কার ভাগ্যের কী হাল আজ হবে তার ফাইনাল!
এবার বিপদ হলো। কী লিখব! এই কলামটি তো শুধুই খেলাসংক্রান্ত। গত দুই দিন খেলা ছিল না। থাকলে বিষয় পেতে অসুবিধা হয় না। নানা দিক, হরেক কথা, অনেক অনেক ঘটনার ছড়াছড়ি থাকে। সেসব দিয়ে কলামটিকে ভর-ভরাট করে ফেলা যায়। কিন্তু আজ সেসব দিক ফাঁকা।
এই লেখা যখন ছাপা হবে আজকের কাগজে, তখন সবাই এত দিনের অধীর অপেক্ষার সমাপ্তি দেখার জন্য তৈরি হতে থাকবে। আর একটি রাত জাগা, তার পরই সাঙ্গ হবে বিশ্বকাপ দেখার উৎকণ্ঠা আর আনন্দ। আবার শুরু হবে পরদিন থেকে দৈনন্দিনের একঘেয়ে সময়। চলবে জীবনসংগ্রামের পরিচিত অবস্থা-দুরবস্থাকে সামাল দিয়ে দিয়ে চলার দিন অতিবাহন। বিশ্বকাপ ফুটবল যে কদিন সব শ্রেণীর মানুষের বিনোদনের বিষয় হতে পেরেছিল, প্রণোদনা জোগাচ্ছিল আনন্দে ভাসার, তা দপ করে নিভে যাবে ফাইনাল খেলা সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে। বেশ কিছুদিন টিকে থাকবে শুধু স্মৃতি। আড্ডার আলাপে-তর্কে কখনোসখনো উঠে আসবে স্মৃতিচারণা।
স্মৃতিচারণা করতে গেলেই এবারের খেলায় সবচেয়ে বড় ব্লান্ডারকারী আর্জেন্টিনার সমর্থকদেরই মন খারাপ থাকবে বেশি। সম্ভাব্য অপ্রতিরোধ্য চ্যাম্পিয়ন বলে মনে মনে ধরে রাখা দলের জীবন-মরণ ম্যাচে অত বেশি গোলে হার একনিষ্ঠ সমর্থকদের শুধু মনই ভাঙেনি, সীমাহীন লজ্জাতেও ফেলেছে। বড় ব্যবধানে পরাজয় অন্তত এই দলের ব্যাপারে কেউ কোনো দিন ভাবেনি। ভাবার কোনো অবকাশই ছিল না। তুখোড় সব খেলোয়াড়, দারুণ ভালোবাসার কোচ, অসাধারণ মনোবল আর বিশ্বজুড়ে অসংখ্য সমর্থক যাদের সম্বল, তারা যে প্রায় উত্তর কোরিয়ার সাত গোলে হারার কাছাকাছি অবস্থায় পড়বে, এ ব্যাপারটি এত তাড়াতাড়ি হজম করা কঠিন বৈকি! চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ দূরেই থাক, তৃতীয় স্থানটি পেলেও সান্ত্বনা হিসেবে মানা যেত।
গতকাল রাতেই হয়ে যাওয়ার কথা (লিখছি শনিবার বিকেলে) তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলা। দুই হত্যোদম দল জার্মানি ও উরুগুয়ে খেলবে। হতোদ্যম হওয়ার কথা জার্মানিরই বেশি। কেননা ফাইনাল খেলে, চ্যাম্পিয়ন হয়ে এবার আসর শেষ করার আশা তাদেরও ছিল। সেদিক থেকে উরুগুয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত, নির্ভার। কারণ বড় দলগুলোর নাম-সুনামের তোড়ে তারা ভালো খেলার দল হিসেবে গণ্য হলেও কত দূর উঠবে বা উঠতে পারবে, তা নিয়ে আগে খুব ভাবনাচিন্তা হয়নি। শুরু হলো তখনই যখন ছোট-বড় দলগুলোকে নাকানিচুবানি খাইয়ে অনেক ওপরে উঠে এল ক্রমে ক্রমে।
অন্যদিকে জার্মান জনগণ, তাদের কিছু বিদেশি পাঁড় সমর্থক আর সেই সঙ্গে গোটা ইউরোপ নিশ্চয়ই চাইবে, অন্তত তৃতীয় স্থানটি যেন জার্মানির থাকে। আর উরুগুয়ে সমর্থন পাবে বাকি বিশ্বের। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া তো বটেই, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াও তা-ই করবে।
