রোমানিয়া থেকে বাংলাদেশ কত দূর! by রফিকুজজামান রুমান
বাংলাদেশ
নামক এই রাষ্ট্রটির বহমান সময়ের পাণ্ডুলিপি কী? চারিদিকে গুজব, চারিদিকে
হাহাকার; অস্থিরতা ও আতঙ্কের দেয়াল লিখন। ধর্ষণের মহোৎসব, পিটিয়ে মেরে ফেলা
মানুষ, ‘বন্ধুরাষ্ট্রের’ বদান্যতায় সৃষ্ট বানভাসি জনতার অসহায়ত্ব, মহামারী
আকারে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু। সবুজ ক্যানভাসে শুধুই কালো কালির প্রলেপ! এ এক
আতঙ্কের জনপদ। নিরাপত্তাহীনতায় মোড়ানো এক বিকারগ্রস্ত সময়। এই যখন অবস্থা,
পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো দুটি খবরের প্রতি। একটি আমাদের, অন্যটি অন্য
দেশের। দুটি খবরই ২৮শে জুলাই ২০১৯ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
খবর ১: আলেকজান্দ্রা নামের এক কিশোরীর বয়স ১৫ বছর। রোমানিয়ার এই কিশোরীকে শহরের এক রাস্তা থেকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণের পরদিন যেকোনোভাবে সুযোগ পেয়ে মেয়েটি পুলিশের জরুরি নম্বর ১১২ এ ফোন দেয় তাকে উদ্ধারের জন্য। পুলিশ দ্রুত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বা করতে পারেনি। পুলিশের অভিযোগ, মেয়েটি ঠিক কোথায় আছে তা সে স্পষ্ট করে বুঝাতে পারেনি। ১৯ ঘণ্টা পর যখন মেয়েটিকে পাওয়া গেল, তখন সে মৃত। পুলিশের গাফিলতি ছিল কি ছিল না, সেই বিবেচনা মুখ্য হয়ে ওঠেনি। রোমানিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে যে কাজটি করলেন, তা হলো পুলিশপ্রধানকে বরখাস্ত। মন্ত্রী বলেন, এই মৃত্যুর দায় পুলিশের মূল কর্তাব্যক্তির উপরেই বর্তাবে।
খবর ২: রোমানিয়ার ওই কিশোরীর চেয়ে বছর চারেকের ছোট বাংলাদেশের কিশোর তিতাস ঘোষ। খুলনার এই কিশোর মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে আসার পথে মাদারীপুরে এসে পৌঁছে রাত ৮টায়। স্বজনরা ফেরি কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করে ফেরি ছাড়ার জন্য। তাদের জানানো হয়, একজন ‘ভিআইপি’ আসবেন। তিনি আসার আগে ফেরি ছাড়া যাবে না। যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এই ‘ভিআইপি’ ফেরিঘাটে আসলেন রাত ১১টায়। ততক্ষণ অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে চলেছে তিতাসের জীবনযুদ্ধ, অ্যাম্বুলেন্সের বাইরে স্বজনদের হাহাকার। কোনো হাহাকারেই ফেরি কর্তৃপক্ষের মস্তিষ্কে যে ‘ভিআইপি’ নামের পাশবিকতা আছে, তার মোটা চামড়া ভেদ করা গেল না। তিন ঘণ্টা দম-বন্ধ করা অপেক্ষার পর ‘ভিআইপি’ নিয়েই যখন ফেরি নদীতে পাল তুললো, শেষ হয়ে গেছে সব। তিতাস আর বেঁচে রইলো না। তিতাসের মায়ের নাম সোনামণি ঘোষ। বুকফাটা কান্নায় তিনি বললেন, ‘ওরা আমার পোলারে মেরে ফেলছে। আমি ফেরিওয়ালাদের পায়ে ধরছি, তবুও ওরা ফেরি ছাড়ে নাই। ফেরি ঠিক মতোন গেলে হয়তো আমার পোলাডা বাঁইচা যাইতো।’ তিতাসের মামা বলেন, ‘আমার বোন ফেরির লোকদের পায়ে ধরে মাটিতে পড়ে কেঁদেছে। তবু ওরা ফেরি ছাড়েনি। কোনো সহযোগিতা না পেয়ে ৯৯৯ এ কল দিলাম। তাতেও কোনো কাজ হলো না।’
