স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন প্রশ্নে বাংলাদেশিদের পক্ষে লড়ছেন ব্রিটিশ এমপিরা by অদিতি খান্না
স্থায়ীভাবে
বসবাসের অনুমোদন সংক্রান্ত জটিলতায় শত শত বাংলাদেশি পেশাজীবীর যুক্তরাজ্যে
থাকা ও কাজ করার বিষয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে গত সপ্তাহে
ওয়েস্টমিনিস্টার হলে আয়োজিত এক বিতর্কে বাংলাদেশিদের পক্ষে যুক্তি-তর্ক
উপস্থাপন করেছেন বিভিন্ন দলের ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা।
লেবার পার্টির সংসদ সদস্য লিন ব্রাউন তার পূর্ব লন্ডনে অবস্থিত নির্বাচনি আসনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। ‘তুচ্ছ কারণবশত’ স্থায়ী বসবাসের আবেদন নাকচ করে দেওয়ার যে প্রবণতা যুক্তরাজ্যে দেখা দিয়েছে তার ভুক্তভোগী সাদেক লিন ব্রাউনের নির্বাচনি এলাকার বাসিন্দা। স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসের জন্য যে আবেদন সাদেক করেছিলেন তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আর যে প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা করেছে তা ‘অস্বচ্ছ।’ যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক হওয়া সত্ত্বেও স্থায়ী বসবাসের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় তিনি এতটাই বীতশ্রদ্ধ হয়েছেন যে তিনি বাংলাদেশে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন—যদিও তার আবেদনটি এখন বিচার বিভাগীয় পুনর্মূল্যায়নের তালিকায় রয়েছে।
অধ্যাপক সাদেক যে এলাকায় বসবাস করেন সেই ওয়েস্ট হ্যামের সংসদ সদস্য ব্রাউন বলেছেন, ‘সাদেকের স্ত্রী ও কন্যা ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে গেছেন। তার দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু সাদেক এখনও তাকে দেখতে পারেননি। কেন? কারণ তিনি বাংলাদেশে যেতে পারছেন না। যদি তিনি যান, তাহলে আর যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারবেন না।’
‘বাংলাদেশে সাদেক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন ছিলেন। এখন আমাদের দেশের সরকার যদি তার সঙ্গে এমন খারাপ আচরণ করে, তাহলে তিনি এখানে কেন থাকবেন? আর তিনি না থাকার কথাই ভবেছেন।’
অধ্যাপক সাদেক যুক্তরাজ্যে সাত বছর ধরে বসবাস করছেন। তিনি ২০১৬ সালে স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন (আইএলআর) চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে আবেদন খারিজ করে দেয়। ২০১১ সালে সাদেকের দাখিল করা কর নথিতে সামান্য ত্রুটি ছিল। তিনি তা স্বীকার করে নিয়ে ওই বছরই তা সংশোধন করেন এবং পাওনা টাকা পরিশোধ করে দেন। ওই ঘটনার কারণ দেখিয়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার আবেদন বাতিল করে দিয়েছে।
ব্রাউন এরপর আরও বলেন, ‘এটা খারাপ চরিত্রের কোন উদাহরণই হতে পারে না। অথচ তাকে চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে। এমন কি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন চাকরি হিসেবে তিনি যে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পাঠদান করান তাও বন্ধ হয়ে যাবে শীঘ্রই। তিনি অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ করেন। বাংলাদেশিদের প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার কাজেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন।
লিন ব্রাউন এসব তথ্য তুলে ধরেছেন ‘অভিবাসন নীতি: ধারা ৩২২ (৫)’ শীর্ষক বিতর্ক অনুষ্ঠানে। অভিবাসন আইনের ৩২২(৫) ধারার কারণে শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী ও প্রকৌশলীদের কি ধরণের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে তা জানতে ‘স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির’ (এসএনপি) অ্যালিসন থেউলিসের আহ্বানে বিতর্ক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় গত বুধবার। ওই ধারায় আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের যে বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা মূলত জঙ্গিদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার জন্য যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কর নথিতে থাকা ‘তুচ্ছ ভুলকে’ যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন বাতিলের কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যা ওই ধারাটির অপব্যবহার।
