উত্তর কোরিয়া: নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কারা সাহায্য করছে?
চীনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শী জিনপিং প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়া সফর করছেন। শি গত ১৪ বছরের উত্তর কোরিয়া সফর করা প্রথম কোন চীনা রাষ্ট্রনেতা।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে যে, কোরিয়ান উপদ্বীপের উত্তেজনা নিয়ে উভয়পক্ষ আলাপ আলোচনা করবে। যদিও চীন উত্তর কোরিয়ার প্রধান অর্থনৈতিক সহযোগী দেশ।
অনাবৃষ্টি আর মন্দা ফসলের কারণে জরুরি ভিত্তিতে উত্তর কোরিয়ার খাদ্য সহায়তা দরকার।
সুতরাং, কারা এখন তাদের সহায়তা করতে যাচ্ছে? আর পিয়ংইয়ংয়ের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞার ওপরে তার কী প্রভাব পড়বে?
তীব্র ঘাটতি
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, দেশটি গত কয়েক দশকের ভেতর সবচেয়ে বেশি খরার মধ্যে পড়েছে।
জাতিসংঘ ধারণা করছে, প্রায় এক কোটি মানুষ- যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪০ শতাংশ, তারা বড় ধরণের দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে চলেছে।
জাতিসংঘের একটি হিসাব মতে, উত্তর কোরিয়ার প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রতিদিন মাত্র ৩০০ গ্রাম খাবার বরাদ্দ থাকে।
১৯৯০ সালের দিকে ভয়াবহ একটি দুর্ভিক্ষে দেশটিতে কয়েক লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
কারা সাহায্য পাঠাচ্ছে?
চীন অবশ্যই উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় দাতা দেশ, কিন্তু ঠিক কতটা ব্যাপকভাবে তারা সাহায্য করে, সেটা নির্ণয় করা কঠিন।
কারণ জাতিসংঘের বাইরে গিয়েও দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে চীন উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য করে থাকে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে চীন ২ লাখ ৪০ হাজার টন খাদ্য সাহায্য পাঠিয়েছিল, যা ইউরোপীয় কমিশনের পাঠানো সাহায্যের প্রায় আশি গুণ বেশি।
২০১৬ সালে বেইজিং ঘোষণা দিয়েছিল, তারা উত্তর কোরিয়ার জন্য তিন মিলিয়ন ডলার মূল্যের মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে যাচ্ছে। দেশটি বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহ করতে না পারায় চীন ওই ঘোষণা দিয়েছিল।
মার্কিন কংগ্রেসে ২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ''চীন, যাদের বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় খাদ্য সহায়তাকারী দেশ বলে মনে করা হয়, কিন্তু তাদের ওপর এ বিষয়ে কোন নজরদারির ব্যবস্থা নেই।''
অন্য দেশগুলো জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা করে থাকে।
উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ সংকট মোকাবেলায় ১২ কোটি ডলার সহায়তা চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এ সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে যে, জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচীর মাধ্যমে তারা ৫০ হাজার টন চাল উত্তর কোরিয়ায় পাঠাবে।
জুনে যে ৮ মিলিয়ন ডলারে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, এই সাহায্য তার বাইরে।
রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ৪ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত হিসাবে ৪ হাজার টন গম পাঠাবে।
জাতিসংঘের অনুরোধে সাড়া দিয়ে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, কানাডা, নরওয়ে, ফ্রান্স, জার্মানি, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
উত্তর কোরিয়ার ওপর বর্তমানে যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানে মানবিক সহায়তার ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি।
তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক হ্যাজেল স্মিথ।
তিনি বলছেন, ''২০১৬ সালের জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞায় উত্তর কোরিয়ার কাছে তেল বা গ্যাস ভিত্তিক দরকারি কৃষি সরঞ্জাম বিক্রির ওপর নিষেধ রয়েছে, যার ফলে দেশটিতে সার, কীটনাশক বা সেচের মতো কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।''
''তেল নির্ভর সরঞ্জামের অভাবে উৎপাদনের হার কমে যায় এবং অনেক কম খাদ্য উৎপাদিত হয়।''
দাতা সংস্থাগুলো বলছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়ায় তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেও বেগ পেতে হচ্ছে।
এ মাসেই ফিনিশ একটি দাতব্য সংস্থা তাদের খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য কর্মসূচী আগেভাগেই বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ তারা বলছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা 'অসম্ভব' হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাহায্য কমে যাওয়া
গত কয়েক দশক ধরে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে বাকি বিশ্বের কূটনৈতিক দূরত্বের কারণে সাহায্যের পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে।
২০১২ সালে জাতিসংঘ জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার জন্য যতখানি তহবিল দরকার আর যে পরিমাণ অর্থ সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে, তার মধ্যে ফারাক বেড়েই চলেছে।
সেই সঙ্গে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচীর খাবার সরবরাহের সংখ্যাও কমছে।
এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ায় সরকারিভাবে বা এনজিওর মাধ্যমে সাহায্য পাঠানোর হার ছিল সামান্য। তবে বর্তমান সংকটের দেশটি থেকে অনেক মানবিক সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়তাকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৪ সালে মার্কিন কংগ্রেসে দেয়া একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার পাওয়া খাদ্য সহায়তার অর্ধেকের বেশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেয়া হয়েছে।
এরপরেও বিক্ষিপ্তভাবে উত্তর কোরিয়াকে সহায়তা করা হয়েছে। কিন্তু দেশটির পারমাণবিক আর মিসাইল পরীক্ষার কারণে সেই সহায়তার হার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০১৭ সালে, প্রায় ছয় বছর পর, উত্তর কোরিয়ার ব্যাপক বন্যার সময় দেশটির জন্য সহায়তা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র এক মিলিয়ন ডলার ইউনিসেফকে দিয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে যে, কোরিয়ান উপদ্বীপের উত্তেজনা নিয়ে উভয়পক্ষ আলাপ আলোচনা করবে। যদিও চীন উত্তর কোরিয়ার প্রধান অর্থনৈতিক সহযোগী দেশ।
অনাবৃষ্টি আর মন্দা ফসলের কারণে জরুরি ভিত্তিতে উত্তর কোরিয়ার খাদ্য সহায়তা দরকার।
সুতরাং, কারা এখন তাদের সহায়তা করতে যাচ্ছে? আর পিয়ংইয়ংয়ের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞার ওপরে তার কী প্রভাব পড়বে?