তিতাসরা এভাবেই মরে যায়। মরে গিয়ে বরং বেঁচেই যায়। আমাদের জন্য রেখে যায় একরাশ ‘ভিআইপি।’ এই ‘ভিআইপি’দেরই দেশ এটি। এদের জন্য ‘সাত হাজার’ খুন মাফ। এরা রাস্তায় উল্টো চলেন। সর্দিকাশির জন্য এদের জনগণের টাকায় উড়াল দিতে হয় সিঙ্গাপুর, লন্ডন কিংবা ব্যাংককে। লাখ লাখ জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে পাওয়া যে সবুজ পতাকা, সেই পতাকা ‘ভিআইপি’ গাড়িতে লাগিয়ে জনগণকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয় রাস্তায়। জনগণের সেবক এই ‘ভিআইপি’দেরই বাসায় পাওয়া যায় নগদ ৮০ লাখ টাকা। এই ‘ভিআইপি’রা আইনেরও ঊর্ধ্বে। অনেক অপকর্ম করেও পার পেয়ে যান ‘নো বডি কিলড জেসিকা’ স্টাইলে।
জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস- এর চেয়ে মিথ্যা কোনো বয়ান এই দেশে আর হতে পারে না। চারিদিকে এখন মিথ্যেরই চাষ। ক্ষমতার উৎসের এই মিথ্যে বুলি জনগণ বুঝে নিয়েছে। তাই এখন তারা বিকল্প ‘ক্ষমতার’ প্রয়োগে মত্ত। নারীকে ধর্ষণ করে পুরুষ তার ‘ক্ষমতা’ প্রয়োগ করতে চায়। জীবন্ত মানুষকে রাস্তায় পিটিয়ে মেরে ফেলে ‘ক্ষমতার’ চর্চা করে জনতা। গুজব ছড়ানো এবং তার প্রতিষ্ঠার মধ্যেও মানুষ আজ ‘ক্ষমতা’ প্রয়োগের স্বাদ অনুভব করে। নদীকে স্বাভাবিক প্রবাহে বইতে না দিলে অলি গলি বেছে নেয়। মনকে প্রসন্ন করার জন্য কোনো সুখবর নেই এই বাংলাদেশে। উত্তরাঞ্চলে বন্যার পানির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে অসহায় মানুষের অফুরান কান্না। নাগরিক সেবা বাড়ানোর বয়ান দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা ঢাকা সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গুর আতঙ্কে মানুষের ঘুম হারাম। ১৫ দিনেই শেয়ার বাজার থেকে লাপাত্তা ২৭ হাজার কোটি টাকা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা দেশের ‘মালিক’ জনগণের। আর ঋণ খেলাপি আর পাচারকারীদের অধিকাংশই দেশের ‘সেবক’ ভিআইপি। এসবের সবকিছুই তো আমরা ‘মালিকেরা’ মেনে নিয়েছি। আমাদের টাকায় আপনাদের প্রমোদ ভ্রমণকেও তো কখনো প্রশ্নের মুখে ফেলিনি। আপনারা যা বলবেন, তা-ই আইন; তাতেও তো আমাদের দ্বিমত নেই। আমরা তো শুধু চেয়েছিলাম বেঁচে থাকতে। আমরা তো চেয়েছিলাম তিতাসেরা এভাবে না মরুক। তিতাসের মৃত্যু কিংবা তিতাসের মায়ের কান্নার কী জবাব আছে এই রাষ্ট্রের কাছে? ‘ভিআইপি’ প্রটোকলের কাছে পরাজিত এক মায়ের কান্না আসলে তো একটি রাষ্ট্রের পরাজয়। মানবিকতার পরাজয়।
এভাবেই এক একজন তিতাস চলে যায়। মায়েদের কান্নায় সিক্ত হয় ফেরির পাটাতন। পদ্মার ঘোলা জলে আইনের শাসনের সলিল সমাধি রচনা করে ফেরি নোঙর করে আরিচার ঘাটে। ‘ভিআইপি’রা আবার ব্যস্ত হয়ে যান জনগণের ‘সেবায়।’ হয়ে ওঠেন আরো ‘ভিআইপি।’
রোমানিয়ায় পুলিশ প্রধান চাকরি হারায়। এই বঙ্গদেশ হারায় জবাবদিহিতা, বিবেক ও মানবিকতা। রোমানিয়া থেকে বাংলাদেশ কত দূর!