সংসদ সদ্যস অ্যালিসন থেউলিস বলেছেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের কেউই এমন কিছুর সঙ্গে জড়িত নন যাকে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে দেখা যেতে পারে।’
‘আবেদন প্রত্যাখ্যানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঘটনায় কারণ হিসেবে এমন বিষয়ের কথা লেখা হয়েছে যা কার্যত মানুষের স্বাভাবিক ভুলের মধ্যে পড়ে। পাশাপাশি ‘হার ম্যাজেস্টিস রেভিনিউ অ্যান্ড কাস্টমস’ (এইচআরএমসি) কথা যদি ধরি, ভুল সংশোধনের পর তাদের আর ওই সংক্রান্ত বিষয়ে কোন কিছু বলারই থাকে না। কয়েকটি ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে, কয়েক পাউন্ডের হিসাব এদিক ওদিক হওয়ার কারণ দেখিয়ে আবেদন বাতিল করা হয়েছে। কারণ হিসেবে দেখানো ঘটনাগুলোও অনেক বছর আগেকার।’
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী ক্যারোলিন নোক্স এ সময় বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও ভারতীয় অধ্যুষিত নির্বাচনি আসনগুলোর এমপিদের উত্থাপিত অভিযোগের জবাব দেন। তিনি জানান, বাতিল করা আবেদনগুলো পুনঃনিরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। আর তাতে দেখা গেছে, টায়ার ওয়ান ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন এমন পেশাজীবীদের বাতিল হওয়া আবেদনের ২৮১টির ক্ষেত্রেই ৩২২(৫) ধারা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৬৭১টি আবেদন পুনঃনিরীক্ষা করা হবে।
ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের নোকস বলেছেন, টায়ার ওয়ান ভিসাপ্রাপ্তদের ওপর চালানো নিরীক্ষা থেকে ২০১০ দেখা গিয়েছিল, ওই ভিসায় যুক্তরাজ্যে যাওয়া ব্যক্তিদের ২৯ শতাংশই অদক্ষ পেশাজীবী। আরও ৪৬ শতাংশের পেশা সংক্রান্ত তথ্য অস্পষ্ট। ওই নিরীক্ষার পর যে ‘কড়া নজরদারি’ চালু কড়া হয়েছে সে বিষয়টি তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।
‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই: করের নথিতে সামান্য ভুলের কারণ দেখিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। আমরা আবেদনকারীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেই এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে উপস্থাপিত যুক্তিকেও অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণের সঙ্গে বিবেচনা করি।’
এ বিষয়ে অদিতি ভরদ্বাজ মন্তব্য করেছেন, ‘এই প্রক্রিয়ার কারণে বহু মানুষকে আইনি জটিলতায় পড়তে হবে।’ অদিতি ভরদ্বাজ দক্ষ পেশাজীবীদের একটি সংগঠনের সমন্বয়কারী। স্থায়ী বসবাসের আবেদন বাতিলে তুচ্ছ ঘটনাকে কারণ হিসেবে দেখানোর প্রতিবাদে তার সংগঠন গত কয়েক মাসে সংসদ ভবনের সামনে ৪টি বড় প্রতিবাদ কর্মসূচী আয়োজন করেছে। ঘটনাটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণে চালানো তাদের প্রচেষ্টা দেখে স্বয়ং সংসদ সদস্যরা পর্যন্ত তাদের প্রশংসা করেছেন।
যুক্তরাজ্যে ৫ বছর বসবাসের পর নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে স্থায়ীভাবে বসাবসের আবেদন করা যায়। ২০১১ সালে টায়ার ওয়ান ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হলেও, ওই সময়ের আগে যেসব দক্ষ পেশাজীবী টায়ার ওয়ান ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন, নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করার জন্য তারা গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত সুযোগ পেয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যখন স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন বাতিল করে দিচ্ছিলেন তখন এই বাতিল করার প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি বিশেষ প্রবণতা লক্ষ্য করেছিলেন আইন বিশেষজ্ঞরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনের ৩২২(৫) ধারা ব্যবহার করছিল আবেদন বাতিলের কারণ দেখাতে গিয়ে। ওই ধারায় অভিযুক্ত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের যুক্তরাজ্যে থাকার আবেদন বাতিল করার বিধান দেওয়া রয়েছে। কর বিভাগকে দেওয়া আয়ের হিসেব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া আয়ের হিসেবের মধ্যে পার্থক্য দেখতে পেয়ে আবেদনকারী পেশাজীবীদের ‘চারিত্রিক সততা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই কারণ দেখিয়ে তাদের আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়। পুনর্বিবেচনা করা না হলে আবেদন প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে।
