ধানের আগুনের উত্তাপ এখন রাজপথেও by ফজলুল হক শাওন
ধানের
ও ধানশ্রমিকের দাম নিয়ে আলোচনা এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। টাঙ্গাইলে
ধানক্ষেতে এক কৃষকের আগুন দেয়া এবং ধানশ্রমিকের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা- এ
আলোচনা এখন শুধু গ্রামে নয়, ঢাকা শহরেও হচ্ছে।
এ নিয়ে সমালোচনায় লিপ্ত বিরোধী দল, বিএনপি ও বাম রাজনৈতিক দলগুলো। ধানের দাম নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন সরকারবিরোধী ও বাম রাজনীতিক নেতারা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কোনো না কোনো সংগঠন প্রতিদিনই ধানের দাম বাড়ানোর দাবিতে মানববন্ধন করছে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে ধানের দাম, শ্রমিকের দাম, ধানক্ষেতে আগুন দেয়া নিয়ে খবর প্রকাশিত হচ্ছে অনলাইন পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এ ছাড়া টেলিভিশনগুলোও কৃষকদের কথাগুলো ফলাও করে প্রচার করছে। কৃষক ও ধানক্ষেতে আগুনের ছবি যখন পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে, তখন চায়ের স্টলে এ নিয়ে আলোচনার ঝড়ে উঠছে।
কৃষকের ছেলে যারা ঢাকা বা অন্য শহরে চাকরি করেন বাড়িতে তাদের ফোনে কথা হলে একটি বিষয়ই ওঠে আসে, তা হলো- ধান। শ্রমিকের দাম বেশি, ধান পানিতে পড়ে গেছে, ধানের দাম কম, ব্যাপারিরা ধান নিতে চায় না, ইত্যাদি কথা।
ধানক্ষেতে কৃষকের আগুন দেয়া নিয়ে সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘যারা ধানক্ষেতে আগুন দিচ্ছে তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এ কাজ করছে।’
তবে খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
খাদ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘কৃষকের সঙ্গে দয়া করে মশকরা করবেন না।’
স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতা কি মানুষকে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দেয়? আমার জানা মতে, সুস্থ চোখ অন্ধ হতে সময় লাগে। কিন্তু মাত্র ৪ মাসে ধানের ভাণ্ডার নওগাঁর গাঁও-গেরাম থেকে উঠে আসা খাদ্যমন্ত্রী গাঁয়ের কৃষকদের সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্ক ভুলে গেলেন! অন্ধ হয়ে গেলেন এসির ঠান্ডা বাতাসে!! আপনি, আমি কৃষকের ভোটে, কৃষকের দয়ায় সংসদে এসেছি। আগুন দিয়েছে নিজের ক্ষেতে, আপনার পাঞ্জাবিতে দেয়নি। তাতেই সহ্য হচ্ছে না!’
সরকারি দলেরও অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের স্ট্যাটাসের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তারা চান ধানের ন্যায্য দাম পাক কৃষক।
এ দিকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও চায় ধানের ন্যায্য দাম পাক কৃষক। জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিল মালিক নয়, সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত ধান নির্ধারিত ন্যায্যমূল্যে কিনতে হবে।
জিএম কাদের বলেন, প্রয়োজনে বেসরকারি মালিকানাধীন গুদামগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জরুরিভিত্তিতে ধান সংরক্ষণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রতি মণ ধান উৎপাদনে কৃষকদের খরচ হয়েছে ৯০৬ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা। আবার ধান কাটতে একজন কৃষি শ্রমিকের তিনবেলা খাবারসহ মজুরিবাবদ খরচ হয় ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা। এতে কৃষকরা মাঠের ধান কাটাতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।’
খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, ‘মন্ত্রীরা কি ভুলে গেছেন তাদের বাড়ি কোথায় ছিল? তাদের পূর্বপুরুষ কি ছিল? এ সরকার বুঝতে পারছে না। যদি এমন চলতে থাকে তাহলে দেশে আগুন জ্বলে যাবে। কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য দেয়া হচ্ছে না। কৃষকরা যদি একবার ক্ষেপে যায় তাহলে দেশের মানুষ না খেয়ে মরবে।’
তিনি বলেন, বঙ্গভবনে, গণভবনে, সচিবালয়ে ফসল উৎপাদন হয় না। উৎপাদন হয় ক্ষেতে-খামারে, আর সেই উৎপাদন যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে দেশ চলবে কীভাবে? দেশের মানুষ বাঁচবে কীভাব? কৃষক না বাঁচলে দেশ থাকবে না, দেশের জনগণ বাঁচবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে দেশটাকে নতুন করে গড়তে হবে।’