তবে কি, এই তৃতীয় স্থান নিয়ে আমার কোনো ভালো লাগা না-লাগা নেই। যাহা ‘বাহান্ন’ তাহাই ‘তেপ্পান্ন’। এ-হলেও যা, ও-হলেও তা। এটার অবস্থান নিয়ে কীই-বা এমন যায়-আসে! একদল হলেই হলো। তবে উরুগুয়ের জন্য তৃতীয় স্থানও উজ্জীবক হবে। তারা ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে পারবে নিজেদের এটাকে সঙ্গী করে।
যা-ই হোক, এবার ফাইনালের দিকে একটু তাকাই। কী হতে পারে? কে আরাধ্য কাপটি ঘরে নিয়ে যাবে? দুই দলই তো সমান বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। তার মানে লড়াইটাও সমানে সমান হওয়ার সম্ভাবনা।
দুই দলই ইউরোপীয়। পরস্পরের হাবভাব, ধরন-ধারণ, ভাবগতিক জানা। কে কীভাবে খেলবে, কে কাকে কীভাবে ঠেকাবে, তাও এ কয়দিনে স্টাডি করা হয়ে গেছে নিশ্চয়ই। অতএব খুব জমজমাট খেলা হবে বলেই মনে হচ্ছে। অবশ্য আমার এ ব্যাপারে যা মনে আসছে এবং মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না, তা হলো, এই ফাইনাল খেলার মজাটা আর বিশ্বকাপ পর্যায়ে থাকল না। যেকোনো একটি অন্য মহাদেশের দল থাকলে মনে হতো সত্যিকারের বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখছি। এখন যা হবে, তা যেন ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনাল। অতএব ফাইনাল দেখার জোশ অনেকটাই ফিকে।
এদিকে ঢাকায় টিভি-দর্শক ও সমর্থকদের মধ্যে যারা প্রথম থেকেই এই দুই দলের প্রতি অনুরক্ত তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দ্বিগুণ হয়েছে। ফাইনাল খেলা দেখার জন্য সাজ সাজ পড়ে গেছে ইতিমধ্যে। কে কার বাসায় গিয়ে খেলা দেখবে মহা আড্ডা জমিয়ে, কে কী খাবে, কে কাকে দাওয়াত দেবে—এসব খুব জোরেশোরে চলছে।
সবচেয়ে মজার দিক যেটি নজরে পড়ল, তা হলো পতাকা পুনঃস্থাপন। প্রথমদিকে ভরসা তেমন না পেয়ে এই দল দুটির পতাকা টাঙানো হয়েছিল খুব ছোটখাটো মাপের। এখন দেখলাম, সেসব সরিয়ে নতুন আর বড়সড় পতাকা টাঙানো হয়েছে। আগে যেগুলো নিচে কোনোরকমে টাঙানো হয়েছিল এবং বড় দলগুলোর, বিশেষ করে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানির বৃহৎ পতাকার আড়ালে প্রায় ঢাকা পড়ে ছিল, এখন সেগুলো দৃশ্যমান করতে উঁচুতে উঠিয়ে আনা হয়েছে।
এখন খেলা দেখার অপেক্ষা। আমার ধারণা, জরিপ করলে স্পেনের জয়ী হওয়ার দিকেই সমর্থন আসবে বেশি। বিশেষ করে সেদিনের খেলা দেখার পর স্পেনের প্রতি আস্থা বেড়ে গেছে অনেক। এ ব্যাপারে আমারও মনে মনে একটা ভাবনাই ভর করছে, যারা মহাপরাক্রমশালী একটি দলকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে, তারা সহজে ছেড়ে কথা কইবে না। ওদিকে হল্যান্ডেরও সবার মনোবল এখন তুঙ্গে। বিশ্বকাপ জেতার ব্যাপারে বহুবার কাছাকাছি এসেও হাতছাড়া হয়েছে। এবার তারা পিছলে না যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে, বলাই বাহুল্য। আর বিশ্বকাপটি শেষ পর্যন্ত দখলে পেলে যে কথাটি তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে তা হলো, ‘বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। পেয়েছি তোমায় বাছা খেলে আপ্রাণ।’