>>>লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কলাম লেখক
খবর ১: আলেকজান্দ্রা নামের এক কিশোরীর বয়স ১৫ বছর। রোমানিয়ার এই কিশোরীকে শহরের এক রাস্তা থেকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণের পরদিন যেকোনোভাবে সুযোগ পেয়ে মেয়েটি পুলিশের জরুরি নম্বর ১১২ এ ফোন দেয় তাকে উদ্ধারের জন্য। পুলিশ দ্রুত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বা করতে পারেনি। পুলিশের অভিযোগ, মেয়েটি ঠিক কোথায় আছে তা সে স্পষ্ট করে বুঝাতে পারেনি। ১৯ ঘণ্টা পর যখন মেয়েটিকে পাওয়া গেল, তখন সে মৃত। পুলিশের গাফিলতি ছিল কি ছিল না, সেই বিবেচনা মুখ্য হয়ে ওঠেনি। রোমানিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে যে কাজটি করলেন, তা হলো পুলিশপ্রধানকে বরখাস্ত। মন্ত্রী বলেন, এই মৃত্যুর দায় পুলিশের মূল কর্তাব্যক্তির উপরেই বর্তাবে।
খবর ২: রোমানিয়ার ওই কিশোরীর চেয়ে বছর চারেকের ছোট বাংলাদেশের কিশোর তিতাস ঘোষ। খুলনার এই কিশোর মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে আসার পথে মাদারীপুরে এসে পৌঁছে রাত ৮টায়। স্বজনরা ফেরি কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করে ফেরি ছাড়ার জন্য। তাদের জানানো হয়, একজন ‘ভিআইপি’ আসবেন। তিনি আসার আগে ফেরি ছাড়া যাবে না। যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এই ‘ভিআইপি’ ফেরিঘাটে আসলেন রাত ১১টায়। ততক্ষণ অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে চলেছে তিতাসের জীবনযুদ্ধ, অ্যাম্বুলেন্সের বাইরে স্বজনদের হাহাকার। কোনো হাহাকারেই ফেরি কর্তৃপক্ষের মস্তিষ্কে যে ‘ভিআইপি’ নামের পাশবিকতা আছে, তার মোটা চামড়া ভেদ করা গেল না। তিন ঘণ্টা দম-বন্ধ করা অপেক্ষার পর ‘ভিআইপি’ নিয়েই যখন ফেরি নদীতে পাল তুললো, শেষ হয়ে গেছে সব। তিতাস আর বেঁচে রইলো না। তিতাসের মায়ের নাম সোনামণি ঘোষ। বুকফাটা কান্নায় তিনি বললেন, ‘ওরা আমার পোলারে মেরে ফেলছে। আমি ফেরিওয়ালাদের পায়ে ধরছি, তবুও ওরা ফেরি ছাড়ে নাই। ফেরি ঠিক মতোন গেলে হয়তো আমার পোলাডা বাঁইচা যাইতো।’ তিতাসের মামা বলেন, ‘আমার বোন ফেরির লোকদের পায়ে ধরে মাটিতে পড়ে কেঁদেছে। তবু ওরা ফেরি ছাড়েনি। কোনো সহযোগিতা না পেয়ে ৯৯৯ এ কল দিলাম। তাতেও কোনো কাজ হলো না।’
