বুড়ি তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে ১৫০ কোটি টাকা



নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার দীর্ঘ ৪৩ বছরেও যে বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্প সফলতার মুখ দেখেনি, সেটাকে নিয়েই এখন এলাকাবাসীকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে তুসুকা রিসোর্স নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
পরিত্যক্ত প্রায় এ প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণসহ মৎস্য চাষ ও পশুপালনে আগামী দুই বছরে তুসুকা রিসোর্স প্রায় দেড় শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এবং এতে দুই হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে সেখানে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেচনালাসহ জলাধারে বিভিন্ন প্রজাতির এক কোটি মৎস্যপোনাও অবমুক্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, থাইল্যান্ডের প্রযুক্তিতে মাছ চাষ ছাড়াও হাঁস ও পশুপালন, পোনা উৎপাদন, মাছ প্রক্রিয়াকরণ, শুঁটকি তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করাও তুসুকা রিসোর্সের লক্ষ্য।
মিজানুর রহমান আরও জানান, প্রাথমিকভাবে প্রতিদিন ১০০ শ্রমিক দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে আগামী এক বছরের মধ্যে এখানে দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার ১৬৪টি মৎস্যজীবী পরিবারের প্রায় এক হাজার মানুষও সারা বছর সুবিধা পাবে। এ ছাড়া এলাকার কৃষকেরা শুষ্ক মৌসুমে এ প্রকল্পের খাল থেকে স্বল্পমূল্যে সেচসুবিধা পাবেন।
এ প্রকল্প থেকে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে প্রতিদিন দেড় শ টন মাছ আহরণ এবং এক হাজার হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন মিজানুর রহমান।
এলাকার কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি শুরুর পর এবারই প্রথম কৃষকেরা অল্প খরচে বেশি সেচ সুবিধা পেয়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সুশীল কুমার রায় আশা করেন, প্রকল্পটি পুরোমাত্রায় শুরু হলে এলাকায় কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে।
নাউতরা ইউনিয়ন ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে থাকা এ জায়গায় তারা যদি ভালো কাজ করেন, তাহলে আমরা সহযোগিতা দেব। তারা কিছু করতে চায়। এটা আমাদের জন্য সুখবর।’
মাঝিপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবী সমিতির সদস্য অভিলাষ চন্দ্র রায় বলেন, আগে বছরে এক হাজার টাকাও পাই নাই। এখন তারা আমাদের কাজ দেবে, এটাই তো ভালো। তা ছাড়া মাছ ধরার ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে তাদের চুক্তিও হয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীলফামারীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তুসুকা রিসোর্সকে বুড়ি তিস্তা সেচ প্রকল্পের রিজার্ভারের ৪৯২ দশমিক ৭১ হেক্টর জমিতে মৎস্য ও পশুসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। শর্তানুযায়ী, তুসুকা রিসোর্স প্রতিবছর ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে (যা পরবর্তী বছরগুলোয় ১০% হারে বাড়বে) এটি লিজ নিয়েছে। এভাবে তারা ১০ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা দেবে।
১৯৫৭ সালে নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলায় এ প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপরে ১৯৬৩ সালে শুরু হয়ে ১৯৬৭ সালে বুড়ি তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।

No comments

Powered by Blogger.