী এই ভণ্ডকে (গোলাম আযম আলেম নন, ইংরেজি শিক্ষিত) খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের আমলে গ্রেফতার করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে নেওয়ার সময় তিনি জেলগেটে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন, 'আমি আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে মাথা নত করি না। জেলগেট পুরো খুলে দেওয়া হোক। নইলে মাথা নিচু করে ওই গেটের ছোট দরজা দিয়ে আমি জেলে ঢুকব না।' ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে কোনো কোনো বন্দিকে ঢোকানোর সময় নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো গেট খুলে দেওয়া হয় না। একটা নিচু অংশ খুলে দেওয়া হয়। তা দিয়ে গ্রেফতারকৃত বন্দিকে ঢুকতে হয়।
গোলাম আযম অসাধারণ ধূর্ত। ওই অর্ধোন্মুক্ত নিচু দরজা দিয়ে না ঢুকে জেলগেটের বাইরে জমায়েত জনতার কাছ থেকে সস্তা বাহবা পেতে চেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, তার মতো বুজর্গ চেহারার ব্যক্তিকে দেখে পুলিশ তার জন্য সসম্মানে জেলের পুরো গেট খুলে দেবে। পুলিশ তার দাবি মানেনি। বলেছে, তিনি স্বেচ্ছায় জেলের কানুন মেনে জেলে না ঢুকলে তাকে পুলিশ পাঁজাকোলা করে জেলে ঢোকাবে। অমনি গোলাম আযমের সব বীরত্ব উবে যায়। তিনি কুর্নিশের ভঙ্গিতে মাথা নত করে জেলে ঢুকতে বাধ্য হয়েছিলেন।
মিথ্যাচারের মতো শঠতাতেও গোলাম আযমের জুড়ি মেলা ভার। তিনি কিছুকাল 'ভাষাসৈনিক' খেতাবটি ধারণ করেছিলেন। আসল তথ্য এই যে, ১৯৪৮-৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাকে প্রাদেশিক সরকারের কাজকর্ম করার ভাষা করার দাবিতে (তখনও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ওঠেনি) আন্দোলন শুরু হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সেই আন্দোলনে এগিয়ে যায়। সলিমুল্লা হল ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান চৌধুরীর (পরে বিচারপতি হয়েছিলেন) নেতৃত্বে একটি ছাত্র প্রতিনিধি দল তখনকার প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের কাছে ভাষাসংক্রান্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি স্মারকলিপি দিতে যান। সলিমুল্লা হল ছাত্র ইউনিয়নের এবং ওই প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য হিসেবে গোলাম আযম দলেবলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। এই হচ্ছে গোলাম আযমের ভাষা-সংগ্রাম।
এরপর করাচিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'বাংলা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে একদিনের জন্যও যুক্ত হওয়া ছিল তার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল।' ঠেলার নাম বাবাজি। এই গোলাম আযমই পরে বাংলাদেশের মানুষকে অজ্ঞ ও মূর্খ মনে করে নিজেকে 'ভাষা সংগ্রামী' বলে দাবি করেন এবং তার জামায়াতি চেলারা 'ভাষা সংগ্রামী গোলাম আযম জিন্দাবাদ' বলে স্লোগান দিতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, জামায়াতিরা হালে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবস পালন করতে শুরু করেছে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আগের দিনও যারা মুক্তিযোদ্ধা হত্যায় রত ছিল। অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে বধ্যভূমিতে হত্যা করেছে, স্বাধীন বাংলার পতাকা পুড়িয়েছে এবং সেই পতাকাধারীদের হত্যা করেছে, তারা এখন সেই বিজয় দিবস পালন করছে; দাবি করছে তারা যুদ্ধাপরাধী নয়। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো এখন তারা পাকিস্তানের ৯০ হাজার যুদ্ধাবন্দিদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দেখাতে চাইছে।
এটা জামায়াতিদের যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে এক ধরনের স্বীকারোক্তি। তারা এখন স্বীকার করছে, '৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তবে এই অপরাধের জন্য তাদের আগে পাকিস্তানের ১৯৫ 'যুদ্ধাপরাধীকে' বিচার করতে হবে। যুদ্ধাপরাধী এবং যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে পার্থক্য কি তা জামায়াতের দ্বিতীয় সারির নেতারাও না জানেন, তা নয়। তবু তারা অনবরত মিথ্যাচার করে চলেছেন। ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিজয় দিবস পালনের নামে সভা ডেকে এই মিথ্যা প্রচার করছেন। গোয়েবলসের মতো ভাবছেন, একটি মিথ্যাকে শতবার বলে সত্য করে ফেলবেন।
১৯৫ পাকিস্তানি যদি যুদ্ধাপরাধী হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের জামায়াতিরা যে তাদের যুদ্ধাপরাধের সহযোগী (হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী নিধনসহ) হিসেবে নিজেরাও যুদ্ধাপরাধী এ কথাটি চাপা দেওয়ার অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিচার এড়াতে চাইছেন। এই যুদ্ধাপরাধীদের নেতা গোলাম আযম বলছেন, তিনি যুদ্ধাপরাধী নন। তিনি যদি যুদ্ধাপরাধী না হবেন, তাহলে '৭১ সালের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পরাজিত হওয়ার পরে পলাতক পাকিস্তানি সেনা ও সেনা অফিসারদের সঙ্গে তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন কেন? আর স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার সাহস না দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কেন সেনাশাসকদের কৃপায় পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন?
