নেপাল: সম্পর্ক পুনঃবিন্যস্থকরণ by আর কে রাধাকৃষ্ণান
প্রদীপ কুমার গেওয়ালি |
প্রদীপ
কুমার গেওয়ালি গত মার্চে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর
থেকেই দেশটি তার দুই এশিয়ান জায়ান্ট ভারত ও চীন এবং বিশ্বপর্যায়ে বিভিন্ন
প্রভাবশালীদের সাথে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার কাজে সচেষ্ট হয়েছে। ১৯৭০ থেকে
১৯৯০-এর দশকের প্রথম সময় পর্যন্ত স্ব-শিক্ষিত কমিউনিস্ট ও পার্টির কর্মী
ভূবেষ্টিত দেশটিতে অদ্ভূত সমস্যায় পড়েছেন। চীনে প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির
সফরের আগে তাকেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তার
অন্যতম দায়িত্ব হলো ভারতের সাথে নেপালের সম্পর্ক পুনঃবিন্যাস করা। সম্প্রতি
তিনি ফ্রন্টলাইনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে অনেক কিছু বলেছেন। এখানে
সংক্ষিপ্তাকারে তা তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: নতুন সরকার দীর্ঘ অস্থিতিশীলতার পর স্থিতিশীলতার আশাবাদ সঞ্চার করেছে। গত দুই দশকের মধ্যে কোনো সরকারই আট বা নয় মাসের বেশি টিকতে পারেনি। কেন?
জবাব: নেপালি জনগণের প্রধান সমস্যা হলো অস্থিতিশীলতা। ফলে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়নি। আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এত দুর্বল রয়ে গেছে যে এর ফলে বিদেশী হস্তক্ষেপ অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে। আমরা স্থিতিশীল সরকারের দিকে নজর দিয়েছি, যাতে সরকার তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারে। কোনো সরকার যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তবে তাদের পরিবর্তন করার অধিকার রয়েছে জনগণের। এটিই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়।
প্রশ্ন: দুই কমিউনিস্ট পার্টির একীভূত হওয়ার ফলে পার্লামেন্টে তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ২৭৫টি পার্লামেন্টারি আসনের মধ্যে আপনারা পেয়েছেন ১৭৪টি। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা কি স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আচরণবিধি ছুঁড়ে ফেলতে আপনাদের সাহসী করবে?
জবাব: আমি বলব, এখানকার কমিউনিস্ট পার্টির বৈশিষ্ট্য অনন্য। সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত সব গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার নেপালি কমিউনিস্ট পার্টির আন্দোলনে একীভূত হয়েছে। অনেকে ভীতির সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে বাম শক্তি অগণতান্ত্রিক শক্তির দিকে ছুটবে। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বাস্তবে আমরাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রপথিক।
প্রশ্ন: কমিউনিস্ট আন্দোলন কিভাবে জাতীয়তাবাদ ও দেশাত্মবোধের ধারণার মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে?
জবাব: নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি নেপালি জনগণের সব আন্দোলনের প্রধান প্রধান ধারার প্রতিনিধিত্ব করে।এসব ধারার মধ্যে আছে দেশাত্মবোধ ও জাতীয়তাবাদ। তাছাড়া আমরা সংস্কারবাদী ও মানবিক প্রকৃতির। এসব কারণেই এখানকার কমিউনিস্ট পার্টি এত শক্তিশালী ও জনপ্রিয়।
প্রশ্ন: দুই কমিউনিস্ট পার্টি কি মদেশি ও উপজাতীয় লোকজনের ব্যাপারে একমতে আসতে পারবে?