এই লেখা যখন ছাপা হবে আজকের কাগজে, তখন সবাই এত দিনের অধীর অপেক্ষার সমাপ্তি দেখার জন্য তৈরি হতে থাকবে। আর একটি রাত জাগা, তার পরই সাঙ্গ হবে বিশ্বকাপ দেখার উৎকণ্ঠা আর আনন্দ। আবার শুরু হবে পরদিন থেকে দৈনন্দিনের একঘেয়ে সময়। চলবে জীবনসংগ্রামের পরিচিত অবস্থা-দুরবস্থাকে সামাল দিয়ে দিয়ে চলার দিন অতিবাহন। বিশ্বকাপ ফুটবল যে কদিন সব শ্রেণীর মানুষের বিনোদনের বিষয় হতে পেরেছিল, প্রণোদনা জোগাচ্ছিল আনন্দে ভাসার, তা দপ করে নিভে যাবে ফাইনাল খেলা সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে। বেশ কিছুদিন টিকে থাকবে শুধু স্মৃতি। আড্ডার আলাপে-তর্কে কখনোসখনো উঠে আসবে স্মৃতিচারণা।
স্মৃতিচারণা করতে গেলেই এবারের খেলায় সবচেয়ে বড় ব্লান্ডারকারী আর্জেন্টিনার সমর্থকদেরই মন খারাপ থাকবে বেশি। সম্ভাব্য অপ্রতিরোধ্য চ্যাম্পিয়ন বলে মনে মনে ধরে রাখা দলের জীবন-মরণ ম্যাচে অত বেশি গোলে হার একনিষ্ঠ সমর্থকদের শুধু মনই ভাঙেনি, সীমাহীন লজ্জাতেও ফেলেছে। বড় ব্যবধানে পরাজয় অন্তত এই দলের ব্যাপারে কেউ কোনো দিন ভাবেনি। ভাবার কোনো অবকাশই ছিল না। তুখোড় সব খেলোয়াড়, দারুণ ভালোবাসার কোচ, অসাধারণ মনোবল আর বিশ্বজুড়ে অসংখ্য সমর্থক যাদের সম্বল, তারা যে প্রায় উত্তর কোরিয়ার সাত গোলে হারার কাছাকাছি অবস্থায় পড়বে, এ ব্যাপারটি এত তাড়াতাড়ি হজম করা কঠিন বৈকি! চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ দূরেই থাক, তৃতীয় স্থানটি পেলেও সান্ত্বনা হিসেবে মানা যেত।
গতকাল রাতেই হয়ে যাওয়ার কথা (লিখছি শনিবার বিকেলে) তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলা। দুই হত্যোদম দল জার্মানি ও উরুগুয়ে খেলবে। হতোদ্যম হওয়ার কথা জার্মানিরই বেশি। কেননা ফাইনাল খেলে, চ্যাম্পিয়ন হয়ে এবার আসর শেষ করার আশা তাদেরও ছিল। সেদিক থেকে উরুগুয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত, নির্ভার। কারণ বড় দলগুলোর নাম-সুনামের তোড়ে তারা ভালো খেলার দল হিসেবে গণ্য হলেও কত দূর উঠবে বা উঠতে পারবে, তা নিয়ে আগে খুব ভাবনাচিন্তা হয়নি। শুরু হলো তখনই যখন ছোট-বড় দলগুলোকে নাকানিচুবানি খাইয়ে অনেক ওপরে উঠে এল ক্রমে ক্রমে।
অন্যদিকে জার্মান জনগণ, তাদের কিছু বিদেশি পাঁড় সমর্থক আর সেই সঙ্গে গোটা ইউরোপ নিশ্চয়ই চাইবে, অন্তত তৃতীয় স্থানটি যেন জার্মানির থাকে। আর উরুগুয়ে সমর্থন পাবে বাকি বিশ্বের। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া তো বটেই, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়াও তা-ই করবে।