যুদ্ধাপরাধী ও যুদ্ধবন্দির মধ্যে পার্থক্য এবং দেশি যুদ্ধাপরাধীরা কেন বিদেশি যুদ্ধাপরাধীদের চাইতেও বড় অপরাধী এবং এই অপরাধীদেরই আগে বিচার হওয়া কেন উচিত এবং এই দুই শ্রেণীর অপরাধীর বিচার প্রক্রিয়ায় পার্থক্য কোথায় এ সম্পর্কে জামায়াতিদের মিথ্যা প্রচার নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করব। এখন গোলাম আযমের মতো শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ভণ্ড এবং মানবতার শত্রুর আমলনামা নিয়ে আলোচনাটা শেষ করি।
গোলাম আযম তার রাজনৈতিক জীবনে কখনও জেলে যাননি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানি হানাদারদের কোলাবরেটর। বিএনপির শাসনামলে তিনি কয়েক দিনের জন্য প্রোটেকটিভ কাস্টডিতে জামাই আদরে ছিলেন। কিন্তু তাতে কি? সারাদেশের শ্রদ্ধেয় প্রয়াত জননেতা মওলানা ভাসানীর 'মজলুম জননেতা' খেতাবটি চুরি করে তিনি নিজের নামের আগে বসান এবং তার চেলারা তাকে মজলুম জননেতা আখ্যা দিয়ে স্লোগানে ব্যবহার করতে থাকেন। এটা নিয়ে গণ-প্রতিবাদ শুরু হলে তিনি খেতাবটি ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য হন।
'৭১-এর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের আমলনামা এত দীর্ঘ যে তা একদিনের আলোচনায় শেষ করা সম্ভব নয়। আমাকে তাই এই লেখার আরেকটা কিস্তি লিখতে হবে। তিনি যে শুধু দেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তাই নয়, তিনি তার 'রাজনৈতিক পিতা' এবং সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা আবদুর রহিমের সঙ্গে যে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তার ইতিহাস আরও মর্মান্তিক।
(শেষাংশ আগামী শনিবার)
লন্ডন ২৩ ডিসেম্বর ২০১১, শুক্রবার
সম্প্রতি জার্মানিতে গিয়েছিলাম। আগেও বহুবার গেছি। কিন্তু এবার জার্মানিতে স্বল্পকালীন অবস্থানের সময়েও গোয়েবলস সম্পর্কে একটু জানাশোনার ইচ্ছে হয়েছিল। আমি কোথায় যেন গোয়েবলস ও নাৎসি-দর্শনের সঙ্গে গোলাম আযম এবং জামায়াতি রাজনীতির একটা মিল পাই। মিথ্যাচারে গোলাম আযম সম্ভবত গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছেন। আর জামায়াতের সন্ত্রাসী রাজনীতির মডেলও সম্ভবত জার্মানির ত্রিশের দশকের ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টি।
আমাকে কে একজন বলেছিলেন, জার্মান দার্শনিক নিৎসের দর্শন বা সুপারম্যান থিয়োরির অনুসরণে হিটলার নাৎসি পার্টি গড়ে তুলেছিলেন। এর কোনো প্রমাণ আমি পাইনি। এবারেও জার্মানিতে গিয়ে জার্মান বন্ধুদের মুখে বিপরীত কথা শুনেছি, নাৎসিরা নিৎসের অনুসারী ছিল, এর কোনো প্রমাণ তারা পাননি। বাংলাদেশেও জামায়াতিরা নিজেদের 'ইসলামের সোল এজেন্ট' বলে দাবি করে। তাদের হিংস্র এবং হত্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে কিছু বলা হলে তারা 'ইসলামের ওপর হামলা হয়েছে' বলে চিৎকার শুরু করেন।
কিন্তু জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদীর বিভিন্ন বই ও কিতাব, এমনকি তার পবিত্র কোরআনের তফসির যারা ভালোভাবে পড়েছেন, তারা জানেন, পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের কী ধরনের মনগড়া ব্যাখ্যা মওদুদী দিয়েছেন এবং সূরা বাকারা থেকে শুরু করে বহু সূরা সম্পর্কে কী ধরনের ধৃষ্ট উক্তি করেছেন। রসূলের (দ.) সাহাবা এবং পরবর্তীকালের কোনো কোনো খলিফা সম্পর্কেও তিনি অবমাননাকর উক্তি করেছেন। বস্তুত ইসলাম ধর্মের নাম ভাঙিয়ে তিনি তার রাজনৈতিক অশুভ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একটি পাল্টা পলিটিক্যাল ইসলাম খাড়া করার চেষ্টা করেছিলেন। হিটলার যেমন একটি ঘাতক ফ্যাসিবাদী দল গঠনের জন্য ন্যাশনাল সোশ্যালিজমের খোলস গ্রহণ করেছিলেন, মওদুদী তেমনি একই মডেলে ইসলাম ধর্মের খোলসে একটি ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী দল গঠন করে রেখে গেছেন।
