কর দিতেই হচ্ছে মন্ত্রী-এমপিদের by ফারুক মেহেদী
চলতি অর্থবছরের ঘোষিত বাজেট ও অর্থ বিল অনুযায়ীই সব মন্ত্রী ও এমপিকে কর দিতে হবে। বাজেটে পাস হলেও আইন সংশোধন না হওয়ায় চলতি অর্থবছরে তাঁদের কাছ থেকে কর আদায় করা হবে না মর্মে গত বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংসদ সচিবালয়ে যে চিঠি দিয়েছিল গতকাল বৃহস্পতিবার তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এনবিআর ওই চিঠি প্রত্যাহার করায় অর্থ বিল অনুযায়ী মন্ত্রী-এমপিদের ওপর কর প্রযোজ্য হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন সংশোধনের অপেক্ষা না করে এরই মধ্যে তাঁর আয়কর রিটার্ন এবং প্রযোজ্য কর জমা দিয়েছেন। এদিকে, আগামী রবিবার ব্যক্তি করদাতার রিটার্ন জমার সময়সীমা শেষ হলেও বিশেষ অসুবিধা থাকলে আবেদন করে সময় বাড়িয়ে নিতে পারবেন করদাতারা। এনবিআর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রী-এমপিদের আয়ের ওপর কর দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে গতকাল রাতে এনবিআর চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অর্থ বিলেই মন্ত্রী-এমপিদের আয় থেকে কর আদায় করার কথা বলা আছে। আমরা পরিপত্রও জারি করেছি। তবে সংসদের অন্য একটি আইনে তাঁদেরকে করমুক্ত রাখার কথা থাকায় আমরা সংসদ সচিবালয়কে বলেছিলাম যাতে ওই আইনটি সংশোধন করা হয়। এতে বিভ্রান্তি কাটবে। তারা করেনি। না করলেও অর্থ বিল অনুযায়ীই কর দিতে হবে। এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আমরা সকলেই কর দেই। সুতরাং তাঁরাও কর দেবেন।'
এনবিআর সূত্রে আরো জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে জারি করা অর্থ বিলকে বিবেচনায় নিয়ে কর আদায়ে নিয়োজিত সংস্থা এনবিআর চাইলে প্রযোজ্য কর আদায় করতে পারে। এ কারণে মন্ত্রী-এমপিদের কাছ থেকে কর আদায়ের ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও এর আগের জারি করা কর আইনে তাঁদের রাষ্ট্রের সম্মানীয় নাগরিক বিবেচনায় কর অব্যাহতি বজায় থাকায় তা সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয় সংসদ সচিবালয়কে। একাধিকবার চিঠি দিয়েও সংসদ সচিবালয়ের কোনো উদ্যোগ না দেখে গত বুধবার এনবিআর আইন সংশোধন না হওয়ায় এবার মন্ত্রী-এমপিদের ওপর কর প্রযোজ্য হবে না মর্মে চিঠি দেয়। বাস্তবে চিঠির এ বক্তব্য ভুল হওয়ায় তা পর্যালোচনা করে এনবিআর গতকাল বিকেলে সংসদ সচিবালয়কে দেওয়া চিঠি প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে এখন থেকে মন্ত্রী-এমপিদের কাছ থেকে কর আদায়ে আর কোনো জটিলতা থাকছে না।
গতকাল সন্ধ্যায় এনবিআরের আয়কর নীতির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, আসলে বাজেটে যে অর্থ বিল জারি করা হয়েছে, সেটাই কর আদায়ের জন্য যথেষ্ট। তার পরও এনবিআরের পক্ষ থেকে সংসদ সচিবালয়কে মন্ত্রী-এমপিদের আয়করমুক্ত রাখার যে পৃথক আইন ছিল, তা সংশোধন করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়। তবে তাদেরকে লেখা চিঠিতে আইন সংশোধন না হলে এবার মন্ত্রী-এমপিদের কর প্রযোজ্য হবে না মর্মে লেখা তথ্যটি ভুল হওয়ায় তা আজ (গতকাল) বাতিল করা হয়েছে। এখন তাঁরা কর দিতে পারবেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নিজের আয়কর রিটার্ন এবং কর দিয়ে দিয়েছেন। তিনি আইন সংশোধনের অপেক্ষায় থাকেননি। কর বিভাগের জন্য এটা একটা উৎসাহব্যঞ্জক সংবাদ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চলতি অর্থবছরে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সব এমপির সরকারি আয় ও ভাতার ওপর করারোপ করে সরকার। এ তালিকায় বিচারপতিসহ সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন। তবে বিচারপতিদের আয়ের ওপর কর আরোপ বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক। রিটের ছয় মাস পর হাইকোর্ট বিচারপতিদের আয়ের ওপর কর দেওয়ার আদেশটি স্থগিত করে দেন। ফলে বিচারপতিদের সম্মানীর ওপর আপাতত কর প্রযোজ্য হচ্ছে না। তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর কর প্রযোজ্য হয়েছে এবং তাঁরা যথানিয়মে কর দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। আইন সংশোধনের যুক্তিতে এত দিন অমীমাংসিত ছিল মন্ত্রী-এমপিদের কর দেওয়ার বিষয়টি।
বিগত অর্থবছরগুলোয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপিদের করমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তবে বাজেটের আগে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সব নাগরিকের ওপর করারোপের যুক্তি হিসেবে রাষ্ট্রের শীর্ষ নির্বাহীদের ওপরও কর আরোপের প্রস্তাব দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের বাজেটে তাঁদের ওপর করারোপ করা হয়। এনবিআর সূত্র জানায়, রাজস্ব আয় বাড়াতে এবং নাগরিক বৈষম্য কমাতে এ ব্যাপারে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছিলেন। যার কারণে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজ হয়েছিল।
বর্তমানে কোনো ব্যক্তির বাৎসরিক আয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকার বেশি হলেই তাঁকে আয়কর দিতে হয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ওপর প্রযোজ্য কর প্রতি মাসে উৎসেই কেটে রাখা হবে। চলতি অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন জমার সময়সীমা আজ শেষ হলেও তা শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় করদাতাদের সুবিধার্থে এ সময়সীমা আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ব্যক্তি করদাতাদের ওই নির্দিষ্ট দিনেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। অন্যথায় তাঁদেরকে এককালীন এক হাজার টাকা এবং প্রতিদিনের জন্য ৫০ টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে। তবে নির্দিষ্ট সময় রিটার্ন জমা দিতে অসুবিধা হলে বিশেষ কারণের কথা সংশ্লিষ্ট কর অফিসে জানিয়ে সময় বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।
No comments