পোডলস্কির পাশে ভিয়া
১৮ জুন পোর্ট এলিজাবেথের নেলসন ম্যান্ডেলা বে স্টেডিয়ামের একটি মুহূর্ত লুকাস পোডলস্কিকে ঘুমোতে দেয়নি। তিন দিন পর জোহানেসবার্গ এলিস পার্কের একটি মুহূর্তও ঘুমোতে দিল না ডেভিড ভিয়াকে। চোখের দুটো পাতা এক করলেই স্বপ্ন আসে, আর স্বপ্ন এলেই চোখে ভাসে সেই মুহূর্ত। পোডলস্কিকে যদি ওই মুহূর্তটি বারবার ব্যর্থতার আগুনে পোড়ায়, ভিয়াকে না পাওয়ার বেদনায় করছে নীল।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪ গোলের বিধ্বংসী জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা জার্মানি পোর্ট এলিজাবেথে গিয়েছিল সবার আগে দ্বিতীয় রাউন্ডে নাম লিখিয়ে ফেলতে। পারেনি। মিছিলের সামনে থেকে তাদের সরে আসতে হয়েছে পেছনে। আর পেছনে এসে দাঁড়াতে হয়েছে ওই পোডলস্কির কারণে। পোর্ট এলিজাবেথে সার্বিয়ার বিপক্ষে পোডলস্কি যদি ওই পেনাল্টিটা মিস না করতেন, তাহলে আজ তাদের সকার সিটিতে ঘানার বিপক্ষে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয় না। আজ নিশ্চয়ই পোডলস্কি কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছেন আর যেন তাঁকে পেনাল্টির পরীক্ষাও দিতে হয় না। ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে তিনি যে জার্মানির একটা বাজে রেকর্ডের ‘নায়ক’ হলেন। ১৯৮২ বিশ্বকাপে সর্বশেষ জার্মানির হয়ে পেনাল্টি মিস করেছিলেন উলি স্টাইলি।
লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও যেমনটি পারেননি, তেমনই এক অর্জন আছে পোডলস্কির। গত জার্মানি বিশ্বকাপে জিতেছিলেন সেরা যুব ফুটবলারের পুরস্কার। গত বিশ্বকাপে মিরোস্লাভ ক্লোসার সঙ্গে গড়ে ওঠা তাঁর জুটিটি ছিল ভয়ংকর। ৩ গোল করেছিলেন তিনি, সঙ্গী ক্লোসা তো টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপে ৫ গোল করে জিতে নিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার—সোনার জুতা। এই বিশ্বকাপে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠারই কথা ছিল দুই ‘পোলিশ’ জার্মানির। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে দেওয়া জয়ে একটি করে গোলও করেছেন তাঁরা। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে এসে দুর্ভাগ্যকে বরণ করতে হলো জোড় বেঁধে। ক্লোসা দেখলেন লাল কার্ড, আর পোডলস্কি পেনাল্টি মিস করার পাশাপাশি গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন আরও দুটি। হিসাব করলে হ্যাটট্রিকই তো হয়ে যায় ‘পোল্ডি’র। তবে হ্যাটট্রিক মিস করার হতাশা নয়, তাঁকে ঘুমোতে দিচ্ছে না পেনাল্টি মিস করার যন্ত্রণা। স্টাইলি পেনাল্টি মিস করলেও ১৯৮২ বিশ্বকাপের সেই সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে পেনাল্টি শ্যুট আউটে হারিয়েছিল জার্মানি। আর পোডলস্কির এই মিস যে সার্বিয়ার সঙ্গে পয়েন্টই পেতে দিল না!
