বেঁধে দেয়া হচ্ছে ক্রেডিট কার্ডে ঋণের সুদহার
ক্রেডিট কার্ডের নীতিমালা সংশোধন হচ্ছে। কমানো হচ্ছে গলাকাটা সার্ভিস চার্জ। ইতোমধ্যে এ নীতিমালা সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নীতিমালা সংশোধন হলে কোনো ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে এসএমই ঋণের সুদের অতিরিক্ত ৫ শতাংশের বেশি আদায় করতে পারবে না। জানা গেছে, দেশে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বাহারি ধরনের ক্রেডিট কার্ড বাজারে ছাড়ছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান মতে, ইতোমধ্যে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আর এ কার্ডের মাধ্যমে ঋণের পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তবে জামানতবিহীন এই ক্রেডিট কার্ড ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাতের জন্য অনেক েেত্রই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণ অন্যান্য ঋণের তুলনায় বেশি খেলাপি হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও এই ঋণ বিতরণে অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক নিয়মনীতি সঠিকভাবে পালন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। কেউ ভুয়া স্যালারি সার্টিফিকেট দিয়ে এবং ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ নিয়ে পালিয়ে আছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সেসব ভুয়া গ্রাহককে খুঁজে পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দেশী এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এই কার্ড ব্যবহার করার জন্য গ্রাহকদের একই কার্ড অথবা দুই ধরনের কার্ড দিয়ে আসছে। এসব কার্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অনেক ব্যাংক সর্বোচ্চ শতকরা ৩০-৪০ ভাগ পর্যন্ত সুদ আদায় করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিনিয়োগ স্থবিরতার মধ্যে বেশির ভাগ ব্যাংকের হাতেই অতিরিক্ত তহবিল রয়েছে। আমানতের সুদ হার কমিয়ে তলানিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর পরেও ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় কমছে না। এ পরিস্থিতিতে বছর শেষে নিশ্চিত লোকসানের হাত থেকে ব্যাংকগুলো আগ্রাসী ব্যাংকিং শুরু করেছে। অনেকে প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের বাইরে এসে ক্রেডিট কার্ড, ভোক্তাঋণের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণসীমা বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ভোক্তাদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, জামানতবিহীন ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকির পরিমাণ বাড়ছে ব্যাংক খাতে। কেননা এমনিতেই ব্যাংকের বড় বড় ঋণের বিপরীতে জামানত নিয়েও আদায় হয় না সেসব ঋণ। হলমার্ক, বিসমিল্লাহসহ বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ধকল ব্যাংক খাতকে এখনো ভোগাচ্ছে।
এর বাইরে জামানতবিহীন ঋণ বেড়ে যাচ্ছে, যা ঝুঁকির পরিমাণ আরো বাড়াচ্ছে এ খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বেশি ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ শ্রেণী বিভাজন করা যাচ্ছে না। এর ফলে পরিদর্শন করতে গিয়ে নানা বিপত্তির মুখে পড়ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শকেরা। গ্রাহকদের সমতা না থাকা সত্ত্বেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণসীমা বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সাধারণ গ্রহকদের এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণসীমা দেয়া হচ্ছে। জামানতবিহীন ঋণ দেয়ার মাধ্যমে ঋণঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে নতুন করে ঝুঁকির মুখে ফেলছে ব্যাংকিং খাতকে। পরিস্থিতি সীমার বাইরে যাওয়ার আগেই সতর্কতামূলক পদপে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের ঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে ক্রেডিট কার্ডের ঝুঁকি হ্রাস, ক্রেডিট কার্ডের গুণগত মান বৃদ্ধিসহ সার্ভিস চার্জের সীমা নামিয়ে আনা হচ্ছে। ওই সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। নীতিমালা অনুমোদিত হলে ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে ইচ্ছে মতো সুদ আদায় করতে পারবে না। এ জন্য ঋণের সুদহার বেঁধে দেয়া হচ্ছে। যেসব ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করবে ওই সব ব্যাংক তাদের এসএমই ঋণে যে সুদ আদায় করে তার সাথে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সুদ আদায় করতে পারবে। অর্থাৎ এখন এসএমই ঋণের গড় সুদ হার ১৫ শতাংশ রয়েছে। এ নীতিমালা অনুমোদন হলে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সুদ আদায় করা যাবে ২০ শতাংশ, যা বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নেয়া হচ্ছে।
No comments