কৃষকদের এমন দুরবস্থায়, দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ‘সরকারি ক্রয়কেন্দ্র’ চালু করে খোদ কৃষকের কাছ থেকে ১,০৪০ টাকা মণ দরে ধান কেনার দাবিতে ২০-২৬ মে দেশব্যাপী ‘কৃষক বাঁচাও সপ্তাহ’ এর ডাক দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
এ উপলক্ষে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতির অন্যতম কারিগর হচ্ছে বাংলার কৃষক। তারা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। কিন্তু তারা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। তারা মুনাফালোভী ‘রাইস মিল মালিক’ ও ‘ধান-চাল সিন্ডিকেট’ এর প্রতারণার ফলে উৎপাদন ব্যয়ের অর্ধেক দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
এ ছাড়া গত কয়েকদিন রাজধানীতে কৃষক সমিতি, ক্ষেত মজুর সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে।
শনিবার ঢাকার এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ধানের দাম কমে যাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই চিন্তিত। বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবারও তিনি ও খাদ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। সরকারের সর্বোচ্চ মহলে এ সমস্যা সমাধানের চিন্তা-ভাবনা চলছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে ধান কিনে সরকারের পক্ষে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কম হলেও দ্রুত এর সমাধান কঠিন। আমাদের হয়তো কিছুটা সেক্রিফাইস করতে হবে। সারাদেশ থেকে চাষিদের নির্বাচন করা কঠিন হওয়ায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান মন্ত্রী।
প্রতিমণ ধানের দাম কমপক্ষে ১ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ধানের দাম বৃদ্ধির দাবিতে রোববার রাজশাহীতে বিক্ষোভ-সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে তিনি এ দাবি জানান।
কৃষক বাঁচাতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ১৪দলের নেতা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, কোনো অজুহাত শুনতে চাই না, কৃষক বাঁচাতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রোববার প্রেস ক্লাবের সামনে ‘কোনো অজুহাত ছাড়া সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ১০৪০ টাকা মন দরে ধান ক্রয়ের’ দাবিতে জাতীয় কৃষক জোট আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষককে ধানের ন্যায্যমূল্য দেয়ার দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২১ মে দেশব্যাপী জেলা প্রশাসকের কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে স্মারকলিপি এবং ২৩ মে সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের হাট-বাজারগুলোতে মানববন্ধন।
কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু রোববার প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বলেন, গত এক শতাব্দীতে লক্ষ করবেন কৃষক তার উৎপাদিত ধানে আগুন দিয়েছে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এই সরকারের আমলে ঘটেছে। কী ভয়ঙ্কর! কৃষক তার ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষেতে আগুন দিচ্ছে আর সরকার নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে।
কৃষক দলের পক্ষ থেকে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবিতে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২১, ২২, ২৩, ২৪ মে সারাদেশের সব ইউনিয়নের হাটে প্রতিবাদ সমাবেশ, ২৫ মে সব উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ২৬ মে সারা দেশের প্রত্যেকটি জেলায় জেলা প্রশাসক বরাবর ধানের ন্যায্যমূল্য দাবিতে স্মারকলিপি দেয়া।
এদিকে নির্ধারিত ও ন্যায্যমূল্যে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। আগামী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
রোববার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে খাদ্য মন্ত্রণালয় সচিব ও কৃষি মন্ত্রণালয় সচিব বরাবর এই নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমদাদুল হক সুমন। দ্রুত এক হাজার টাকা, ১,১০০ ও ১,২০০ টাকা মূল্যে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকার এবং সরকারের নির্ধারিত মিল কর্তৃপক্ষকে ধান ক্রয় করতে বলা হয়েছে নোটিশে। ধানের দাম নিয়ে এ ধরনের আইনি নোটিশ এই প্রথম। এর আগে কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
