জাতীয় নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত ‘ওয়ার্মআপ’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তাপ ছড়াতে যাচ্ছে ছয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর ও গাজীপুর সিটির নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের ‘ওয়ার্মআপ’ (প্রস্তুতি) হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকসহ সাধারণ ভোটাররা। সংসদ নির্বাচনের আগে এসব স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফল জাতীয় নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলেও মনে করছেন তারা। এ ওয়ার্মআপে যারা ভালো করবে, তারা বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। তাই নির্বাচনগুলোর ফল নিজেদের পক্ষে আনতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। এতে দুই দলের মাঠপর্যায়ের শক্তির একটা মহড়া দেখা যাবে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এ ছয়টি নির্বাচনের পর পরই জাতীয় নির্বাচনের কর্মকৌশল চূড়ান্ত করবে বড় দুই দল- এমন আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের জন্যও এটা মর্যাদার লড়াই। এ নির্বাচনের কতটুকু অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে পারে, তার ওপর ইসির ভাবমূর্তি অনেকটাই নির্ভর করছে। সংসদ নির্বাচনের আগে এ ছয় সিটি নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্য দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও সবার আস্থা অর্জনে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে নতুন ইসিকে। সিটি নির্বাচন ইসির সামনে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মোক্ষম সুযোগ। তাই একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ইসির জন্যও এটি একরকম ‘অগ্নিপরীক্ষা’ বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে ছয় সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে বড় দুই দলের হাইকমান্ড এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন। অন্যদিকে প্রকাশ্যে না থাকলেও প্রস্তুতিতে ঘাটতি নেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও এবারও বিএনপি সিটি নির্বাচনে যাচ্ছে, এটা নিশ্চিত।
২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল এবং ৬ জুলাই গাজীপুর সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় রংপুর সিটির নির্বাচন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিধিমালা অনুযায়ী, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। সেই হিসাবে চলতি বছরের শেষ থেকে শুরু করে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে পর্যায়ক্রমে ছয় সিটিতে ভোট হতে পারে। আগামী বছর ১৮ মার্চ রংপুর সিটির মেয়াদ পূর্ণ হবে। রংপুর সিটির নির্বাচন দিয়েই এ ছয় সিটির ভোটের হাওয়া শুরু হবে। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছয়টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ওই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মদক্ষতা ও নিরপেক্ষতার কিছুটা আঁচ করা যাবে না। ছয় সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনের অবস্থান জানতে চাওয়া হলে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ্ যুগান্তরকে বলেন, ছয় সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে রংপুরে আগে নির্বাচন হয়েছিল। এ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের বিষয়ে কমিশন সভায় আলোচনা হবে। কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কমিশন সচিবালয়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ক্ষমতাসীনরা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এখন থেকেই দলটির হাইকমান্ড নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য কয়েক প্রার্থীকে সবুজ সংকেতও দেয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামার আগে দলীয় কোন্দল মেটাতে চায় দলটি। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বিগত সিটি নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তাই এবার নির্বাচনের আগেই অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যমে মাঠে নামতে চান তারা। কুমিল্লা সিটিতে পরাজয়ের পর থেকেই এ নিয়ে কাজ করেছেন দলটির হাইকমান্ড। সূত্র জানায়, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এসব সিটিতে জিততে চায় আওয়ামী লীগ। কারণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সংসদ নির্বাচনে, যা দলের জন্য শুভ হবে না।
তাই এসব বিবেচনা মাথায় রেখে নির্বাচনী ছক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক যুগান্তরকে বলেন, আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে আমরা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। বড় সিটিগুলোতে জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করব। ভোটাররা আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পরিবর্তনের পার্থক্যটা বুঝতে পারবে। নির্বাচন নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা করি। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে আওয়ামী লীগ সব সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আওয়ামী লীগ বড় রাজনৈতিক দল। এখানে অনেক প্রার্থী রয়েছে। তারপরও এদের মধ্য থেকে যোগ্য এবং ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়- এমন নেতাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। এসব নির্বাচন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের এ নেতা। বিএনপি সূত্র জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিলেও আগামীতে এসব সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দলটি। এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এমন বার্তাও দেয়া হয়েছে। দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী এবং নেতাকর্মীরাও মনে করেন, বিএনপি সিটি নির্বাচনে যাচ্ছে। কারণ অতীতে তারা সবক’টি নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে। এছাড়া অতীতের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এ নির্বাচন দলটির কাছেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সাংগঠনিক অবস্থাটাও এর মধ্য দিয়ে ঝালাই করার সুযোগ পাবে। বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, বেশ কিছু কারণেই সিটি নির্বাচন আমাদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসব নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। পাশাপাশি ধানের শীষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে- এমন একটি বার্তাও সাধারণ ভোটারদের কাছে পৌঁছবে, যা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এসব বিষয় মাথায় রেখে এসব সিটিতে ভালো ব্যবধানে জয়ের পরিকল্পনা করছে তারা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বারবার বহিষ্কার, সরকারের নানা ব্যর্থতা, গুম, খুন, বিদেশে টাকা পাচার, চালসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি- এসব বিষয় সামনে রেখে জনমত তৈরিতে মাঠে সরব হবেন তারা। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের কোনোটাতেই বিশ্বাস করে না সরকার। জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কথায় কথায় বরখাস্ত করতে পারতেন না। তিনি বলেন, নির্বাচন তো হবে, আর রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের পক্ষে নির্বাচনে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন কখনও বর্জন করিনি।
তবে নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ। ভোটাররা যাতে বলতে পারে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অতীতের মতো এসব সিটিতে ধানের শীষের বিপুল বিজয় হবে। কারণ, সরকারের অন্যায় অত্যাচার, গুম-খুন, দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের বিপক্ষে রায় দিতে তারা মুখিয়ে আছে। স্থানীয় জনগণ ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও নির্বাচনের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। কারা প্রার্থী হচ্ছেন, বর্তমান মেয়রদের বারবার বরখাস্তসহ নানা বিষয় উঠে আসছে তাদের আলোচনায়। অনেকে মনে করেন, জনপ্রতিনিধিদের ঠিকমতো কাজ করতে দিলে তাদের নানা ভুল হতে পারত। একই সঙ্গে দুর্নীতিও ধরা পড়ার আশঙ্কা ছিল। এতে তারা ইমেজ সংকটে পড়তেন। যার সুবিধা ক্ষমতাসীনদের পক্ষেই যেত। আবার কেউ কেউ মনে করেন, বারবার বরখাস্তের কারণে বর্তমান মেয়ররাই ভবিষ্যতে এ সুবিধা পাবেন। তারা সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনেও এসব প্রতিনিধিদের ভোট দিতে পারেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে এবং ছয় বিভাগের যুগান্তরের ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ছয় সিটির বর্তমান চিত্র তুলে ধরা হল-
রংপুর : ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশনে প্রথম ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মেয়র পদে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু জয়লাভ করেন। আগামী ২১ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে এ সিটির দ্বিতীয় নির্বাচনের ক্ষণ গণনা। নির্বাচন করতে হবে ছয় মাস অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ সিটিতে ক্ষমতাসীনরা বর্তমান মেয়রের হাতেই নৌকা প্রতীক তুলে দিতে পারেন। রংপুর শহর একসময় জাপার ঘাঁটি থাকলেও বর্তমানে দলটির সাংগঠনিক চিত্র ততটা ভালো নয়। দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। মহানগর জাপার সভাপতি দল থেকে মনোনয়ন পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। এ সিটিতে বিএনপির সাংগঠনিক চিত্র ততটা ভালো নয়। নেই যোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য একক প্রার্থীও। এ সুযোগে দলের কয়েক নেতাই মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অন্য সিটিতে ফলাফল যাই হোক রংপুরে নৌকার জয়ের সম্ভাবনাই বেশি।
রাজশাহী : ২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে হারিয়ে মেয়র হন বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আগামীতে এ দু’জনের হাতেই তুলে দেয়া হতে পারে নৌকা ও ধানের শীষ। তবে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবার হাইকমান্ডকে ভাবিয়ে তুলছে। মহানগর ও জেলা বিএনপির মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ শেষ পর্যন্ত ফয়সালা না হলে ভোটের মাঠে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররা। বিএনপির কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীনরা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কাউকে নির্বাচনে দাঁড় করাতে পারেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।
খুলনা : বর্তমান মেয়র বিএনপি মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি আবারও নির্বাচন করবেন। মনির কাছে পরাজিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক এবারও নির্বাচন করতে চান। তবে আওয়ামী লীগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ আবু নাসেরের ছেলে শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। আর জাতীয় পার্টি প্রার্থী হিসেবে মুশফিকুর রহমান মুশফেককে ইতিমধ্যে মনোনয়ন দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এবারও মূলত নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
সিলেট : গত নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মহানগর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এবারও দলের মনোনয়ন পেতে পারেন। হাইকমান্ড ইতিমধ্যে তাকে সবুজ সংকেতও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে মনোয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আসাদ। আর বিএনপি সমর্থিত বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীই পেতে পারেন বিএনপির মনোনয়ন। যদিও দুই দলের অনেকেই মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, গতবারের চেয়ে এবারও আরিফুল হক কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারেন। দীর্ঘদিন কারাভোগ এবং ঠুনকো অজুহাতে দুই দফা সাময়িক বহিষ্কার করায় সাধারণ ভোটাররা তার প্রতি কিছুটা সহানুভূতি দেখাতে পারেন।
