ইসলামি ও রাষ্ট্রীয় আইনের সমন্বয় চায় গ্রিস
ইউরোপে
গ্রিস একমাত্র দেশ যেখানে ইসলামি আইন ও রাষ্ট্রীয় আইন সহঅবস্থান করছে।
কিন্তু গত জানুয়ারিতে হওয়া নতুন একটি আইন ও সাম্প্রতিককালে একজন মুসলমান
বিধবা নারীর উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে দেশটিতে এই
দুই ধারার আইনের সহঅবস্থান নিয়ে নতুন চিন্তার উদ্রেক হয়েছে। সংবাদমাধ্যম আল
জাজিরা জানিয়েছে, দুই নারী তাদের মৃত ভাইয়ের উইলকে চ্যালেঞ্জ করে ইসলামি
আইন অনুযায়ী সম্পত্তির ভাগ দাবি করেছেন। অপর দিকে সংশ্লিষ্ট বিধবা নারী
গ্রিসের আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট হতে না পেরে বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন ইউরোপীয়
মানবাধিকার আদালতে। গ্রিস সরকার ও অধিকারকর্মীরা মনে করছেন, সেখানকার রায়
ওই নারীর পক্ষে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আবার গ্রিসের আইন নিয়ে নতুন করে
চিন্তাভাবনা করার প্রসঙ্গ সামনে আসবে।
ঘটনার শুরু এটি উইল থেকে। গ্রিসের চাতিজে মোল্লা স্যালির স্বামী মারা যাওয়ার আগে প্রায় ১০ লাখ ডলারের সম্পত্তি স্ত্রীর নামে উইল করে দিয়ে গিয়েছিলেন। এ ঘটনা প্রায় এক দশক আগের। প্রথম দিকে স্যালি তার স্বামীর উইল করা সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার হওয়ার কথা ভাবলেও, বাদ সাধে তার স্বামীর বোনরা। আদালতে তারা এই মর্মে আবেদন করেন: মৃত ব্যক্তি মুসলমান সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। তারাও মুসলমান সম্প্রদায়ের সদস্য। ইসলামি আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির ভাগ তার বোনদেরও পাওয়ার কথা। সুতরাং স্যালি সব সম্পত্তি একা পেতে পারেন না। মামলাটি উত্থাপনের পর নিম্ন আদালত গ্রিসের রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী স্যালির পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে গ্রিসের সর্বোচ্চ আদালতে রায়ের ফল উল্টে যায়। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, ওই উইলের বৈধতা নেই, ইসলামিক আইনেই সম্পত্তির বণ্টন করতে হবে। আদালত স্যালিকে স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় সম্পত্তির বিবাদ মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে বিধবা মোল্লা স্যালি জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ আদালতের আইন অনুযায়ী ইসলামি আইনে যদি সম্পত্তির বণ্টন করতে হয় তাহলে উইলের মাধ্যমে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া তিন চতুর্থাংশ সম্পত্তিই তাকে দিয়ে দিতে হবে। সংক্ষুব্ধ স্যালি ‘ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটসে’ ধর্ণা দিয়েছেন। তার ভাষ্য, ইসলামি আইনের কারণে তার অধিকার খর্ব হয়েছে। তার আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেছেন, মুসলমান হওয়ায় তার জন্য ইসলামি আইনকে প্রযুক্ত করা হচ্ছে। যেহেতু তিনি সংখ্যালঘু, সেহেতু তাকে সংখ্যালঘু বিচারকের (মুফতি) কাছে যেতে বলা হচ্ছে। সেটা কোনও সুবিধা নয়, বরং অসুবিধা। তার মক্কেল স্যালি ‘একাধিক দিক দিয়ে বঞ্চনার শিকার।’ আইনজীবী কিসতাকিসের মতে ‘নারী হওয়ায় তাকে সম্পত্তি হারাতে হচ্ছে। তিনি যদি বিধবা না হয়ে বিপত্নীক হতেন তাহলে তাকে কোনও সম্পত্তি হারাতে হতো না।’ ‘ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটসে’ আগামী মাসে মোল্লা স্যালির মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
