থাইল্যান্ডের গুহায় ১৭ দিন শিশুদের আগলে রাখা সেই কোচ by মাহাদী হাসান
ঢুকেছিলেন
তিনিই প্রথম। বের হয়েছেন সবার পরে। বৃষ্টির ঝুঁকি নিয়েও কিশোর ফুটবলাররা
থাম লুয়াং গুহায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল তার কারণেই। থাইল্যান্ডের
ওয়াইল্ড বোর্স ফুটবল দলের কোচ একাপল আকে চান্থাওং তাই বিতর্কিত হয়েছেন।
নিন্দুকেরা বলেছে, এমন দুর্গম আর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কিশোরদের নিয়ে গিয়ে
মোটেও ঠিক কাজ করেননি তিনি। তার অনুমতির কারণেই ১৭ দিনের ‘অন্ধকার যাপন’
বাস্তবতায় কাটাতে হলো কিশোরদের। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে,
এই কোচ গুহার ভেতরের সেই অন্ধকার দিনগুলোতে আলোকশিখা হয়ে জ্বলেছেন।
ডুবুরিরা বেরিয়ে এসে সাক্ষ্য দিয়েছেন, একাপল আকে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন
কিশোরদের আগলে রাখতে। ওই শিশুদের অভিভাবকরাও তাই আস্থাশীল ছিলেন কোচের ওপর।
ছেলেরা গুহায় থাকা অবস্থাতেই তারা বলেছিলেন, একাপলের প্রতি তাদের আস্থা
আছে। ভরসা ছিল বন্ধুদেরও। কাছের মানুষরা তাকে সমাজের জন্য নিবেদিতপ্রাণ
মানুষ হিসেবেই জানেন। সবার কাছেই তিনি বিশ্বাস, মানুষের জন্য মমতা,
ভালোবাসা আর নিরাপদ আশ্রয়’। স্বজনদের একজন তাই মনে করছেন, এমনও হতে পারে যে
রোদ থেকে শিশুদের বাঁচাতে তিনি তাদের নিয়ে গুহায় ঢুকে পড়েছিলেন!
গত ২৩ জুন ফুটবল অনুশীলন শেষে ২৫ বছর বয়সী কোচসহ ওই ১২ কিশোর ফুটবলার গুহাটির ভেতরে ঘুরতে গিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে গুহার প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আর বের হতে পারেনি। তার ভূমিকাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ মনে করছেন অনেকে। তবে নিজ এলাকায় পরোপকারের জন্য খুবই জনপ্রিয় একাপল। সমাজকর্মী ও আধ্যাত্ম সাধনার জন্য তার খ্যাতি আছে। অবহেলা কিংবা দায়িত্বহীনতার অভিযোগকে তাই উড়িয়ে দিয়েছেন পরিচিতজনরা। থামা কান্তাওয়ং নামে তার একজন আত্মীয়ের ভাষ্য, ‘ও দলকে ভালোবাসে। যখনই কোথাও যেত, বাচ্চাগুলোর সঙ্গে সেঁটে থাকতো। অভিভাবকরাও তাই ভরসা করতো ওকে।’ কোচের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কান্তাওয়াং বলেন, ‘সে খুবই ভালো মানুষ। বাচ্চাদের ভালোবাসে। সবাইকে সাহায্য করে। খুব বিনয়ী।’
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কান্তাওয়াং কোচ একাপলের অতীতে ফিরে যান। জানান, 'ছেলেবেলাতেই বাবা-মাকে হারিয়েছে। অল্প দিন পর গত হয়েছেন ভাই। এতিম একাপল তখন বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছে আশ্রয় নেয়। মঠেই এক দশকের শৈশব। মাঝে মাঝে কেবল একটু সময়ের জন্য বের হওয়া আর দাদিকে দেখতে আসা।' কান্তাওং বলেন, 'সেই সময়টা ওর জন্য খুবই কঠিন ছিল।'
২০ বছর বয়সে আবারও জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় একাপলের। ভিক্ষুর জীবন ছাড়লেও মন্দিরগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তার। প্রার্থনা ও সমাজসেবায় ব্যস্ত থাকতেন তিনি। কান্তাওয়াং বলেন, 'আকে সবসময়ই অন্যদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ।'
গুহায় প্রবেশের ৯ দিন পর ২ জুলাই গুহার ভেতরে শনাক্ত করা যায় কোচ আকে আর ১২ কিশোর ফুটবলারকে। গুহার উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া ডুবুরিরা তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানান, আটকে পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন কোচ। কেননা, নিজে না খেয়ে কিশোরদের খাইয়েছেন তিনি। আত্মীয় কাতাওয়াংও সেই বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, সবসময়ই অন্যদের প্রতি মনোযোগী অাকে। গুহায় আটকে থাকা প্রথম ৯ দিন সে শিশুদের সাহায্যে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে। সোমবার রাতে ওয়াইল্ড বোর ক্লাবের সিনিয়র দল অনুশীলন শুরু করেছে। জুনিয়র টিম আটকা পড়ার পর তারা সব অনুশীলন স্থগিত করেছিল। তারা জানায়, এমন অবস্থায় তারা অনুশীলন চালাতে পারে না। তবে উদ্ধার অভিযান সফল হতে থাকার পর তারা উদ্ধারকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতেই অনুশীলন শুরু করে। সপ্তাহে কয়েকবার ট্রেনিং দিলেও তেমন সম্মানী পেতেন না আকে। তবে টাকার কথা কখনও মাথায় নেয়নি। কান্তাওয়াং জানত, সে ফুটবল ভালোবাসতো, ভালোবাসত শিশুদের।
