নতুন চ্যাম্পিয়ন ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে অভিনন্দন
হাউজি খেলাটা এখন ঢাকায় হয় কি না, জানি না। একসময় ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে ওই খেলাটা হতো। ঢাকার স্পোর্টস ক্লাবগুলোর আয়ের উৎস ছিল হাউজি খেলা। ঢাকা প্রেসক্লাবেও হাউজি খুব হতো। আমি সেই খেলায় প্রায়ই অংশ নিতাম। ফার্স্ট লাইন, সেকেন্ড লাইন ও থার্ড লাইন শেষে হাউজির কলার খেলায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলতেন, ‘অল ঝামেলা গন, নাউ লুক ফর দি হাউস’। লাইন পূর্ণ করতে পারার জন্য খুব সামান্য অর্থই পাওয়া যেত। ওই টাকাটাকে বলা হতো কনসোলেশন মানি বা সান্ত্বনা পুরস্কার। মোটা টাকার অঙ্ক বরাদ্দ থাকত নাম্বার শিটে ‘হাউস’ পূর্ণ করার খাতে। হাউজি খেলার সঙ্গে বিশ্বকাপ ফুটবলের তুলনা চলে না। তার পরও আমার যে হাউজির কথা মনে পড়ে গেল, তার দায় মনে হচ্ছে পুরোটাই আমার নয়। মিল নিশ্চয়ই আছে কিছুটা। হাউজি খেলার মূল লক্ষ্য যেমন হাউজ পাওয়া, তেমনি বিশ্বকাপ ফুটবলের আসল লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বকাপটি হাতে পাওয়া।
সাকিরার ‘ওয়াকা ওয়াকা আফ্রিকা’ গানের ভেতর দিয়ে গত ১১ জুন আফ্রিকার মাটিতে উনিশতম বিশ্বকাপের যে পর্দা উঠেছিল, দীর্ঘ এক মাসের রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষার পর আজ তার পর্দাপতন। আজ, ১১ জুলাই ২০১০, রোববার উনিশতম বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল। বত্রিশ দল দিয়ে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে বিদায় নিতে নিতে এখন অবশিষ্ট আছে শেষ দুটি দল। আজ বহু সংগ্রামের ভেতর দিয়ে টিকে যাওয়া সেই শেষ দুই দলের অন্তিম লড়াই। আজ কিংডম অব স্পেন ও কিংডম অব নেদারল্যান্ডের (হল্যান্ড নামটাই সহজ ও সুন্দর) মধ্যে ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের দ্বৈরথ। (রামায়ণ-মহাভারতে বর্ণিত মুখোমুখি রথযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত ‘দ্বৈরথ’ শব্দটিকে ফুটবলেও প্রয়োগসিদ্ধ বলে ধরে নিচ্ছি) আজ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখতে দেখতে প্রায় মুখস্থ হয়ে যাওয়া ফুটবলের বিশ্বকাপটি বিজয়ীদের ঘরে তোলার দিন। হাউজির ভাষায়, আজ লুক ফর দি হাউস।
বর্তমান বিশ্বের ফুটবল-শ্রেষ্ঠ দেশ কোনটি? ফুটবলের বিশ্বকাপ এবার কার ঘরে যাবে? বিশ্বের এই জটিলতম প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আজ রাতে। আজ যে-ই জয়ী হোক, আমি তাদের আগাম অভিনন্দন জানিয়ে রাখছি। কনগ্র্যাচুলেশনস কিংডম অব স্পেন/কনগ্র্যাচুলেশনস কিংডম অব নেদারল্যান্ড।
প্রথম রাউন্ডে ইতালি ও ফ্রান্সের এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ছিটকে পড়া ছাড়া এবারের বিশ্বকাপে আর কোনো বড় অঘটন ঘটেনি। বিশ্বজুড়ে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার অগণিত ভক্ত রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এ ক্ষেত্রে সম্ভবত অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। তাই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার অকালপ্রয়াণে তাঁরা কষ্ট পেয়েছেন। প্রিয় দলের পরাজয়ের দুঃখ সইতে না পেরে একাধিক ভক্তের মৃত্যুবরণের ঘটনা বাংলাদেশে এবারও ঘটেছে। আমরা তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। পরবর্তী বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ব্রাজিলে। বিশ্বাস করি, সেই বিশ্বকাপে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি পুষিয়ে দেবে।
আশার কথা, ফিফার সম্পাদক, নামটা ভুলে গেলাম, প্রেস কনফারেন্স করে আমাদের জানিয়েছেন—আগামী বিশ্বকাপকে ত্রুটিমুক্ত করার জন্য প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, শুধু গোললাইন পর্যবেক্ষণের জন্যই নয়, প্রয়োজনে ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও ‘হক আই’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। শুনে আমার কী যে ভালো লাগল! আমি আমার কলামে এবং টিভির একাধিক অনুষ্ঠানে ফুটবলে রেফারিদের প্রযুক্তির সাহায্য গ্রহণের দাবি তুলেছিলাম। একটি লেখায় বলেছিলাম, প্রযুক্তি ব্যবহার না করা হলে আগামী বিশ্বকাপ ফুটবল আমি দেখব না।
জানি না, আমার কথা ফিফার কাছে কীভাবে পৌঁছাল! আমি যে একটি কলামে ফিফার প্রেসিডেন্ট মিস্টার সেপ ব্ল্যাটারকে ‘বুড়ো’ বলে গাল দিয়েছিলাম, আশা করি, এই কথাটা কেউ তাঁর কানে দেবেন না। প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে যে সময় ব্যয় হবে, তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য ফুটবল খেলার সময় কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়ার কথাও ফিফা ভাবতে পারে।
এবারের বিশ্বকাপ থেকে বিশ্ব যে ফুটবলের এক নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে, এটা খুশির কথাই বটে। তবে, ইউরোপ না হয়ে এশিয়া বা আফ্রিকার কোনো দেশ চ্যাম্পিয়ন হলে আমরা আরও খুশি হতে পারতাম। আমরা চাই, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের বিজয়বৃত্ত ভেঙে বিশ্বের ফুটবল বেরিয়ে আসুক। সে রকম প্রত্যাশা নিয়েই আমরা আগামী বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষায় থাকব। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রপৌত্রীর অকালমৃত্যুর কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বের প্রিয় নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। শুনেছি, সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন। তা হবে আমাদের সবার জন্যই এক আনন্দসংবাদ।
অত্যন্ত সুন্দরভাবে উনিশতম বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমাদের উষ্ণ অভিনন্দন।
সাকিরার ‘ওয়াকা ওয়াকা আফ্রিকা’ গানের ভেতর দিয়ে গত ১১ জুন আফ্রিকার মাটিতে উনিশতম বিশ্বকাপের যে পর্দা উঠেছিল, দীর্ঘ এক মাসের রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষার পর আজ তার পর্দাপতন। আজ, ১১ জুলাই ২০১০, রোববার উনিশতম বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল। বত্রিশ দল দিয়ে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে বিদায় নিতে নিতে এখন অবশিষ্ট আছে শেষ দুটি দল। আজ বহু সংগ্রামের ভেতর দিয়ে টিকে যাওয়া সেই শেষ দুই দলের অন্তিম লড়াই। আজ কিংডম অব স্পেন ও কিংডম অব নেদারল্যান্ডের (হল্যান্ড নামটাই সহজ ও সুন্দর) মধ্যে ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের দ্বৈরথ। (রামায়ণ-মহাভারতে বর্ণিত মুখোমুখি রথযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত ‘দ্বৈরথ’ শব্দটিকে ফুটবলেও প্রয়োগসিদ্ধ বলে ধরে নিচ্ছি) আজ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখতে দেখতে প্রায় মুখস্থ হয়ে যাওয়া ফুটবলের বিশ্বকাপটি বিজয়ীদের ঘরে তোলার দিন। হাউজির ভাষায়, আজ লুক ফর দি হাউস।
বর্তমান বিশ্বের ফুটবল-শ্রেষ্ঠ দেশ কোনটি? ফুটবলের বিশ্বকাপ এবার কার ঘরে যাবে? বিশ্বের এই জটিলতম প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আজ রাতে। আজ যে-ই জয়ী হোক, আমি তাদের আগাম অভিনন্দন জানিয়ে রাখছি। কনগ্র্যাচুলেশনস কিংডম অব স্পেন/কনগ্র্যাচুলেশনস কিংডম অব নেদারল্যান্ড।
প্রথম রাউন্ডে ইতালি ও ফ্রান্সের এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার ছিটকে পড়া ছাড়া এবারের বিশ্বকাপে আর কোনো বড় অঘটন ঘটেনি। বিশ্বজুড়ে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার অগণিত ভক্ত রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এ ক্ষেত্রে সম্ভবত অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। তাই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার অকালপ্রয়াণে তাঁরা কষ্ট পেয়েছেন। প্রিয় দলের পরাজয়ের দুঃখ সইতে না পেরে একাধিক ভক্তের মৃত্যুবরণের ঘটনা বাংলাদেশে এবারও ঘটেছে। আমরা তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। পরবর্তী বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ব্রাজিলে। বিশ্বাস করি, সেই বিশ্বকাপে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি পুষিয়ে দেবে।
আশার কথা, ফিফার সম্পাদক, নামটা ভুলে গেলাম, প্রেস কনফারেন্স করে আমাদের জানিয়েছেন—আগামী বিশ্বকাপকে ত্রুটিমুক্ত করার জন্য প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, শুধু গোললাইন পর্যবেক্ষণের জন্যই নয়, প্রয়োজনে ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও ‘হক আই’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। শুনে আমার কী যে ভালো লাগল! আমি আমার কলামে এবং টিভির একাধিক অনুষ্ঠানে ফুটবলে রেফারিদের প্রযুক্তির সাহায্য গ্রহণের দাবি তুলেছিলাম। একটি লেখায় বলেছিলাম, প্রযুক্তি ব্যবহার না করা হলে আগামী বিশ্বকাপ ফুটবল আমি দেখব না।
জানি না, আমার কথা ফিফার কাছে কীভাবে পৌঁছাল! আমি যে একটি কলামে ফিফার প্রেসিডেন্ট মিস্টার সেপ ব্ল্যাটারকে ‘বুড়ো’ বলে গাল দিয়েছিলাম, আশা করি, এই কথাটা কেউ তাঁর কানে দেবেন না। প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে যে সময় ব্যয় হবে, তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য ফুটবল খেলার সময় কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়ার কথাও ফিফা ভাবতে পারে।
এবারের বিশ্বকাপ থেকে বিশ্ব যে ফুটবলের এক নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে, এটা খুশির কথাই বটে। তবে, ইউরোপ না হয়ে এশিয়া বা আফ্রিকার কোনো দেশ চ্যাম্পিয়ন হলে আমরা আরও খুশি হতে পারতাম। আমরা চাই, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের বিজয়বৃত্ত ভেঙে বিশ্বের ফুটবল বেরিয়ে আসুক। সে রকম প্রত্যাশা নিয়েই আমরা আগামী বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষায় থাকব। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রপৌত্রীর অকালমৃত্যুর কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বের প্রিয় নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। শুনেছি, সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন। তা হবে আমাদের সবার জন্যই এক আনন্দসংবাদ।
অত্যন্ত সুন্দরভাবে উনিশতম বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমাদের উষ্ণ অভিনন্দন।
No comments