হরতালে বাড়াবাড়ি -সংসদই হোক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু
রোববারের হরতাল নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল—দুই পক্ষই যে আচরণ করেছে, তাতে রাজনৈতিক সংঘাত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাকেই বাড়িয়ে তুলল। বিএনপি শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের ওয়াদা করলেও শনিবার মধ্যরাতে রাজধানীতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা জনমনে যে ভীতির সঞ্চার করেছে, তার জবাব কী? অন্যদিকে হরতালের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণের মধ্যেও ছিল বাড়াবাড়ি, যা সমর্থনযোগ্য নয়।
বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিনা উসকানিতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ পুরো অসত্য নয়। সরকার কাউকে ধরে নিতে বললে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেঁধে নিয়ে যায়, সে উদাহরণেরও অভাব নেই। কয়েকটি স্থানে বিরোধী দলের কর্মীদের ওপর হামলা এবং হরতাল-সমর্থকদের বাড়াবাড়িও পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে। হরতালের আগের রাতে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা জনমনে ব্যাপক ভীতি সঞ্চার করেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। যে বা যারাই এ অপকর্ম করুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। বিএনপি হরতালকে সফল বলে দাবি করে জনগণের প্রতি যে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছে, তাতেও নতুনত্ব কিছু নেই। প্রতিবারই হরতাল সফল করার জন্য বিরোধী দল এবং প্রত্যাখ্যান করার জন্য সরকার জনগণকে সাধুবাদ জানিয়ে থাকে। কিন্তু জনজীবনের সমস্যা নিয়ে আদৌ তারা বিচলিত বলে মনে হয় না।
হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক রাজনীতি দেশের কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। বর্তমান বিরোধী দল যখন ক্ষমতায় ছিল, তখনো আমরা হরতালের বিরোধিতা করেছি। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় হরতালই প্রতিবাদের একমাত্র ভাষা নয়। হরতালে কোনো সরকারের পতন হয় না বরং এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশ ও জনগণ। এমনকি এর মাধ্যমে হরতাল পালনকারীদেরও কোনো লাভ হয় না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জ্বালাও-পোড়াও করে জনসমর্থন বাড়ানো যায় না। সরকার কোনো অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিলে তার প্রতিবাদ জানানোর উপযুক্ত স্থান হলো সংসদ। তা ছাড়া সভা-সমাবেশের মাধ্যমেও জনগণকে সজাগ করা যেতে পারে। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের চেয়ে জনগণের সমস্যা নিয়ে তাঁদের বোঝাতে পারলে যে জনসমর্থন পাওয়া যায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনই তার প্রমাণ।
বিরোধী দল জনজীবনের সমস্যা সমাধানে যেসব দাবি সামনে নিয়ে এসেছে তার যৌক্তিকতা নেই, সে কথা বলব না। তবে তা পূরণের স্থান নিশ্চয়ই রাজপথ নয়। তারা সংসদের ভেতরে ও বাইরে প্রচার চালাতে পারে। কিন্তু সেটি কোনোভাবেই ধ্বংসাত্মক হতে পারে না। বর্তমানে বাজেট অধিবেশন চলছে। বিরোধী দলের কর্তব্য হবে, সংসদে গিয়ে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে জনজীবনের প্রাত্যহিক সমস্যাগুলো তুলে ধরা। অন্যদিকে সরকারেরও উচিত হবে, শক্তি প্রয়োগের বদলে বিরোধী দলের ন্যায়সংগত দাবিদাওয়া আমলে নিয়ে সুস্থ রাজনৈতিক স্থিতি ও রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। দলীয় অহমিকা ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সরকার ও বিরোধী দল দেশ ও জনগণের কল্যাণে একযোগে কাজ করবে—এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
No comments