ফর্মুলা মেনে শেয়ারবাজার চলে না by আবু আহমেদ
সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বলে দিয়েছে, যেসব স্টকের মূল্য-আয় (পি/ই) অনুপাত ৫০-এর ওপর, সেগুলোর ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়া যাবে না। উদ্দেশ্য, শেয়ারমূল্য বেড়ে যাওয়ার গতি কিছুটা হলেও টেনে ধরা।
এই যিকঞ্চিত্ ঋণপ্রবাহ কমানোয় শেয়ারের মূল্য কমবে কি না জানি না, তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কথিত এই মার্জিনসুবিধা কমানোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। কিন্তু পি/ই অনুপাত বেঁধে দেওয়ার ফল হচ্ছে। অনেক বিনিয়োগকারী মনে করছেন, তাঁরা ওই পর্যন্ত শেয়ার কিনতে পারেন এবং তা ঋণ নিয়েও।
তবে এর অন্য ফল হচ্ছে, যেসব শেয়ারের পি/ই অনুপাত ৫০-এর অনেক নিচে ছিল, সেসব শেয়ারের মূল্য বেড়ে এখন পি/ই ৫০-এর দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর যেসব শেয়ারের দর এর ওপরে ছিল, সেগুলোর মূল্য অতি ধীরে কমছে। অতি ধীরে কমছে এটা বলব না, তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিকনির্দেশনা মানলে কমার কথা।
পি/ই অনুপাত ৫০ নির্ধারণ থেকে মনে হতে পারে, এই পর্যন্ত ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনা নিরাপদ, এর ওপর কিনলে অনেক বিপদ। তবে এসইসি ঠিক এটাই বোঝাতে চেয়েছে, তা নয়। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাড়তি স্তরকে নির্দেশ করে ঋণের প্রবাহকে কমিয়ে শেয়ারবাজারে তারল্যপ্রবাহকে কমাতে চেয়েছে যেন এতে শেয়ারের মূল্য পড়তির দিকে আসে!
এটা না করে বাজারের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মোট মার্জিনসুবিধার ওপরই একটা ছুরি চালানো যেতে পারত। তাতে পি/ই অনুপাতকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা থেকে বিনিয়োগকারীদের বাঁচানো যেত। দুর্বল শেয়ারের পি/ই অনুপাত অনেক কম থাকে। এখন কোনো অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী যদি মনে করেন, যেহেতু কোনো শেয়ারের পি/ই অনুপাত অনেক কম আছে, তাই ওই শেয়ার কেনা উচিত—সেটা কি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে? কোনো অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কখনোই পি/ই অনুপাত কোনো অভিন্ন মূল্যের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে না। পি/ই অনুপাত ৫০-এর বেশি হলে শেয়ার কেনা যাবে না, সেটা কোনো বিশেষজ্ঞ কোনো দিন বলবে না। আবার পি/ই অনুপাত ৫০-এর অনেক নিচে থাকলে যে শেয়ারটি সস্তা হবে তাও কোনো বিশেষজ্ঞ বলবে না।
শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে অনেক কৌশল কাজ করে। পোর্টফোলিও তৈরি বা শেয়ার দিয়ে সম্পদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে পি/ই অনুপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে এটিই যদি একমাত্র উপাদান হতো, তাহলে তো সব কোম্পানির শেয়ারই একই মূল্য-আয় অনুপাতে বেচাকেনা হতো।
বিনিয়োগকারীদের চিন্তার ভিন্নতায় একজন বিনিয়োগকারী একটা পি/ই অনুপাতে একটা শেয়ার বিক্রি করছে, অন্য বিনিয়োগকারী আবার সেই অনুপাতে শেয়ারটা কিনে নিচ্ছে। শেয়ার কিনে সবাই কম-বেশি জিতে যাবে যতদিন বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে। কিন্তু বাজার পড়তে থাকলে কতজন জিতে অথবা লোকসানের আঘাত থেকে সফলভাবে আত্মরক্ষা করতে পারে, সেটাই হলো বড় কৌশলের ব্যাপার।
এ জন্য আমি বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করব, উঠতি বাজারে অতি খুশি না হয়ে এসব ব্যাপারে কিছু পড়াশোনা করে নিতে। জানার কোনো বিকল্প নেই। তবে না জেনে শেয়ার কিনলে যে ভুল হয়, তা পরিণামে বিনিয়োগকারীকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্যদিকে আজকের রমরমা বাজারে অনেক উদ্যোক্তা শেয়ার বেচতে এগিয়ে আসবে। আমি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব, তাদের এসব শেয়ার তারা স্বাভাবিক বাজারে বর্তমানের মূল্যে বেচতে পারত কি না, তা দেখার জন্য।