অনুশীলনরত সিনিয়র দলের সদস্যরা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন অাকের প্রতি তাদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার কথা। তারা জানান, শিশুদের জন্য যেকোনও কিছু করতে ঝাঁপিয়ে পড়ার বাতিক আছে আকের। কায়ে হায়ে লাহুনা নামে এক খেলোয়াড়ের ভাষ্য, কোচ খুবই ভালো মানুষ। সবসময়ই শিশুদের সঙ্গে খেলতেন। তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও সার্বক্ষণিক নজর ছিল তার।’ কিশোর ফুটবলাররা যেই গুহায় আটকা পড়ে তার কাছেই অনুশীলন করেন সিনিয়র দলের সদস্যরা। লাহুনা বলেন, ‘যখন আমরা আটকে পড়ার খবর জানতে পারি, সাথে সাথেই ১১ জন সেখানে চলে যাই। পরদিন ভোর চারটা পর্যন্ত আমরা প্রবেশমুখে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।’ সিনিয়র টিমের কোচ পান্নাওয়াত জংকাম তাই আস্থাশীল। বলেন, ‘ও যখন বেরিয়ে আসবে, দেখবেন সবই ঠিক থাকবে। আমরা আগের মতোই তার সঙ্গে থাকব।’
গুহায় আটকে পড়া কিশোরদের বন্ধু অতাপর্ন খামেং। কোচ আকের সঙ্গেও তার সম্পর্ক দারুণ। যখন থেকেই আটকে পড়ার খবর শুনেছেন তখন থেকেই তার শঙ্কা সবাই ফিরবে তো। তবে আকের প্রশংসা করেছেন তিনি। অভিভাবকদের মতো করেই তার ওপরই ভরসা ছিল তার। উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ার আগে সে বলেছিল, ‘আমি আকেকে ভালোবাসি, তাকেই ভরসা করি। তিনি নিশ্চয়ই সবার খেয়াল রাখছেন। যারা আটকে আছে তারা সবাই নায়ক। তবে সবসময় বড় নায়ক আমাদের কোচ। আমি নিশ্চিত তিনি তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে শিশুদের সহায়তা করে যাচ্ছেন।’ খামেং মনে করে, কোচ এই দোষ হয়তো নিজেই নিতে চাইবেন। ‘তার ব্যাপারেই আমি চিন্তিত। আমি খুব শিগগিরই তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। আবার ফুটবল খেলতে চাই।’ সংবাদমাধ্যমের কাছে আর্তিময় কণ্ঠে বলে খামেং।
আকে আসলেই নিজের ওপর দোষ নিয়েছেন আগেই। গুহা থেকেই হাতে লেখা এক চিঠিতে কোচ কিশোরদের স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, সব ছেলেই ভালো আছে। অনেক মানুষই তাদের খোঁজ-খবর রাখছেন। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, শিশুদের দেখাশোনার জন্য সবকিছু করব। আপনাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। আমি সব অভিভাবকের কাছে ক্ষমা চাইছি। তবে অভিভাবকদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা কোচকে কোনও দোষ দিচ্ছেন না। এক চিঠিতে তারা লিখেছেন, ‘প্রিয় কোচ আকে, আপনার ফুটবল দলের সদস্যদের অভিভাবক হিসেবে আপনার প্রতি এবং শিশুদের ভালো যত্ন নেওয়া মনোভাবের প্রতি আমরা আস্থাশীল। আমরা আপনাকে জানাতে চাই যে এটা আপনার ভুল নয়। আমরা এখান থেকে কাউকে দোষ দিচ্ছি না, আপনিও নিজেকে দোষী ভাববেন না। আমরা সবাই পরিস্থিতি বুঝতে পারছি এবং আপনাকে সমর্থন জানাচ্ছি। আমাদের শিশুদের প্রতি আপনার ভালোবাসা ও যত্নকে সমর্থন করছি। সবাইকে নিয়ে নিরাপদে শিগগিরই গুহা থেকে আপনার বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করছি আমরা। আপনার চাচিও গুহার প্রবেশমুখে অপেক্ষা করছেন।’
আকের চাচির বাড়ির পেছনেই একটি বৌদ্ধ মন্দির। মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে থাকা সেই মন্দিরের পুরোহিতরাও আশাবাদী ছিলেন আকে ফিরে আসবেন শিশুদের নিয়ে। আবার হাসিমুখে নিজের বাইকে করে মন্দিরে সবার সঙ্গে দেখা করবে। জয় নামে সাবেক এক ভিক্ষু বলেন, মায়ে সায়ে মন্দিরের সক্রিয় সদস্য আকে। সবসময়ই নিজের মোটরবাইকে শিশুদের নিয়ে পাহাড়ে ঘুরতে যেতেন তিনি। এখন নিজেই শিল্পী আর মন্দিরের সাজসজ্জা বৃদ্ধিতে ছবি আঁকছেন। তিনি বলেন, ‘আকেকে সবাই চেনে। খুবই ভালো মানুষ। আমি তাকে প্রায়ই ওয়াত ফা তাত দোই ওয়াও মন্দিরে দেখতে পাই। সেখানেই প্রার্থনা করে। আমরা সেখানেই গল্প করি।’ আত্মীয় কান্তাওয়াং জানান, তিনি আকের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। উদ্ধারকারীদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। ‘আমি জানি না সে কেনও ওখানে গিয়েছে। হতে পারে রোদের কারণে ছায়া খুঁজতে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল’।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, বিবিসি, স্টাফ-নিউ জিল্যান্ড
