আমদানি খোলা রেখেই চাল রপ্তানির উদ্যোগ লাভ হবে ব্যবসায়ীদের
দেশে
চাল আমদানির পথ খোলা রেখে রপ্তানির উদ্যোগ নেয়া হলে ব্যবসায়ীরাই বেশি
লাভবান হবেন বলে মনে করেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। তারা জানিয়েছেন,
কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে চাল করে দেশের বাইরে বেশি দামে
রপ্তানি করা হলে রপ্তানিকারকরাই এর সুবিধাভোগ করবে।
মধ্যস্বত্বভোগীরাই লাভবান হবে। কৃষক এর সুবিধা বা দাম পাবে না। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সম্প্রতি সরকারের চাল রপ্তানির উদ্যোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা এ মন্তব্য করেন। বলেন, কৃষকের কথা বলা হলেও এই মুহূর্তে কৃষকের গোলায় ধান-চাল কিছুই নাই। চাল রয়েছে আড়ৎদারদের গুদামে। এই গুদাম খালি করতেই ব্যবসায়ীরা রপ্তানির অনুমতি চেয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা বাড়তি মুনাফা করতে চাচ্ছেন। এতে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে নানামুখী চাপে শেষ পর্যন্ত সীমিত পরিমাণে চাল রপ্তানির অনুমতি দেয়া হতে পারে বলে তারা মনে করেন।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশ থেকে চাল রপ্তানির জন্য খুব সহজে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। তার মতে, কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে চাল করে দেশের বাইরে বেশি দামে রপ্তানি করা হলে রপ্তানিকারকরাই লাভবান হবে। মধ্যস্বত্বভোগীরাই এর সুবিধাভোগ করবে। কৃষক এর সুবিধা পাবে না। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া বর্তমানে যে অবস্থা চলছে, এর মধ্যে চাল রপ্তানি করা হলে আগামীতে দাম বৃদ্ধিকে উসকে দেবে। আরো বিশ্লেষণ করে চাল রপ্তানির চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই যে আমাদের দেশে বিশাল পরিমাণ চাল উদ্বৃত্ত আছে। এজন্য কৃষক দাম পাবে সেভাবেই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মুনসুর বলেন, কৃষক ধানের দাম পাচ্ছেন না। এজন্য চাল রপ্তানি করাই উচিত। তবে যদি সরকার সেটা সিস্টেমেটিকভাবে রপ্তানি করতে পারে তাহলে কৃষক দাম পেতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে তো সেটা হয় না। এছাড়া মনে হয় না কোনো চমকপ্রদ কিছু ঘটবে। তাই বলা যায়, চাল রপ্তানি করা হলে ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন।
বাংলাদেশ অটো রাইচমিল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম খোরশেদ আলম অভিযোগ করে বলেন, কিছু ব্যাংক কয়েকটি বড় কোম্পানিকে ধান কেনা বাবদ ২০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা মূলধন দিচ্ছে। অথচ ছোট রাইচ মিলগুলোকে ৫০ লাখ টাকাও দিতে চাইছে না। তিনি বলেন, টাকার অভাবে দেশের প্রায় ৭০ ভাগ রাইচ মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে কৃষক ওই সব মিলে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে পানির দরে ধান কিনে মজুদ করছে সিন্ডিকেটে থাকা ওইসব বড় কোম্পানি। সরকারিভাবে ধান-চাল কেনার ক্ষেত্রে নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কাও করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সমপ্রতি দি এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বিআরআইইএফ কর্তৃক প্রকাশিত ‘দ্য পলিটিক্যাল ইকোনমি অব রাইস ট্রেড বিটুইন বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া অ্যান্ড নেপাল’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ২০ মাসে ভারত থেকে প্রায় ২৪ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে দেশে। এর সিংহভাগ নন-বাসমতী হলেও বাসমতী চালও রয়েছে।
সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, চাল আমদানি উন্মুক্ত রেখে কৃষকের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ সাংঘর্ষিক। গত আমন মৌসুমে যখন বাম্পার ফলন হলো, তখনই উচিত ছিল চাল আমদানি বন্ধ কিংবা আরো উচ্চ শুল্কারোপ, সেটি করা হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দেশে উৎপাদন কমে গেলে আমদানি শিথিল করা যেতে পারে। চলতি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। আমনের পর বোরোতে পরপর দুই মৌসুম ভালো ফলনের কারণে চাল আমদানির ব্যাপারে এখনই কঠোর হতে হবে। তা না হলে কৃষক যে বোরো ধানের দাম পাচ্ছেন না তা আরো জটিল আকার ধারণ করবে।
জানা গেছে, ব্যবসায়ীর কারসাজি বন্ধ, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও চালের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে সরকার। এতে প্রায় দেড় বছর চাল আমদানি এক রকম বন্ধ ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের মে মাসে পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওড় অঞ্চলে সৃষ্ট আগাম বন্যায় ফসলহানির পর সরকার চালের আমদানি শুল্ক উঠিয়ে দেয়। এর ফলে ব্যাপকভাবে চাল আমদানি শুরু হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে প্রায় ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়। গত বছরের শেষ দিকে সরকার চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহাল করে। এতে চাল আমদানি কমলেও বন্ধ হয়নি। যদিও হাওড়ের বন্যায় চালের ঘাটতি ১০ লাখ টন হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু গত দুই বছরে দেশে ৫৫ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছর আমদানি হয় ১৩ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছর প্রায় ৪০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে মোট আমদানি দুই লাখ টন হলেও এখনো পাইপলাইনে ৩ লাখ ৮০ হাজার টন চাল রয়েছে।
