চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না পাকিস্তান
সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না পাকিস্তান। সর্বদলীয় নেতাদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি। পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নানা গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গিলানির আহ্বানে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ইসলামাবাদে এ সভা বসে। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অংশ নেন। সম্প্রতি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মার্কিন দূতাবাসে ও ন্যাটোর সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতাকে দায়ী করে।
তারা ইসলামী সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের জন্য পাকিস্তান সরকারকে চাপ দেয়। এমন অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ এ ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে সরকার। গিলানি তাঁর জোট সরকারের শরিক দল ও অন্য দলের নেতাদের সভায় আহ্বান করেন। সভার শুরুতে গিলানি তাঁর বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ পাকিস্তান নাকচ করছে। একই সঙ্গে তারা 'আরো ভূমিকা রাখতে হবে' বলে যে চাপ পাকিস্তানের ওপর দিয়ে আসছে, তা পাকিস্তান মানবে না বলেও জানান। গিলানির বক্তব্য স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয়। পাকিস্তান বরাবরই হাক্কানির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছে। হাক্কানিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালোতালিকাভুক্ত করার বিষয়ে চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেটা যদি করা হয় তবে সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পাকিস্তানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের বিষয়টি চলে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মার্কিন কর্মকর্তারা চাইছেন, পাকিস্তান যাতে হাক্কানির সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্কচ্ছেদ করে এবং সংগঠনটির সদস্যদের দমনে অভিযান শুরু করে। গিলানি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি আমাদের মর্মাহত করেছে। এতে চলমান সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে আমাদের ত্যাগ ও সাফল্যকে অস্বীকার করা হচ্ছে।' তিনি জানান, পাকিস্তান কখনোই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা থেকে লক্ষ্যচ্যুত হয়নি। পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটি অর্থপূর্ণ আলোচনার স্বার্থে সন্দেহের বশে কথাবার্তা বন্ধ করতে হবে। পাকিস্তানকে 'আরো বেশি করার' জন্য চাপ দেওয়া চলবে না। দোষারোপের এ খেলা বন্ধ এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রতি সবার সম্মান জানানো উচিত। আলোচনার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে আমাদের দরজা খোলা রয়েছে।' সভায় অন্যদের মধ্যে বিরোধীদলীয় নেতা নওয়াজ শরীফ, ইমরান খান ও তালেবানপন্থী ইসলামী দলের প্রধান মাওলানা ফজলুর রেহমান উপস্থিত ছিলেন। সভায় সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার। শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও অন্য মন্ত্রীদেরও বক্তব্য তুলে ধরার কথা রয়েছে বৈঠকে। সাংবাদিকরা জানান, চলমান পরিস্থিতিতে গোটা দেশ এই সভার দিকে তাকিয়ে আছে। জাতি আশা করছে, সর্বদলীয় নেতারা আলোচনার মাধ্যমে দেশের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন, যাতে দেশ স্বাধীনভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে।
No comments