গত ২৩ জুন ফুটবল অনুশীলন শেষে ২৫ বছর বয়সী কোচসহ ওই ১২ কিশোর ফুটবলার গুহাটির ভেতরে ঘুরতে গিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে গুহার প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আর বের হতে পারেনি। তার ভূমিকাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ মনে করছেন অনেকে। তবে নিজ এলাকায় পরোপকারের জন্য খুবই জনপ্রিয় একাপল। সমাজকর্মী ও আধ্যাত্ম সাধনার জন্য তার খ্যাতি আছে। অবহেলা কিংবা দায়িত্বহীনতার অভিযোগকে তাই উড়িয়ে দিয়েছেন পরিচিতজনরা। থামা কান্তাওয়ং নামে তার একজন আত্মীয়ের ভাষ্য, ‘ও দলকে ভালোবাসে। যখনই কোথাও যেত, বাচ্চাগুলোর সঙ্গে সেঁটে থাকতো। অভিভাবকরাও তাই ভরসা করতো ওকে।’ কোচের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কান্তাওয়াং বলেন, ‘সে খুবই ভালো মানুষ। বাচ্চাদের ভালোবাসে। সবাইকে সাহায্য করে। খুব বিনয়ী।’
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কান্তাওয়াং কোচ একাপলের অতীতে ফিরে যান। জানান, 'ছেলেবেলাতেই বাবা-মাকে হারিয়েছে। অল্প দিন পর গত হয়েছেন ভাই। এতিম একাপল তখন বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছে আশ্রয় নেয়। মঠেই এক দশকের শৈশব। মাঝে মাঝে কেবল একটু সময়ের জন্য বের হওয়া আর দাদিকে দেখতে আসা।' কান্তাওং বলেন, 'সেই সময়টা ওর জন্য খুবই কঠিন ছিল।'
২০ বছর বয়সে আবারও জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় একাপলের। ভিক্ষুর জীবন ছাড়লেও মন্দিরগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল তার। প্রার্থনা ও সমাজসেবায় ব্যস্ত থাকতেন তিনি। কান্তাওয়াং বলেন, 'আকে সবসময়ই অন্যদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ।'
গুহায় প্রবেশের ৯ দিন পর ২ জুলাই গুহার ভেতরে শনাক্ত করা যায় কোচ আকে আর ১২ কিশোর ফুটবলারকে। গুহার উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া ডুবুরিরা তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানান, আটকে পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন কোচ। কেননা, নিজে না খেয়ে কিশোরদের খাইয়েছেন তিনি। আত্মীয় কাতাওয়াংও সেই বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, সবসময়ই অন্যদের প্রতি মনোযোগী অাকে। গুহায় আটকে থাকা প্রথম ৯ দিন সে শিশুদের সাহায্যে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে। সোমবার রাতে ওয়াইল্ড বোর ক্লাবের সিনিয়র দল অনুশীলন শুরু করেছে। জুনিয়র টিম আটকা পড়ার পর তারা সব অনুশীলন স্থগিত করেছিল। তারা জানায়, এমন অবস্থায় তারা অনুশীলন চালাতে পারে না। তবে উদ্ধার অভিযান সফল হতে থাকার পর তারা উদ্ধারকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতেই অনুশীলন শুরু করে। সপ্তাহে কয়েকবার ট্রেনিং দিলেও তেমন সম্মানী পেতেন না আকে। তবে টাকার কথা কখনও মাথায় নেয়নি। কান্তাওয়াং জানত, সে ফুটবল ভালোবাসতো, ভালোবাসত শিশুদের।
অনুশীলনরত সিনিয়র দলের সদস্যরা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন অাকের প্রতি তাদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার কথা। তারা জানান, শিশুদের জন্য যেকোনও কিছু করতে ঝাঁপিয়ে পড়ার বাতিক আছে আকের। কায়ে হায়ে লাহুনা নামে এক খেলোয়াড়ের ভাষ্য, কোচ খুবই ভালো মানুষ। সবসময়ই শিশুদের সঙ্গে খেলতেন। তাদের নিরাপত্তার বিষয়েও সার্বক্ষণিক নজর ছিল তার।’ কিশোর ফুটবলাররা যেই গুহায় আটকা পড়ে তার কাছেই অনুশীলন করেন সিনিয়র দলের সদস্যরা। লাহুনা বলেন, ‘যখন আমরা আটকে পড়ার খবর জানতে পারি, সাথে সাথেই ১১ জন সেখানে চলে যাই। পরদিন ভোর চারটা পর্যন্ত আমরা প্রবেশমুখে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।’ সিনিয়র টিমের কোচ পান্নাওয়াত জংকাম তাই আস্থাশীল। বলেন, ‘ও যখন বেরিয়ে আসবে, দেখবেন সবই ঠিক থাকবে। আমরা আগের মতোই তার সঙ্গে থাকব।’
গুহায় আটকে পড়া কিশোরদের বন্ধু অতাপর্ন খামেং। কোচ আকের সঙ্গেও তার সম্পর্ক দারুণ। যখন থেকেই আটকে পড়ার খবর শুনেছেন তখন থেকেই তার শঙ্কা সবাই ফিরবে তো। তবে আকের প্রশংসা করেছেন তিনি। অভিভাবকদের মতো করেই তার ওপরই ভরসা ছিল তার। উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ার আগে সে বলেছিল, ‘আমি আকেকে ভালোবাসি, তাকেই ভরসা করি। তিনি নিশ্চয়ই সবার খেয়াল রাখছেন। যারা আটকে আছে তারা সবাই নায়ক। তবে সবসময় বড় নায়ক আমাদের কোচ। আমি নিশ্চিত তিনি তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে শিশুদের সহায়তা করে যাচ্ছেন।’ খামেং মনে করে, কোচ এই দোষ হয়তো নিজেই নিতে চাইবেন। ‘তার ব্যাপারেই আমি চিন্তিত। আমি খুব শিগগিরই তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। আবার ফুটবল খেলতে চাই।’ সংবাদমাধ্যমের কাছে আর্তিময় কণ্ঠে বলে খামেং।
