কাশ্মীরের বিরুদ্ধে ‘সাংবিধানিক সন্ত্রাস’

সার্বজনীন
মানবাধিকার ঘোষণা একটি আইনগত হাতিয়ার। জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর তার
১৮৩তম অধিবেশনে ২১৭তম প্রস্তাব হিসেবে এটিকে স্বীকৃতি দেয়। এতে বর্ণ,
ধর্ম, লিঙ্গ, বিশ্বাস- সবকিছুর ঊর্ধ্বে মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষার নীতিমালা
রয়েছে। এটি মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হতে সহায়তা করে।
ইউডিএইচআর নীতিমালার আলোকেই সব দেশ তাদের সংবিধান প্রণয়ন করতে হয়। এমনকি এর একটি অনুচ্ছেদ বা ধারা থেকেও কোনো সমাজকে বঞ্চিত করা যাবে না। জাতিসংঘ তার বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করা নিশ্চিত করবে।
কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন অংশে মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘনের কারণে এটি সত্যিকারের সার্বজনীন আইনে পরিণত হতে পারেনি। যেসব অঞ্চলে এই মূলনীতির ব্যাপক লঙ্ঘন হচ্ছে তার একটি হলো কাশ্মীর। কয়েক দিন আগে ভারত দেশটির সংবিধানে থাকা অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫ক বাতিল করে যা করেছে, সেটকে সাংবিধানিক সন্ত্রাস হিসেবে অভিহিত করা যায়। কাজটি ইউডিএইচআর নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
আমরা অনেক অঞ্চলেই মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘনের ঘটনা দেখি। বিশেষ করে সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরে গণহত্যা, ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, মানসিক অত্যাচার হচ্ছে ভয়াবহ মাত্রায়। জাতিসংঘও এসব অঞ্চলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সেভাবে কাজ করছে না।
অবিচ্ছেদ্য অধিকার
ইউডিএইচআরের মতে, কিছু অধিকার প্রতিটি মানুষের জন্য। এগুলো হলো প্রাথমিক অধিকার। কোনোভাবেই বা কোনো কারণেই এসব অধিকার কেড়ে নেয়া যায় না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইউডিএইচআরের অনুচ্ছেদ ১-এ বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষ স্বাধীন ও সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তারা যুক্তি ও সচেতনতার অধিকারী। তাদের ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনায় একে অপরের সাথে আচরণ করতে হবে। কিন্তু আমরা কাশ্মীর, ফিলিস্তিন ও পৃথিবীর অন্যান্য অংশে ইউডিএইচআরের এই অনুচ্ছেদের ভয়াবহ লঙ্ঘন দেখতে পাই। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া অনুচ্ছেদ ৩৭০ ভারতের বাতিল করাটা ইউডিএইচআরের ১ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। উল্লেখ্য, এই অনুচ্ছেদের বলে জম্মু ও কাশ্মীরের লোকজন নিজেদের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারত। উল্লেখ্য এখানকার ৯৪ ভাগের বেশি নাগরিক মুসলিম।
অধিকন্তু, ইউডিএইচআর অনুচ্ছেদ ২-এ কোনো বৈষম্য ছাড়াই যথাযথ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্যান্য কারণে কারো স্বাধীনতা বা অন্যান্য অধিকার খর্ব না করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে সেটিই ঘটে চলেছে। কয়েক দশক ধরে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের লোকজনকে এসব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে।
ভারত সরকার অনুচ্ছেদ ৩৫ক বাতিল করে কেবল সার্বজনীন মানবাধিকারই লঙ্ঘন করেনি সেইসাথে কাশ্মীরীদের আলাদা থাকার পরিচিতিও কেড়ে নিয়েছে। এটাকে বলা যায় মানুষের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক সন্ত্রাস।
সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার তৃতীয় অনুচ্ছেদে জীবনে স্বাধীনতা, নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কয়েক দশক ধরে তা নেই। ভারতীয় সৈন্যরা এই ধারা লঙ্ঘন করে চলেছে।
আরো ভয়াবহ বিষয় হলো, দীর্ঘ দিন ধরে লঙ্ঘন হওয়া সত্ত্বেও জাতিসংঘ ও শীর্ষ শক্তিগুলো এসব ব্যাপারে নীরব থাকছে। তারা এসব লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
মনে রাখতে হবে, জাতিপুঞ্জ ভেঙে পড়েছিল এর নীতিমালা লঙ্ঘনকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে। এখন জাতিসংঘও একই পথে হাঁটলে তার পরিণতিও একই হতে পারে। ফলে জাতিসংঘ ও শীর্ষস্থানীয় বিশ্বশক্তিগুলোর উচিত হবে মানবতাকে রক্ষার জন্য সব পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।
জাতিসংঘ পুলিশ ও শান্তিরক্ষা মিশন পাঠানো উচিত ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইউডিএইচআর বাস্তবায়নের জন্য। জাতিসংঘ যদি ভারতীয় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কেবল নিন্দা জ্ঞাপনের বিবৃতি ছাড়া আর কিছু না করে, তবে এ ধরনের ব্যর্থতার কারণে জাতিসংঘ নিজেই হুমকির মুখে পড়বে। সে যদি মানুষের অধিকার রক্ষা করতে না পারে, তবে জাতিপুঞ্জের অবস্থাই হবে তার। ফলে জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের অবশ্যই ভারতের সাংবিধানিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে কাশ্মীরীরা তাদের মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে।