এ নিয়ে সমালোচনায় লিপ্ত বিরোধী দল, বিএনপি ও বাম রাজনৈতিক দলগুলো। ধানের দাম নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন সরকারবিরোধী ও বাম রাজনীতিক নেতারা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কোনো না কোনো সংগঠন প্রতিদিনই ধানের দাম বাড়ানোর দাবিতে মানববন্ধন করছে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে ধানের দাম, শ্রমিকের দাম, ধানক্ষেতে আগুন দেয়া নিয়ে খবর প্রকাশিত হচ্ছে অনলাইন পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। এ ছাড়া টেলিভিশনগুলোও কৃষকদের কথাগুলো ফলাও করে প্রচার করছে। কৃষক ও ধানক্ষেতে আগুনের ছবি যখন পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে, তখন চায়ের স্টলে এ নিয়ে আলোচনার ঝড়ে উঠছে।
কৃষকের ছেলে যারা ঢাকা বা অন্য শহরে চাকরি করেন বাড়িতে তাদের ফোনে কথা হলে একটি বিষয়ই ওঠে আসে, তা হলো- ধান। শ্রমিকের দাম বেশি, ধান পানিতে পড়ে গেছে, ধানের দাম কম, ব্যাপারিরা ধান নিতে চায় না, ইত্যাদি কথা।
ধানক্ষেতে কৃষকের আগুন দেয়া নিয়ে সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘যারা ধানক্ষেতে আগুন দিচ্ছে তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এ কাজ করছে।’
তবে খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
খাদ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘কৃষকের সঙ্গে দয়া করে মশকরা করবেন না।’
স্ট্যাটাসে তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতা কি মানুষকে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দেয়? আমার জানা মতে, সুস্থ চোখ অন্ধ হতে সময় লাগে। কিন্তু মাত্র ৪ মাসে ধানের ভাণ্ডার নওগাঁর গাঁও-গেরাম থেকে উঠে আসা খাদ্যমন্ত্রী গাঁয়ের কৃষকদের সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্ক ভুলে গেলেন! অন্ধ হয়ে গেলেন এসির ঠান্ডা বাতাসে!! আপনি, আমি কৃষকের ভোটে, কৃষকের দয়ায় সংসদে এসেছি। আগুন দিয়েছে নিজের ক্ষেতে, আপনার পাঞ্জাবিতে দেয়নি। তাতেই সহ্য হচ্ছে না!’
সরকারি দলেরও অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের স্ট্যাটাসের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তারা চান ধানের ন্যায্য দাম পাক কৃষক।
এ দিকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও চায় ধানের ন্যায্য দাম পাক কৃষক। জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিল মালিক নয়, সরকারিভাবে কৃষকদের কাছ থেকে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত ধান নির্ধারিত ন্যায্যমূল্যে কিনতে হবে।
জিএম কাদের বলেন, প্রয়োজনে বেসরকারি মালিকানাধীন গুদামগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জরুরিভিত্তিতে ধান সংরক্ষণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রতি মণ ধান উৎপাদনে কৃষকদের খরচ হয়েছে ৯০৬ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা। আবার ধান কাটতে একজন কৃষি শ্রমিকের তিনবেলা খাবারসহ মজুরিবাবদ খরচ হয় ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা। এতে কৃষকরা মাঠের ধান কাটাতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন।’
খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, ‘মন্ত্রীরা কি ভুলে গেছেন তাদের বাড়ি কোথায় ছিল? তাদের পূর্বপুরুষ কি ছিল? এ সরকার বুঝতে পারছে না। যদি এমন চলতে থাকে তাহলে দেশে আগুন জ্বলে যাবে। কৃষকদের ধানের ন্যায্যমূল্য দেয়া হচ্ছে না। কৃষকরা যদি একবার ক্ষেপে যায় তাহলে দেশের মানুষ না খেয়ে মরবে।’
তিনি বলেন, বঙ্গভবনে, গণভবনে, সচিবালয়ে ফসল উৎপাদন হয় না। উৎপাদন হয় ক্ষেতে-খামারে, আর সেই উৎপাদন যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে দেশ চলবে কীভাবে? দেশের মানুষ বাঁচবে কীভাব? কৃষক না বাঁচলে দেশ থাকবে না, দেশের জনগণ বাঁচবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করিয়ে দেশটাকে নতুন করে গড়তে হবে।’
কৃষকদের এমন দুরবস্থায়, দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ‘সরকারি ক্রয়কেন্দ্র’ চালু করে খোদ কৃষকের কাছ থেকে ১,০৪০ টাকা মণ দরে ধান কেনার দাবিতে ২০-২৬ মে দেশব্যাপী ‘কৃষক বাঁচাও সপ্তাহ’ এর ডাক দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