আকে আসলেই নিজের ওপর দোষ নিয়েছেন আগেই। গুহা থেকেই হাতে লেখা এক চিঠিতে কোচ কিশোরদের স্বজনদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, সব ছেলেই ভালো আছে। অনেক মানুষই তাদের খোঁজ-খবর রাখছেন। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, শিশুদের দেখাশোনার জন্য সবকিছু করব। আপনাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। আমি সব অভিভাবকের কাছে ক্ষমা চাইছি। তবে অভিভাবকদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা কোচকে কোনও দোষ দিচ্ছেন না। এক চিঠিতে তারা লিখেছেন, ‘প্রিয় কোচ আকে, আপনার ফুটবল দলের সদস্যদের অভিভাবক হিসেবে আপনার প্রতি এবং শিশুদের ভালো যত্ন নেওয়া মনোভাবের প্রতি আমরা আস্থাশীল। আমরা আপনাকে জানাতে চাই যে এটা আপনার ভুল নয়। আমরা এখান থেকে কাউকে দোষ দিচ্ছি না, আপনিও নিজেকে দোষী ভাববেন না। আমরা সবাই পরিস্থিতি বুঝতে পারছি এবং আপনাকে সমর্থন জানাচ্ছি। আমাদের শিশুদের প্রতি আপনার ভালোবাসা ও যত্নকে সমর্থন করছি। সবাইকে নিয়ে নিরাপদে শিগগিরই গুহা থেকে আপনার বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করছি আমরা। আপনার চাচিও গুহার প্রবেশমুখে অপেক্ষা করছেন।’
আকের চাচির বাড়ির পেছনেই একটি বৌদ্ধ মন্দির। মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে থাকা সেই মন্দিরের পুরোহিতরাও আশাবাদী ছিলেন আকে ফিরে আসবেন শিশুদের নিয়ে। আবার হাসিমুখে নিজের বাইকে করে মন্দিরে সবার সঙ্গে দেখা করবে। জয় নামে সাবেক এক ভিক্ষু বলেন, মায়ে সায়ে মন্দিরের সক্রিয় সদস্য আকে। সবসময়ই নিজের মোটরবাইকে শিশুদের নিয়ে পাহাড়ে ঘুরতে যেতেন তিনি। এখন নিজেই শিল্পী আর মন্দিরের সাজসজ্জা বৃদ্ধিতে ছবি আঁকছেন। তিনি বলেন, ‘আকেকে সবাই চেনে। খুবই ভালো মানুষ। আমি তাকে প্রায়ই ওয়াত ফা তাত দোই ওয়াও মন্দিরে দেখতে পাই। সেখানেই প্রার্থনা করে। আমরা সেখানেই গল্প করি।’ আত্মীয় কান্তাওয়াং জানান, তিনি আকের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। উদ্ধারকারীদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। ‘আমি জানি না সে কেনও ওখানে গিয়েছে। হতে পারে রোদের কারণে ছায়া খুঁজতে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল’।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, বিবিসি, স্টাফ-নিউ জিল্যান্ড
এক
অভাবনীয় সফল অভিযানের মধ্য দিয়ে ‘থাম লুয়াং’ গুহা থেকে কিশোর ফুটবল দলটিকে
নিরাপদে বের করে আনার পর থাইল্যান্ডজুড়ে আনন্দের বন্যা বইছে। মানুষ বেরিয়ে
পড়েছেন রাস্তায়। কেউ গাড়ির হর্ন বাজিয়ে, কেউ নেচে-গেয়ে উল্লাসে মেতে
উঠেছেন। কেউবা আবার সেলফি কিংবা ছবি তুলে উল্লাস প্রকাশ করছেন। দেশটির
সরকার ও নৌবাহিনীও আনন্দময় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এ ঘটনায়। মঙ্গলবার শেষ
চার কিশোর ও তাদের কোচকে উদ্ধারের মধ্য দিয়ে প্রায় ১৭ দিনের
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান হয়েছে। গত ২৩ জুন দলটি চিয়াং রাই প্রদেশের ওই গুহায়
প্রবেশ করেছিল। পুরো দলটিকে এখন চিয়াং রাই প্রাচানুকরহ হাসপাতালে চিকিৎসা
দেওয়া হচ্ছে।
তিন দিনের সফল
অভিযানের মধ্য দিয়ে তাদের সবাইকে বের করে আনা হয়। সফল উদ্ধার অভিযান শেষে
চিয়াং রাইর এক কর্মকর্তা আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার জীবনে একটি
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এটি। সারা জীবন মনে থাকবে। আমি তাদের কথা ভেবে কেঁদেছি।
এখন আমি আনন্দিত। থাইল্যান্ডের প্রত্যেক মানুষ পরস্পরকে ভালোবাসে; এ
বাস্তবতায় আমি অভিভূত।
সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমেও শুভেচ্ছা বিনিময় ও অভিনন্দনের ঢল নেমেছে। ১৭ দিনের
রুদ্ধশ্বাস এ উদ্ধার অভিযোনে অংশ নেওয়া দেশি-বিদেশি ডুবুরিদের প্রশংসা করে
অনেকে তাদের ‘জাতীয় বীর’ আখ্যা দিচ্ছেন। বিস্তৃত এ উদ্ধার অভিযানে অংশ
নেওয়া সবাইকে তাদের সাফল্যের আনন্দ উদযাপনে আমন্ত্রণ জানানোর ঘোষণা সোমবারই
দিয়েছেন থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা। জানিয়েছেন, সবপক্ষের জন্য
ভোজের আয়োজন করবেন।
কিশোর
ফুটবল দলটিকে বের করে আনার পর থাই নেভি তাদের ফেসবুক পাতায় লিখেছে, এটি
অলৌকিক ঘটনা ছিল, নাকি বিজ্ঞান বা অন্য কিছু ছিল, তা আমরা জানি না। ১৩
ওয়াইল্ড বোয়ারের সবাইকে গুহা থেকে বের করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ক্লাব ফুটবল
দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থাই কিশোর ফুটবল দল ও তাদের উদ্ধারে কাজ করা
সবাইকে ‘ওল্ড ট্রাফোর্ডে’ স্টেডিয়ামে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
