এতিম-গরিবের ভাগে থাবা by পিয়াস সরকার
ইবাদত
হোসেন সৌরভ। বয়স মাত্র ৬ বছর। বাবা হারিয়েছে বছর দুয়েক আগে। মা অন্যের
জমিতে কাজ করে কোনোরকম পেট চালান। তারা তিন ভাই বোন। সৌরভ ছাইগারি হাফিজিয়া
মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। মাদ্রাসাটি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্ল্যাপুরে।
বিদ্যুৎ পর্যন্ত পৌঁছাইনি এখানে।
মাটির ঘর। হতদরিদ্র এই সৌরভ এবছর থেকেই এখানে থাকে। জীর্ণ পোশাকে চলে তার মাদ্রাসা জীবন। শিক্ষক বলেছিলেন চামড়ার টাকা থেকে কিনে দেবেন নতুন পোশাক। প্রায় ৫০ অনাথ শিশুর বাস এখানে। এই মাদ্রাসার মূলত আয় কোরবানির পশুর চামড়া ও অন্যের সহযোগিতা। এখানে পড়ান ৩ জন শিক্ষক। মাদ্রাসার প্রধান ইকবাল আহমেদ বলেন, অনাথ বাচ্চাগুলা নিয়ে এমনিতেই করুণ অবস্থার মাঝে আছি। এবারের চামড়ার টাকা দিয়ে কথা ছিলো ঘরের চাল সারাবো। বৃষ্টি হলেই ভিজে যায় শিশুরা। আর কিছু শিশুর নতুন পোশাক কিনে দেবার কথা ছিলো। শিক্ষকদের বেতন আর বাকী টাকা থাকবে তাদের খাওয়ার খরচ হিসেবে। কিন্তু চামড়ার দাম না থাকায় কিছুই সম্ভব হবেনা এবার। চামড়ার জন্য ঈদের আগে মাইকিং করা হয়েছে, তিনদিন ধরে। মাইকিং বিনামূল্যেই করা হয়েছে। তার পরও দিতে হয়েছে ৩ শ’ টাকা। আর পোস্টার লাগাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ শ’ টাকা। চামড়া থেকে আয় হয়েছে মাত্র আড়াই হজার টাকা। আগেরবার আয় হয়েছিলো ৪৮ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, আমাদের বেতনের কথা না হয় বাদই দিলাম। এই বাচ্চাগুলার খাবার এখন পুরাই অন্যের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লো। আর যাদের নতুন পাঞ্জাবি দিতে চেয়েছিলাম তাদের মুখের দিকে তাকাবো কী করে? নিজেকে পাপী মনে হচ্ছে।
এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আর শিক্ষকদের মতোই সারা দেশের হাজার হাজার মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য দুর্ভাবনার কারণ হয়েছে চামড়ার দাম। কোরবানীর ঈদে পশুর চামড়া সংগ্রহ করে সারা বছরের ব্যয়ের একটি বড় অংশ আসে এসব মাদরাসার। অনেক মাদরাসা কর্তৃপক্ষ অল্প মূল্য দিয়ে চামড়া কিনেও থাকে। এবার চামড়ার মূল্যে ধ্বস নামায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে এসব মাদরাসা।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদ্রাসা। প্রায় ৮ হাজার ছাত্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আশ্রয়স্থল এই মাদ্রাসার বড় একটি আয়ের উৎস কোরবানির পশুর চামড়া থেকে অর্জিত অর্থ। কিন্তু এবারের চামড়ার দামে ভাটা পড়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। শঙ্কায় আছেন এই একবছর কিভাবে চলবেন? এই মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা শফিকুল ইসলাম জানান, আগের বছর ৫ থেকে ৬ হাজার পশুর চমড়া পেয়েছিলাম। গড়ে এসব চামড়া বিক্রি হয়েছিলো হাজার টাকায়। কিন্তু এবারের চামড়ার দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এবারে আরো বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। গরুর চামড়ার দাম প্রথমে বলা হচ্ছিল ১শ’ থেকে ১২০ টাকা। অল্প দাম হওয়ায় প্রথমে বিক্রি করেননি। পরে সেই দামেও আর নেবার লোক নেই। আর ছাগলের চামড়া তো নিচ্ছেই না কেউ। এই মাদ্রাসায় এবার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করা হয়েছে চামড়ায় লবণ দেবার কাজ। অধিক দামের আশা তাদের। তবে পরবর্তীতে বিক্রি না হলে উল্টো লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
হাটহাজারী কওমি মাদ্রাসায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তাদেরও একই অবস্থা। তাদের শিক্ষক মাওলানা কামাল উদ্দীন বলেন, আগের বছর চামড়া থেকে আমাদের আয় হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা। আর এবারে সমপরিমাণ চামড়া থেকে আয় হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা। কিছু চামড়া এখনো অবিক্রিত রয়েছে। এগুলো ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই।