তিতাসরা এভাবেই মরে যায়। মরে গিয়ে বরং বেঁচেই যায়। আমাদের জন্য রেখে যায় একরাশ ‘ভিআইপি।’ এই ‘ভিআইপি’দেরই দেশ এটি। এদের জন্য ‘সাত হাজার’ খুন মাফ। এরা রাস্তায় উল্টো চলেন। সর্দিকাশির জন্য এদের জনগণের টাকায় উড়াল দিতে হয় সিঙ্গাপুর, লন্ডন কিংবা ব্যাংককে। লাখ লাখ জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে পাওয়া যে সবুজ পতাকা, সেই পতাকা ‘ভিআইপি’ গাড়িতে লাগিয়ে জনগণকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয় রাস্তায়। জনগণের সেবক এই ‘ভিআইপি’দেরই বাসায় পাওয়া যায় নগদ ৮০ লাখ টাকা। এই ‘ভিআইপি’রা আইনেরও ঊর্ধ্বে। অনেক অপকর্ম করেও পার পেয়ে যান ‘নো বডি কিলড জেসিকা’ স্টাইলে।
জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস- এর চেয়ে মিথ্যা কোনো বয়ান এই দেশে আর হতে পারে না। চারিদিকে এখন মিথ্যেরই চাষ। ক্ষমতার উৎসের এই মিথ্যে বুলি জনগণ বুঝে নিয়েছে। তাই এখন তারা বিকল্প ‘ক্ষমতার’ প্রয়োগে মত্ত। নারীকে ধর্ষণ করে পুরুষ তার ‘ক্ষমতা’ প্রয়োগ করতে চায়। জীবন্ত মানুষকে রাস্তায় পিটিয়ে মেরে ফেলে ‘ক্ষমতার’ চর্চা করে জনতা। গুজব ছড়ানো এবং তার প্রতিষ্ঠার মধ্যেও মানুষ আজ ‘ক্ষমতা’ প্রয়োগের স্বাদ অনুভব করে। নদীকে স্বাভাবিক প্রবাহে বইতে না দিলে অলি গলি বেছে নেয়। মনকে প্রসন্ন করার জন্য কোনো সুখবর নেই এই বাংলাদেশে। উত্তরাঞ্চলে বন্যার পানির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে অসহায় মানুষের অফুরান কান্না। নাগরিক সেবা বাড়ানোর বয়ান দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা ঢাকা সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গুর আতঙ্কে মানুষের ঘুম হারাম। ১৫ দিনেই শেয়ার বাজার থেকে লাপাত্তা ২৭ হাজার কোটি টাকা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা দেশের ‘মালিক’ জনগণের। আর ঋণ খেলাপি আর পাচারকারীদের অধিকাংশই দেশের ‘সেবক’ ভিআইপি। এসবের সবকিছুই তো আমরা ‘মালিকেরা’ মেনে নিয়েছি। আমাদের টাকায় আপনাদের প্রমোদ ভ্রমণকেও তো কখনো প্রশ্নের মুখে ফেলিনি। আপনারা যা বলবেন, তা-ই আইন; তাতেও তো আমাদের দ্বিমত নেই। আমরা তো শুধু চেয়েছিলাম বেঁচে থাকতে। আমরা তো চেয়েছিলাম তিতাসেরা এভাবে না মরুক। তিতাসের মৃত্যু কিংবা তিতাসের মায়ের কান্নার কী জবাব আছে এই রাষ্ট্রের কাছে? ‘ভিআইপি’ প্রটোকলের কাছে পরাজিত এক মায়ের কান্না আসলে তো একটি রাষ্ট্রের পরাজয়। মানবিকতার পরাজয়।
এভাবেই এক একজন তিতাস চলে যায়। মায়েদের কান্নায় সিক্ত হয় ফেরির পাটাতন। পদ্মার ঘোলা জলে আইনের শাসনের সলিল সমাধি রচনা করে ফেরি নোঙর করে আরিচার ঘাটে। ‘ভিআইপি’রা আবার ব্যস্ত হয়ে যান জনগণের ‘সেবায়।’ হয়ে ওঠেন আরো ‘ভিআইপি।’
রোমানিয়ায় পুলিশ প্রধান চাকরি হারায়। এই বঙ্গদেশ হারায় জবাবদিহিতা, বিবেক ও মানবিকতা। রোমানিয়া থেকে বাংলাদেশ কত দূর!
>>>লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কলাম লেখক
No comments