তীব্র ঘাটতি
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, দেশটি গত কয়েক দশকের ভেতর সবচেয়ে বেশি খরার মধ্যে পড়েছে।
জাতিসংঘ ধারণা করছে, প্রায় এক কোটি মানুষ- যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪০ শতাংশ, তারা বড় ধরণের দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে চলেছে।
জাতিসংঘের একটি হিসাব মতে, উত্তর কোরিয়ার প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রতিদিন মাত্র ৩০০ গ্রাম খাবার বরাদ্দ থাকে।
১৯৯০ সালের দিকে ভয়াবহ একটি দুর্ভিক্ষে দেশটিতে কয়েক লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
কারা সাহায্য পাঠাচ্ছে?
চীন অবশ্যই উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় দাতা দেশ, কিন্তু ঠিক কতটা ব্যাপকভাবে তারা সাহায্য করে, সেটা নির্ণয় করা কঠিন।
কারণ জাতিসংঘের বাইরে গিয়েও দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে চীন উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য করে থাকে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে চীন ২ লাখ ৪০ হাজার টন খাদ্য সাহায্য পাঠিয়েছিল, যা ইউরোপীয় কমিশনের পাঠানো সাহায্যের প্রায় আশি গুণ বেশি।
২০১৬ সালে বেইজিং ঘোষণা দিয়েছিল, তারা উত্তর কোরিয়ার জন্য তিন মিলিয়ন ডলার মূল্যের মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে যাচ্ছে। দেশটি বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহ করতে না পারায় চীন ওই ঘোষণা দিয়েছিল।
মার্কিন কংগ্রেসে ২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ''চীন, যাদের বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় খাদ্য সহায়তাকারী দেশ বলে মনে করা হয়, কিন্তু তাদের ওপর এ বিষয়ে কোন নজরদারির ব্যবস্থা নেই।''
অন্য দেশগুলো জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা করে থাকে।
উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ সংকট মোকাবেলায় ১২ কোটি ডলার সহায়তা চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এ সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে যে, জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচীর মাধ্যমে তারা ৫০ হাজার টন চাল উত্তর কোরিয়ায় পাঠাবে।
জুনে যে ৮ মিলিয়ন ডলারে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, এই সাহায্য তার বাইরে।
রাশিয়া জানিয়েছে, তারা ৪ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত হিসাবে ৪ হাজার টন গম পাঠাবে।
জাতিসংঘের অনুরোধে সাড়া দিয়ে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, কানাডা, নরওয়ে, ফ্রান্স, জার্মানি, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
উত্তর কোরিয়ার ওপর বর্তমানে যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানে মানবিক সহায়তার ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি।
তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক হ্যাজেল স্মিথ।
তিনি বলছেন, ''২০১৬ সালের জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞায় উত্তর কোরিয়ার কাছে তেল বা গ্যাস ভিত্তিক দরকারি কৃষি সরঞ্জাম বিক্রির ওপর নিষেধ রয়েছে, যার ফলে দেশটিতে সার, কীটনাশক বা সেচের মতো কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।''
''তেল নির্ভর সরঞ্জামের অভাবে উৎপাদনের হার কমে যায় এবং অনেক কম খাদ্য উৎপাদিত হয়।''
দাতা সংস্থাগুলো বলছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়ায় তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেও বেগ পেতে হচ্ছে।
এ মাসেই ফিনিশ একটি দাতব্য সংস্থা তাদের খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য কর্মসূচী আগেভাগেই বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ তারা বলছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা 'অসম্ভব' হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাহায্য কমে যাওয়া
গত কয়েক দশক ধরে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে বাকি বিশ্বের কূটনৈতিক দূরত্বের কারণে সাহায্যের পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে।
২০১২ সালে জাতিসংঘ জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার জন্য যতখানি তহবিল দরকার আর যে পরিমাণ অর্থ সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে, তার মধ্যে ফারাক বেড়েই চলেছে।
সেই সঙ্গে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচীর খাবার সরবরাহের সংখ্যাও কমছে।
এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে উত্তর কোরিয়ায় সরকারিভাবে বা এনজিওর মাধ্যমে সাহায্য পাঠানোর হার ছিল সামান্য। তবে বর্তমান সংকটের দেশটি থেকে অনেক মানবিক সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়তাকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৪ সালে মার্কিন কংগ্রেসে দেয়া একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার পাওয়া খাদ্য সহায়তার অর্ধেকের বেশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেয়া হয়েছে।
এরপরেও বিক্ষিপ্তভাবে উত্তর কোরিয়াকে সহায়তা করা হয়েছে। কিন্তু দেশটির পারমাণবিক আর মিসাইল পরীক্ষার কারণে সেই সহায়তার হার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
২০১৭ সালে, প্রায় ছয় বছর পর, উত্তর কোরিয়ার ব্যাপক বন্যার সময় দেশটির জন্য সহায়তা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র এক মিলিয়ন ডলার ইউনিসেফকে দিয়েছে।
No comments