সিলেটের পাথর রাজ্যে মুখোমুখি লুটেরা উত্তাপ
পুলিশ উভয়পক্ষের মামলা নিয়ে বাণিজ্যে মেতে উঠেছে বলে জানিয়েছেন জাফলং মামার দোকান এলাকার ট্রাক ও পাথর শ্রমিকরা। তারা জানিয়েছেন- সাবেক বিএনপি নেতা স্ট্যালিনের নির্দেশে কামাল মেম্বার কোয়ারির মধ্যখানে থাকা কয়েকশ’ শ্রমিকের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা তুলছিল। আর শ্রমিকরা টাকা দিতে অস্বীকার করলে স্ট্যালিন গ্রুপের লোকজন এসে শ্রমিকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ঘটনার সত্যতা স্বীকারও করেছেন গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ। তিনি জানিয়েছেন- বালু উত্তোলন নিয়ে খাসিয়া স্ট্যালিন ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে। ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পড়েছে। ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। তবে জাফলং এলাকার শ্রমিকরা জানিয়েছেন- বালু পাথর লুটের বড় একটি অংশ যায় থানার ওসির কাছে। রোববার রাতের সংঘর্ষের ঘটনায় মোটা অঙ্কের টাকা দেয়া হলেও পুলিশ এখন মামলা রেকর্ড করেনি। সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার না হলে শ্রমিকরা কোয়ারিতে নিরাপত্তাহীন থাকবে বলে জানান তারা। এদিকে এর আগে স্থানীয় জুমপাড় এলাকায় পাথরখেকো সামাদ বাহিনীর হামলায় গুরুতর আহত হন কান্দুবস্তি গ্রামের আফসার ও তার ভাই। এ নিয়ে কান্দুবস্তি ও নয়াবস্তি এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
৫ই আগস্টের পর জাফলংয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বহিষ্কৃত জেলা বিএনপি’র কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপনের পাথর লুট চলছিল। এতে প্রতিবাদ করেছিল যুবদল নেতা আবুল কাশেম। ওই সময় পূর্ব জাফলং ছাত্রদলের আহ্বায়ক আজির উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে মারধর করেছিল কাশেমের লোকজন। পরে জাফলং বাজারে আজির উদ্দিন ও ভাই গিয়াসউদ্দিন যুবদল নেতা জয়দুলকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায়ও থানায় পাল্টাপাল্টি এজাহার দাখিল হয়েছিল। শুধু জাফলং নয় কয়েক দিন আগে গোয়াইনঘাটে হাজীপুরে বালু লুটকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি হয়েছিল বালুপাথরখেকো লন্ডনী কামাল ও বিএনপি নেতা আরিফ ইকবাল নেহালের বাহিনীর মধ্যে। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে গোয়াইনঘাট থানার ওসি তোফায়েল নিজে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। ওই এলাকার বালু নিয়ে এখন দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান হাজীপুর এলাকার বাসিন্দারা। মাসখানেক আগে বালু লুট নিয়ে জৈন্তাপুরের লালাখালেও দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল। তখনো এই এলাকা লন্ডনী কামালসহ স্থানীয় বালু লুটকারীদের নাম এলাকায় আলোচিত হয়। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ কোয়ারি ও শাহ আরেফিন টিলা লুটে শেষ করা হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা; হাজার কোটি টাকার পাথর ও বালু লুট করা হয়েছে। আর এতে নেতৃত্ব দিয়েছে যুবদল নেতা রেজনসহ কয়েকজন। শাহ আরেফিন টিলায় আছে আওয়ামী লীগের আধিপত্যও। বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ অন্য দলের নেতাকর্মীরা একসঙ্গে মিলেমিশে লুটপাট করছেন ভোলাগঞ্জ কোয়ারি ও শাহ আরেফিন টিলা।
গত রোববার রাতে কোম্পানীগঞ্জে টিলার জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সোমবার আহত আব্দুর রহিমের স্ত্রী বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। দুইপক্ষের ৬ জনসহ ৭ জন আহতের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- শাহ আরেফিন টিলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা সিন্ডিকেট করে টিলা, মাজারের মাঠ, মসজিদের মাঠ ও কবরস্থান থেকে পাথর উত্তোলন করেছিলেন। এসব জায়গায় পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে টিলা এলাকায় সংঘর্ষ, জালিয়ারপাড় ও শাহ আরেফিন বাজার এলাকায় বেশ কয়েকবার উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সকালে শাহ আরেফিন টিলার কবরস্থান থেকে পাথর উত্তোলন করতে কাজ শুরু করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হুঁশিয়ার আলী ও আওয়ামী লীগ নেতা বশর মিয়া গ্রুপ। এর আগে তারা মাজার মসজিদ মাঠ ও কবরস্থানের বেশির ভাগ জায়গায় থেকে পাথর উত্তোলন করে বিলীন করে দিয়েছেন। কবরস্থান থেকে পাথর উত্তোলনে জালিয়ারপাড়ের মাসুক মিয়ার মাধ্যমে বাধা দেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল করিমসহ জালিয়ারপাড় গ্রামের মুরব্বিরা। এতে হুঁশিয়ার আলী ও বশর মিয়া গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়। এদিন সন্ধ্যার পর মাসুক মিয়া শাহ আরেফিন বাজারে গেলে তার ওপর চড়াও হয় হুঁশিয়ার-বশর গ্রুপ। এর কিছুক্ষণ পর আব্দুল করিমসহ অন্যরা বাজারে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানিয়েছেন- শাহ আরেফিন এলাকায় দু’পক্ষের মারামারির খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে পুলিশ। পরে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
No comments