জবাব: নেপালে কমিউনিস্ট আন্দোলন শুরু হয়েছে কেবল শ্রেণি সংগ্রামের ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে মতাদর্শে নিয়ন্ত্রিত হয়ে। ধীরে ধীরে এটি বিভিন্ন কর্মজীবী শ্রেণির প্রতিনিধিত্বশীল হয়ে ওঠে। তবে নেপালে দুই ধরনের শোষণ রয়েছে। একটি হলো শ্রেণিগত বৈষম্য, অপরটি হলো সামাজিক বৈষম্য- যেমন জেন্ডার বৈষম্য, দলিতদের প্রতি বৈষম্য, সাংস্কৃতিক বৈষম্য। আমরা এসবের মধ্যে ভারসাম্য বিধানের চেষ্টা করছি, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছি।
প্রশ্ন: কোয়ালিশনের দুই কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যকার বিভাজন কিভাবে সরকারে কাজ করবে? আপনারা প্রথমে একীভূত হওয়ার সমঝোতা করলেন, তারপর তা বাস্তবায়নে লাগল প্রায় আট মাস। এখন শোনা যাচ্ছে, অনেক নেতাই ক্ষমতা কাঠামোতে পদ চায়।
জবাব: ১৯৯০-এর দশকে কমিউনিস্ট পার্টির দুটি পতাকা ছিল। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬-০৭ সময়কালে দুটি ধারার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য ছিল। তারা একে অপরকে হটিয়ে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নেপালে সশস্ত্র সংগ্রাম, সহিংসতার পথ সফল হয় না। তারপর মাওবাদীরা বুঝতে পারল, তারা যদি তাদের নীতি ও কর্মপন্থা না বদলায়, তবে তাদের মারাত্মক ক্ষতি হবে। পর তারা তাদের পথ বদলিয়ে সামরিক শাখা গুটিয়ে বহু দলীয় গণতন্ত্রকে গ্রহণ করে নেয়। দুই কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সহযোগিতার এটি ছিল শক্ত ভিত্তি।
গত ১০ বছর ছিল আরেকটি প্রতিযোগিতার সময়। দলগুলোর মধ্যে কিছুটা দোটানা ছিল। কমরেড প্রচন্ড [পুষ্প কমল দহল] একবার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমি কি প্রধানমন্ত্রী না আমি প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা?’ ওই ছিল মানসিকতা। তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেই সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটি বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত ছিল না। পরে তা বুঝতে পেরেছিল।
ইউএমএলের শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তারা একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হলেও তা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট ছিল না। আমরা স্থিতিশীলতা চেয়েছিলাম। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাত দশক ব্যয় করেছি। এখন আমরা সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করার দায়িত্ব পেয়েছি। মাওবাদীরাও বুঝতে পেরেছে, এখন সময় হলো ইউএমএলের সাথে সহযোগিতা করার।
জোট সরকার কাজ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে শুরুতে দ্বিধা ছিল। কিন্তু এখন আমরা পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী যে আমরা পারব। দলটি কেবল আদর্শগতভাবেই নয়, কাজ করার স্টাইলেও একতাবদ্ধ।
প্রশ্ন: ৩ জুন সম্পাদকদের বৈঠকে আপনি বলেছেন, এখন থেকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি অন্যান্য দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এজেন্ডায় পরিণত হবে না। এটি কি অবরোধ-পরবর্তী রাজনীতি?
জবাব: হ্যাঁ। আমাদের ধারাবাহিক ও দৃঢ় নীতি এমনই হওয়া উচিত। অতীতে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দ্বিপক্ষীয় এজেন্ডায় [ভারত ও নেপালের মধ্যে] প্রভাব ফেলেছে। আমরা লজ্জায় পড়েছি যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে বলেছেন যে আমাদের সংবিধান এভাবে কিংবা ওভাবে পরিবর্তন হবে।
এখন ভারত বা চীন কিংবা অন্য কোনো দেশের সাথে আলোচনার সময় আমরা কখনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো আনব না। দ্বিতীয়ত, আমাদের একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে। ভারতের নিজস্ব আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। একইভাবে চীনেরও আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। আমরা তাদের আকাঙ্ক্ষার অংশ হবো না।
প্রশ্ন: ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় সবসময়ই থাকবে: উন্মুক্ত সীমান্ত, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নেপালি অবস্থান, নেপালি রুপির নিশ্চয়তা দানে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক ইত্যাদি। ভারত-নেপালের বর্তমান সম্পর্কে আলোকে এগুলো নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার দরকার আছে কি?
