সেনা অপারেশনে দুই জঙ্গি নিহত by ওয়েছ খছরু
সিলেটে
জঙ্গি আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। গতকাল শিববাড়ির
আতিয়া মহলে দিনভর অভিযান চালানোর পর বিকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য
নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী। সংবাদ সম্মেলনে সেনা সদরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
ফখরুল আহসান জানান, দুই জঙ্গি মারা গেছে- এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ভেতরে
আরো এক বা একাধিক আছে। তাদের কাছে ক্ষুদ্র অস্ত্র ও বিস্ফোরক রয়েছে। এছাড়া,
ওই ভবনে তারা বিস্ফোরক পেতে রেখেছে। এ জন্য সময় নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা
হচ্ছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিহত দুইজনই পুরুষ। সেনা
কমান্ডোরা গুলি করার পর তারা লুটিয়ে পড়ে। এরপরও একজন নিজের সঙ্গে থাকা
সুইসাইড ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায়।
ভেতরে অবস্থানরত জঙ্গিরা বেশ কৌশলী জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযানে ‘ভালো’ ঝুঁকি রয়েছে। ফলে বলা যাচ্ছে না, কখন তা শেষ হবে। এই সেনা কর্মকর্তা আতিয়া মহলের ভেতরের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, দুজন নিহত হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত দেখতে পেয়েছি। একজনের দেহে সুইসাইড ভেস্ট লাগানো ছিল। দুজনকে দৌড়ানো অবস্থায় দেখে আমাদের কমান্ডোরা ফায়ার করে। তারা পড়ে যাওয়ার পর একজন সুইসাইড ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটায়। ভেতরে আর কতজন আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক বা একাধিক জঙ্গি ভেতরে আছে। তারা খুব সতর্ক, সুইসাইড ভেস্ট পরে আছে। ভেতরে থাকা জঙ্গিদের মধ্যে নারী রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহিলা আছে কিনা, আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি।
তিনি বলেন, তাদের (জঙ্গিদের) কাছে স্মল আর্মস আছে, এক্সপ্লোসিভ আছে, আইইডি আছে, তারা ওয়েল ইকুইপড। টিয়ার শেল ছুড়লে যে আগুন জ্বালাতে হয়, তারা এসব টেকনিক জানে। নানা স্থানে বিস্ফোরক স্থাপন করে জঙ্গিরা বাড়ি দুটিতে অভিযান চালানোর পথ কঠিন করে তুলেছে। তারা আইইডি ফিক্স করেছে, তাতে ধারণা করা যাচ্ছে, জঙ্গি যারা আছে তারা ভালো জ্ঞান রাখে কীভাবে দুর্গম করে তুলতে হয়। সুতরাং অপারেশন শেষ করতে ভালো ঝুঁকি আছে, এজন্য সময় লাগছে। কখন নাগাদ অভিযান শেষ হতে পারে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের কমান্ডোরা চেষ্টা করছে। নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে অপারেশন কখন শেষ হবে। অপারেশন পরিচালনা বেশ ডিফিকাল্ট হচ্ছে। আজ সকাল থেকে বিভিন্ন টেকটিক অ্যাপ্লাই করছিলাম, রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে হোল তৈরি করে সুবিধা হচ্ছিল না। পরে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করি। তাতে জঙ্গিরা কিছুটা অসুবিধায় পড়ে। তাদের ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়। ভবন হেলে পড়ার গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে ফখরুল আহসান বলেন, ভবন হেলে পড়ার খবর ঠিক নয়, ফায়ারিংয়ে সমস্যা হওয়ায় আমরা একটি দেয়াল ফেলে দিয়েছি। অভিযানে সেনাবাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি উল্লেখ করেন। তিনি বাড়ির বাসিন্দাদের উদ্ধারের বর্ণনা দিয়ে বলেন, বাড়ির সামনে এবং বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিরা আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বসিয়েছে বলে সামনে দিয়ে ঢোকা নিরাপদ ছিল না। কমান্ডোরা কৌশলে মই ব্যবহার করে পাশের ভবনে গিয়ে গ্রিল কেটে লোকজনকে বের করে আনে। পাশের একটি ভবন থেকে রোববার এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল (শনিবার) অন্যদের উদ্ধারের সময় তাকে আনা যায়নি। ইনি আতিয়া মহলের নন।
বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে সিলেটের শিববাড়ির ওই জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। এরপর অভিযান পরিচালনা করতে ঢাকা থেকে সোয়াত টিমকে আনা হয়। পরে শুক্রবার রাতেই অভিযানের দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিমকে। শনিবার সকাল ৮টার দিকে প্যারা কমান্ডোরা অবস্থান নেন শিববাড়ি এলাকায়। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে তারা চূড়ান্ত অভিযান শুরু করেন। এরপর তারা আতিয়ার মহলে বন্দি থাকা ৭৮ জন বাসিন্দাকে ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে উদ্ধার করেন। শনিবার রাতেও শিববাড়ির আতিয়ার মহলে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে প্রচন্ড গোলাগুলি হয় সেনা সদস্যদের। রাতে বেশ কয়েকটি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে করে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। ভেতর থেকে জঙ্গিরা প্যারা কমান্ডোকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা চালায়। জবাবে কমান্ডোরা জঙ্গিদের লক্ষ্য করে গুলি করে। শনিবার সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের কাছে সড়কে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার পর আরো সতর্কতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সকাল থেকে আশপাশের এলাকায় সাধারণ কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকদেরও রাখা হয় নিরাপদ দূরত্বে। সকাল ১০টার দিকে গ্রেনেড ও গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। এরপর দিনে থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এদিকে গতকাল আতিয়া মহলের পাশের ভবনের ৪ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে আটকে থাকা এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মহিলাকে সিলেট এম এম জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় অবস্থান করছে বোম ডিসপজাল টিমও। রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি ও কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স। অভিযানের সময় আতিয়া মহল থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ওদিকে ভেতরে অভিযানের সময় বাইরেও তল্লাশি চালানো হয়। পাঠানপাড়া, শিববাড়ি সহ কয়েকটি রুটের প্রবেশ মুখে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