জামায়াতি-রাজনীতি সম্পর্কে মোহমুক্ত এক সাবেক জামায়াতি বুদ্ধিজীবী (বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন) আমাকে বলেছেন, 'হজরত মোহাম্মদ (দ.) যে মানবতাবাদী ধর্ম প্রচার করে গেছেন, তাকে আমরা বলতে পারি দ্বীনে মোহাম্মদী। কিন্তু মওদুদী এবং তার চেলা গোলাম আযমেরা যে ধর্ম প্রচার করেন তা দ্বীনে মওদুদী। আল্লাহর মনোনীত এবং রসূলের (দ.) দ্বারা প্রচারিত পবিত্র ইসলামের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
জামায়াতিরা দাবি করে, আহমদীয়া জামায়াতের লোকেরা মুসলমান নয়। তারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করলে তাদের শাস্তি দিতে হবে। এ কথা মওদুদী জামায়াত সম্পর্কেই বেশি প্রযোজ্য। আহমদীয়াদের সঙ্গে জামায়াতিদের পার্থক্য এই যে, আহমদীয়রা ইসলামের মূলনীতিতে বিশ্বাসী এবং সারাবিশ্বে ইসলামের শান্তি ও কল্যাণের বাণী প্রচার করে। অন্যদিকে জামায়াতিরা ইসলামের মৌলিক নীতিতে (শান্তি, সাম্য ও সহাবস্থান) বিশ্বাসী নয়। তারা অশান্তি, সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড দ্বারা যে 'ইসলামী শাসন' প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তা পলিটিক্যাল ইসলামের মধ্যযুগীয় বর্বর শাসন। যার আলামত আমরা কিছু দেখেছি আফগানিস্তানে তালেবানি শাসনে। এই পলিটিক্যাল ইসলামের জন্ম মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও স্বৈরাচারী সৌদি রাজতন্ত্রের অর্থে এবং স্বার্থে।
ইসলাম বলে, 'তিনিই প্রকৃত মুসলমান, যার জিহ্বা এবং হাত থেকে আরেকজন মুসলমান নিরাপদ।' জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা মওদুদীর হাত পাঞ্জাবের ৫০ হাজার মুসলমানের (কাদিয়ানিবিরোধী দাঙ্গা) রক্তে রঞ্জিত। আর তার বাংলাদেশি চেলা গোলাম আযম গংয়ের হাত ত্রিশ লাখ বাঙালি এবং অসংখ্য বাঙালি বুদ্ধিজীবীর রক্তে রাঙা। ইসলামের সত্যবাদিতা নয়, ফ্যাসিস্টদের মিথ্যাচার এদের ধর্ম। গোলাম আযম বয়সের ভারে জর্জরিত, মাঝে মাঝে বলেন, তিনি স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়েও তিনি অনবরত মিথ্যাচার করে চলেছেন। এই সেদিন বলেছেন, তাকে কোনোদিন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী বলা হয়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে সমর্থন দানের পর থেকে তাকে যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে। গোয়েবলস যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তাহলে গোলাম আযমের কথাবার্তা শুনলে লজ্জা পেতেন।
গোলাম আযমকে যদি ২০০১ সালের আগে যুদ্ধাপরাধী না বলা হয়ে থাকে, তাহলে নব্বই দশকের গোড়ায় শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের সময় ঘাতক, দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যে গণআদালত গঠিত হয় তাতে তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল কী অপরাধে? জনগণ কেন তার ছবি রাস্তায় ফেলে সক্রোধে, ঘৃণার সঙ্গে পায়ে মাড়াতে শুরু করেছিল? এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারই বা কেন তাকে জনগণের ক্রোধ থেকে বাঁচাতে তার নাগরিকত্ব সম্পর্কিত মামলার সময় তাকে প্রোটেকটিভ কাস্টডিতে (ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে) নিয়েছিল?
