ভারতে হিটলার কেন জনপ্রিয় by আলী রীয়াজ
ভারতে হিটলারকে নিয়ে নির্মিতব্য একটি ছায়াছবি বিষয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেটা হাজার হাজার মাইল দূরে বসেও টের পাওয়া যাচ্ছে। ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে এ নিয়ে উৎসাহ ও বিতর্কের কারণ সহজেই অনুমেয়। হিটলারকে নিয়ে যেকোনো ছবি তৈরি হলেই তা বিশ্বের গণমাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করে—এ ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয়নি। তা ছাড়া ভারতের চলচ্চিত্র জগতের খবরাখবর এখন হলিউডের চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়। ভারতের চলচ্চিত্র জগৎ প্রায় এক দশক ধরে সাধারণ শ্রোতা-পাঠকের মনোযোগের বিষয় হলেও স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবিটি অস্কার পাওয়ার পর চলচ্চিত্রের বাইরের জগতের মানুষও কমবেশি খবরাখবর রাখেন বলিউডে কী হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে মাই নেম খান ছবিটি একশ্রেণীর দর্শকের কাছে আবেদন রেখেছে। অতীতে দীপা মেহতার তৈরি ছবি ওয়াটারও অনেকের মনোযোগ পেয়েছিল। তবে এখন ডিয়ার ফ্রেন্ড হিটলার নামের নির্মিতব্য ছবিটি যে কারণে সংবাদে উঠে এসেছে, তা ভারতের চলচ্চিত্র জগৎ নয়, হিটলারের বিষয় নিয়ে। হিটলারের শেষ দিনগুলো এবং তাঁর প্রেমিকা ইভা ব্রাউনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এ ছবি। এর নাম অবশ্য অন্যসূত্রে প্রাপ্ত—হিটলারের কাছে লেখা গান্ধীর দুটি চিঠি। হিটলারের জীবন, বিশেষ করে শেষ দিনগুলো নিয়ে এটাই প্রথম চলচ্চিত্র নয়। ২০০৪ সালে জার্মান-অস্ট্রিয় যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল ডাউনফল নামের একটি ছবি। এ ছবি শ্রেষ্ঠ বিদেশি ছবি হিসেবে ২০০৫ সালে অস্কারের জন্য মনোনয়নও পায়। অনেকেরই হয়তো স্মরণে থাকবে, ছবিটির প্রদর্শনী শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জার্মানির পত্রপত্রিকায় বিতর্কের ঝড় উঠেছিল; হিটলারকে মানবিকভাবে দেখানো কতটা গ্রহণযোগ্য? শুধু হিটলারই নয়, তাঁর চারপাশের মানুষেরা, যাঁরা ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা, তাঁদের সহানুভূতির সঙ্গে দেখানো হয়েছে বলেও বিতর্ক হয়েছে।
ফলে হিটলার নিয়ে ছবি তৈরি হলে তা যে বিতর্কের ঝড় তৈরি করবে, ছবির পরিচালক, প্রযোজক বা সংশ্লিষ্টরা তা জানতেন না, তা নয়। ২০০৯ সালে ইতালির ফ্যাসিস্ট একনায়ক মুসোলিনির গোপন প্রেমিকা আইডাডেলসার ও তাঁর ছেলের জীবন নিয়ে তৈরি ছবি ডিনসেরে (যার অর্থ হচ্ছে বিজয়ের জন্য) ও খানিক বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়। তবে এ ছবিতে মুসোলিনির প্রতি কোনোরকম সহানুভূতি ছিল না বলে এ নিয়ে হইচই হয়েছে কম।
ভারতে নির্মিতব্য ছবি নিয়ে বিতর্কের সূত্র ধরে একটা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যা কেবল ছবির আলোচনা করলেই বোঝা যাবে না। সেটা হলো: ভারতে হিটলার কেন জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন? বিবিসির মুম্বাই সংবাদদাতা জুবায়ের আহমেদ জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে লিখেছেন, হিটলার মেমোরাবিলিয়া—অর্থাৎ হিটলার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্মৃতিমূলক বিষয় এখন ভারতে বেশ জনপ্রিয়। হিটলারের লেখা বইটির বেশ কাটতি রয়েছে। ২০০৯ সালে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, ছয় মাসে নয়াদিল্লিতে বইটির ১০ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। হিটলারে আত্মজীবনী মাইন কাম্ফ বইটি যাঁদের কাছে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে, তাঁরা বয়সে তরুণ, ব্যবসায় প্রশাসন বা এ জাতীয় বিষয়ের ছাত্র। অনেক গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছিল, তরুণেরা হিটলারকে একজন সফল ব্যক্তি বলে বিবেচনা করেন; তাঁদের বিবেচনায় হিটলারের একটি ‘ভিশন’ (রূপকল্প) ছিল, পরিকল্পনা ছিল, বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা ছিল এবং সাফল্যও ছিল। ব্যবস্থাপনার একটি পাঠ্যপুস্তক হিসেবে মাইন কাম্ফ পড়ছেন ছাত্ররা এ ধরনের সংবাদও এসেছিল।
কোনো বই পড়ার ব্যাপারে আপত্তি করার জন্য এ প্রসঙ্গের অবতারণা করছি না। হিটলারের আদর্শ বোঝার জন্য নাৎসিদের ভয়াবহ আচরণের ভিত্তি বোঝার জন্য এ বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু ভারতে এটা কেবল সেখানেই সীমাবদ্ধ আছে কি না আমি সে প্রসঙ্গটি তুলতে উৎসাহী। ২০০৬ সালে মুম্বাইতে ‘হিটলার ক্রস’ বলে একটি রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছিল, সেটা হয়তো অনেকেরই মনে থাকবে। প্রবল আপত্তির মুখে মালিক শেষ পর্যন্ত ওই রেস্তোরাঁর নাম বদল করতে বাধ্য হন। এ রেস্তোরাঁটি নতুন নামে এখনো টিকে আছে কি না আমার জানা নেই।
ভারতের রাজনীতিতে ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে তাদের সাংগঠনিক শক্তি বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের আদর্শের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে কি না সেটাও ভাবার বিষয়। বিজেপির আদর্শিক নেতা গোলওয়ালকার ১৯৩৯ সালে জার্মানদের শুদ্ধি অভিযান, বিশেষ করে ইহুদি নিধনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। তার ভাষায় ‘এ থেকে হিন্দুস্তানে আমাদের ভালো কিছু শেখার আছে।’ ১৯৪৯ সালে হিন্দুত্ব আদর্শের উদ্ভাবক ভীর সাভারকার লিখেছিলেন, আমরা যদি জার্মানদের মতো শক্তিশালী হতে পারি, তবে ভারতের মুসলমানদের জার্মান ইহুদিদের মতো অবস্থা হবে। ১৯৯২ সালে মুম্বাই দাঙ্গার আগে শিব সেনা নেতা বালঠাকরে বলেছিলেন, ‘আপনি যদি মাইন কাম্ফ বইটি নেন এবং ‘‘ইহুদি’’ শব্দের বদলে সেখানে ‘‘মুসলমান’’ শব্দটি বসান, তাহলে বুঝতে পারবেন, আমি কী বিশ্বাস করি।’ এসব উদাহরণ স্পষ্টতই আদর্শিকভাবে নাৎসিদের সঙ্গে ভারতীয় বিজেপির এক ধরনের সাদৃশ্য তৈরি করে। সে কারণেই ভারতে যখন হিটলারের আত্মজীবনী গ্রন্থ জনপ্রিয়তা লাভ করে, তরুণেরা হিটলারকে আদর্শ বলে বিবেচনা করে, তখন তা কেবল বইয়ের জনপ্রিয়তা ভাবা যায় না।
প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, হিটলারের প্রতি আকর্ষণ কেবল হিন্দুত্ববাদী তরুণদের মধ্যেই লক্ষণীয় নয়; যেখানেই উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং বর্ণবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, সেখানেই হিটলার ও নাৎসিদের আদর্শ অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ইতিহাসবোধের অভাব ঘটলে, সহনশীলতার আদর্শকে জলাঞ্জলি দিলে এ ধরনের উগ্র মতবাদ জায়গা করে নেয়।