লেবার পার্টির সংসদ সদস্য লিন ব্রাউন তার পূর্ব লন্ডনে অবস্থিত নির্বাচনি আসনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। ‘তুচ্ছ কারণবশত’ স্থায়ী বসবাসের আবেদন নাকচ করে দেওয়ার যে প্রবণতা যুক্তরাজ্যে দেখা দিয়েছে তার ভুক্তভোগী সাদেক লিন ব্রাউনের নির্বাচনি এলাকার বাসিন্দা। স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাসের জন্য যে আবেদন সাদেক করেছিলেন তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আর যে প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা করেছে তা ‘অস্বচ্ছ।’ যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক হওয়া সত্ত্বেও স্থায়ী বসবাসের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় তিনি এতটাই বীতশ্রদ্ধ হয়েছেন যে তিনি বাংলাদেশে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন—যদিও তার আবেদনটি এখন বিচার বিভাগীয় পুনর্মূল্যায়নের তালিকায় রয়েছে।
অধ্যাপক সাদেক যে এলাকায় বসবাস করেন সেই ওয়েস্ট হ্যামের সংসদ সদস্য ব্রাউন বলেছেন, ‘সাদেকের স্ত্রী ও কন্যা ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে গেছেন। তার দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু সাদেক এখনও তাকে দেখতে পারেননি। কেন? কারণ তিনি বাংলাদেশে যেতে পারছেন না। যদি তিনি যান, তাহলে আর যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারবেন না।’
‘বাংলাদেশে সাদেক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন ছিলেন। এখন আমাদের দেশের সরকার যদি তার সঙ্গে এমন খারাপ আচরণ করে, তাহলে তিনি এখানে কেন থাকবেন? আর তিনি না থাকার কথাই ভবেছেন।’
অধ্যাপক সাদেক যুক্তরাজ্যে সাত বছর ধরে বসবাস করছেন। তিনি ২০১৬ সালে স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন (আইএলআর) চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে আবেদন খারিজ করে দেয়। ২০১১ সালে সাদেকের দাখিল করা কর নথিতে সামান্য ত্রুটি ছিল। তিনি তা স্বীকার করে নিয়ে ওই বছরই তা সংশোধন করেন এবং পাওনা টাকা পরিশোধ করে দেন। ওই ঘটনার কারণ দেখিয়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার আবেদন বাতিল করে দিয়েছে।
ব্রাউন এরপর আরও বলেন, ‘এটা খারাপ চরিত্রের কোন উদাহরণই হতে পারে না। অথচ তাকে চাকরিচ্যুত হতে হয়েছে। এমন কি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন চাকরি হিসেবে তিনি যে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পাঠদান করান তাও বন্ধ হয়ে যাবে শীঘ্রই। তিনি অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সেভ দ্য চিলড্রেন এবং ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ করেন। বাংলাদেশিদের প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার কাজেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন।
লিন ব্রাউন এসব তথ্য তুলে ধরেছেন ‘অভিবাসন নীতি: ধারা ৩২২ (৫)’ শীর্ষক বিতর্ক অনুষ্ঠানে। অভিবাসন আইনের ৩২২(৫) ধারার কারণে শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী ও প্রকৌশলীদের কি ধরণের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে তা জানতে ‘স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির’ (এসএনপি) অ্যালিসন থেউলিসের আহ্বানে বিতর্ক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয় গত বুধবার। ওই ধারায় আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের যে বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা মূলত জঙ্গিদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার জন্য যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কর নথিতে থাকা ‘তুচ্ছ ভুলকে’ যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন বাতিলের কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যা ওই ধারাটির অপব্যবহার।
সংসদ সদ্যস অ্যালিসন থেউলিস বলেছেন, ‘আমি সংশ্লিষ্ট যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের কেউই এমন কিছুর সঙ্গে জড়িত নন যাকে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে দেখা যেতে পারে।’