বরিশাল : আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র শওকত হোসেন হিরণকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির আহসান হাবিব কামাল। আগামী সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে অনেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাকে মনোনয়ন দিতে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সাদিক স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে। বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালের বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে। দলের বড় একটি অংশ তার বিপক্ষে। এ ক্ষেত্রে বরিশালের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় এক নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। স্থানীয়রা জানান, দুই দলের প্রভাবশালী দুই প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলে নির্বাচন অনেকটা মর্যাদার লড়াইয়ে রূপ নেবে।
গাজীপুর : গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে বর্তমান মেয়রের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলে বারবার বরখাস্ত ও কারাগারে পাঠানোয় বিএনপির একটি অংশ তার প্রতি আস্থাশীল। তবে বিএনপির প্রভাবশালী আরেক নেতা হাসান উদ্দিন সরকারও মেয়র পদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। অতীতের মতোই গৃহবিবাদে বিপর্যস্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লা খানের পাশাপাশি মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমও মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
রংপুর : ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশনে প্রথম ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মেয়র পদে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু জয়লাভ করেন। আগামী ২১ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে এ সিটির দ্বিতীয় নির্বাচনের ক্ষণ গণনা। নির্বাচন করতে হবে ছয় মাস অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ সিটিতে ক্ষমতাসীনরা বর্তমান মেয়রের হাতেই নৌকা প্রতীক তুলে দিতে পারেন। রংপুর শহর একসময় জাপার ঘাঁটি থাকলেও বর্তমানে দলটির সাংগঠনিক চিত্র ততটা ভালো নয়। দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। মহানগর জাপার সভাপতি দল থেকে মনোনয়ন পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। এ সিটিতে বিএনপির সাংগঠনিক চিত্র ততটা ভালো নয়। নেই যোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য একক প্রার্থীও। এ সুযোগে দলের কয়েক নেতাই মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অন্য সিটিতে ফলাফল যাই হোক রংপুরে নৌকার জয়ের সম্ভাবনাই বেশি।
রাজশাহী : ২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে হারিয়ে মেয়র হন বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আগামীতে এ দু’জনের হাতেই তুলে দেয়া হতে পারে নৌকা ও ধানের শীষ। তবে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবার হাইকমান্ডকে ভাবিয়ে তুলছে। মহানগর ও জেলা বিএনপির মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ শেষ পর্যন্ত ফয়সালা না হলে ভোটের মাঠে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও ভোটাররা। বিএনপির কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীনরা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কাউকে নির্বাচনে দাঁড় করাতে পারেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।
খুলনা : বর্তমান মেয়র বিএনপি মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি আবারও নির্বাচন করবেন। মনির কাছে পরাজিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক এবারও নির্বাচন করতে চান। তবে আওয়ামী লীগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ আবু নাসেরের ছেলে শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। আর জাতীয় পার্টি প্রার্থী হিসেবে মুশফিকুর রহমান মুশফেককে ইতিমধ্যে মনোনয়ন দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এবারও মূলত নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
সিলেট : গত নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মহানগর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এবারও দলের মনোনয়ন পেতে পারেন। হাইকমান্ড ইতিমধ্যে তাকে সবুজ সংকেতও দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে মনোয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আসাদ। আর বিএনপি সমর্থিত বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীই পেতে পারেন বিএনপির মনোনয়ন। যদিও দুই দলের অনেকেই মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, গতবারের চেয়ে এবারও আরিফুল হক কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারেন। দীর্ঘদিন কারাভোগ এবং ঠুনকো অজুহাতে দুই দফা সাময়িক বহিষ্কার করায় সাধারণ ভোটাররা তার প্রতি কিছুটা সহানুভূতি দেখাতে পারেন।
বরিশাল : আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র শওকত হোসেন হিরণকে পরাজিত করে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির আহসান হাবিব কামাল। আগামী সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে অনেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাকে মনোনয়ন দিতে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সাদিক স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে। বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালের বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে। দলের বড় একটি অংশ তার বিপক্ষে। এ ক্ষেত্রে বরিশালের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় এক নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। স্থানীয়রা জানান, দুই দলের প্রভাবশালী দুই প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলে নির্বাচন অনেকটা মর্যাদার লড়াইয়ে রূপ নেবে।
গাজীপুর : গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে বর্তমান মেয়রের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলে বারবার বরখাস্ত ও কারাগারে পাঠানোয় বিএনপির একটি অংশ তার প্রতি আস্থাশীল। তবে বিএনপির প্রভাবশালী আরেক নেতা হাসান উদ্দিন সরকারও মেয়র পদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। অতীতের মতোই গৃহবিবাদে বিপর্যস্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লা খানের পাশাপাশি মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলমও মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
No comments