বাধার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র-শ্রীলংকা সামরিক সমঝোতা by মারওয়ান মাকান-মার্কার
ভারত
মহাসাগরে মার্কিন সরকারের নতুন সামরিক পরিকল্পনা শ্রীলংকায় বাধার মুখে
পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটিকে ভারত, চীন ও
জাপানও নিজেদের প্রভাব বলয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শ্রীলংকার স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট চুক্তি রয়েছে, যেটা প্রথম স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৫ সালে। এই চুক্তির অধীনে লজিস্টিক্স সহায়তা নেয়ার জন্য শ্রীলংকায় প্রবেশের সুবিধা রয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর। কিন্তু সোফা’র অধীনে যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করার চেষ্টা করছে, যেখানে সফরকারী মার্কিন সেনাদের জন্য অনেক ধরনের সুরক্ষা ও সুবিধার উল্লেখ রয়েছে, সেই চুক্তিটি কড়া যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়েছে।
শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিঙ্গের জন্য এটা একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যিনি শ্রীলংকার চরম বিভাজিত ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে আমেরিকা-পন্থী অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা অভিযোগ করেছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথা নত করে দিয়েছেন।
এমনকি কলম্বোর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক কর্মকর্তারাও বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, যে সব শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক চুক্তির ব্যাপারে দর কষাকষি চলছে, সেগুলো মেনে নিলে শ্রীলংকা ভবিষ্যতে ‘সামরিক প্রতিযোগিতার’ মধ্যে ঢুকে পড়বে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিক্কি এশিয়ান রিভিউকে বলেন, “এ অঞ্চলে ভবিষ্যতে কোন উত্তেজনা তৈরি হলে সেখানে যে কোন এক পক্ষ নিয়ে বসে থাকাটা আমাদের পক্ষে সঠিক হবে না, কারণ সেটা আমাদের কূটনৈতিক পরিসরকে সংকীর্ণ করে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সোফা চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হলে চীন, ভারত ও এমনকি রাশিয়ার মতো আমাদের মিত্ররাও আমাদের সাথে এ ধরনের চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী হবে। আমরা কি তাদের না বলে দেবো?
এই মনোভাবের মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে, তিন দশকের গৃহযুদ্ধের সময় শ্রীলংকা বিদেশী সামরিক সহায়তা নেয়ার ব্যাপারে যেই অবস্থানে ছিল, সেখান থেকে তারা সরে এসেছে। ২০০৯ সালের মে মাসে ওই গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ভারত, পাকিস্তান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের বড় মতপার্থক্যগুলো সরিয়ে রেখে তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে শ্রীলংকান সেনাদের সাহায্য করেছিল।
শ্রীলংকায় গত এক দশকে যে প্রায় ৫০০ যুদ্ধজাহাজ সফর করেছে, এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত, জাপান আর চীনের নৌযানগুলো। ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলংকান নৌ শক্তিকে বাড়িয়ে দিতে তাদেরকে টহল বোট, কোস্ট গার্ড কাটার এবং ফ্রিগেট সরবরাহ করেছে।
কিন্তু ভবিষ্যতে নৌ সফরের ক্ষেত্রে বিদ্যমান শর্তগুলো বদলে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টার কারণেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদী মহলে এমন ধারণা রয়েছে নতুন চুক্তিটি হলে ওয়াশিংটন শ্রীলংকায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ পেয়ে যাবে। আইনজীবীরা এই যুক্তিতে চুক্তির বিরোধিতা করছেন যে, এর মাধ্যমে মার্কিন সেনারা অস্বাভাবিক সুবিধা পাবে। মিডিয়া ভাষ্যকাররা এই প্রশ্ন তুলছেন যে, মার্কিন প্রাইভেট সামরিক ঠিকাদারদেরকে কেন কূটনৈতিক ছাড় দেয়া হচ্ছে।
সোফা নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে আরেকটি সামরিক চুক্তি হয়েছিল, যেটার নাম অ্যাকুইজিশান অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট, যেটা আগের আকসা চুক্তির মেয়াদ শেষের পর দুই দেশ ২০১৭ সালে স্বাক্ষর করেছিল। আকসা প্রথম স্বাক্ষরিত হয় ২০০৭ সালে, যে চুক্তির অধীনে শ্রীলংকায় সামরিক নৌযান সফরের সুযোগ ছিল।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলো আরেকটি কারণ যে জন্য দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। কারণ অকার্যকর শাসনের রেকর্ডের কারণে জণগণের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, সে অবস্থায় কোয়ালিশন সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
শ্রীলংকায় চীনের বহু বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো প্রকল্প এবং দ্বীপরাষ্ট্রের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে ওয়াশিংটন এখানে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়, কারণ তাদের পরিকল্পনা হলো যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল থেকে ভারতের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত তাদের প্রভাব বলয় বিস্তৃত করা। কলম্বোর পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, শ্রীলংকায় চীনের সম্প্রসারণশীল অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও শ্রীলংকার সাথে তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়িয়েছে।