এ উপলক্ষে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতির অন্যতম কারিগর হচ্ছে বাংলার কৃষক। তারা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। কিন্তু তারা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। তারা মুনাফালোভী ‘রাইস মিল মালিক’ ও ‘ধান-চাল সিন্ডিকেট’ এর প্রতারণার ফলে উৎপাদন ব্যয়ের অর্ধেক দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
এ ছাড়া গত কয়েকদিন রাজধানীতে কৃষক সমিতি, ক্ষেত মজুর সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে।
শনিবার ঢাকার এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ধানের দাম কমে যাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই চিন্তিত। বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবারও তিনি ও খাদ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। সরকারের সর্বোচ্চ মহলে এ সমস্যা সমাধানের চিন্তা-ভাবনা চলছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে ধান কিনে সরকারের পক্ষে দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কম হলেও দ্রুত এর সমাধান কঠিন। আমাদের হয়তো কিছুটা সেক্রিফাইস করতে হবে। সারাদেশ থেকে চাষিদের নির্বাচন করা কঠিন হওয়ায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান মন্ত্রী।
প্রতিমণ ধানের দাম কমপক্ষে ১ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ধানের দাম বৃদ্ধির দাবিতে রোববার রাজশাহীতে বিক্ষোভ-সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি চলাকালে তিনি এ দাবি জানান।
কৃষক বাঁচাতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ১৪দলের নেতা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, কোনো অজুহাত শুনতে চাই না, কৃষক বাঁচাতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রোববার প্রেস ক্লাবের সামনে ‘কোনো অজুহাত ছাড়া সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ১০৪০ টাকা মন দরে ধান ক্রয়ের’ দাবিতে জাতীয় কৃষক জোট আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষককে ধানের ন্যায্যমূল্য দেয়ার দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২১ মে দেশব্যাপী জেলা প্রশাসকের কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে স্মারকলিপি এবং ২৩ মে সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ের হাট-বাজারগুলোতে মানববন্ধন।
কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু রোববার প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বলেন, গত এক শতাব্দীতে লক্ষ করবেন কৃষক তার উৎপাদিত ধানে আগুন দিয়েছে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এই সরকারের আমলে ঘটেছে। কী ভয়ঙ্কর! কৃষক তার ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষেতে আগুন দিচ্ছে আর সরকার নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে।
কৃষক দলের পক্ষ থেকে কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবিতে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২১, ২২, ২৩, ২৪ মে সারাদেশের সব ইউনিয়নের হাটে প্রতিবাদ সমাবেশ, ২৫ মে সব উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ২৬ মে সারা দেশের প্রত্যেকটি জেলায় জেলা প্রশাসক বরাবর ধানের ন্যায্যমূল্য দাবিতে স্মারকলিপি দেয়া।
এদিকে নির্ধারিত ও ন্যায্যমূল্যে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। আগামী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
রোববার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে খাদ্য মন্ত্রণালয় সচিব ও কৃষি মন্ত্রণালয় সচিব বরাবর এই নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমদাদুল হক সুমন। দ্রুত এক হাজার টাকা, ১,১০০ ও ১,২০০ টাকা মূল্যে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকার এবং সরকারের নির্ধারিত মিল কর্তৃপক্ষকে ধান ক্রয় করতে বলা হয়েছে নোটিশে। ধানের দাম নিয়ে এ ধরনের আইনি নোটিশ এই প্রথম। এর আগে কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
No comments