তবে কি, এই তৃতীয় স্থান নিয়ে আমার কোনো ভালো লাগা না-লাগা নেই। যাহা ‘বাহান্ন’ তাহাই ‘তেপ্পান্ন’। এ-হলেও যা, ও-হলেও তা। এটার অবস্থান নিয়ে কীই-বা এমন যায়-আসে! একদল হলেই হলো। তবে উরুগুয়ের জন্য তৃতীয় স্থানও উজ্জীবক হবে। তারা ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে পারবে নিজেদের এটাকে সঙ্গী করে।
যা-ই হোক, এবার ফাইনালের দিকে একটু তাকাই। কী হতে পারে? কে আরাধ্য কাপটি ঘরে নিয়ে যাবে? দুই দলই তো সমান বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। তার মানে লড়াইটাও সমানে সমান হওয়ার সম্ভাবনা।
দুই দলই ইউরোপীয়। পরস্পরের হাবভাব, ধরন-ধারণ, ভাবগতিক জানা। কে কীভাবে খেলবে, কে কাকে কীভাবে ঠেকাবে, তাও এ কয়দিনে স্টাডি করা হয়ে গেছে নিশ্চয়ই। অতএব খুব জমজমাট খেলা হবে বলেই মনে হচ্ছে। অবশ্য আমার এ ব্যাপারে যা মনে আসছে এবং মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না, তা হলো, এই ফাইনাল খেলার মজাটা আর বিশ্বকাপ পর্যায়ে থাকল না। যেকোনো একটি অন্য মহাদেশের দল থাকলে মনে হতো সত্যিকারের বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখছি। এখন যা হবে, তা যেন ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনাল। অতএব ফাইনাল দেখার জোশ অনেকটাই ফিকে।
এদিকে ঢাকায় টিভি-দর্শক ও সমর্থকদের মধ্যে যারা প্রথম থেকেই এই দুই দলের প্রতি অনুরক্ত তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দ্বিগুণ হয়েছে। ফাইনাল খেলা দেখার জন্য সাজ সাজ পড়ে গেছে ইতিমধ্যে। কে কার বাসায় গিয়ে খেলা দেখবে মহা আড্ডা জমিয়ে, কে কী খাবে, কে কাকে দাওয়াত দেবে—এসব খুব জোরেশোরে চলছে।
সবচেয়ে মজার দিক যেটি নজরে পড়ল, তা হলো পতাকা পুনঃস্থাপন। প্রথমদিকে ভরসা তেমন না পেয়ে এই দল দুটির পতাকা টাঙানো হয়েছিল খুব ছোটখাটো মাপের। এখন দেখলাম, সেসব সরিয়ে নতুন আর বড়সড় পতাকা টাঙানো হয়েছে। আগে যেগুলো নিচে কোনোরকমে টাঙানো হয়েছিল এবং বড় দলগুলোর, বিশেষ করে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানির বৃহৎ পতাকার আড়ালে প্রায় ঢাকা পড়ে ছিল, এখন সেগুলো দৃশ্যমান করতে উঁচুতে উঠিয়ে আনা হয়েছে।
এখন খেলা দেখার অপেক্ষা। আমার ধারণা, জরিপ করলে স্পেনের জয়ী হওয়ার দিকেই সমর্থন আসবে বেশি। বিশেষ করে সেদিনের খেলা দেখার পর স্পেনের প্রতি আস্থা বেড়ে গেছে অনেক। এ ব্যাপারে আমারও মনে মনে একটা ভাবনাই ভর করছে, যারা মহাপরাক্রমশালী একটি দলকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে, তারা সহজে ছেড়ে কথা কইবে না। ওদিকে হল্যান্ডেরও সবার মনোবল এখন তুঙ্গে। বিশ্বকাপ জেতার ব্যাপারে বহুবার কাছাকাছি এসেও হাতছাড়া হয়েছে। এবার তারা পিছলে না যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে, বলাই বাহুল্য। আর বিশ্বকাপটি শেষ পর্যন্ত দখলে পেলে যে কথাটি তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে তা হলো, ‘বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান। পেয়েছি তোমায় বাছা খেলে আপ্রাণ।’
No comments