আটকে
পড়াদের উদ্ধারে অভিযান শুরুর দিন রবিবার চারজন এবং সোমবার আরও চারজনকে
উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার ৪ জন কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধারের মধ্য
দিয়ে শেষ হয় অভিযান। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড
ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘থাই নেভি সিলকে এমন অসাধারণ উদ্ধার
অভিযানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিনন্দন। এটা দারুণ মুহূর্ত। সবাই
মুক্তি, দারুণ কাজ হয়েছে।’ জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের
মুখপাত্র স্টিফেন সেইবার্ট তার টুইটে বলেন, ‘সাহসী কিশোর ও তাদের কোচ এবং
তাদের যারা উদ্ধার করেছে তাদের অনেক প্রশংসা করতে হয়। টুইটারে দেওয়া পোস্টে
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, থাইল্যান্ডে সবাই উদ্ধার হয়ে
যাওয়ায় আমরা খুবই খুশি। সারা বিশ্ব এ ঘটনায় নজর রেখেছিলো। তাদের সাহসকে
শ্রদ্ধা জানাই।
|
থাইল্যান্ডের
চিং রাই প্রদেশের গুহা থেকে উদ্ধার হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ভিডিওর
মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানালো কিশোররা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই এক ভিডিওতে হাত
নেড়ে অভিবাদন জানায় তারা। দেশটির সরকারি জনসংযোগ দফতর থেকে এই ভিডিও
প্রকাশ করা হয়। গত ২৩ জুন ফুটবল অনুশীলন শেষে ২৫ বছর বয়সী কোচসহ ওই ১২
কিশোর ফুটবলার গুহাটির ভেতরে ঘুরতে গিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে গুহার
প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আর বের হতে পারেনি। রবিবার (৮ জুলাই)
থাইল্যান্ড সরকার শিশুদের উদ্ধারে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্মরণকালের
সবচেয়ে বড় উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তিন দিনের সফল অভিযানে উদ্ধার হয় কোচসহ
১২ খুদে ফুটবলার। বর্তমানে চিংরাই প্রচনুক্রোহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১২
কিশোর ও তাদের কোচ। এখনও পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি।
তবে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের পরিচালক থানাপাইসাল বলেন, তারা সবাই
সুস্থ আছেন। বিশেষ করে যারা শেষে ভর্তি হয়েছেন তারা তাড়াতাড়ি সুস্থ হচ্ছেন।
|
থাইল্যান্ডের বহুল আলোচিত ‘থাম লুয়াং’ গুহাকে জাদুঘরে পরিণত করা হবে। এই গুহাতেই আটকে পড়েছিল দেশটির ১২ খুদে ফুটবলার এবং তাদের ২৫ বছরের কোচ। তিন দিনের অভিযানে গত ১০ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের সবাইকে উদ্ধার করা হয়। ওই উদ্ধার অভিযানের চিত্র ঠাঁই পাবে জাদুঘরটিতে। ১১ জুলাই বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন অভিযানের প্রধান নারংসাক অসোততানকরণ। তিনি বলেন, ‘থাম লুয়াং’ গুহার এই এলাকাটি হবে একটি জীবন্ত জাদুঘর। থাইল্যান্ডের আরেকটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হবে এটি। খুদে ফুটবলারদের কিভাবে উদ্ধার করা হয়েছে তা এখানে প্রদর্শন করা হবে। স্থাপন করা হবে তথ্যভাণ্ডার। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রযুত চান-ওচা বলেছেন, তার দেশ পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেবে। এজন্য গুহার ভেতরে ও বাইরে অতিরিক্ত সতকর্তামূলক পদক্ষেপ নেবে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুহাটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ এটি খুলে দেওয়া হবে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। এদিকে উদ্ধারের পর প্রথমবারের মতো ভিডিওর মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়েছে কিশোররা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই এক ভিডিওতে হাত নেড়ে অভিবাদন জানায় তারা। দেশটির সরকারি জনসংযোগ দফতর থেকে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২৩ জুন ফুটবল অনুশীলন শেষে ২৫ বছর বয়সী কোচসহ ওই ১২ কিশোর ফুটবলার গুহাটির ভেতরে ঘুরতে গিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে গুহার প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আর বের হতে পারেনি। রবিবার (৮ জুলাই) থাইল্যান্ড সরকার শিশুদের উদ্ধারে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তিন দিনের সফল অভিযানে উদ্ধার হয় কোচসহ ১২ খুদে ফুটবলার। বর্তমানে চিংরাই প্রচনুক্রোহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১২ কিশোর ও তাদের কোচ। এখনও পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। তবে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের পরিচালক থানাপাইসাল বলেন, তারা সবাই সুস্থ আছেন। বিশেষ করে যারা শেষে ভর্তি হয়েছেন তারা তাড়াতাড়ি সুস্থ হচ্ছেন। |
