ইতালি জার্মানি ইংল্যান্ড দ্বিতীয় রাউন্ডে যাচ্ছে তো
উত্তর কোরিয়াকে ৭-০ গোলে হারাল পর্তুগাল। দ্বিতীয়ার্ধে একপর্যায়ে উত্তর কোরিয়া সাত মিনিটে তিন গোল খেল। গ্যালারিতে বসা ছিলেন পর্তুগালের ফুটবল লিজেন্ড মোজাম্বিকে জন্মগ্রহণকারী ইউসেবিও। পর্তুগালের যখন পাঁচ গোল হলো, তখন তিনি হাত নেড়ে মাঠের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানালেন। কারণ হলো, চুয়াল্লিশ বছর আগে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো এসে উত্তর কোরিয়া ফুটবলের পরাশক্তি ইতালিকে ১-০ গোলে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের বিরুদ্ধে প্রথম ২২ মিনিটে ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়। তারপর শুরু হয় ইউসেবিওর ম্যাজিক। একে একে তিনি চার গোল করলেন, আরেকজন করলেন বাকি গোলটি, পর্তুগাল জিতল ৫-৩-এ।
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে হেরে সেবার (১৯৬৬) বিদায় নিতে হয়েছিল ইতালিকে। ম্যাজোলা, ফ্যাচেটি, বুলগেরিলির মতো শীর্ষ তারকারা দলে থাকলেও ইতালির ছিটকে পড়া ঠেকানো যায়নি। এর ষোলো বছর আগে মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত খেলায় ইউএসএর হাতে ১-০ গোলে মার খেয়ে শিরোপাপ্রত্যাশী ‘তিন সিংহের’ ইংল্যান্ডকে বাড়ি ফিরতে হয়। ফেরার আগে অবশ্য তাদের স্পেনের কাছেও ১-০তে হারতে হয়।
১৯৬৬-এর বিশ্বকাপে ইতালির সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিলকেও প্রত্যাবর্তন করতে হয়। ১৯৯০ সালের ইতালির বিশ্বকাপে ম্যারাডোনাকে যেমন মেরে মেরে নুলো করে দিয়েছিল প্রতিপক্ষ দলগুলো, তেমনি ১৯৬৬তে পেলেকেও বুলগেরিয়া খোঁড়া বানিয়ে দেয়। আজকাল রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা স্ট্রাইকারদের গা ছুঁলেই যেমন রেফারির বাঁশি বেজে ওঠে, কার্ড দেখানো হয়, আগে তা ছিল না। ব্রাজিল এরপর হাঙ্গেরির কাছে ১-৩ গোলে হারে। সেবার চমৎকার একটি দল ছিল হাঙ্গেরি।
২০০২ সালে জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে পরাশক্তি ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনাকে ফেরার দরজা দেখতে হয় প্রথম রাউন্ড শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। বাতিস্তুতা আর আইমারসমৃদ্ধ আর্জেন্টিনা সেবার ফেবারিট দল। কিন্তু ও হরি! ইংল্যান্ডের ডেভিড বেকহামের হাতে পেনাল্টি খেয়ে তাদের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে ওঠে। সুইডেনের সঙ্গে খেলাটিও ড্র হয়। আর্জেন্টিনার বিদায়। আর্জেন্টিনার চেয়েও খারাপ অবস্থা ছিল তখন ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ শিরোপাধারী দল ফ্রান্সের। প্রথম খেলায় তারা নবাগত সেনেগালের কাছে ০-১ গোলে পরাভূত হয়। তার পরের খেলাটা উরুগুয়ের সঙ্গে হলো ০-০ ড্র। তৃতীয় খেলায় ডেনমার্কের কাছে ০-২ গোলে হেরে বিশ্বকাপের ইতিহাসে তারাই হয়ে গেল একমাত্র শিরোপাধারী দল, যারা পরবর্তী বিশ্বকাপে কোনো গোল দেওয়া ছাড়া বিদায় নেয়। এবারও ফ্রান্স প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিল।
নড়বড়ে অবস্থা ইংল্যান্ডেরও। ‘সি’ গ্রুপে তাদের অবস্থান ২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়। শীর্ষে আছে স্লোভেনিয়া চার এবং যুক্তরাষ্ট্র দুই পয়েন্ট নিয়ে। স্লোভেনিয়ার সঙ্গে হেরে গেলে ইংল্যান্ডের ১৯৫০-এর দলের মতো ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন হতে হবে, ড্র করলেও তা হবে নিতান্ত ঝুঁকির।
জার্মানি ‘ডি’ গ্রুপে তিন পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়, শীর্ষে আছে চার পয়েন্ট নিয়ে ঘানা। গ্রুপের শেষ খেলায় ঘানার সঙ্গে জার্মানিকে জিততেই হবে, তা না হলে অস্ট্রেলিয়া বনাম সার্বিয়ার খেলার ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে তাদের ভাগ্য। আর ইতালি ‘এফ’ গ্রুপে দুই পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে। শীর্ষে আছে প্যারাগুয়ে, যাদের সঙ্গে দ্বিতীয় অবস্থানের নিউজিল্যান্ড (দুই পয়েন্ট) গ্রুপের শেষ খেলায় পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু ইতালি স্লোভাকিয়ার সঙ্গে হয়তো পারবে, পারলে তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে উত্তীর্ণ হবে।
ইতালির বিশ্বকাপ চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলাটা এ রকমেরই। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনোমতে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেয়ে তারপর তারা স্বরূপে খেলে। এ রকম মাজাভাঙা খেলা খেলে ১৯৮২-এর স্পেনের বিশ্বকাপে গোল-গড়ে নবাগত ক্যামেরুনকে টপকে ইতালি শুধু দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়েছিল তা নয়, ফাইনালে জার্মানিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো শিরোপাও জিতে নিয়েছিল।
এখন দেখা যাক, গ্রুপ পর্যায়ের তৃতীয় পর্বের খেলাগুলোতে শেষ পর্যন্ত কী হয়।
No comments