সেদিন ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে এসে পোডলস্কি নিজেকে বলেছিলেন, ‘ইডিয়ট’—মূর্খ। পেনাল্টি হলো জুয়া খেলা। ১২ গজ দূর থেকে গোলরক্ষকের স্নায়ুটাকে মেপে আপনি যদি ঠিকঠাকভাবে কিক নিতে পারেন, কোনো গোলরক্ষকের সাধ্য নেই রুখে দেওয়ার। কথাটা বলেছিলেন ইকার ক্যাসিয়াস, ২০০২ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের দুটি স্পট কিক ঠেকিয়ে বলেছিলেন স্পেনের তরুণ গোলরক্ষক। আর এদিন পোডলস্কি তো সার্বিয়ান গোলরক্ষক ভ্লাদিমির স্টয়কোভিচ যে দিকে ঝাঁপ দিয়েছেন, সেদিকে মেরে দিয়েছেন বলটি। স্টয়কোভিচ পেনাল্টি রুখে হয়ে গেলেন ‘নায়ক’।
পোডলস্কি তাও গোল সোজা বল রেখেছিলেন। কিন্তু দুর্দান্ত দুটি গোল করা ভিয়া হন্ডুরাসের বিপক্ষে বলটাকে মেরেছেন পোস্টের বাইরে। এই গোল হলে হ্যাটট্রিক পেয়ে যান ভিয়া। গঞ্জালো হিগুয়েইনের পর তাহলে আরেকজন ‘হ্যাটট্রিক হিরো’ পেয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ। এত ‘নেই’ আর ‘হাহাকারের’ মধ্যে এই বিশ্বকাপ কিছু অন্তত তখন পেত।
পেনাল্টি মিস করে হ্যাটট্রিক পেলেন না। উল্টো আরেকটা দুর্নাম কুড়োতে হয়েছে ভিয়াকে। এলিস পার্কে পরশু রাতের ম্যাচে হন্ডুরান ডিফেন্ডার এমিলিও ইজাকুইরির মুখে আঘাত করেছিলেন তাদের ফ্রি-কিক নেওয়ার সময়। জাপানি রেফারি ইউয়িচি নিশিমুরার চোখ তা এড়িয়ে গেছে। কিন্তু সাংবাদিকেরা ভিডিও দেখে নিশ্চিত, ভিয়া লাল কার্ডের সমান অপরাধ করে পার পেয়ে গেছেন। এই নিয়ে শুরু হয়েছে হইচই। ফিফা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। রেফারির রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। ভিয়ার জন্য কোনো বিপদ কি ওত পেতে আছে? ফিফার তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে, বিপদমুক্ত নন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার।
দুটি পেনাল্টি মিস পোডলস্কি আর ভিয়াকে মিলিয়ে দিয়েছে একই বিন্দুতে। যদিও দুজনের কাছে এখন দুই রকম অনুভূতি। পোডলস্কির জন্য এটি যন্ত্রণার। আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার নিজেকে হয়তো বলবেন, ‘একবার মূর্খ হয়েছ। দ্বিতীয়বার আর নয়। সেটি হলেই ১৯৩৮ বিশ্বকাপের পর প্রথম রাউন্ডে বিদায় নেবে জার্মানি।’ জার্মান শিবির টগবগ করে ফুটছে, ঘানা আজ নির্ঘাত উড়ে যাবে। বারবার পেনাল্টি মিস করে না জার্মানি, বারবার গোল মিস করে না ‘ম্যানশাফট’।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪ গোলের বিধ্বংসী জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা জার্মানি পোর্ট এলিজাবেথে গিয়েছিল সবার আগে দ্বিতীয় রাউন্ডে নাম লিখিয়ে ফেলতে। পারেনি। মিছিলের সামনে থেকে তাদের সরে আসতে হয়েছে পেছনে। আর পেছনে এসে দাঁড়াতে হয়েছে ওই পোডলস্কির কারণে। পোর্ট এলিজাবেথে সার্বিয়ার বিপক্ষে পোডলস্কি যদি ওই পেনাল্টিটা মিস না করতেন, তাহলে আজ তাদের সকার সিটিতে ঘানার বিপক্ষে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয় না। আজ নিশ্চয়ই পোডলস্কি কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছেন আর যেন তাঁকে পেনাল্টির পরীক্ষাও দিতে হয় না। ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে তিনি যে জার্মানির একটা বাজে রেকর্ডের ‘নায়ক’ হলেন। ১৯৮২ বিশ্বকাপে সর্বশেষ জার্মানির হয়ে পেনাল্টি মিস করেছিলেন উলি স্টাইলি।
লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও যেমনটি পারেননি, তেমনই এক অর্জন আছে পোডলস্কির। গত জার্মানি বিশ্বকাপে জিতেছিলেন সেরা যুব ফুটবলারের পুরস্কার। গত বিশ্বকাপে মিরোস্লাভ ক্লোসার সঙ্গে গড়ে ওঠা তাঁর জুটিটি ছিল ভয়ংকর। ৩ গোল করেছিলেন তিনি, সঙ্গী ক্লোসা তো টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপে ৫ গোল করে জিতে নিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার—সোনার জুতা। এই বিশ্বকাপে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠারই কথা ছিল দুই ‘পোলিশ’ জার্মানির। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে দেওয়া জয়ে একটি করে গোলও করেছেন তাঁরা। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে এসে দুর্ভাগ্যকে বরণ করতে হলো জোড় বেঁধে। ক্লোসা দেখলেন লাল কার্ড, আর পোডলস্কি পেনাল্টি মিস করার পাশাপাশি গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন আরও দুটি। হিসাব করলে হ্যাটট্রিকই তো হয়ে যায় ‘পোল্ডি’র। তবে হ্যাটট্রিক মিস করার হতাশা নয়, তাঁকে ঘুমোতে দিচ্ছে না পেনাল্টি মিস করার যন্ত্রণা। স্টাইলি পেনাল্টি মিস করলেও ১৯৮২ বিশ্বকাপের সেই সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে পেনাল্টি শ্যুট আউটে হারিয়েছিল জার্মানি। আর পোডলস্কির এই মিস যে সার্বিয়ার সঙ্গে পয়েন্টই পেতে দিল না!