একইসঙ্গে
তিনি একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক ও দক্ষ ডুবুরি। আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফার
হিসেবেও রয়েছে তার সুখ্যাতি। মেধার এই বিরল সমন্বয়ই অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক
রিচার্ড হ্যারিসকে থাইল্যান্ডের থাম লাং গুহার ভেতরে নিয়ে গিয়েছিল। ৯ দিন
নিখোঁজ থাকার পর যখন গুহার মধ্যে কিশোর ফুটবল দলের অবস্থান শনাক্ত করা হয়,
তখন থাইল্যান্ডে ছুটি কাটাচ্ছিলেন অ্যাডিলেডের এই চিকিৎসক। সেখান থেকে
স্বেচ্ছায় ওই শিশুদের সাহায্য করতে যান তিনি। হ্যারিস গুহার মধ্যে গিয়ে
কিশোরদের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত হন। সবাইকে বের করে আনা পর্যন্ত তিনি
সেখানেই অবস্থান করেন। গুহা থেকে বের হয়ে আসা সবশেষ উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে
ছিলেন তিনি। তবে গোটা বিশ্ব যখন আনন্দে ভাসছে, সেই আনন্দে শামিল হওয়া হয়নি
হ্যারিসের। গুহা থেকে বের হয়েই পিতার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে দেশে ছুটে যেতে হয়
তাকে। স্বজন ও বন্ধুরা জানিয়েছেন, খবরটি তার জন্য যথেষ্ট পীড়ার কারণ
হয়েছে।
হ্যারি হিসেবে পরিচিত
ডা. হ্যারিস গুহার বাইরে বের হওয়া সর্বশেষ উদ্ধারকারীদের একজন। ব্রিটিশ
সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন থাই নেভি সিল সদস্যের
সঙ্গে তিনি বের হয়ে এসেছিলেন সবার শেষে। সে সময় গুহার নিষ্কাশন ব্যবস্থা
অকার্যকর হয়ে পানি বেড়ে যাচ্ছিলো। তবে ‘মিশন ইম্পসিবল’ ধারার একটি অভিযান
শেষে উদযাপনের আনন্দে অংশ নেওয়া হয়নি তার। কারণ, বুধবার গুহা থেকে বের হওয়া
অল্প সময় পরেই নিজের বাবার মৃত্যু সংবাদ পান তিনি। হ্যারির নিয়োগকারী
প্রতিষ্ঠান সাউথ অস্ট্রেলিয়ান অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, এমন
রুদ্ধশ্বাস অভিযানে শারীরিক ও মানসিক চাপের পর এমন খবরে তার পরিবারের কষ্ট
আরও বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা মেডস্টারের
চিকিৎসক ডা. অ্যান্ড্রু পিয়ার্স জানান, ‘হ্যারি একজন শান্ত ও দয়ালু মানুষ।
এই অভিযানে সহায়তার করার জন্য তিনি দ্বিতীয়বার ভাবেননি।’ বলেন ‘এটা
উত্থান-পতনের একটি আবেগপূর্ণ সপ্তাহ’।
অস্ট্রেলিয়া
সরকার জানিয়েছে, ডা. হ্যারিকে বিশেষ করে ব্রিটিশ ডুবুরিরা চিনতে পারেন।
পরে থাইল্যান্ড সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এই উদ্ধার অভিযানে যোগ দেওয়ার
জন্য তাকে অনুরোধ করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়ে বিশপ
বলেন, ‘তিনি (হ্যারি) উদ্ধার অভিযানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন’। বিশপ
আরও জানান, হ্যারি গুহা অভিযানে পারদর্শিতার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত।
উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্বে থাকা চিয়াং রাই’র ভারপ্রাপ্ত গভর্নর নারোংসাক
ওসোটানাকর্ন বুধবার অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম নাইন নিউজ’কে বলেন,
‘অস্ট্রেলিয়ানরা আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন, বিশেষ করে ওই চিকিৎসক’।
হ্যারি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘খুব ভালো। সবচেয়ে ভালো’। আর হ্যারির বান্ধবী
সুয়ে ক্রোয়ি বিবিসি’কে বলেন, ‘চিকিৎসক একজন বিনয়ী ও নিঃস্বার্থ পারিবারিক
মানুষ। তার উপস্থিতি গুহার মধ্যে শিশুদের স্বস্তি দিয়েছে’। ক্রোয়ি আরও
বলেন, ‘তিনি শিশুদের সঙ্গে দারুণ। শিশুদের গুহার মধ্যে চলাচলে জন্য
প্রস্তুত করতে তিনি সবচেয়ে ভালো উপায় নিশ্চিত করেছেন। তাদের সহায়তার জন্য
তিনিই ছিলেন সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ডা. হ্যারিকে
প্রশংসা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন অনেকে। তারা হ্যারিকে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ
বেসামরিক সম্মাননা ‘অস্ট্রেলিয়ান অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবিও
জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানানোর ইঙ্গিত
দেওয়া হয়েছে।
অভিজ্ঞ ডুবুরি
ডা. হ্যারি একজন আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফারও। তিনি অস্ট্রেলিয়া,