ভারতে হিটলারকে নিয়ে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের শুরু হয়েছে, তার একটা ইতিবাচক দিক হলো এই রাজনৈতিক প্রশ্নগুলো উত্থাপন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যাঁরা একে নেহাত-ই চলচ্চিত্রবিষয়ক বিতর্ক বলে মনে করছেন, আমি তাঁদের সঙ্গে একমত হতে রাজি নই। আমার বিশ্বাস, ভারতীয় রাজনীতির মধ্যেই এ জনপ্রিয়তার উপাদান আছে। পাশাপাশি এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই, একটি রাজনৈতিক আদর্শ কেবল প্রচলিত রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমেই জনপ্রিয়তা পায় না; বরং একটি আদর্শের ভিত্তি তৈরি হয় আস্তে আস্তে দৈনন্দিন জীবনাচরণের মধ্যে। ‘পাবলিক কালচার’ বা সাধারণ জীবনের প্রতিদিনের আচার-আচরণ, বিশ্বাস, কর্মকাণ্ড এমন ব্যবস্থা তৈরি করে, যার মধ্যে দিয়ে একটা আদর্শ দাঁড়াতে পারে। ভারতে বিজেপির উত্থানের ইতিহাস যাঁরা জানেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন সাংস্কৃতিক শুদ্ধতার আন্দোলনের নামেই দলের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল। এটা কেবল হিন্দুত্ববাদী আদর্শ ও আন্দোলনের জন্য প্রযোজ্য, তা নয়। বাংলাদেশের চারপাশে তাকালে গত দশকের সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনগুলো লক্ষ করলে এর ইঙ্গিত পাওয়া যাবে।
ইলিনয়, ২৩ জুন ২০১০
আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভারসিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।
ফলে হিটলার নিয়ে ছবি তৈরি হলে তা যে বিতর্কের ঝড় তৈরি করবে, ছবির পরিচালক, প্রযোজক বা সংশ্লিষ্টরা তা জানতেন না, তা নয়। ২০০৯ সালে ইতালির ফ্যাসিস্ট একনায়ক মুসোলিনির গোপন প্রেমিকা আইডাডেলসার ও তাঁর ছেলের জীবন নিয়ে তৈরি ছবি ডিনসেরে (যার অর্থ হচ্ছে বিজয়ের জন্য) ও খানিক বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়। তবে এ ছবিতে মুসোলিনির প্রতি কোনোরকম সহানুভূতি ছিল না বলে এ নিয়ে হইচই হয়েছে কম।
ভারতে নির্মিতব্য ছবি নিয়ে বিতর্কের সূত্র ধরে একটা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যা কেবল ছবির আলোচনা করলেই বোঝা যাবে না। সেটা হলো: ভারতে হিটলার কেন জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন? বিবিসির মুম্বাই সংবাদদাতা জুবায়ের আহমেদ জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে লিখেছেন, হিটলার মেমোরাবিলিয়া—অর্থাৎ হিটলার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্মৃতিমূলক বিষয় এখন ভারতে বেশ জনপ্রিয়। হিটলারের লেখা বইটির বেশ কাটতি রয়েছে। ২০০৯ সালে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, ছয় মাসে নয়াদিল্লিতে বইটির ১০ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। হিটলারে আত্মজীবনী মাইন কাম্ফ বইটি যাঁদের কাছে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে, তাঁরা বয়সে তরুণ, ব্যবসায় প্রশাসন বা এ জাতীয় বিষয়ের ছাত্র। অনেক গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছিল, তরুণেরা হিটলারকে একজন সফল ব্যক্তি বলে বিবেচনা করেন; তাঁদের বিবেচনায় হিটলারের একটি ‘ভিশন’ (রূপকল্প) ছিল, পরিকল্পনা ছিল, বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা ছিল এবং সাফল্যও ছিল। ব্যবস্থাপনার একটি পাঠ্যপুস্তক হিসেবে মাইন কাম্ফ পড়ছেন ছাত্ররা এ ধরনের সংবাদও এসেছিল।
কোনো বই পড়ার ব্যাপারে আপত্তি করার জন্য এ প্রসঙ্গের অবতারণা করছি না। হিটলারের আদর্শ বোঝার জন্য নাৎসিদের ভয়াবহ আচরণের ভিত্তি বোঝার জন্য এ বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। কিন্তু ভারতে এটা কেবল সেখানেই সীমাবদ্ধ আছে কি না আমি সে প্রসঙ্গটি তুলতে উৎসাহী। ২০০৬ সালে মুম্বাইতে ‘হিটলার ক্রস’ বলে একটি রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছিল, সেটা হয়তো অনেকেরই মনে থাকবে। প্রবল আপত্তির মুখে মালিক শেষ পর্যন্ত ওই রেস্তোরাঁর নাম বদল করতে বাধ্য হন। এ রেস্তোরাঁটি নতুন নামে এখনো টিকে আছে কি না আমার জানা নেই।