>>>মারওয়ান মাকান-মার্কার
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শ্রীলংকার স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট চুক্তি রয়েছে, যেটা প্রথম স্বাক্ষরিত হয় ১৯৯৫ সালে। এই চুক্তির অধীনে লজিস্টিক্স সহায়তা নেয়ার জন্য শ্রীলংকায় প্রবেশের সুবিধা রয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর। কিন্তু সোফা’র অধীনে যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করার চেষ্টা করছে, যেখানে সফরকারী মার্কিন সেনাদের জন্য অনেক ধরনের সুরক্ষা ও সুবিধার উল্লেখ রয়েছে, সেই চুক্তিটি কড়া যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়েছে।
শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিঙ্গের জন্য এটা একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যিনি শ্রীলংকার চরম বিভাজিত ক্ষমতাসীন জোটের মধ্যে আমেরিকা-পন্থী অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা অভিযোগ করেছেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথা নত করে দিয়েছেন।
এমনকি কলম্বোর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক কর্মকর্তারাও বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, যে সব শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক চুক্তির ব্যাপারে দর কষাকষি চলছে, সেগুলো মেনে নিলে শ্রীলংকা ভবিষ্যতে ‘সামরিক প্রতিযোগিতার’ মধ্যে ঢুকে পড়বে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিক্কি এশিয়ান রিভিউকে বলেন, “এ অঞ্চলে ভবিষ্যতে কোন উত্তেজনা তৈরি হলে সেখানে যে কোন এক পক্ষ নিয়ে বসে থাকাটা আমাদের পক্ষে সঠিক হবে না, কারণ সেটা আমাদের কূটনৈতিক পরিসরকে সংকীর্ণ করে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সোফা চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হলে চীন, ভারত ও এমনকি রাশিয়ার মতো আমাদের মিত্ররাও আমাদের সাথে এ ধরনের চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহী হবে। আমরা কি তাদের না বলে দেবো?
এই মনোভাবের মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে, তিন দশকের গৃহযুদ্ধের সময় শ্রীলংকা বিদেশী সামরিক সহায়তা নেয়ার ব্যাপারে যেই অবস্থানে ছিল, সেখান থেকে তারা সরে এসেছে। ২০০৯ সালের মে মাসে ওই গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ভারত, পাকিস্তান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের বড় মতপার্থক্যগুলো সরিয়ে রেখে তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে শ্রীলংকান সেনাদের সাহায্য করেছিল।
শ্রীলংকায় গত এক দশকে যে প্রায় ৫০০ যুদ্ধজাহাজ সফর করেছে, এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত, জাপান আর চীনের নৌযানগুলো। ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলংকান নৌ শক্তিকে বাড়িয়ে দিতে তাদেরকে টহল বোট, কোস্ট গার্ড কাটার এবং ফ্রিগেট সরবরাহ করেছে।
কিন্তু ভবিষ্যতে নৌ সফরের ক্ষেত্রে বিদ্যমান শর্তগুলো বদলে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টার কারণেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদী মহলে এমন ধারণা রয়েছে নতুন চুক্তিটি হলে ওয়াশিংটন শ্রীলংকায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ পেয়ে যাবে। আইনজীবীরা এই যুক্তিতে চুক্তির বিরোধিতা করছেন যে, এর মাধ্যমে মার্কিন সেনারা অস্বাভাবিক সুবিধা পাবে। মিডিয়া ভাষ্যকাররা এই প্রশ্ন তুলছেন যে, মার্কিন প্রাইভেট সামরিক ঠিকাদারদেরকে কেন কূটনৈতিক ছাড় দেয়া হচ্ছে।
সোফা নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে আরেকটি সামরিক চুক্তি হয়েছিল, যেটার নাম অ্যাকুইজিশান অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট, যেটা আগের আকসা চুক্তির মেয়াদ শেষের পর দুই দেশ ২০১৭ সালে স্বাক্ষর করেছিল। আকসা প্রথম স্বাক্ষরিত হয় ২০০৭ সালে, যে চুক্তির অধীনে শ্রীলংকায় সামরিক নৌযান সফরের সুযোগ ছিল।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলো আরেকটি কারণ যে জন্য দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। কারণ অকার্যকর শাসনের রেকর্ডের কারণে জণগণের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, সে অবস্থায় কোয়ালিশন সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
শ্রীলংকায় চীনের বহু বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো প্রকল্প এবং দ্বীপরাষ্ট্রের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে ওয়াশিংটন এখানে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়, কারণ তাদের পরিকল্পনা হলো যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল থেকে ভারতের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত তাদের প্রভাব বলয় বিস্তৃত করা। কলম্বোর পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, শ্রীলংকায় চীনের সম্প্রসারণশীল অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও শ্রীলংকার সাথে তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়িয়েছে।
>>>মারওয়ান মাকান-মার্কার
No comments