‘আবেদন প্রত্যাখ্যানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঘটনায় কারণ হিসেবে এমন বিষয়ের কথা লেখা হয়েছে যা কার্যত মানুষের স্বাভাবিক ভুলের মধ্যে পড়ে। পাশাপাশি ‘হার ম্যাজেস্টিস রেভিনিউ অ্যান্ড কাস্টমস’ (এইচআরএমসি) কথা যদি ধরি, ভুল সংশোধনের পর তাদের আর ওই সংক্রান্ত বিষয়ে কোন কিছু বলারই থাকে না। কয়েকটি ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে, কয়েক পাউন্ডের হিসাব এদিক ওদিক হওয়ার কারণ দেখিয়ে আবেদন বাতিল করা হয়েছে। কারণ হিসেবে দেখানো ঘটনাগুলোও অনেক বছর আগেকার।’
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী ক্যারোলিন নোক্স এ সময় বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও ভারতীয় অধ্যুষিত নির্বাচনি আসনগুলোর এমপিদের উত্থাপিত অভিযোগের জবাব দেন। তিনি জানান, বাতিল করা আবেদনগুলো পুনঃনিরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। আর তাতে দেখা গেছে, টায়ার ওয়ান ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন এমন পেশাজীবীদের বাতিল হওয়া আবেদনের ২৮১টির ক্ষেত্রেই ৩২২(৫) ধারা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১ হাজার ৬৭১টি আবেদন পুনঃনিরীক্ষা করা হবে।
ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের নোকস বলেছেন, টায়ার ওয়ান ভিসাপ্রাপ্তদের ওপর চালানো নিরীক্ষা থেকে ২০১০ দেখা গিয়েছিল, ওই ভিসায় যুক্তরাজ্যে যাওয়া ব্যক্তিদের ২৯ শতাংশই অদক্ষ পেশাজীবী। আরও ৪৬ শতাংশের পেশা সংক্রান্ত তথ্য অস্পষ্ট। ওই নিরীক্ষার পর যে ‘কড়া নজরদারি’ চালু কড়া হয়েছে সে বিষয়টি তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।
‘আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই: করের নথিতে সামান্য ভুলের কারণ দেখিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। আমরা আবেদনকারীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেই এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে উপস্থাপিত যুক্তিকেও অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণের সঙ্গে বিবেচনা করি।’
এ বিষয়ে অদিতি ভরদ্বাজ মন্তব্য করেছেন, ‘এই প্রক্রিয়ার কারণে বহু মানুষকে আইনি জটিলতায় পড়তে হবে।’ অদিতি ভরদ্বাজ দক্ষ পেশাজীবীদের একটি সংগঠনের সমন্বয়কারী। স্থায়ী বসবাসের আবেদন বাতিলে তুচ্ছ ঘটনাকে কারণ হিসেবে দেখানোর প্রতিবাদে তার সংগঠন গত কয়েক মাসে সংসদ ভবনের সামনে ৪টি বড় প্রতিবাদ কর্মসূচী আয়োজন করেছে। ঘটনাটির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণে চালানো তাদের প্রচেষ্টা দেখে স্বয়ং সংসদ সদস্যরা পর্যন্ত তাদের প্রশংসা করেছেন।
যুক্তরাজ্যে ৫ বছর বসবাসের পর নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে স্থায়ীভাবে বসাবসের আবেদন করা যায়। ২০১১ সালে টায়ার ওয়ান ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হলেও, ওই সময়ের আগে যেসব দক্ষ পেশাজীবী টায়ার ওয়ান ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন, নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করার জন্য তারা গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত সুযোগ পেয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যখন স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন বাতিল করে দিচ্ছিলেন তখন এই বাতিল করার প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি বিশেষ প্রবণতা লক্ষ্য করেছিলেন আইন বিশেষজ্ঞরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইনের ৩২২(৫) ধারা ব্যবহার করছিল আবেদন বাতিলের কারণ দেখাতে গিয়ে। ওই ধারায় অভিযুক্ত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের যুক্তরাজ্যে থাকার আবেদন বাতিল করার বিধান দেওয়া রয়েছে। কর বিভাগকে দেওয়া আয়ের হিসেব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া আয়ের হিসেবের মধ্যে পার্থক্য দেখতে পেয়ে আবেদনকারী পেশাজীবীদের ‘চারিত্রিক সততা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই কারণ দেখিয়ে তাদের আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়। পুনর্বিবেচনা করা না হলে আবেদন প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে।
No comments