মিঠাপুকুরে ডিসি অফিসে আবেদন ছাড়াই চলছে ১৭ ইটভাটা
রংপুরের মিঠাপুকুরে ডিসির অনুমোদন তো দুরের কথা, ডিসি অফিসে আবেদনটুকুও না করে গত পাঁচ বছর ধরে চলছে এমআরবিসহ ১৭টি ইটভাটার কার্যক্রম। প্রতিবছরই অনুমোদনবিহীন এই ইটভাটার আগুনে নস্ট হচ্ছে পার্শ্ববতি বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। ভুক্তভোগিরা ডিসি বরাবরে আবেদন করেও কোন সুরাহা মেলে নি। বরং ইটভাটার মালিক প্রভাবখাটিয়ে ডিসি অফিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে চালাচ্ছে ইট বিক্রির কার্যক্রম। রংপুর ডিসি ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ডিসি অফিসে মিঠাপুকুর উপজেলায় মোট ২৮ টি ইটভাটার তালিকা আছে। এরমধ্যে আটটির লাইসেন্স আছে এবং তিনটি ইটভাটা আবেদন করেছে লাইসেন্সের জন্য। আর এমআরবিসহ ১৭ টি ইটভাটা আজ পর্যন্ত লাইসেন্সের জন্য আবেদনই করে নি। রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিডি আখতারুজ্জান টুকু জানান, এমআরবি নামে কোন ইটভাটা মিঠাপুকুরে আছে বলে আমাদের কাছে কোন তথ্য নাই। তাদের কোন ফাইলপত্রও নেই আমাদের অফিসে। এমআরবি ইটভাটার মালিক রাশেদুল হক মিঠুন জানান, আমার সকল কাগজপত্র আছে। কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি একবার বলেন, ইসলামী ব্যাংকে লোনের জন্য দেয়া আছে। আরেকবার বলেন সব বগুড়ায় আছে। তিনি আরও বলেন, ডিসি অফিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই ভাটা পরিচালনা করছি। রাজস্ব দিচ্ছি। ডিসি এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের যখন এই বক্তব্য তখন সরেজমিনে পাওয়া গেলে ভিন্ন তথ্য। ডিসির কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগ এবং সরেজমিন অনুসন্ধান দেখা গেছে উপজেলার ছড়ান শালিকাদহ গ্রামের রাশেদুল হক মিঠুন ডিসি অফিস এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে অন্ধকারে রেখে গুটিবাড়ি বাজার এলাকায় ৫ বছর আগে মেসার্স মাস্টার এয়ার ফ্রিক্স ফিল্ড-এমআরবি নামে এই ন্যুনতম অনুমোদনবিহীন ভাটা প্রতিষ্ঠা করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করে আসছেন। নিয়ম অনুযায়ী ১২০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন চিমনি নির্মাণ করার কথা থাকলেও সেখানে নাম মাত্র একটি চিমনি তৈরি করা হয়েছে। কয়লা ছাড়াই কাঠ ও মটরযানের টায়ার জ্বালিয়ে ইটপোড়ানোর কাজ করা হয় ভাটাটিতে। ভাটার নির্গত ধোঁয়ায় প্রতিবছরই আশেপাশের ফসলের মাঠে আঘাত হেনে জমির ফসল পুড়ে যায়। প্রতি বছরই মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলেন কিন্তু জমির মালিকদের তা দেন না। এবার এই ইটভাটার আগুনে পুড়ে গেছে অনেক উঠতি ভুট্রাক্ষেতসহ কৃষকের ফসল। ইটভাটার পাশের জমির মালিক গুটিবাড়ী গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম (৪৫) ও রবিউল ইসলাম (৩৬) জানান, প্রথমেক একটু একটু করে পোড়া দাগ দেখা যাচ্ছিল। এখন পুরোটাই ছাই হয়ে গেছে। এভাবে আশেপাশের ২৫ বিঘা জমির ভুট্রা ও ধানের জমি পুড়ে গেছে। গুটিবাড়ি এলাকার কৃষক এমদাদুল হক জানান, ইটভাটার ধোয়ায় পুড়ে গেছে আমার ১৩ কাঠার বোরো এবং ১৬ কাঠার ভুট্রা ক্ষেত। মালিক আমাদের ক্ষতিপুরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
কিন্তু আমরা ডিসি অফিসে আবেদন করায় এবং সাংবাদিকদের বিষয়টি বলায় আমাদের আর ক্ষতিপুরন দেন নি। এবার আমাদের মওসুমটাই নস্ট হয়ে গেছে। আমরা ইটভাটাটি বন্ধ এবং মালিকের বিচার চাই। মোছলমারী গ্রামের মহসিন আলী (৩৮) ও গাওসুল আজম (৫৫) জানান, ইটভাটার তাপে আমাদের জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পর তৎক্ষনাৎ আমরা ভাটার মালিককে মোবাইল ফোনে অবগত করেছি। এমনকি আমরা সকল কৃষক ভাটায় উপস্থিত হয়ে তাকে বিষয়টি জানানোর পরেও তিনি আমাদের কথায় কোন কর্ণপাত করেননি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ দাখিল করেছি। মোছলমারী গ্রামের অপর কৃষক মোর্শেদুল (৩০) জানান, চলতি মৌসুমে গ্রামের পার্শ্বে তার পঁচিশ শতাংশ উঁচু জমিতে রোপন করেছিলাম উন্নত জাতের ভুট্রা। নিয়মিত ক্ষেত পরিচর্যা ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে লকলক করে বেড়ে উঠেছে ভুট্রার গাছ। ক’দিন পরেই গাছে আসতে শুরু করবে সবুজ মোচায় ভুট্রার সোনালী দানা। কিন্তু ইটভাটার এমআরবি ইটভাটার উত্তাপ ও বিষাক্ত ধোঁয়ায় ভুট্রাক্ষেত নস্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি যখন ভাটার মালিককে বলি তখন তিনি ক্ষতিপুরণ দেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ক্ষতিপূরণও দেন নি। এমআরবি ইটভাটার মালিক রাশেদুল হক মিঠুন জানান, আমার জিকজ্যাগ ইটভাটার কারণে নয় বরং আবহাওয়া অনকুলে না থাকার কারণে এখানকার কৃষকদের ফসলহানী হয়েছে। তবুও আমি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে কথা বলেছি। তাদের ক্ষতিপুরণ দেয়ার কথা হয়েছে।
No comments