জবাব: অনেক সময় ‘বিশেষ’ শব্দটির নানা ব্যঞ্জনা থাকে। আমাদের উচিত হবে ওই শব্দটি ব্যবহারে সংযত থাকা। তবে এটি অনন্য বিষয়। উন্মক্ত সীমান্ত, সাংস্কৃতিক সান্নিধ্য, একই খাবার ইত্যাদি ব্যাপারে কথা বলার অধিকার আছে। দ্বিতীয়ত, ‘ইমিন্যান্ট পারসনস গ্রুপ’ আমাদের সামগ্রিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছে। নেপাল ও ভারতের মধ্যকার ১৯৫০ সালের চুক্তিটি পুরোপুরি পর্যালোচনা করা উচিত। রানাদের সই করা ওই চুক্তিতে অনেক অন্যায় বিষয় রয়েছে। আমরা পর্যালোচনা করে পারস্পরিক আস্থা ও মিত্রতার ভিত্তিতে নতুন চুক্তি করব।
প্রশ্ন: সবশেষে আসে ভারত-নেপাল সমীকরণ। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশ এই ইস্যুটি নিয়ে জর্জরিত। আপনারা কিভাবে এর মোকাবিলা করবেন। চীন সফরে গিয়ে আপনারা অনেক বড় তালিকা উপস্থাপন করেছেন।
জবাব: আমরা চীনের সাথে বৃহত্তর অংশীদারিত্ব চাই। আমরা মঞ্জুরির চেয়ে শিথিল ঋণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কারণ মঞ্জুরি অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় শর্তের সৃষ্টি করে। তবে আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, নেপালের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো উভয় পক্ষের কাছ থেকে কল্যাণ লাভ করা। অন্য কোনো দেশের সাথে নেপালের সম্পর্ক নিয়ে সংশয়ে না পড়ার জন্য আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের বারবার অনুরোধ করছি। আমরা যখন চীনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলি, তা ভারতের বিরুদ্ধে কিছু করার জন্য নয়। আমাদের মুখ্য নীতি হলো, আমরা আমাদের মাটিকে কোনো প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে দেব না। আমরা উভয় দেশের প্রকৃত উদ্বেগের ব্যাপারে সর্বাত্মক যত্নশীল থাকব।
প্রশ্ন: নতুন সরকার দীর্ঘ অস্থিতিশীলতার পর স্থিতিশীলতার আশাবাদ সঞ্চার করেছে। গত দুই দশকের মধ্যে কোনো সরকারই আট বা নয় মাসের বেশি টিকতে পারেনি। কেন?
জবাব: নেপালি জনগণের প্রধান সমস্যা হলো অস্থিতিশীলতা। ফলে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়নি। আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এত দুর্বল রয়ে গেছে যে এর ফলে বিদেশী হস্তক্ষেপ অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে। আমরা স্থিতিশীল সরকারের দিকে নজর দিয়েছি, যাতে সরকার তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারে। কোনো সরকার যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তবে তাদের পরিবর্তন করার অধিকার রয়েছে জনগণের। এটিই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়।
প্রশ্ন: দুই কমিউনিস্ট পার্টির একীভূত হওয়ার ফলে পার্লামেন্টে তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ২৭৫টি পার্লামেন্টারি আসনের মধ্যে আপনারা পেয়েছেন ১৭৪টি। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা কি স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আচরণবিধি ছুঁড়ে ফেলতে আপনাদের সাহসী করবে?