নিউজিল্যান্ড, ক্রিসমাস আইল্যান্ড ও চীনের বেশ কয়েকটি গুহা অভিযানে অংশ
নিয়েছেন। ২০১১ সালে এক মর্মান্তিক গুহা অভিযানে তার বন্ধু অ্যাগনেস মিলোওকা
বাতাস ফুরিয়ে গিয়ে মারা যান। হ্যারি তার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়ে বিশপ বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয়
অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে চিকিৎসা সহায়তা দলের সঙ্গে কাজ করায় হ্যারি
কর্তৃপক্ষের কাছে পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ভানুয়াতুতে
অস্ট্রেলিয়ান এইড মিশনেও অংশ নিয়েছেন। বিশপ আরও বলেন, ‘তিনি একজন অসাধারণ
অস্ট্রেলিয়ান। থাইল্যান্ডে উদ্ধার তৎপরতায় তিনি নিশ্চিতভাবে বড় ধরনের
পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন’।
হ্যারির
পাশাপাশি তার সঙ্গী ক্রাইগ চ্যালেনেরও প্রশংসা করেন বিশপ। অস্ট্রেলিয়ার
পার্থের এই পশুচিকিৎসক গুহার মধ্যে হ্যারির সঙ্গেই ছিলেন। তারা দুজন ২০
জনের অস্ট্রেলিয়ান উদ্ধারকর্মী দলের সদস্য ছিলেন। তাদের সঙ্গে পুলিশ ও
নৌবাহিনীর ডুবুরিরাও ছিলেন। এমন দুঃসাহসিক অভিযানের পর অস্ট্রেলিয়ার
প্রধানমন্ত্রী ম্যালকোম টার্নবুলের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন
হ্যারি। ওই সময় তিনি অভিযানে সফলতার জন্য আটকে পড়া ১২ কিশোরকেই আসল ‘হিরো’
হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘বড় বীর হলো ওই ১২ শিশু আর তাদের
দেখাশোনাকারী থাই নেভি সিলের চার সদস্য’। হ্যারি আরও বলেন, ‘তারা নিজেরাই
নিজেদের মনোবল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। তাদের ওই অবস্থায় না পেলে আমরা
কিছুই করতে পারতাম না’।
হ্যারির
এমন কাজের জন্য প্রশংসা পেয়েছেন নিজ দেশের চিকিৎসকদের সংগঠন অস্ট্রেলিয়ান
মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের। সংগঠনটির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যারিকে ‘একজন
চমৎকার চিকিৎসক ও মানুষ’ বলে অভিহিত করা হয়। সংগঠনটির সভাপতি ডা. টনি
বারটনি বলেন, ডা. হ্যারিস অন্যদের সাহায্য করতে গিয়ে নিজের জীবনে ঝুঁকি
নিয়েছেন। এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তিনি বলেন, এখানে ডা. হ্যারিসের
প্রচেষ্টা অস্ট্রেলিয়ার অনেক গতানুগতিক চিকিৎসকের চেয়ে সম্পূর্ণভাবে
ব্যতিক্রমী আর এটা দায়িত্বের চেয়েও বেশি কিছু।
|
কেউ
কউ বলছেন এটি ছিল ‘মিশন ইম্পসিবল’ ধারার এক অভিযান। সফলভাবে ১২ কিশোর আর
তাদের কোচকে বের করে আনার পর আনন্দের বন্যায় ভাসছে থাইল্যান্ড। তবে
উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, তাদের বের করে আনতে একটু দেরি হলেই বড় ধরনের
বিপদের আশঙ্কা ছিল। উদ্ধার তৎপরতায় জড়িতদের উদ্ধৃত করে প্রভাবশালী ব্রিটিশ
সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, সবশেষ কিশোর বের হয়ে আসার
পরপরই গুহার নিষ্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পানি বাড়তে শুরু করেছিল।
উল্লেখ্য, ওই কিশোরদের অনেকেই সাঁতার জানত না।
দ্য
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গুহাটির প্রায় এক মাইল দীর্ঘ অংশে পানি জমে ছিল।
আটকে পড়াদের অনেকেই সাঁতার না জানার কারণে তাদের ডুবুরিরা প্রশিক্ষণ দিয়ে
উদ্ধারের জন্য তৈরি করেন। উদ্ধার অভিযানের অংশ হিসেবে পাম্প করে পানি
কমানোর ফলে উঁচুনিচু গুহার কিছু জায়গায় হাঁটার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল।
বুধবারের (১১ জুলাই) উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণকারী তিন অস্ট্রেলীয় ডুবুরিকে
উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ান জানায়, মঙ্গলবার (১০ জুলাই) সর্বশেষ শিশুটি
উদ্ধার হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মূল পাম্পটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। আর তাতে
দ্রুত পানির উচ্চতা বাড়তে শুরু করে। আর তখনও পবেশপথ থেকে দেড় কিলোমিটার
দূরত্বে স্থাপিত ‘তৃতীয় চেম্বারে’ কয়েকজন ডুবুরি ও উদ্ধারকারী সরঞ্জামাদি
গুছানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
উল্লেখ্য,
গুহার প্রবেশপথ থেকে ‘তৃতীয় চেম্বার’ বা অভিযান পরিচালনার অঞ্চলে যেতে হলে
দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে উদ্ধারকারীদের। ‘তৃতীয় চেম্বার’ থেকে
শিশুদের কাছে পৌঁছাতে যেতে হয়েছে আরও ১.৭ কিলোমিটার। গত কয়েক দিন ধরে আটকে
পড়া শিশুদের গুহার ভেতরে সঙ্গ দিচ্ছিলেন তিন থাই নেভি সিল সদস্য ও এক