মধ্যস্বত্বভোগীরাই লাভবান হবে। কৃষক এর সুবিধা বা দাম পাবে না। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সম্প্রতি সরকারের চাল রপ্তানির উদ্যোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা এ মন্তব্য করেন। বলেন, কৃষকের কথা বলা হলেও এই মুহূর্তে কৃষকের গোলায় ধান-চাল কিছুই নাই। চাল রয়েছে আড়ৎদারদের গুদামে। এই গুদাম খালি করতেই ব্যবসায়ীরা রপ্তানির অনুমতি চেয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা বাড়তি মুনাফা করতে চাচ্ছেন। এতে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে নানামুখী চাপে শেষ পর্যন্ত সীমিত পরিমাণে চাল রপ্তানির অনুমতি দেয়া হতে পারে বলে তারা মনে করেন।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশ থেকে চাল রপ্তানির জন্য খুব সহজে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। তার মতে, কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে চাল করে দেশের বাইরে বেশি দামে রপ্তানি করা হলে রপ্তানিকারকরাই লাভবান হবে। মধ্যস্বত্বভোগীরাই এর সুবিধাভোগ করবে। কৃষক এর সুবিধা পাবে না। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া বর্তমানে যে অবস্থা চলছে, এর মধ্যে চাল রপ্তানি করা হলে আগামীতে দাম বৃদ্ধিকে উসকে দেবে। আরো বিশ্লেষণ করে চাল রপ্তানির চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই যে আমাদের দেশে বিশাল পরিমাণ চাল উদ্বৃত্ত আছে। এজন্য কৃষক দাম পাবে সেভাবেই সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মুনসুর বলেন, কৃষক ধানের দাম পাচ্ছেন না। এজন্য চাল রপ্তানি করাই উচিত। তবে যদি সরকার সেটা সিস্টেমেটিকভাবে রপ্তানি করতে পারে তাহলে কৃষক দাম পেতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে তো সেটা হয় না। এছাড়া মনে হয় না কোনো চমকপ্রদ কিছু ঘটবে। তাই বলা যায়, চাল রপ্তানি করা হলে ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন।
বাংলাদেশ অটো রাইচমিল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম খোরশেদ আলম অভিযোগ করে বলেন, কিছু ব্যাংক কয়েকটি বড় কোম্পানিকে ধান কেনা বাবদ ২০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা মূলধন দিচ্ছে। অথচ ছোট রাইচ মিলগুলোকে ৫০ লাখ টাকাও দিতে চাইছে না। তিনি বলেন, টাকার অভাবে দেশের প্রায় ৭০ ভাগ রাইচ মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে কৃষক ওই সব মিলে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে পানির দরে ধান কিনে মজুদ করছে সিন্ডিকেটে থাকা ওইসব বড় কোম্পানি। সরকারিভাবে ধান-চাল কেনার ক্ষেত্রে নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কাও করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সমপ্রতি দি এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বিআরআইইএফ কর্তৃক প্রকাশিত ‘দ্য পলিটিক্যাল ইকোনমি অব রাইস ট্রেড বিটুইন বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া অ্যান্ড নেপাল’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ২০ মাসে ভারত থেকে প্রায় ২৪ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে দেশে। এর সিংহভাগ নন-বাসমতী হলেও বাসমতী চালও রয়েছে।
সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, চাল আমদানি উন্মুক্ত রেখে কৃষকের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ সাংঘর্ষিক। গত আমন মৌসুমে যখন বাম্পার ফলন হলো, তখনই উচিত ছিল চাল আমদানি বন্ধ কিংবা আরো উচ্চ শুল্কারোপ, সেটি করা হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দেশে উৎপাদন কমে গেলে আমদানি শিথিল করা যেতে পারে। চলতি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। আমনের পর বোরোতে পরপর দুই মৌসুম ভালো ফলনের কারণে চাল আমদানির ব্যাপারে এখনই কঠোর হতে হবে। তা না হলে কৃষক যে বোরো ধানের দাম পাচ্ছেন না তা আরো জটিল আকার ধারণ করবে।
জানা গেছে, ব্যবসায়ীর কারসাজি বন্ধ, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও চালের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে সরকার। এতে প্রায় দেড় বছর চাল আমদানি এক রকম বন্ধ ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের মে মাসে পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওড় অঞ্চলে সৃষ্ট আগাম বন্যায় ফসলহানির পর সরকার চালের আমদানি শুল্ক উঠিয়ে দেয়। এর ফলে ব্যাপকভাবে চাল আমদানি শুরু হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে প্রায় ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়। গত বছরের শেষ দিকে সরকার চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহাল করে। এতে চাল আমদানি কমলেও বন্ধ হয়নি। যদিও হাওড়ের বন্যায় চালের ঘাটতি ১০ লাখ টন হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু গত দুই বছরে দেশে ৫৫ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছর আমদানি হয় ১৩ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছর প্রায় ৪০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে মোট আমদানি দুই লাখ টন হলেও এখনো পাইপলাইনে ৩ লাখ ৮০ হাজার টন চাল রয়েছে।
No comments