আমাকে অপহরণই করা হয়েছিল
রহস্যজনক অপহরণের ঘটনায় কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ডিবি কর্মকর্তারা তার অপহরণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও তিনি অপহৃত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। মঙ্গলবার ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, তাকে (ফরহাদ মজহার) সেদিন অপহরণ করেই খুলনায় নেয়া হয়েছিল। বেলা ১১টার দিকে তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবির দাবি, ফরহাদ মজহার নিজেই খুলনায় গিয়েছিলেন। ফরহাদ মজহার জবানবন্দিতে অপহরণের মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে কী আইনি ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে ঘটনার সঠিক তদন্ত চেয়েছেন ফরহাদ মজহার। উদ্ধারের পর আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ফরহাদ মজহার বলেছিলেন, তাকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়েছিল। তার বক্তব্যে সন্দেহ প্রকাশ করে পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েকটি স্থানের সিসি ক্যামেরার ভিডিও এবং অর্চনা রানী নামে এক নারীর কথা বলা হলে এ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। ডিবির একজন কর্মকর্তা জানান, ফরহাদ মজহার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদেও একই কথা বলেছেন। তার কাছ থেকে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাকে (ফরহাদ মজহার) খুলনার ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে। আদালতে দেয়া জবানবন্দির সঙ্গে তদন্তে মিল পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, সেখান থেকে নড়ছেন না।
ফরহাদ মজহার ও তার স্ত্রী ফরিদা আখতার আমাদের বলেছেন, আপনাদের তদন্ত আপনারা করেন, আমরা আমাদেরটা দেখব। এদিকে ফরিদাকে উদ্ধৃত করে তার এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ডিবি বলেছে, ঘটনাটি অপহরণের কিছু নয়। জবাবে ফরহাদ মজহার বলেছেন, আপনাদের তদন্তে অন্য কিছু বের হলে সে অনুযায়ী আপনারা কাজ করেন। কিন্তু আমাদের বক্তব্য আদালতেই দেয়া হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা ডিবি জানায়, ফরহাদ মজহারের জবানবন্দি, হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজারের জবানবন্দি, তার (ফরহাদ মজহার) ভক্ত এক নারীর জবানবন্দিতে গরমিল থাকায় তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাছাড়া তিনি অপহৃত হয়েছেন- এমন কোনো প্রত্যক্ষদর্শীও পাওয়া যায়নি। এসব বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে আগে আদালতে তিনি যে জবানবন্দি দিয়েছেন, এখনও সেই অবস্থানেই আছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর ১টার দিকে ফরহাদ মজহার ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। এ বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তে পাওয়া তথ্য এবং ফরহাদ মজহারের দেয়া তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে। ফরহাদ মজহারের দেয়া তথ্য সঠিক না হলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে আবদুল বাতেন বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ পুলিশকে বিভ্রান্ত করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। ফরহাদ মজহার যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করে থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ২১১ ধারায় ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি পুলিশ আমাদের ডেকেছিল। তারা নানা বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। আমরা যা জানি তা বলেছি। প্রসঙ্গত, গত ৩ জুলাই ভোরে রাজধানীর শ্যামলীর বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের অভয়নগর এলাকায় খুলনা থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর প্রথমে ফরহাদ মজহারকে খুলনায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকার আদাবর থানায় আনা হয়। পরে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হলে সেখানে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
No comments