চিকিৎসক। মঙ্গলবার (১০ জুলাই) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ার
সময় তখনও দেড় কিলোমিটারের মধ্যে (তৃতীয় চেম্বারে) পৌঁছাতে পারেননি তারা।
দ্য গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, তৃতীয় চেম্বারে থাকা কয়েকজন ডুবুরি হঠাৎ
চিৎকার শুনতে পান এবং গুহার গভীর থেকে হেড টর্চের আলো দেখেন। দেখতে পান,
কয়েকজন উদ্ধারকারী ধীরে ধীরে শুকনা জায়গায় জড়ো হচ্ছেন। এরপর একে একে তারা
গুহা থেকে বের হয়ে আসেন। অপেক্ষমাণ উদ্ধারকারীরা তাদের করতালি দিয়ে স্বাগত
জানান।
অভিযানের প্রথম দিন ৮
জুলাই রবিবার চার শিশুকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর তাদের দ্রুত নিকটস্থ
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ৯ জুলাই উদ্ধার হয় ওয়াইর্ল্ড বোয়ার্স নামের ওই
ফুটবল দলের আরও চার শিশু। তাদের সবাইকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গুহায় আটকে
পড়ার ১৮ দিনের মাথায় ১০ জুলাই মঙ্গলবার শেষ হয় তিন দিনের উদ্ধার অভিযান।
আগের দিন রাতে ভারী বর্ষণ সত্ত্বেও এদিন চার খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচকে
উদ্ধার করা হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালে সাতদিন পর্যন্ত তাদের
আলাদা করে রাখা হবে।
|
গুহায় আটকেপড়া কিশোরদের জীবিত খুঁজে পাওয়া যাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা বৌদ্ধভিক্ষু ফ্রা খুবা বুনচামকে সম্মান জানানোর ঘোষণা দিয়েছেন থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নই। ফ্রা খুবা বুনচাম ওই গুহার বাইরে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতেন। গত শনিবার থাই রাজা ওই বৌদ্ধ ধর্মগুরুকে দেখতে যান। ওই সময় তাকে সম্মান জানানোর প্রস্তাব দেন বলে জানিয়েছে থাই সংবাদমাধ্যম। উদ্ধারকারীরা আটকে পড়া কিশোরদের খুঁজে পাওয়ার আগেই তাদের অবস্থান সম্পর্কে ঠিকঠাক ভবিষ্যদ্ববাণী করেন ওই ধর্মগুরু। তিনি জানান, ওই কিশোর আর তাদের কোচকে দুই দিনের মধ্যে জীবিত খুঁজে পাওয়া যাবে। ওই সময়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘তারা এখনও সেখানেই আছে, আগামী দু-একদিনের মধ্যেই তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে।’ পরে গত ২ জুলাই দুজন ব্রিটিশ ডুবুরি গুহার বেশ কয়েক কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে আটকেপড়া কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে জীবিত শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এরপরই থাইল্যান্ডের মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিত হয়ে ওঠেন ওই বৌদ্ধ ধর্মগুরু। শনিবার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে রাজা ভাজিরালংকর্নই ওই ধর্মগুরুকে রাজকীয় গাউন উপহার দেওয়ার ঘোষণা দেন। এই গাউন থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ সংস্কৃতির অংশ। ২৩ জুন কিশোররা নিখোঁজ হলে থাম লুয়াং গুহা এলাকা তিনবার পরিদর্শন করেন ধর্মগুরু ফ্রা খুবা বুনচাম। প্রতিবারই তিনি সেখানে ধর্মীয় আচার আর প্রার্থনা করেন। দ্বিতীয়বার পরিদর্শন শেষে ওই এলাকায় কয়েকদিন ধরে চলা বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যায় আর নিখোঁজ শিশুদের খুঁজে পাওয়া যায়। অনেকেই বিশ্বাস করে থাকেন, বৃষ্টি বন্ধে ভূমিকা রয়েছে এই বৌদ্ধ ধর্মগুরুর। তবে গতকাল মঙ্গলবার নিখোঁজ শিশুদের উদ্ধার অভিযান চলার সময়েও প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে সেখানে। ধর্মগুরু ফ্রা খুবা বুনচাম আজীবন নিরামিষভোজী। থাইল্যান্ড, ভুটান আর চীনের শান প্রদেশের বিভিন্ন গুহায় ধ্যানমগ্ন থেকে বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন তিনি। চীনের শান প্রদেশে জন্ম নেওয়া এই ধর্মগুরু মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিভিন্ন বিষয়ে ভবিষ্যদ্ববাণী করা শুরু করেন। থাইল্যান্ড ছাড়াও এই ধর্মগুরুর মিয়ানমার ও লাওসে প্রচুর ভক্ত রয়েছে। ফল আর বিস্কুট খেয়ে জীবনধারণ করে থাকেন তিনি। সবসময় হাঁটেন খালি পায়ে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চিও তার অনুসারী। রবিবার (৮ জুলাই) থাইল্যান্ড সরকার তাদের উদ্ধারে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অভিযান শুরু করে। ওই দিন চারজনকে এবং সোমবার আরও চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ১০টা ৮ মিনিটে অবশিষ্ট ৫ জনকে উদ্ধারের জন্য ১৯ জন ডুবুরি গুহায় প্রবেশ করেছেন। |
No comments