নাম না উন্নয়ন? by বিএম সাজ্জাদ হোসেন
কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানের নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ক্ষেত্রকে নির্দিষ্ট করে জানার জন্য নাম বিশাল একটি ভূমিকা রাখে, যা সবাই একবাক্যে মানতে বাধ্য। একজন লেখক তার সৃষ্টিকে সুন্দর নামে নামকরণের মধ্য দিয়ে বর্ণনাহীন এক আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন। স্বয়ং প্রকৃতিও তার সৃষ্টিকে অনবদ্য নামকরণের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি করেছে। নামের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, একবার তা প্রচার হয়ে গেলে তার স্থায়িত্ব বেড়ে যায় কিংবা চিরস্থায়ী বলে গণ্য
হয়ে যায়। যেমন রিকশা। যিনি প্রথম এটির নামকরণ করেছিলেন, যদি তিনি এই যানবাহনটির নাম ক্রোকোডাইল রাখতেন, তাহলে আমরা এটিকে ক্রোকোডাইল বলেই ডাকতাম কিংবা চিনতাম।
আমরা প্রায়ই একটি কথা শুনি_ নাম কি মানুষকে বিখ্যাত বানায়! আমার এক শিক্ষককে এ প্রশ্নটির উত্তর জানার জন্য প্রশ্ন করায় তিনি বলেছিলেন, 'নাম কখনোই মানুষকে বিখ্যাত বানায় না। কর্মই মানুষকে তার নামকে সুপরিচিত করে তোলে। তবে সচেতন পরিবারের সন্তানরা বেশি সফল হন। এ জন্য এই পরিবারগুলো তাদের সন্তানের জন্য সুন্দর নাম রাখেন।' স্যারের কথা অনেকটাই সত্য। যেমন বিজ্ঞানী নিউটনের বাবার নাম ছিল নিউটন। নিউটনের জন্মের সময় তার বাবা বেঁচে ছিলেন না। কিন্তু নিউটনের মা তার বাবাকে খুবই ভালোবাসতেন। আর তাই তার ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই সন্তানের নাম রাখেন নিউটন। তিনি ছিলেন একজন সচেতন মা। এ জন্যই সন্তানকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে আর তার বাবাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই বিজ্ঞানী নিউটন সত্যি সত্যি তার বাবা নিউটনকে চিরজীবী করে গেছেন।
নাম বিষয়টা এমন, যা খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া পরিবর্তন করা হয় না। কখনও কখনও করা যায়ও না। মানুষের মুখে মুখে তা স্থায়িত্ব পেয়ে যায়। যেমন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম বদলে গেছে। কিন্তু মানুষ এখনও বদলাতে পারেনি। পিজি হাসপাতাল কিংবা নভোথিয়েটারের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। আজ চারদিকেই কেমন যেন নাম পরিবর্তনের মহোৎসব লক্ষ্য করা যায়। পাঁচ বছর পরপর স্বাভাবিক নিয়মে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে জনগণকে ভোটাধিকারের মাধ্যমে তাদের যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযোগ দেওয়া হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নির্বাচিত হওয়ার পরপরই যেন তাদের প্রথম দায়িত্ব হলো নাম পরিবর্তন করা। নাম পরিবর্তনের চেয়ে দেশের উন্নয়ন বেশি জরুরি। এসব বাক্য মিডিয়া প্রচার করলেও কর্তৃপক্ষের তা আমলে নেওয়ার সময় কোথায়! বর্তমান সরকার তার অন্যতম উদাহরণ। প্রশ্ন হলো, যদি এই সরকার আগামীতে না আসে। অন্য কোনো দল এই আসনে অধিষ্ঠিত হয়; তাহলে তারাও তো বর্তমান সরকারের মতো একই পথ অনুসরণ করতে পারে। এখন ভাবনার বিষয় হলো, তারা কি সেই আগের নামে ফিরে যাবে, নাকি আবার নতুন কোনো নাম নির্বাচন করবে?
বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের প্রচার ও প্রসারেও রয়েছে নামকরণের ভূমিকা। মাঝে মধ্যে নতুন পণ্য ও নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সুন্দর নাম আহ্বান করা হয়। সুন্দর নাম দিতে পারলে পুরস্কারও জেতা যায়। আমাদের দেশে এটি খুব বেশি প্রচলিত না হলেও পশ্চিমা বিশ্বে এটি তুমুল জনপ্রিয়।
পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া_ এটাই সত্য কথা। আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই, পরিবর্তনের ফলেই আজকের এই আধুনিক পৃথিবী রূপান্তর হয়েছে। তাই উপযুক্ত পরিবর্তন দরকার। পরিবর্তন দরকার আমাদের আচার-আচরণে। পরিবর্তন দরকার কাঠামোগত, নিয়মতান্ত্রিক। 'নাম পরিবর্তন' কখনোই জরুরি হতে পারে না। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, জাতিগতভাবে আমরা দরিদ্র ও অবহেলিত একটি জনবহুল দেশ। নাম পরিবর্তনের পরিবর্তে সামাজিক পরিবর্তন আশু কাম্য। আর এদিকে সবার জোর দেওয়া উচিত। নইলে হয়তো একদিন বাংলাদেশের নামই হারিয়ে যাবে পরিবর্তনের স্রোতে।
sajjad_aiubbd@yahoo.com
আমরা প্রায়ই একটি কথা শুনি_ নাম কি মানুষকে বিখ্যাত বানায়! আমার এক শিক্ষককে এ প্রশ্নটির উত্তর জানার জন্য প্রশ্ন করায় তিনি বলেছিলেন, 'নাম কখনোই মানুষকে বিখ্যাত বানায় না। কর্মই মানুষকে তার নামকে সুপরিচিত করে তোলে। তবে সচেতন পরিবারের সন্তানরা বেশি সফল হন। এ জন্য এই পরিবারগুলো তাদের সন্তানের জন্য সুন্দর নাম রাখেন।' স্যারের কথা অনেকটাই সত্য। যেমন বিজ্ঞানী নিউটনের বাবার নাম ছিল নিউটন। নিউটনের জন্মের সময় তার বাবা বেঁচে ছিলেন না। কিন্তু নিউটনের মা তার বাবাকে খুবই ভালোবাসতেন। আর তাই তার ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই সন্তানের নাম রাখেন নিউটন। তিনি ছিলেন একজন সচেতন মা। এ জন্যই সন্তানকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে আর তার বাবাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই বিজ্ঞানী নিউটন সত্যি সত্যি তার বাবা নিউটনকে চিরজীবী করে গেছেন।
নাম বিষয়টা এমন, যা খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া পরিবর্তন করা হয় না। কখনও কখনও করা যায়ও না। মানুষের মুখে মুখে তা স্থায়িত্ব পেয়ে যায়। যেমন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম বদলে গেছে। কিন্তু মানুষ এখনও বদলাতে পারেনি। পিজি হাসপাতাল কিংবা নভোথিয়েটারের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। আজ চারদিকেই কেমন যেন নাম পরিবর্তনের মহোৎসব লক্ষ্য করা যায়। পাঁচ বছর পরপর স্বাভাবিক নিয়মে বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে জনগণকে ভোটাধিকারের মাধ্যমে তাদের যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযোগ দেওয়া হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নির্বাচিত হওয়ার পরপরই যেন তাদের প্রথম দায়িত্ব হলো নাম পরিবর্তন করা। নাম পরিবর্তনের চেয়ে দেশের উন্নয়ন বেশি জরুরি। এসব বাক্য মিডিয়া প্রচার করলেও কর্তৃপক্ষের তা আমলে নেওয়ার সময় কোথায়! বর্তমান সরকার তার অন্যতম উদাহরণ। প্রশ্ন হলো, যদি এই সরকার আগামীতে না আসে। অন্য কোনো দল এই আসনে অধিষ্ঠিত হয়; তাহলে তারাও তো বর্তমান সরকারের মতো একই পথ অনুসরণ করতে পারে। এখন ভাবনার বিষয় হলো, তারা কি সেই আগের নামে ফিরে যাবে, নাকি আবার নতুন কোনো নাম নির্বাচন করবে?
বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের প্রচার ও প্রসারেও রয়েছে নামকরণের ভূমিকা। মাঝে মধ্যে নতুন পণ্য ও নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সুন্দর নাম আহ্বান করা হয়। সুন্দর নাম দিতে পারলে পুরস্কারও জেতা যায়। আমাদের দেশে এটি খুব বেশি প্রচলিত না হলেও পশ্চিমা বিশ্বে এটি তুমুল জনপ্রিয়।
পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া_ এটাই সত্য কথা। আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই, পরিবর্তনের ফলেই আজকের এই আধুনিক পৃথিবী রূপান্তর হয়েছে। তাই উপযুক্ত পরিবর্তন দরকার। পরিবর্তন দরকার আমাদের আচার-আচরণে। পরিবর্তন দরকার কাঠামোগত, নিয়মতান্ত্রিক। 'নাম পরিবর্তন' কখনোই জরুরি হতে পারে না। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, জাতিগতভাবে আমরা দরিদ্র ও অবহেলিত একটি জনবহুল দেশ। নাম পরিবর্তনের পরিবর্তে সামাজিক পরিবর্তন আশু কাম্য। আর এদিকে সবার জোর দেওয়া উচিত। নইলে হয়তো একদিন বাংলাদেশের নামই হারিয়ে যাবে পরিবর্তনের স্রোতে।
sajjad_aiubbd@yahoo.com
No comments