গোলাম আযমের এই সময়কার ভণ্ডামির একটা উদাহরণ দিই। আলেমের বেশধারী এই ভণ্ডকে (গোলাম আযম আলেম নন, ইংরেজি শিক্ষিত) খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের আমলে গ্রেফতার করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে নেওয়ার সময় তিনি জেলগেটে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছিলেন, 'আমি আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে মাথা নত করি না। জেলগেট পুরো খুলে দেওয়া হোক। নইলে মাথা নিচু করে ওই গেটের ছোট দরজা দিয়ে আমি জেলে ঢুকব না।' ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে কোনো কোনো বন্দিকে ঢোকানোর সময় নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো গেট খুলে দেওয়া হয় না। একটা নিচু অংশ খুলে দেওয়া হয়। তা দিয়ে গ্রেফতারকৃত বন্দিকে ঢুকতে হয়।
গোলাম আযম অসাধারণ ধূর্ত। ওই অর্ধোন্মুক্ত নিচু দরজা দিয়ে না ঢুকে জেলগেটের বাইরে জমায়েত জনতার কাছ থেকে সস্তা বাহবা পেতে চেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, তার মতো বুজর্গ চেহারার ব্যক্তিকে দেখে পুলিশ তার জন্য সসম্মানে জেলের পুরো গেট খুলে দেবে। পুলিশ তার দাবি মানেনি। বলেছে, তিনি স্বেচ্ছায় জেলের কানুন মেনে জেলে না ঢুকলে তাকে পুলিশ পাঁজাকোলা করে জেলে ঢোকাবে। অমনি গোলাম আযমের সব বীরত্ব উবে যায়। তিনি কুর্নিশের ভঙ্গিতে মাথা নত করে জেলে ঢুকতে বাধ্য হয়েছিলেন।
মিথ্যাচারের মতো শঠতাতেও গোলাম আযমের জুড়ি মেলা ভার। তিনি কিছুকাল 'ভাষাসৈনিক' খেতাবটি ধারণ করেছিলেন। আসল তথ্য এই যে, ১৯৪৮-৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাকে প্রাদেশিক সরকারের কাজকর্ম করার ভাষা করার দাবিতে (তখনও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি ওঠেনি) আন্দোলন শুরু হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সেই আন্দোলনে এগিয়ে যায়। সলিমুল্লা হল ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান চৌধুরীর (পরে বিচারপতি হয়েছিলেন) নেতৃত্বে একটি ছাত্র প্রতিনিধি দল তখনকার প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের কাছে ভাষাসংক্রান্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি স্মারকলিপি দিতে যান। সলিমুল্লা হল ছাত্র ইউনিয়নের এবং ওই প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য হিসেবে গোলাম আযম দলেবলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। এই হচ্ছে গোলাম আযমের ভাষা-সংগ্রাম।
এরপর করাচিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'বাংলা ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে একদিনের জন্যও যুক্ত হওয়া ছিল তার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল।' ঠেলার নাম বাবাজি। এই গোলাম আযমই পরে বাংলাদেশের মানুষকে অজ্ঞ ও মূর্খ মনে করে নিজেকে 'ভাষা সংগ্রামী' বলে দাবি করেন এবং তার জামায়াতি চেলারা 'ভাষা সংগ্রামী গোলাম আযম জিন্দাবাদ' বলে স্লোগান দিতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, জামায়াতিরা হালে ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবস পালন করতে শুরু করেছে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আগের দিনও যারা মুক্তিযোদ্ধা হত্যায় রত ছিল। অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে বধ্যভূমিতে হত্যা করেছে, স্বাধীন বাংলার পতাকা পুড়িয়েছে এবং সেই পতাকাধারীদের হত্যা করেছে, তারা এখন সেই বিজয় দিবস পালন করছে; দাবি করছে তারা যুদ্ধাপরাধী নয়। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো এখন তারা পাকিস্তানের ৯০ হাজার যুদ্ধাবন্দিদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দেখাতে চাইছে।