জবাব: আমি বলব, এখানকার কমিউনিস্ট পার্টির বৈশিষ্ট্য অনন্য। সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত সব গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার নেপালি কমিউনিস্ট পার্টির আন্দোলনে একীভূত হয়েছে। অনেকে ভীতির সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে বাম শক্তি অগণতান্ত্রিক শক্তির দিকে ছুটবে। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বাস্তবে আমরাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রপথিক।
প্রশ্ন: কমিউনিস্ট আন্দোলন কিভাবে জাতীয়তাবাদ ও দেশাত্মবোধের ধারণার মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে?
জবাব: নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি নেপালি জনগণের সব আন্দোলনের প্রধান প্রধান ধারার প্রতিনিধিত্ব করে।এসব ধারার মধ্যে আছে দেশাত্মবোধ ও জাতীয়তাবাদ। তাছাড়া আমরা সংস্কারবাদী ও মানবিক প্রকৃতির। এসব কারণেই এখানকার কমিউনিস্ট পার্টি এত শক্তিশালী ও জনপ্রিয়।
প্রশ্ন: দুই কমিউনিস্ট পার্টি কি মদেশি ও উপজাতীয় লোকজনের ব্যাপারে একমতে আসতে পারবে?
জবাব: নেপালে কমিউনিস্ট আন্দোলন শুরু হয়েছে কেবল শ্রেণি সংগ্রামের ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে মতাদর্শে নিয়ন্ত্রিত হয়ে। ধীরে ধীরে এটি বিভিন্ন কর্মজীবী শ্রেণির প্রতিনিধিত্বশীল হয়ে ওঠে। তবে নেপালে দুই ধরনের শোষণ রয়েছে। একটি হলো শ্রেণিগত বৈষম্য, অপরটি হলো সামাজিক বৈষম্য- যেমন জেন্ডার বৈষম্য, দলিতদের প্রতি বৈষম্য, সাংস্কৃতিক বৈষম্য। আমরা এসবের মধ্যে ভারসাম্য বিধানের চেষ্টা করছি, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছি।
প্রশ্ন: কোয়ালিশনের দুই কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যকার বিভাজন কিভাবে সরকারে কাজ করবে? আপনারা প্রথমে একীভূত হওয়ার সমঝোতা করলেন, তারপর তা বাস্তবায়নে লাগল প্রায় আট মাস। এখন শোনা যাচ্ছে, অনেক নেতাই ক্ষমতা কাঠামোতে পদ চায়।
জবাব: ১৯৯০-এর দশকে কমিউনিস্ট পার্টির দুটি পতাকা ছিল। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬-০৭ সময়কালে দুটি ধারার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য ছিল। তারা একে অপরকে হটিয়ে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নেপালে সশস্ত্র সংগ্রাম, সহিংসতার পথ সফল হয় না। তারপর মাওবাদীরা বুঝতে পারল, তারা যদি তাদের নীতি ও কর্মপন্থা না বদলায়, তবে তাদের মারাত্মক ক্ষতি হবে। পর তারা তাদের পথ বদলিয়ে সামরিক শাখা গুটিয়ে বহু দলীয় গণতন্ত্রকে গ্রহণ করে নেয়। দুই কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সহযোগিতার এটি ছিল শক্ত ভিত্তি।
গত ১০ বছর ছিল আরেকটি প্রতিযোগিতার সময়। দলগুলোর মধ্যে কিছুটা দোটানা ছিল। কমরেড প্রচন্ড [পুষ্প কমল দহল] একবার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আমি কি প্রধানমন্ত্রী না আমি প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা?’ ওই ছিল মানসিকতা। তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেই সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটি বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত ছিল না। পরে তা বুঝতে পেরেছিল।
ইউএমএলের শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তারা একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হলেও তা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট ছিল না। আমরা স্থিতিশীলতা চেয়েছিলাম। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাত দশক ব্যয় করেছি। এখন আমরা সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করার দায়িত্ব পেয়েছি। মাওবাদীরাও বুঝতে পেরেছে, এখন সময় হলো ইউএমএলের সাথে সহযোগিতা করার।
জোট সরকার কাজ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে শুরুতে দ্বিধা ছিল। কিন্তু এখন আমরা পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী যে আমরা পারব। দলটি কেবল আদর্শগতভাবেই নয়, কাজ করার স্টাইলেও একতাবদ্ধ।
প্রশ্ন: ৩ জুন সম্পাদকদের বৈঠকে আপনি বলেছেন, এখন থেকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি অন্যান্য দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এজেন্ডায় পরিণত হবে না। এটি কি অবরোধ-পরবর্তী রাজনীতি?