ভারতের রাজনীতিতে ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে তাদের সাংগঠনিক শক্তি বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের আদর্শের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে কি না সেটাও ভাবার বিষয়। বিজেপির আদর্শিক নেতা গোলওয়ালকার ১৯৩৯ সালে জার্মানদের শুদ্ধি অভিযান, বিশেষ করে ইহুদি নিধনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। তার ভাষায় ‘এ থেকে হিন্দুস্তানে আমাদের ভালো কিছু শেখার আছে।’ ১৯৪৯ সালে হিন্দুত্ব আদর্শের উদ্ভাবক ভীর সাভারকার লিখেছিলেন, আমরা যদি জার্মানদের মতো শক্তিশালী হতে পারি, তবে ভারতের মুসলমানদের জার্মান ইহুদিদের মতো অবস্থা হবে। ১৯৯২ সালে মুম্বাই দাঙ্গার আগে শিব সেনা নেতা বালঠাকরে বলেছিলেন, ‘আপনি যদি মাইন কাম্ফ বইটি নেন এবং ‘‘ইহুদি’’ শব্দের বদলে সেখানে ‘‘মুসলমান’’ শব্দটি বসান, তাহলে বুঝতে পারবেন, আমি কী বিশ্বাস করি।’ এসব উদাহরণ স্পষ্টতই আদর্শিকভাবে নাৎসিদের সঙ্গে ভারতীয় বিজেপির এক ধরনের সাদৃশ্য তৈরি করে। সে কারণেই ভারতে যখন হিটলারের আত্মজীবনী গ্রন্থ জনপ্রিয়তা লাভ করে, তরুণেরা হিটলারকে আদর্শ বলে বিবেচনা করে, তখন তা কেবল বইয়ের জনপ্রিয়তা ভাবা যায় না।
প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, হিটলারের প্রতি আকর্ষণ কেবল হিন্দুত্ববাদী তরুণদের মধ্যেই লক্ষণীয় নয়; যেখানেই উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং বর্ণবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, সেখানেই হিটলার ও নাৎসিদের আদর্শ অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ইতিহাসবোধের অভাব ঘটলে, সহনশীলতার আদর্শকে জলাঞ্জলি দিলে এ ধরনের উগ্র মতবাদ জায়গা করে নেয়।
ভারতে হিটলারকে নিয়ে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের শুরু হয়েছে, তার একটা ইতিবাচক দিক হলো এই রাজনৈতিক প্রশ্নগুলো উত্থাপন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যাঁরা একে নেহাত-ই চলচ্চিত্রবিষয়ক বিতর্ক বলে মনে করছেন, আমি তাঁদের সঙ্গে একমত হতে রাজি নই। আমার বিশ্বাস, ভারতীয় রাজনীতির মধ্যেই এ জনপ্রিয়তার উপাদান আছে। পাশাপাশি এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই, একটি রাজনৈতিক আদর্শ কেবল প্রচলিত রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমেই জনপ্রিয়তা পায় না; বরং একটি আদর্শের ভিত্তি তৈরি হয় আস্তে আস্তে দৈনন্দিন জীবনাচরণের মধ্যে। ‘পাবলিক কালচার’ বা সাধারণ জীবনের প্রতিদিনের আচার-আচরণ, বিশ্বাস, কর্মকাণ্ড এমন ব্যবস্থা তৈরি করে, যার মধ্যে দিয়ে একটা আদর্শ দাঁড়াতে পারে। ভারতে বিজেপির উত্থানের ইতিহাস যাঁরা জানেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন সাংস্কৃতিক শুদ্ধতার আন্দোলনের নামেই দলের ভিত্তি তৈরি হয়েছিল। এটা কেবল হিন্দুত্ববাদী আদর্শ ও আন্দোলনের জন্য প্রযোজ্য, তা নয়। বাংলাদেশের চারপাশে তাকালে গত দশকের সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনগুলো লক্ষ করলে এর ইঙ্গিত পাওয়া যাবে।
ইলিনয়, ২৩ জুন ২০১০
আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভারসিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।
No comments