হুমায়ূন আহমেদের চলে যাওয়ার দিন আজ
তিনি কথার জাদুকর, গল্পের রাজপুত্র। না ফেরার দেশে চলে গিয়েও তিনি আছেন। আজও তার স্থান বাঙালির হৃদয়ের মণিকোঠায়। তিনি আর কেউ নন- হুমায়ূন আহমেদ। পাঁচ বছর আগে শ্রাবণের আজকের দিনেই পাড়ি জমান পরপারে। আজ ১৯ জুলাই, বুধবার। বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র হুমায়ূনের প্রয়াণ দিবস। নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের আজকের দিনে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছিল সারা দেশে। লেখকের মরদেহ দেশে আনা হয় ২৩ জুলাই। বিমানবন্দর থেকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে কফিন সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে। লাখো মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পরদিন তার মরদেহ সমাহিত করা হয় গাজীপুরের নুহাশ পল্লীর লিচুতলায়। আজ লেখকের মৃত্যু দিবসে তার সমাধিক্ষেত্র ভরে উঠবে ফুলে ফুলে। ভক্ত ও অনুরাগীরা ফুলেল শুভেচ্ছা ও দোয়া কামনার মাধ্যমে লেখকের প্রতি জানাবেন ভালোবাসা। জাতীয় পত্রিকাগুলো তাকে নিয়ে প্রকাশ করছে নানান প্রতিবেদন। টিভি চ্যানেলগুলো নাটকসহ নানান আয়োজনে জানাবে তার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। আত্মজৈবনিক গ্রন্থে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন- ‘কল্পনায় দেখছি নুহাশ পল্লীর সবুজের মধ্যে শ্বেতপাথরের কবর, তার গায়ে লেখা- ‘চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে, নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে।’ সে কথাগুলো কাচের এপিটাফ করে তার সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন নিজের নকশায় সাজিয়েছেন স্বামীর কবর। সেখানে আজ শাওন ও তার দুই শিশুপুত্র নিনিদ ও নিষাদের ফুলের ছোঁয়া পাবেন তিনি। তারপর হাজারও মানুষ নুহাশ পল্লীর লিচুতলায় বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবেন প্রিয় লেখককে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নুহাশ পলীর পার্শ^বর্তী এতিমখানার অনাথ শিশুদের খাওয়ানো হবে হুমায়ূন আহমেদের পছন্দের খাবার। থাকবে কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, অন্বেষা, কাকলী ও সময়সহ কয়েকটি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী লেখকের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাবেন।
হুমায়ূন ভক্তদের গড়া হিমু পরিবহন নামের সংগঠনের পক্ষ থেকে লেখকের প্রয়াণবার্ষিকীতে নেয়া হয়েছে নানান কর্মসূচি। আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে ম্যাড থেটার পরিবেশিত নাটক ‘নদ্দিউ নতিম’। হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ উপন্যাস অবলম্বনে প্রযোজনাটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম। হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম কাজল। বাবা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। তিন ভাই দুই বোনের মাঝে তিনি সবার বড়। খ্যাতিমান কম্পিউটার বিজ্ঞানী, শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পর পরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তার লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- শঙ্খনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, জোছনা ও জননীর গল্প, কবি, লীলাবতী, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, বহুব্রীহি, মধ্যাহ্ন, এইসব দিনরাত্রি, দারুচিনী দ্বীপ, নক্ষত্রের রাত প্রভৃতি। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নয় নম্বর বিপদ সংকেত ও ঘেঁটুপুত্র কমলা। টিভি নাট্যকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন সমান জনপ্রিয়। আশির দশকের মাঝামাঝি তার প্রথম টিভি নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ অসম্ভব জনপ্রিয় হয়। তার হাসির নাটক ‘বহুব্রীহি’ এবং ঐতিহাসিক নাটক ‘অয়োময়’ বাংলা টিভি নাটকের ইতিহাসে অনন্য সংযোজন। ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’ এর চরিত্র বাকের ভাই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল টিভি দর্শকদের কাছে। হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ‘একুশে পদক’, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন।
No comments