জবাব: হ্যাঁ। আমাদের ধারাবাহিক ও দৃঢ় নীতি এমনই হওয়া উচিত। অতীতে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দ্বিপক্ষীয় এজেন্ডায় [ভারত ও নেপালের মধ্যে] প্রভাব ফেলেছে। আমরা লজ্জায় পড়েছি যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে বলেছেন যে আমাদের সংবিধান এভাবে কিংবা ওভাবে পরিবর্তন হবে।
এখন ভারত বা চীন কিংবা অন্য কোনো দেশের সাথে আলোচনার সময় আমরা কখনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো আনব না। দ্বিতীয়ত, আমাদের একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে। ভারতের নিজস্ব আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। একইভাবে চীনেরও আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। আমরা তাদের আকাঙ্ক্ষার অংশ হবো না।
প্রশ্ন: ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় সবসময়ই থাকবে: উন্মুক্ত সীমান্ত, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নেপালি অবস্থান, নেপালি রুপির নিশ্চয়তা দানে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক ইত্যাদি। ভারত-নেপালের বর্তমান সম্পর্কে আলোকে এগুলো নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার দরকার আছে কি?
জবাব: অনেক সময় ‘বিশেষ’ শব্দটির নানা ব্যঞ্জনা থাকে। আমাদের উচিত হবে ওই শব্দটি ব্যবহারে সংযত থাকা। তবে এটি অনন্য বিষয়। উন্মক্ত সীমান্ত, সাংস্কৃতিক সান্নিধ্য, একই খাবার ইত্যাদি ব্যাপারে কথা বলার অধিকার আছে। দ্বিতীয়ত, ‘ইমিন্যান্ট পারসনস গ্রুপ’ আমাদের সামগ্রিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছে। নেপাল ও ভারতের মধ্যকার ১৯৫০ সালের চুক্তিটি পুরোপুরি পর্যালোচনা করা উচিত। রানাদের সই করা ওই চুক্তিতে অনেক অন্যায় বিষয় রয়েছে। আমরা পর্যালোচনা করে পারস্পরিক আস্থা ও মিত্রতার ভিত্তিতে নতুন চুক্তি করব।
প্রশ্ন: সবশেষে আসে ভারত-নেপাল সমীকরণ। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশ এই ইস্যুটি নিয়ে জর্জরিত। আপনারা কিভাবে এর মোকাবিলা করবেন। চীন সফরে গিয়ে আপনারা অনেক বড় তালিকা উপস্থাপন করেছেন।
জবাব: আমরা চীনের সাথে বৃহত্তর অংশীদারিত্ব চাই। আমরা মঞ্জুরির চেয়ে শিথিল ঋণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কারণ মঞ্জুরি অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় শর্তের সৃষ্টি করে। তবে আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, নেপালের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো উভয় পক্ষের কাছ থেকে কল্যাণ লাভ করা। অন্য কোনো দেশের সাথে নেপালের সম্পর্ক নিয়ে সংশয়ে না পড়ার জন্য আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের বারবার অনুরোধ করছি। আমরা যখন চীনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলি, তা ভারতের বিরুদ্ধে কিছু করার জন্য নয়। আমাদের মুখ্য নীতি হলো, আমরা আমাদের মাটিকে কোনো প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে দেব না। আমরা উভয় দেশের প্রকৃত উদ্বেগের ব্যাপারে সর্বাত্মক যত্নশীল থাকব।
No comments