লেখক: অর্থনীতিবিদ।
এই যিকঞ্চিত্ ঋণপ্রবাহ কমানোয় শেয়ারের মূল্য কমবে কি না জানি না, তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কথিত এই মার্জিনসুবিধা কমানোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। কিন্তু পি/ই অনুপাত বেঁধে দেওয়ার ফল হচ্ছে। অনেক বিনিয়োগকারী মনে করছেন, তাঁরা ওই পর্যন্ত শেয়ার কিনতে পারেন এবং তা ঋণ নিয়েও।
তবে এর অন্য ফল হচ্ছে, যেসব শেয়ারের পি/ই অনুপাত ৫০-এর অনেক নিচে ছিল, সেসব শেয়ারের মূল্য বেড়ে এখন পি/ই ৫০-এর দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর যেসব শেয়ারের দর এর ওপরে ছিল, সেগুলোর মূল্য অতি ধীরে কমছে। অতি ধীরে কমছে এটা বলব না, তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিকনির্দেশনা মানলে কমার কথা।
পি/ই অনুপাত ৫০ নির্ধারণ থেকে মনে হতে পারে, এই পর্যন্ত ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনা নিরাপদ, এর ওপর কিনলে অনেক বিপদ। তবে এসইসি ঠিক এটাই বোঝাতে চেয়েছে, তা নয়। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাড়তি স্তরকে নির্দেশ করে ঋণের প্রবাহকে কমিয়ে শেয়ারবাজারে তারল্যপ্রবাহকে কমাতে চেয়েছে যেন এতে শেয়ারের মূল্য পড়তির দিকে আসে!
এটা না করে বাজারের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মোট মার্জিনসুবিধার ওপরই একটা ছুরি চালানো যেতে পারত। তাতে পি/ই অনুপাতকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা থেকে বিনিয়োগকারীদের বাঁচানো যেত। দুর্বল শেয়ারের পি/ই অনুপাত অনেক কম থাকে। এখন কোনো অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী যদি মনে করেন, যেহেতু কোনো শেয়ারের পি/ই অনুপাত অনেক কম আছে, তাই ওই শেয়ার কেনা উচিত—সেটা কি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে? কোনো অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কখনোই পি/ই অনুপাত কোনো অভিন্ন মূল্যের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে না। পি/ই অনুপাত ৫০-এর বেশি হলে শেয়ার কেনা যাবে না, সেটা কোনো বিশেষজ্ঞ কোনো দিন বলবে না। আবার পি/ই অনুপাত ৫০-এর অনেক নিচে থাকলে যে শেয়ারটি সস্তা হবে তাও কোনো বিশেষজ্ঞ বলবে না।
শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে অনেক কৌশল কাজ করে। পোর্টফোলিও তৈরি বা শেয়ার দিয়ে সম্পদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে পি/ই অনুপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে এটিই যদি একমাত্র উপাদান হতো, তাহলে তো সব কোম্পানির শেয়ারই একই মূল্য-আয় অনুপাতে বেচাকেনা হতো।
বিনিয়োগকারীদের চিন্তার ভিন্নতায় একজন বিনিয়োগকারী একটা পি/ই অনুপাতে একটা শেয়ার বিক্রি করছে, অন্য বিনিয়োগকারী আবার সেই অনুপাতে শেয়ারটা কিনে নিচ্ছে। শেয়ার কিনে সবাই কম-বেশি জিতে যাবে যতদিন বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে। কিন্তু বাজার পড়তে থাকলে কতজন জিতে অথবা লোকসানের আঘাত থেকে সফলভাবে আত্মরক্ষা করতে পারে, সেটাই হলো বড় কৌশলের ব্যাপার।
এ জন্য আমি বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করব, উঠতি বাজারে অতি খুশি না হয়ে এসব ব্যাপারে কিছু পড়াশোনা করে নিতে। জানার কোনো বিকল্প নেই। তবে না জেনে শেয়ার কিনলে যে ভুল হয়, তা পরিণামে বিনিয়োগকারীকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্যদিকে আজকের রমরমা বাজারে অনেক উদ্যোক্তা শেয়ার বেচতে এগিয়ে আসবে। আমি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব, তাদের এসব শেয়ার তারা স্বাভাবিক বাজারে বর্তমানের মূল্যে বেচতে পারত কি না, তা দেখার জন্য।
লেখক: অর্থনীতিবিদ।
No comments