সাগর ও নদীতে নারী-পুরুষরা অবৈধ মশারি জালে ধরছে রেনু
উপকূলীয়
জেলা বরগুনাসহ দক্ষিন অঞ্চলের নদ-নদীতে অবৈধ ভাবে মশারি জাল দিয়ে নিধন করা
হচ্ছে সমুদ্রের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।এতে সামুদ্রিক মাছের বংশ বিস্তারে
নানা রকম প্রভাব পরছে। মশারি জাল দিয়ে বাগদা ও গলদা চিংড়ি পোনা ধরার নামে
প্রতিদিন নির্বিচারে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক লাখ মাছের পোনা নিধন করা হচ্ছে।
এতে সামুদ্রিক মাছের বংশবিস্তার হুমকিতে পড়েছে। মৎস্য বিভাগের যোগসাজোসে
স্থানীয় নেতাদের মাসিক মাসোহারা দিয়ে এই বাণিজ্য চলছে বলে এলাকায় অভিযোগ
পাওয়া গেছে। একটি জরিপের ফলাফলে জানা যায়, পোনা সংগ্রহকারীরা একটি বাগদা
পোনা ধরতে গিয়ে ধ্বংস করছে ৩৮ প্রজাতির চিংড়ি ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির
অন্যান্য মাছ এবং ৫৬ প্রজাতির জুপ¬াংটনসহ ১০০ প্রজাতির জলজ প্রাণী। এ
ব্যাপারে জানতে চাইলে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের ডিন সুলতান মাহমুদ বলেন, এটি যে মৎস্য ভান্ডারের
জন্য বিরাট হুমকি তা বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করা হচ্ছে। এ
বিষয়ে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম উপায়ে (হ্যাচারি
পদ্ধতি) চিংড়ি রেণু উৎপাদনকে উৎসাহিত করা দরকার। জানা গেছে, সরকার উপকূলে
পোনা শিকার নিষিদ্ধ করলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা কোটি
কোটি টাকা লগ্নি করে দরিদ্র জেলেদের চিংড়ি ধরার কাজে উৎসাহিত করছে।
পাথরঘাটার চরদুয়ানি মৎস্য উপকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ১৮টি ট্রাক গলদা ও বাগদা
রেণু নিয়ে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট যায়। বরগুনার আমতলী, তালতলী ও
পটুয়াখালীর কলাপাড়া, মহিপুর, কুয়াকাটা ও আলীপুর মোকাম থেকে কমপক্ষে ১০টি
ট্রাক এবং বরগুনা সদর থেকে দুটি ট্রাক বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় যায়।
তালতলীর কয়েকজন পোনা ব্যবসায়ী বলেন, ট্রাকভেদে ১৮ থেকে ৩০টি পাতিল বহন করা
যায়।
একেকটি পাতিলে ১০হাজার করে পোনা বহন করা হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি
ট্রাকে এক লাখ ৪০ হাজার থেকে তিন লাখ পোনা বহন করা হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন
এই তিন পথে ৩০টি ট্রাকে গড়ে ৬০লাখ পোনা পাচার হয়। এ ছাড়া নদীপথে ট্রলারে
করে পাচার হয় কমপক্ষে আরও ৪০লাখ পোনা। বাগদা রেণুর প্রতি হাজার এক হাজার
টাকায় কিনে মোকামে দেড় হাজার এবং গলদা পোনা দেড় হাজার টাকায় কিনে মোকামে
দুই হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়। আমতলীর কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ক্ষমতাসীন
দলের স্থানীয় নেতা ও ক্যাডারদের মাসে এক লাখ টাকা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীকে মাসিক ৪০ হাজার টাকা দিয়ে এসব ট্রাকে করে পোনা পাচার করা হয়।
সরেজমিনে বরগুনার বিষখালী, বলেশ্বর ও পায়রা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো ঘুরে
দেখা যায়, বহু নারী-শিশু মশারির জাল দিয়ে চিংড়ি রেণু ধরার কাজে ব্যস্ত।
প্রতিবার জাল ফেলে সাত-আটটি চিংড়ি পোনা পেলেও তার সঙ্গে উঠে আসছে টেংরা,
পোয়া, তপসিসহ কয়েক প্রজাতির পোনা। চিংড়ি পোনা আলাদা করে মাটি ও অন্যান্য
পাত্রে জিইয়ে রাখলেও অন্য প্রজাতির মাছের পোনাগুলো ডাঙায় অথবা চরে ফেলে
দেওয়ায় সেগুলো মারা যাচ্ছে। এ ব্যপারে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড:
ওহিদুজ্জামান নয়াদিগন্তকে বলেন, জেলেরা যাতে রেণু পোনা শিকার করতে না পারে
সে ব্যাপারে আমরা সচেতনতামূলক কর্মকর্তা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে রেণু জব্দ
করে নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসন ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় বিশেষ
অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
No comments