এটা জামায়াতিদের যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে এক ধরনের স্বীকারোক্তি। তারা এখন স্বীকার করছে, '৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তবে এই অপরাধের জন্য তাদের আগে পাকিস্তানের ১৯৫ 'যুদ্ধাপরাধীকে' বিচার করতে হবে। যুদ্ধাপরাধী এবং যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে পার্থক্য কি তা জামায়াতের দ্বিতীয় সারির নেতারাও না জানেন, তা নয়। তবু তারা অনবরত মিথ্যাচার করে চলেছেন। ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিজয় দিবস পালনের নামে সভা ডেকে এই মিথ্যা প্রচার করছেন। গোয়েবলসের মতো ভাবছেন, একটি মিথ্যাকে শতবার বলে সত্য করে ফেলবেন।
১৯৫ পাকিস্তানি যদি যুদ্ধাপরাধী হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের জামায়াতিরা যে তাদের যুদ্ধাপরাধের সহযোগী (হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী নিধনসহ) হিসেবে নিজেরাও যুদ্ধাপরাধী এ কথাটি চাপা দেওয়ার অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিচার এড়াতে চাইছেন। এই যুদ্ধাপরাধীদের নেতা গোলাম আযম বলছেন, তিনি যুদ্ধাপরাধী নন। তিনি যদি যুদ্ধাপরাধী না হবেন, তাহলে '৭১ সালের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পরাজিত হওয়ার পরে পলাতক পাকিস্তানি সেনা ও সেনা অফিসারদের সঙ্গে তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন কেন? আর স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার সাহস না দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কেন সেনাশাসকদের কৃপায় পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন?
যুদ্ধাপরাধী ও যুদ্ধবন্দির মধ্যে পার্থক্য এবং দেশি যুদ্ধাপরাধীরা কেন বিদেশি যুদ্ধাপরাধীদের চাইতেও বড় অপরাধী এবং এই অপরাধীদেরই আগে বিচার হওয়া কেন উচিত এবং এই দুই শ্রেণীর অপরাধীর বিচার প্রক্রিয়ায় পার্থক্য কোথায় এ সম্পর্কে জামায়াতিদের মিথ্যা প্রচার নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করব। এখন গোলাম আযমের মতো শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ভণ্ড এবং মানবতার শত্রুর আমলনামা নিয়ে আলোচনাটা শেষ করি।
গোলাম আযম তার রাজনৈতিক জীবনে কখনও জেলে যাননি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানি হানাদারদের কোলাবরেটর। বিএনপির শাসনামলে তিনি কয়েক দিনের জন্য প্রোটেকটিভ কাস্টডিতে জামাই আদরে ছিলেন। কিন্তু তাতে কি? সারাদেশের শ্রদ্ধেয় প্রয়াত জননেতা মওলানা ভাসানীর 'মজলুম জননেতা' খেতাবটি চুরি করে তিনি নিজের নামের আগে বসান এবং তার চেলারা তাকে মজলুম জননেতা আখ্যা দিয়ে স্লোগানে ব্যবহার করতে থাকেন। এটা নিয়ে গণ-প্রতিবাদ শুরু হলে তিনি খেতাবটি ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য হন।
'৭১-এর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের আমলনামা এত দীর্ঘ যে তা একদিনের আলোচনায় শেষ করা সম্ভব নয়। আমাকে তাই এই লেখার আরেকটা কিস্তি লিখতে হবে। তিনি যে শুধু দেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তাই নয়, তিনি তার 'রাজনৈতিক পিতা' এবং সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা আবদুর রহিমের সঙ্গে যে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তার ইতিহাস আরও মর্মান্তিক।
(শেষাংশ আগামী শনিবার)
লন্ডন ২৩ ডিসেম্বর ২০১১, শুক্রবার
No comments