গণিতের জন্য... by এম শামসুর রহমান
আজ ২৯ সেপ্টেম্বর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল্লার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। আমার অগ্রজপ্রতিম গণিত অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক শহীদুল্লা গত বছর এই দিনে তার ঢাকার হাতিরপুল সেন্ট্রাল রোডের বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের (২০০৩ সাল) পর ক্রমেই তার শারীরিক ও মানসিক ক্ষয়িষ্ণুতা বেড়ে চলে এবং দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে এই সুন্দর ভুবনের মায়া কাটিয়ে পরপারে চলে গেলেন। তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা রেখে গেছেন। স্ত্রী অধ্যাপিকা যোবেদা আখতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন।
অধ্যাপক শহীদুল্লার কর্মজীবন যেন ছিল বহুমুখী। ছাত্র-শিক্ষক, অফিসার-কর্মচারী সবাই তাদের প্রিয়জন এ সুদর্শন শিক্ষকের শিষ্ট আচরণে মুগ্ধ হতেন। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ সমাজসেবকও। মানুষের সমস্যা নিরসনে, মানুষের কল্যাণে তিনি তার অকৃপণ সাহায্যহস্ত বাড়িয়ে দিতেন। আ ম ম শহীদুল্লার প্রথম চাকরিস্থল ছিল ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজ। এরপর চার দশক তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে অধ্যাপনা করেন। আশির দশকের প্রথমভাগে বিভাগের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। একজন সফল শিক্ষক হিসেবে তার নামডাক ছিল। তিনি স্নাতক পর্যায়ের গণিত বিষয়ক কয়েকটি পুস্তক প্রণেতা (সহ-গ্রন্থাকার পিকে ভট্টাচার্য)। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ গণিত সমিতির সম্পাদক (১৯৮৩-৮৫)। কখনও কখনও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ক্লাবের অন্যতম নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন। বাংলা ক্যালেন্ডার সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকার গঠিত টাস্কফোর্সের তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য। একজন স্পষ্টবাদীরূপে অধ্যাপক শহীদুল্লার বিশেষ পরিচিতি ছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ ছিল সোচ্চার। বক্তৃতা-বিবৃতিতেও তিনি ছিলেন পারঙ্গম।
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাট চুকিয়ে ১৯৭০-এর ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগে আমার যোগদান। তিনি তার বিভাগীয় কক্ষে আমার বসার ব্যবস্থা করে দেন। উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাজ্যে তার অবস্থানকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগরে আমার চলে আসা (১৯৭৫) সহযোগী অধ্যাপক পদে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের স্বাধীনতার সপক্ষে তিনি প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। বলা অত্যুক্তি হবে না, অধ্যাপক শহীদুল্লা একজন মানবতাবাদী ও সচেতন নাগরিক ছিলেন। এ মানুষটির প্রতি ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসা ছিল অগাধ, শ্রদ্ধা ছিল গভীর।
বাংলাদেশ গণিত সমিতির সভাপতি হিসেবে আমার কার্যকালে (২০০৮-০৯) সমিতি ১৯ জন বর্ষীয়ান গণিতবিদকে সম্মাননা প্রদান করে ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত এ মহতী ও প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। যেসব গণিতবিদ সম্মাননা গ্রহণ করেন অধ্যাপক শহীদুল্লা তাদের অন্যতম। অধ্যাপক শহীদুল্লার জীবন সংগ্রামে জয়ী হন। আর জয়ী হয়েছেন গণিতের জন্য ভালোবাসায় উজ্জীবিত কর্মের সাধনায়। শোকার্ত পরিবার-পরিজনকে জানাই আন্তরিক সমবেদনা। গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনে স্মরণ করি শিক্ষার মহান ব্রতে উৎসর্গীকৃত এ গণিতবিদকে।
অধ্যাপক এম শামসুর রহমান
সাবেক গণিত শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাট চুকিয়ে ১৯৭০-এর ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগে আমার যোগদান। তিনি তার বিভাগীয় কক্ষে আমার বসার ব্যবস্থা করে দেন। উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাজ্যে তার অবস্থানকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগরে আমার চলে আসা (১৯৭৫) সহযোগী অধ্যাপক পদে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের স্বাধীনতার সপক্ষে তিনি প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। বলা অত্যুক্তি হবে না, অধ্যাপক শহীদুল্লা একজন মানবতাবাদী ও সচেতন নাগরিক ছিলেন। এ মানুষটির প্রতি ছাত্রছাত্রীদের ভালোবাসা ছিল অগাধ, শ্রদ্ধা ছিল গভীর।
বাংলাদেশ গণিত সমিতির সভাপতি হিসেবে আমার কার্যকালে (২০০৮-০৯) সমিতি ১৯ জন বর্ষীয়ান গণিতবিদকে সম্মাননা প্রদান করে ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত এ মহতী ও প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। যেসব গণিতবিদ সম্মাননা গ্রহণ করেন অধ্যাপক শহীদুল্লা তাদের অন্যতম। অধ্যাপক শহীদুল্লার জীবন সংগ্রামে জয়ী হন। আর জয়ী হয়েছেন গণিতের জন্য ভালোবাসায় উজ্জীবিত কর্মের সাধনায়। শোকার্ত পরিবার-পরিজনকে জানাই আন্তরিক সমবেদনা। গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনে স্মরণ করি শিক্ষার মহান ব্রতে উৎসর্গীকৃত এ গণিতবিদকে।
অধ্যাপক এম শামসুর রহমান
সাবেক গণিত শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments