বাজারে ঝুঁকিপূর্ণ ‘মূল্য সংশোধন’
গত শনিবার মৌলভীবাজারে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় সুপার পাম তেল বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ দুই হাজার ৬৩০ টাকা দরে। দুই সপ্তাহ আগে দর ছিল দুই হাজার ৪৭০ টাকা। আর দুই মাস আগে এই দর ছিল দুই হাজার ৩০০ টাকার নিচে। তার মানে দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
বিপরীতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতির দিকে। এ বছর ৮ এপ্রিল বেঞ্চমার্ক কুয়ালালামপুর কমোডিটি এক্সচেঞ্জে প্রতি টন অশোধিত পাম ওলিনের দর দুই হাজার ৬০০ রিঙ্গিত ছুঁই ছুঁই ছিল। প্রায় দেড় মাস পরে ২৪ মে দাম কমে হয় দুই হাজার ৪৮০ রিঙ্গিত। আর গত সপ্তাহে তা দুই হাজার ৪০০ রিঙ্গিতের নিচে নেমে গেছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ আমেরিকায় সয়াবিনের মজুদও ভালো, উৎপাদনের পূূর্বাভাসও ইতিবাচক। তাহলে বাংলাদেশে কেন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে?
বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে দামটি সংশোধন হয়েছে। যাঁরা স্বাভাবিক মুনাফার ব্যবসা করতে চান, তাঁদের জন্য সুপার পামের মণপ্রতি দুই হাজার ৬০০ টাকা পাইকারি দর এখন স্বাভাবিক। এর ওপর দর উঠলে তা হবে নিকটবর্তী আমদানিমূল্যের তুলনায় অস্বাভাবিক মুনাফা।
তবে কি ভোক্তা এতদিন অস্বাভাবিক কম দামে তেল খেয়েছেন? আর এবার অস্বাভাবিক বেশি মূল্য দিয়ে মাশুল গুণবেন?
খাতুনগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের পাইকারেরাও গোলক ধাঁধায়। তাঁরা বলছেন, গত ১২ মাসের বাজারে অন্তত ছয় মাসই ভোজ্যতেলের পাইকারিমূল্য আমদানিমূল্যের চেয়ে কমে বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের ৯৫ শতাংশ চাহিদাই মেটে আমদানি করা পাম তেল ও সয়াবিন দিয়ে।
অস্বাভাবিক লোকসান বা অস্বাভাবিক লাভের খেলাটা আমদানিকারকই খেলবেন। হয়েছেও তাই।
বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করেন, একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ কখনো আমদানিমূল্যের চেয়ে কম দামে তেল ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। অন্যরা আমদানি কমিয়ে দিচ্ছেন। এতে যখনই সরবরাহ ঘাটতি হচ্ছে তখন দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়েও অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা মাসে গড়ে সাড়ে তিন লাখ মণ। পাইকারি দাম গড়ে ১৫০ টাকা কম থাকলে লোকসান মাসে সাড়ে ৫২ কোটি টাকা, সাড়ে ৩৫০ টাকা কম থাকলে শত কোটি ছাড়িয়ে যায়।
দুই মাস আগেও প্রতি টন ৮০০ ডলারে (৫৬ হাজার টাকায়) সামান্য বেশি দিয়ে অশোধিত পাম তেল আমদানি করা হয়। অথচ এরপরই সুপার পাম বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ দুই হাজার ৩০০ টাকারও কমে। সরল হিসাবেই লোকসান ৩০০ টাকা।
