নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনঃ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করুন
রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অনাস্থা ও সাংঘর্ষিক সম্পর্কের নানা বৃত্তান্ত এ দেশে সকলের জানা। এমন প্রেক্ষাপটে কোনো দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কি-না তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় তর্ক। তবে এ তর্ক অলীক বা কল্পনাপ্রসূত নয়_ অতীতে প্রশাসন ও সরকারের প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার বহু উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই দলীয় সরকারের অধীনে সংঘটিত যে কোনো নির্বাচনকেই নাগরিকরা বিশেষ নজরদারিতে রাখেন, স্বাভাবিক সন্দেহও পোষণ করেন। এমন নজরদারি ও সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন যত নির্বাচন আয়োজন করেছে তা নিয়ে বড় ধরনের সংশয় এ যাবৎ দেখা দেয়নি।
সংসদ নির্বাচনের পর বেশ কিছু আসনে উপনির্বাচন হয়েছে; চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা-ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনও আয়োজিত হয়েছে। কিছু সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়েছে বলেই অভিমত মিলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা পরাজয় বরণ করেছেন কিন্তু তাতে ধৈর্যহারা হননি তারা। কিছু নির্বাচনে হেরে অন্যগুলোতে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে যেনতেন উপায়ও অবলম্বন করা হয়নি। দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এমন উদাহরণ অতীতে দেখা যায়নি। ফলে অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন পৃথিবীর অপরাপর দেশের মতো এ দেশেও দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব। সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে, নিরপেক্ষ ও তৎপর কমিশনার নিয়োগ দিতে হবে এ কথাও বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। আগামী ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনের দিকে সকলের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে এমন একটি প্রেক্ষাপটে। সকলেই আশা করেন, রাজধানীর নিকটবর্তী এ সিটি করপোরেশনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা নিয়ে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে সফল করে তুলুক। কিন্তু নির্বাচনের আগে কিছু সংশয় ঘনীভূত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ নিয়ে অনেকের উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় আইন লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আছে সন্ত্রাস, সহিংসতা সৃষ্টির নানা আলামতও। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পারস্পরিক প্রতিযোগিতায়ও গৃহবিবাদের ইঙ্গিত স্পষ্ট। অতীতে নারায়ণগঞ্জ বহুবার বহুভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা তৈরি করে এ জনপদে ভীতির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এমন অভিযোগও বিস্তর। স্থানীয়দের কেউ কেউ সাংবাদিকদের বলেছেন, সেই পুরনো ভীতির প্রত্যাবর্তন ঘটেছে এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে। যদি এমন অনুভূতি সত্য হয়, তবে সরকারের উচিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু নয়_ জনপদটির শান্তি নিশ্চিত করার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। গৃহবিবাদ যদি রাস্তার বিবাদে পরিণত হয়, তবে নাগরিকদের শান্তি আরেক দফা বিঘি্নত হবে বলে আশঙ্কা আছে। আর নির্বাচন কমিশনের উচিত কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে যথাবিহিত ব্যবস্থা নেওয়া। এ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশন যে স্বাধীন তৎপরতা নিকট অতীতে দেখিয়েছে নারায়ণগঞ্জে তার ব্যতিক্রম ঘটলে কমিশনের ওপর শুধু নয়, সরকারের ওপরও মানুষের আস্থা কমে আসবে। সেক্ষেত্রে হয়তো আগামীর নির্বাচনগুলোকে কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হবে।
No comments