আল জাজিরা লিখেছে, গত জানুয়ারিতে গ্রিস সরকার একটি আইন পাস করেছে। যাতে বলা হয়েছে বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, ভরনপোষণ, সন্তানের আইনানুগ অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকারসহ অন্যান্য কিছু বিষয়ে নাগরিকরা গ্রিসের রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার পাবে। বিবাদমান পক্ষগুলো যদি ইসলামি আইনে মামলার ফয়সালা করতে রাজি হয় তাহলেই ইসলামি আইন কার্যকর হবে। বিবাদমান কোনও এক পক্ষ রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার চাইলে, সেটাই প্রথম পচ্ছন্দ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
গত ৪ দশক ধরে গ্রিসের মুফতিরা রাষ্ট্রীয় আইনেই সম্পত্তি বণ্টনের কাজ করে আসছেন। তবে মুফতি হলেও সম্পত্তির মালিকের ইচ্ছানুযায়ী মূলত রাষ্ট্রীয় আইনেই সেটা হয়ে আসছিল। তার কারণ গ্রিসের থ্রাস অঞ্চলের মুসলমানরা মূলত রাষ্ট্রীয় আইনই পছন্দ করে। অন্যদিকে আবার গ্রিসের আদালতে ইসলামি আইনে সম্পত্তি বণ্টনের রীতি শুরু হয়েছে, যার কারণ রাষ্ট্রীয় আইনেই সংখ্যালঘুদের জন্য তাদের ধর্ম অনুযায়ী বিচার করার কথা বলা হয়েছিল। গ্রিসের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ধর্মবিষয়ক সাধারণ সম্পাদক মন্তব্য করেছেন, ‘গ্রিসের মুসলমানদের ৯৯ থেকে ১০০ শতাংশই সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে ইসলামি আইনের বদলে গ্রিসের রাষ্ট্রীয় আইনকেই বেশি পছন্দ করেন। এমন কি তারা যা করাতে চান তা মুফতিদের দিয়ে করিয়ে নেওয়ার পথও তারা বের করে ফেলেছেন।’
আল জাজিরা লিখেছে, যে কারণে গ্রিসের মুসলমানরা ইসলামি আইন থেকে সরে গিয়ে রাষ্ট্রীয় আইনে উত্তরাধিকার নির্ধারণে আগ্রহী হয়েছেন তা হলো, ইসলামি আইনে পুরুষদের সম্পত্তিতে বেশি দেওয়া হয়েছে; নারীদের চেয়ে দ্বিগুণ। তাছাড়া ইসলামি আইনে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির উত্তরাধিকারদের মধ্যে ভাই-বোন ছাড়াও বাবা-মাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইলহাম আহমেতের মতে, আরও একটি সমস্যা হচ্ছে, ইসলামি আইন উইলকে স্বীকৃতি দেয় না। আর সেজন্য মোল্লা স্যালির সমস্যাটি দেখা দিয়েছে। স্যালি রোদোপির বাসিন্দা। সেখানকার তিন জন সংসদ সদস্যের একজন ইলহাম আহমেত। জানুয়ারিতে হওয়া নতুন আইন নিয়ে আহমেত উচ্ছ্বসিত। কারণ তাতে মুসলমানদের করা উইলগুলো আইনত প্রাধান্য পাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা উইলগুলো এই আইনের সুরক্ষা পাবে না। আবার নতুন আইন নিয়ে আহমেতের একটি আশঙ্কাও রয়েছে—সেটা দেনমোহর নিয়ে। ইসলামি আইনের বাধ্যবাধকতা না থাকলে দেনমহর পরিশোধের মামলায় স্ত্রীর পাওনা অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।
ঘটনার শুরু এটি উইল থেকে। গ্রিসের চাতিজে মোল্লা স্যালির স্বামী মারা যাওয়ার আগে প্রায় ১০ লাখ ডলারের সম্পত্তি স্ত্রীর নামে উইল করে দিয়ে গিয়েছিলেন। এ ঘটনা প্রায় এক দশক আগের। প্রথম দিকে স্যালি তার স্বামীর উইল করা সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার হওয়ার কথা ভাবলেও, বাদ সাধে তার স্বামীর বোনরা। আদালতে তারা এই মর্মে আবেদন করেন: মৃত ব্যক্তি মুসলমান সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। তারাও মুসলমান সম্প্রদায়ের সদস্য। ইসলামি আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির ভাগ তার বোনদেরও পাওয়ার কথা। সুতরাং স্যালি সব সম্পত্তি একা পেতে পারেন না। মামলাটি উত্থাপনের পর নিম্ন আদালত গ্রিসের রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী স্যালির পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে গ্রিসের সর্বোচ্চ আদালতে রায়ের ফল উল্টে যায়। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, ওই উইলের বৈধতা নেই, ইসলামিক আইনেই সম্পত্তির বণ্টন করতে হবে। আদালত স্যালিকে স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় সম্পত্তির বিবাদ মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে বিধবা মোল্লা স্যালি জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ আদালতের আইন অনুযায়ী ইসলামি আইনে যদি সম্পত্তির বণ্টন করতে হয় তাহলে উইলের মাধ্যমে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া তিন চতুর্থাংশ সম্পত্তিই তাকে দিয়ে দিতে হবে। সংক্ষুব্ধ স্যালি ‘ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটসে’ ধর্ণা দিয়েছেন। তার ভাষ্য, ইসলামি আইনের কারণে তার অধিকার খর্ব হয়েছে। তার আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেছেন, মুসলমান হওয়ায় তার জন্য ইসলামি আইনকে প্রযুক্ত করা হচ্ছে। যেহেতু তিনি সংখ্যালঘু, সেহেতু তাকে সংখ্যালঘু বিচারকের (মুফতি) কাছে যেতে বলা হচ্ছে। সেটা কোনও সুবিধা নয়, বরং অসুবিধা। তার মক্কেল স্যালি ‘একাধিক দিক দিয়ে বঞ্চনার শিকার।’ আইনজীবী কিসতাকিসের মতে ‘নারী হওয়ায় তাকে সম্পত্তি হারাতে হচ্ছে। তিনি যদি বিধবা না হয়ে বিপত্নীক হতেন তাহলে তাকে কোনও সম্পত্তি হারাতে হতো না।’ ‘ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটসে’ আগামী মাসে মোল্লা স্যালির মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
আল জাজিরা লিখেছে, গত জানুয়ারিতে গ্রিস সরকার একটি আইন পাস করেছে। যাতে বলা হয়েছে বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, ভরনপোষণ, সন্তানের আইনানুগ অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকারসহ অন্যান্য কিছু বিষয়ে নাগরিকরা গ্রিসের রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার পাবে। বিবাদমান পক্ষগুলো যদি ইসলামি আইনে মামলার ফয়সালা করতে রাজি হয় তাহলেই ইসলামি আইন কার্যকর হবে। বিবাদমান কোনও এক পক্ষ রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার চাইলে, সেটাই প্রথম পচ্ছন্দ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
গত ৪ দশক ধরে গ্রিসের মুফতিরা রাষ্ট্রীয় আইনেই সম্পত্তি বণ্টনের কাজ করে আসছেন। তবে মুফতি হলেও সম্পত্তির মালিকের ইচ্ছানুযায়ী মূলত রাষ্ট্রীয় আইনেই সেটা হয়ে আসছিল। তার কারণ গ্রিসের থ্রাস অঞ্চলের মুসলমানরা মূলত রাষ্ট্রীয় আইনই পছন্দ করে। অন্যদিকে আবার গ্রিসের আদালতে ইসলামি আইনে সম্পত্তি বণ্টনের রীতি শুরু হয়েছে, যার কারণ রাষ্ট্রীয় আইনেই সংখ্যালঘুদের জন্য তাদের ধর্ম অনুযায়ী বিচার করার কথা বলা হয়েছিল। গ্রিসের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ধর্মবিষয়ক সাধারণ সম্পাদক মন্তব্য করেছেন, ‘গ্রিসের মুসলমানদের ৯৯ থেকে ১০০ শতাংশই সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে ইসলামি আইনের বদলে গ্রিসের রাষ্ট্রীয় আইনকেই বেশি পছন্দ করেন। এমন কি তারা যা করাতে চান তা মুফতিদের দিয়ে করিয়ে নেওয়ার পথও তারা বের করে ফেলেছেন।’
আল জাজিরা লিখেছে, যে কারণে গ্রিসের মুসলমানরা ইসলামি আইন থেকে সরে গিয়ে রাষ্ট্রীয় আইনে উত্তরাধিকার নির্ধারণে আগ্রহী হয়েছেন তা হলো, ইসলামি আইনে পুরুষদের সম্পত্তিতে বেশি দেওয়া হয়েছে; নারীদের চেয়ে দ্বিগুণ। তাছাড়া ইসলামি আইনে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির উত্তরাধিকারদের মধ্যে ভাই-বোন ছাড়াও বাবা-মাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ইলহাম আহমেতের মতে, আরও একটি সমস্যা হচ্ছে, ইসলামি আইন উইলকে স্বীকৃতি দেয় না। আর সেজন্য মোল্লা স্যালির সমস্যাটি দেখা দিয়েছে। স্যালি রোদোপির বাসিন্দা। সেখানকার তিন জন সংসদ সদস্যের একজন ইলহাম আহমেত। জানুয়ারিতে হওয়া নতুন আইন নিয়ে আহমেত উচ্ছ্বসিত। কারণ তাতে মুসলমানদের করা উইলগুলো আইনত প্রাধান্য পাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা উইলগুলো এই আইনের সুরক্ষা পাবে না। আবার নতুন আইন নিয়ে আহমেতের একটি আশঙ্কাও রয়েছে—সেটা দেনমোহর নিয়ে। ইসলামি আইনের বাধ্যবাধকতা না থাকলে দেনমহর পরিশোধের মামলায় স্ত্রীর পাওনা অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।
No comments