সেদিন ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে এসে পোডলস্কি নিজেকে বলেছিলেন, ‘ইডিয়ট’—মূর্খ। পেনাল্টি হলো জুয়া খেলা। ১২ গজ দূর থেকে গোলরক্ষকের স্নায়ুটাকে মেপে আপনি যদি ঠিকঠাকভাবে কিক নিতে পারেন, কোনো গোলরক্ষকের সাধ্য নেই রুখে দেওয়ার। কথাটা বলেছিলেন ইকার ক্যাসিয়াস, ২০০২ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের দুটি স্পট কিক ঠেকিয়ে বলেছিলেন স্পেনের তরুণ গোলরক্ষক। আর এদিন পোডলস্কি তো সার্বিয়ান গোলরক্ষক ভ্লাদিমির স্টয়কোভিচ যে দিকে ঝাঁপ দিয়েছেন, সেদিকে মেরে দিয়েছেন বলটি। স্টয়কোভিচ পেনাল্টি রুখে হয়ে গেলেন ‘নায়ক’।
পোডলস্কি তাও গোল সোজা বল রেখেছিলেন। কিন্তু দুর্দান্ত দুটি গোল করা ভিয়া হন্ডুরাসের বিপক্ষে বলটাকে মেরেছেন পোস্টের বাইরে। এই গোল হলে হ্যাটট্রিক পেয়ে যান ভিয়া। গঞ্জালো হিগুয়েইনের পর তাহলে আরেকজন ‘হ্যাটট্রিক হিরো’ পেয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ। এত ‘নেই’ আর ‘হাহাকারের’ মধ্যে এই বিশ্বকাপ কিছু অন্তত তখন পেত।
পেনাল্টি মিস করে হ্যাটট্রিক পেলেন না। উল্টো আরেকটা দুর্নাম কুড়োতে হয়েছে ভিয়াকে। এলিস পার্কে পরশু রাতের ম্যাচে হন্ডুরান ডিফেন্ডার এমিলিও ইজাকুইরির মুখে আঘাত করেছিলেন তাদের ফ্রি-কিক নেওয়ার সময়। জাপানি রেফারি ইউয়িচি নিশিমুরার চোখ তা এড়িয়ে গেছে। কিন্তু সাংবাদিকেরা ভিডিও দেখে নিশ্চিত, ভিয়া লাল কার্ডের সমান অপরাধ করে পার পেয়ে গেছেন। এই নিয়ে শুরু হয়েছে হইচই। ফিফা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। রেফারির রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। ভিয়ার জন্য কোনো বিপদ কি ওত পেতে আছে? ফিফার তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে, বিপদমুক্ত নন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার।
দুটি পেনাল্টি মিস পোডলস্কি আর ভিয়াকে মিলিয়ে দিয়েছে একই বিন্দুতে। যদিও দুজনের কাছে এখন দুই রকম অনুভূতি। পোডলস্কির জন্য এটি যন্ত্রণার। আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার নিজেকে হয়তো বলবেন, ‘একবার মূর্খ হয়েছ। দ্বিতীয়বার আর নয়। সেটি হলেই ১৯৩৮ বিশ্বকাপের পর প্রথম রাউন্ডে বিদায় নেবে জার্মানি।’ জার্মান শিবির টগবগ করে ফুটছে, ঘানা আজ নির্ঘাত উড়ে যাবে। বারবার পেনাল্টি মিস করে না জার্মানি, বারবার গোল মিস করে না ‘ম্যানশাফট’।
No comments