এই দুই মাদ্রাসার দুই শিক্ষক জানান, এই অর্থ থেকে মূলত শিক্ষকদের বেতন। শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা হয়। এই বছর চামড়ার দাম না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের খাওয়া পরিধেয় পোশাক এবং শিক্ষকদের বেতন নিয়ে সমস্যা হবে। এমনিতেই মাদ্রাসাগুলোর আয়ের কোনরকম চলে শিক্ষার্থীরা। সেখানে মোটা অংকের আয়ের পার্থক্য হওয়ায় আরো খারাপ অবস্থায় চলে যাবে তারা। এখন কোন রকম তিনবেলা খাওয়া দেয়া হয়। নীলফামারী হাফিজিয়া মাদ্রাসার খতিব সৈয়দ আফরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের মাদরাসায় দুটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়। আর গাই গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা। আর চারটি ষাড় গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪৫০ টাকায়। লক্ষীপুর জেলার আতারিল হাফিজিয়িা মাদ্রাসা। এখানে থাকে ১৫০ জন এতিম শিক্ষার্থী। হাফেজ সালাউদ্দিন বলেন, আমাদের মাদ্রাসার অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস কোরবানির পশুর চামড়া। এই চামড়া থেকে গতবছর আয় হয়েছিলো প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এবারের আয় ১৮ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, আমাদের মাদ্রাসার বছরব্যাপি বেতন দেয়া হয় না। বছরের শুরুতে একবার আর কোরবানির ঈদে একবার। এই ঈদের বেতন দেয়া হয় কোরবানির চামড়ার টাকা থেকে। এবারের বেতন দেয়া হয়নি। কিভাবে দেয়া হবে তাও জানি না।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের সৈয়দপুর উসালিয়া হাফিজিয়া আরাবিয়া দারুল মাদরাসা উল্টো প্রায় ২০ হাজার টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তারা চামড়ার মূল্য না পেয়ে নিজেরাই লবণ দিয়ে রেখেছেন। আর এখনো বিক্রি করতে পারেননি সেই চামড়া। জামালপুর জেলার রেলওয়ে নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক বায়েজীদ হোসেন জানান, গতবার তারা প্রায় ২৫ হাজার টাকা চামড়া থেকে আয় করেছিলেন আর এবার আয় হয়েছে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকা।
মাটির ঘর। হতদরিদ্র এই সৌরভ এবছর থেকেই এখানে থাকে। জীর্ণ পোশাকে চলে তার মাদ্রাসা জীবন। শিক্ষক বলেছিলেন চামড়ার টাকা থেকে কিনে দেবেন নতুন পোশাক। প্রায় ৫০ অনাথ শিশুর বাস এখানে। এই মাদ্রাসার মূলত আয় কোরবানির পশুর চামড়া ও অন্যের সহযোগিতা। এখানে পড়ান ৩ জন শিক্ষক। মাদ্রাসার প্রধান ইকবাল আহমেদ বলেন, অনাথ বাচ্চাগুলা নিয়ে এমনিতেই করুণ অবস্থার মাঝে আছি। এবারের চামড়ার টাকা দিয়ে কথা ছিলো ঘরের চাল সারাবো। বৃষ্টি হলেই ভিজে যায় শিশুরা। আর কিছু শিশুর নতুন পোশাক কিনে দেবার কথা ছিলো। শিক্ষকদের বেতন আর বাকী টাকা থাকবে তাদের খাওয়ার খরচ হিসেবে। কিন্তু চামড়ার দাম না থাকায় কিছুই সম্ভব হবেনা এবার। চামড়ার জন্য ঈদের আগে মাইকিং করা হয়েছে, তিনদিন ধরে। মাইকিং বিনামূল্যেই করা হয়েছে। তার পরও দিতে হয়েছে ৩ শ’ টাকা। আর পোস্টার লাগাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ শ’ টাকা। চামড়া থেকে আয় হয়েছে মাত্র আড়াই হজার টাকা। আগেরবার আয় হয়েছিলো ৪৮ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, আমাদের বেতনের কথা না হয় বাদই দিলাম। এই বাচ্চাগুলার খাবার এখন পুরাই অন্যের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লো। আর যাদের নতুন পাঞ্জাবি দিতে চেয়েছিলাম তাদের মুখের দিকে তাকাবো কী করে? নিজেকে পাপী মনে হচ্ছে।
এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আর শিক্ষকদের মতোই সারা দেশের হাজার হাজার মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য দুর্ভাবনার কারণ হয়েছে চামড়ার দাম। কোরবানীর ঈদে পশুর চামড়া সংগ্রহ করে সারা বছরের ব্যয়ের একটি বড় অংশ আসে এসব মাদরাসার। অনেক মাদরাসা কর্তৃপক্ষ অল্প মূল্য দিয়ে চামড়া কিনেও থাকে। এবার চামড়ার মূল্যে ধ্বস নামায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে এসব মাদরাসা।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদ্রাসা। প্রায় ৮ হাজার ছাত্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আশ্রয়স্থল এই মাদ্রাসার বড় একটি আয়ের উৎস কোরবানির পশুর চামড়া থেকে অর্জিত অর্থ। কিন্তু এবারের চামড়ার দামে ভাটা পড়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। শঙ্কায় আছেন এই একবছর কিভাবে চলবেন? এই মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা শফিকুল ইসলাম জানান, আগের বছর ৫ থেকে ৬ হাজার পশুর চমড়া পেয়েছিলাম। গড়ে এসব চামড়া বিক্রি হয়েছিলো হাজার টাকায়। কিন্তু এবারের চামড়ার দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এবারে আরো বেশি চামড়া সংগ্রহ হয়েছে। গরুর চামড়ার দাম প্রথমে বলা হচ্ছিল ১শ’ থেকে ১২০ টাকা। অল্প দাম হওয়ায় প্রথমে বিক্রি করেননি। পরে সেই দামেও আর নেবার লোক নেই। আর ছাগলের চামড়া তো নিচ্ছেই না কেউ। এই মাদ্রাসায় এবার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করা হয়েছে চামড়ায় লবণ দেবার কাজ। অধিক দামের আশা তাদের। তবে পরবর্তীতে বিক্রি না হলে উল্টো লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
হাটহাজারী কওমি মাদ্রাসায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তাদেরও একই অবস্থা। তাদের শিক্ষক মাওলানা কামাল উদ্দীন বলেন, আগের বছর চামড়া থেকে আমাদের আয় হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা। আর এবারে সমপরিমাণ চামড়া থেকে আয় হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা। কিছু চামড়া এখনো অবিক্রিত রয়েছে। এগুলো ফেলে দেয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই।
এই দুই মাদ্রাসার দুই শিক্ষক জানান, এই অর্থ থেকে মূলত শিক্ষকদের বেতন। শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা হয়। এই বছর চামড়ার দাম না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের খাওয়া পরিধেয় পোশাক এবং শিক্ষকদের বেতন নিয়ে সমস্যা হবে। এমনিতেই মাদ্রাসাগুলোর আয়ের কোনরকম চলে শিক্ষার্থীরা। সেখানে মোটা অংকের আয়ের পার্থক্য হওয়ায় আরো খারাপ অবস্থায় চলে যাবে তারা। এখন কোন রকম তিনবেলা খাওয়া দেয়া হয়। নীলফামারী হাফিজিয়া মাদ্রাসার খতিব সৈয়দ আফরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের মাদরাসায় দুটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়। আর গাই গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা। আর চারটি ষাড় গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪৫০ টাকায়। লক্ষীপুর জেলার আতারিল হাফিজিয়িা মাদ্রাসা। এখানে থাকে ১৫০ জন এতিম শিক্ষার্থী। হাফেজ সালাউদ্দিন বলেন, আমাদের মাদ্রাসার অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস কোরবানির পশুর চামড়া। এই চামড়া থেকে গতবছর আয় হয়েছিলো প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এবারের আয় ১৮ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, আমাদের মাদ্রাসার বছরব্যাপি বেতন দেয়া হয় না। বছরের শুরুতে একবার আর কোরবানির ঈদে একবার। এই ঈদের বেতন দেয়া হয় কোরবানির চামড়ার টাকা থেকে। এবারের বেতন দেয়া হয়নি। কিভাবে দেয়া হবে তাও জানি না।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের সৈয়দপুর উসালিয়া হাফিজিয়া আরাবিয়া দারুল মাদরাসা উল্টো প্রায় ২০ হাজার টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তারা চামড়ার মূল্য না পেয়ে নিজেরাই লবণ দিয়ে রেখেছেন। আর এখনো বিক্রি করতে পারেননি সেই চামড়া। জামালপুর জেলার রেলওয়ে নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক বায়েজীদ হোসেন জানান, গতবার তারা প্রায় ২৫ হাজার টাকা চামড়া থেকে আয় করেছিলেন আর এবার আয় হয়েছে মাত্র সাড়ে ৭ হাজার টাকা।
No comments