>>>আলী চ্যাঙ্গেজি সান্ধু
ইউডিএইচআর নীতিমালার আলোকেই সব দেশ তাদের সংবিধান প্রণয়ন করতে হয়। এমনকি এর একটি অনুচ্ছেদ বা ধারা থেকেও কোনো সমাজকে বঞ্চিত করা যাবে না। জাতিসংঘ তার বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করা নিশ্চিত করবে।
কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন অংশে মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘনের কারণে এটি সত্যিকারের সার্বজনীন আইনে পরিণত হতে পারেনি। যেসব অঞ্চলে এই মূলনীতির ব্যাপক লঙ্ঘন হচ্ছে তার একটি হলো কাশ্মীর। কয়েক দিন আগে ভারত দেশটির সংবিধানে থাকা অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫ক বাতিল করে যা করেছে, সেটকে সাংবিধানিক সন্ত্রাস হিসেবে অভিহিত করা যায়। কাজটি ইউডিএইচআর নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
আমরা অনেক অঞ্চলেই মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘনের ঘটনা দেখি। বিশেষ করে সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরে গণহত্যা, ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, মানসিক অত্যাচার হচ্ছে ভয়াবহ মাত্রায়। জাতিসংঘও এসব অঞ্চলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সেভাবে কাজ করছে না।
অবিচ্ছেদ্য অধিকার
ইউডিএইচআরের মতে, কিছু অধিকার প্রতিটি মানুষের জন্য। এগুলো হলো প্রাথমিক অধিকার। কোনোভাবেই বা কোনো কারণেই এসব অধিকার কেড়ে নেয়া যায় না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইউডিএইচআরের অনুচ্ছেদ ১-এ বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষ স্বাধীন ও সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তারা যুক্তি ও সচেতনতার অধিকারী। তাদের ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনায় একে অপরের সাথে আচরণ করতে হবে। কিন্তু আমরা কাশ্মীর, ফিলিস্তিন ও পৃথিবীর অন্যান্য অংশে ইউডিএইচআরের এই অনুচ্ছেদের ভয়াবহ লঙ্ঘন দেখতে পাই। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া অনুচ্ছেদ ৩৭০ ভারতের বাতিল করাটা ইউডিএইচআরের ১ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। উল্লেখ্য, এই অনুচ্ছেদের বলে জম্মু ও কাশ্মীরের লোকজন নিজেদের জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারত। উল্লেখ্য এখানকার ৯৪ ভাগের বেশি নাগরিক মুসলিম।
অধিকন্তু, ইউডিএইচআর অনুচ্ছেদ ২-এ কোনো বৈষম্য ছাড়াই যথাযথ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্যান্য কারণে কারো স্বাধীনতা বা অন্যান্য অধিকার খর্ব না করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে সেটিই ঘটে চলেছে। কয়েক দশক ধরে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের লোকজনকে এসব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে।
ভারত সরকার অনুচ্ছেদ ৩৫ক বাতিল করে কেবল সার্বজনীন মানবাধিকারই লঙ্ঘন করেনি সেইসাথে কাশ্মীরীদের আলাদা থাকার পরিচিতিও কেড়ে নিয়েছে। এটাকে বলা যায় মানুষের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক সন্ত্রাস।
সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার তৃতীয় অনুচ্ছেদে জীবনে স্বাধীনতা, নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কয়েক দশক ধরে তা নেই। ভারতীয় সৈন্যরা এই ধারা লঙ্ঘন করে চলেছে।
আরো ভয়াবহ বিষয় হলো, দীর্ঘ দিন ধরে লঙ্ঘন হওয়া সত্ত্বেও জাতিসংঘ ও শীর্ষ শক্তিগুলো এসব ব্যাপারে নীরব থাকছে। তারা এসব লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
মনে রাখতে হবে, জাতিপুঞ্জ ভেঙে পড়েছিল এর নীতিমালা লঙ্ঘনকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে। এখন জাতিসংঘও একই পথে হাঁটলে তার পরিণতিও একই হতে পারে। ফলে জাতিসংঘ ও শীর্ষস্থানীয় বিশ্বশক্তিগুলোর উচিত হবে মানবতাকে রক্ষার জন্য সব পর্যায়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।
জাতিসংঘ পুলিশ ও শান্তিরক্ষা মিশন পাঠানো উচিত ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ইউডিএইচআর বাস্তবায়নের জন্য। জাতিসংঘ যদি ভারতীয় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কেবল নিন্দা জ্ঞাপনের বিবৃতি ছাড়া আর কিছু না করে, তবে এ ধরনের ব্যর্থতার কারণে জাতিসংঘ নিজেই হুমকির মুখে পড়বে। সে যদি মানুষের অধিকার রক্ষা করতে না পারে, তবে জাতিপুঞ্জের অবস্থাই হবে তার। ফলে জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের অবশ্যই ভারতের সাংবিধানিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে কাশ্মীরীরা তাদের মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে।
>>>আলী চ্যাঙ্গেজি সান্ধু
No comments