চিনির বাজারেও এমন খেলা চলেছে। পরিবহন খরচের হিসাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তেল ও চিনির পাইকারি দরে স্বাভাবিক পার্থক্য মণপ্রতি যথাক্রমে ২০ থেকে ৩০ টাকা। গত কয়েক মাসের অনেক সময়ই পার্থক্য ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতার কারণে ডেলিভারি অর্ডারে (ডিও) সরবরাহের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় তেল ও চিনির দামের পার্থক্যও ১০০ টাকার বেশি থেকেছে কয়েক মাস ধরে। স্বাভাবিক বাজারে এটি বড়জোর ২০-৩০ টাকা।
আমদানি করা তেল, চিনি ও গমের বাজারে এই অবস্থা বছর পাঁচেক ধরেই। অনেক পাইকার কাঁড়ি কাঁড়ি কামাচ্ছেন ঘন ঘন মূল্য বৃদ্ধিতে। আবার গদি ছেড়ে পালাচ্ছেন দ্রুত মূল্যপতনের পর।
মূলত শত কোটি টাকা অস্বাভাবিক লাভ বা লোকসানের খেলায় মত্ত কিছু বড় আমদানিকারক।
দেশে প্রতিবছর কম-বেশি ৩০ লাখ টন গম এবং ১২ থেকে ১৪ লাখ টন করে চিনি ও ভোজ্যতেলের বার্ষিক আমদানি ব্যয় কম করে হলেও ২০০ কোটি ডলার বা প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এখানে শত কোটির খেলা মামুলি বটে। তার পরও এ খেলাই বাজার অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করায়।
খাদ্যপণ্য আমদানির বাজারে অর্থায়ন করতে এখন বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। ব্যাংকিং সূত্রগুলো বলছে, অনেক আমদানিকারকের বিভিন্ন হিসাবে শত কোটি টাকার মন্দ ঋণ জমে যাচ্ছে। তার পরও ব্যবসা সচল দেখিয়ে তারা আরও ঋণ নিচ্ছেন।
এসব মন্দ ঋণ কি একসময় দেশে ঋণ সংকট ডেকে আনবে সেই পশ্চিমা বিশ্বের ঋণ সংকটের মতো, যা ছিল বিশ্বমন্দার সূতিকাগার?
তারচেয়েও বড় প্রশ্ন হলো, সরকার কি এসব অস্বাভাবিক মুনাফা ও লোকসানের খবর রাখেন?
কিছুদিন অস্বাভাবিকভাবে দাম কম থাকা আবার দাম বাড়ার একটি প্রস্তুতিপর্ব মাত্র। এটিই প্রমাণ হলো, গত দুই সপ্তাহে তেলের দাম আবার বাড়াতে। স্বল্প মেয়াদে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অনুসরণ করে লাভ বা লোকসান হবে—এটি স্বাভাবিক।
কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে উদ্দেশ্যমূলক আর অসুস্থ প্রতিযোগিতা একপর্যায়ে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ সংকট ডেকে আনবে—যার চরম মাশুল গুণবে ভোক্তা।
বিপরীতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতির দিকে। এ বছর ৮ এপ্রিল বেঞ্চমার্ক কুয়ালালামপুর কমোডিটি এক্সচেঞ্জে প্রতি টন অশোধিত পাম ওলিনের দর দুই হাজার ৬০০ রিঙ্গিত ছুঁই ছুঁই ছিল। প্রায় দেড় মাস পরে ২৪ মে দাম কমে হয় দুই হাজার ৪৮০ রিঙ্গিত। আর গত সপ্তাহে তা দুই হাজার ৪০০ রিঙ্গিতের নিচে নেমে গেছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ আমেরিকায় সয়াবিনের মজুদও ভালো, উৎপাদনের পূূর্বাভাসও ইতিবাচক। তাহলে বাংলাদেশে কেন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে?
বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে দামটি সংশোধন হয়েছে। যাঁরা স্বাভাবিক মুনাফার ব্যবসা করতে চান, তাঁদের জন্য সুপার পামের মণপ্রতি দুই হাজার ৬০০ টাকা পাইকারি দর এখন স্বাভাবিক। এর ওপর দর উঠলে তা হবে নিকটবর্তী আমদানিমূল্যের তুলনায় অস্বাভাবিক মুনাফা।
তবে কি ভোক্তা এতদিন অস্বাভাবিক কম দামে তেল খেয়েছেন? আর এবার অস্বাভাবিক বেশি মূল্য দিয়ে মাশুল গুণবেন?
খাতুনগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের পাইকারেরাও গোলক ধাঁধায়। তাঁরা বলছেন, গত ১২ মাসের বাজারে অন্তত ছয় মাসই ভোজ্যতেলের পাইকারিমূল্য আমদানিমূল্যের চেয়ে কমে বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের ৯৫ শতাংশ চাহিদাই মেটে আমদানি করা পাম তেল ও সয়াবিন দিয়ে।
অস্বাভাবিক লোকসান বা অস্বাভাবিক লাভের খেলাটা আমদানিকারকই খেলবেন। হয়েছেও তাই।
বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করেন, একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ কখনো আমদানিমূল্যের চেয়ে কম দামে তেল ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। অন্যরা আমদানি কমিয়ে দিচ্ছেন। এতে যখনই সরবরাহ ঘাটতি হচ্ছে তখন দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়েও অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা মাসে গড়ে সাড়ে তিন লাখ মণ। পাইকারি দাম গড়ে ১৫০ টাকা কম থাকলে লোকসান মাসে সাড়ে ৫২ কোটি টাকা, সাড়ে ৩৫০ টাকা কম থাকলে শত কোটি ছাড়িয়ে যায়।
দুই মাস আগেও প্রতি টন ৮০০ ডলারে (৫৬ হাজার টাকায়) সামান্য বেশি দিয়ে অশোধিত পাম তেল আমদানি করা হয়। অথচ এরপরই সুপার পাম বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ দুই হাজার ৩০০ টাকারও কমে। সরল হিসাবেই লোকসান ৩০০ টাকা।
চিনির বাজারেও এমন খেলা চলেছে। পরিবহন খরচের হিসাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তেল ও চিনির পাইকারি দরে স্বাভাবিক পার্থক্য মণপ্রতি যথাক্রমে ২০ থেকে ৩০ টাকা। গত কয়েক মাসের অনেক সময়ই পার্থক্য ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতার কারণে ডেলিভারি অর্ডারে (ডিও) সরবরাহের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় তেল ও চিনির দামের পার্থক্যও ১০০ টাকার বেশি থেকেছে কয়েক মাস ধরে। স্বাভাবিক বাজারে এটি বড়জোর ২০-৩০ টাকা।
আমদানি করা তেল, চিনি ও গমের বাজারে এই অবস্থা বছর পাঁচেক ধরেই। অনেক পাইকার কাঁড়ি কাঁড়ি কামাচ্ছেন ঘন ঘন মূল্য বৃদ্ধিতে। আবার গদি ছেড়ে পালাচ্ছেন দ্রুত মূল্যপতনের পর।
মূলত শত কোটি টাকা অস্বাভাবিক লাভ বা লোকসানের খেলায় মত্ত কিছু বড় আমদানিকারক।
দেশে প্রতিবছর কম-বেশি ৩০ লাখ টন গম এবং ১২ থেকে ১৪ লাখ টন করে চিনি ও ভোজ্যতেলের বার্ষিক আমদানি ব্যয় কম করে হলেও ২০০ কোটি ডলার বা প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এখানে শত কোটির খেলা মামুলি বটে। তার পরও এ খেলাই বাজার অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করায়।
খাদ্যপণ্য আমদানির বাজারে অর্থায়ন করতে এখন বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। ব্যাংকিং সূত্রগুলো বলছে, অনেক আমদানিকারকের বিভিন্ন হিসাবে শত কোটি টাকার মন্দ ঋণ জমে যাচ্ছে। তার পরও ব্যবসা সচল দেখিয়ে তারা আরও ঋণ নিচ্ছেন।
এসব মন্দ ঋণ কি একসময় দেশে ঋণ সংকট ডেকে আনবে সেই পশ্চিমা বিশ্বের ঋণ সংকটের মতো, যা ছিল বিশ্বমন্দার সূতিকাগার?
তারচেয়েও বড় প্রশ্ন হলো, সরকার কি এসব অস্বাভাবিক মুনাফা ও লোকসানের খবর রাখেন?
কিছুদিন অস্বাভাবিকভাবে দাম কম থাকা আবার দাম বাড়ার একটি প্রস্তুতিপর্ব মাত্র। এটিই প্রমাণ হলো, গত দুই সপ্তাহে তেলের দাম আবার বাড়াতে। স্বল্প মেয়াদে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অনুসরণ করে লাভ বা লোকসান হবে—এটি স্বাভাবিক।
কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে উদ্দেশ্যমূলক আর অসুস্থ প্রতিযোগিতা একপর্যায়ে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ সংকট ডেকে আনবে—যার চরম মাশুল গুণবে ভোক্তা।
No comments