৪০ ঘণ্টা পর উদ্ধার বৃদ্ধা: আতিয়া মহলের ঠিক পাশেই রয়েছে আরেকটি বাসা। যে বাসাটি শুক্রবার দুপুরেই নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ওই বাসার এক কক্ষে আটকে পড়েছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধা জোছনা রাণী রায়। অভিযানের ৪০ ঘণ্টা পর গতকাল দুপুরের দিকে সেনা সদস্যরা জোছনা রাণী রায়কে ওই ভবন থেকে বের করে নিয়ে আসেন। তিনি চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে আটকা ছিলেন। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, না খেয়ে থাকার কারণে জোছনা রাণী রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
১৪৪ ধারা জারি: শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানার সামনেই সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক। এই সড়ক থেকে হুমায়ুন রশীদ চত্বর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় গতকাল সকাল থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এর মধ্যে হুমায়ুন রশীদ স্কয়ারে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। ওই চেকপোস্ট দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারছে না। স্থানীয়রা চলাচল করছেন। পুলিশে সদস্যরা সন্দেহভাজন যাকেই পাচ্ছেন তাকে তল্লাশি করছেন। রাস্তার দু’পাশের প্রায় ৪টি গ্রামের বাসিন্দারা বাসাবাড়িতে অবস্থান করছেন। পুলিশ জানায়, মেট্রো আইনে ওই সড়কে যানবাহন সহ জন সাধারণের চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়।
হাসপাতালে ছুটি বাতিল: সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান অব্যাহত থাকায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব চিকিৎসক-নার্সের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. দেবব্রত রায় জানান, ২৬শে মার্চ উপলক্ষে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারি ছুটি রয়েছে। জঙ্গি অভিযানের কারণে হাসপাতালের সব চিকিৎসক ও নার্সকে স্টেশন ত্যাগ না করতে বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে তাদেরকে কাজে যোগ দিতেও বলা হয়েছে। বিশেষ করে অর্থোপেডিকস, সার্জারি এবং এনেশথেশিস্ট বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সতর্ক রাখা হয়েছে। তিনি জানান, বোমা বিস্ফোরণে আহত ৪৪ জন এখনো ওসমানীতে চিকিৎসাধীন।
হামলা করেছে জঙ্গিরাই- পুলিশ কমিশনার: সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন হামলা করেছে জঙ্গিরাই। তাদের হামলার কারণেই মারা গেছেন দুই পুলিশ সদস্য সহ ৬ জন। তিনি বলেন, হামলাকারী কারা- নাম পাইনি। তবে তারা যে জঙ্গি সেটি সবাই জানেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ অনুসন্ধান করছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা না হলেও আজ-কালের মধ্যে মামলা হবে। কেউ আটক হয়নি বলে জানান। এদিকে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান জানিয়েছেন, জনগণের মধ্যে যাতে ভীতি না ছড়ায় এ কারণে পুলিশ কাজ করছে। তিনি বলেন, সিলেটের মানুষ শান্তিপ্রিয়। তাদের সঙ্গে নিয়ে সিলেটে জঙ্গিবাদের মোকাবিলা করা হবে। এছাড়া শিববাড়ি ঘটনার পর গোটা বিভাগে কেপিআই সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
নগরজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা: শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানায় হামলার ঘটনার পর থেকে সিলেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জঙ্গি আস্তানার চারপাশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পুলিশ জানায়, আশংকা রয়েছে বাইরে থেকে এসে আত্মঘাতী হামলা হতে পারে। এ কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়েও তল্লাশি চলছে। এদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকার পরও সিলেটের মানুষের মনে স্বস্তি ফিরছে না। গতকাল ২৬শে মার্চ হলেও রাস্তায় লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ঘরের বাইরে বের হননি।
ভেতরে অবস্থানরত জঙ্গিরা বেশ কৌশলী জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযানে ‘ভালো’ ঝুঁকি রয়েছে। ফলে বলা যাচ্ছে না, কখন তা শেষ হবে। এই সেনা কর্মকর্তা আতিয়া মহলের ভেতরের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, দুজন নিহত হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত দেখতে পেয়েছি। একজনের দেহে সুইসাইড ভেস্ট লাগানো ছিল। দুজনকে দৌড়ানো অবস্থায় দেখে আমাদের কমান্ডোরা ফায়ার করে। তারা পড়ে যাওয়ার পর একজন সুইসাইড ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটায়। ভেতরে আর কতজন আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক বা একাধিক জঙ্গি ভেতরে আছে। তারা খুব সতর্ক, সুইসাইড ভেস্ট পরে আছে। ভেতরে থাকা জঙ্গিদের মধ্যে নারী রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহিলা আছে কিনা, আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি।
তিনি বলেন, তাদের (জঙ্গিদের) কাছে স্মল আর্মস আছে, এক্সপ্লোসিভ আছে, আইইডি আছে, তারা ওয়েল ইকুইপড। টিয়ার শেল ছুড়লে যে আগুন জ্বালাতে হয়, তারা এসব টেকনিক জানে। নানা স্থানে বিস্ফোরক স্থাপন করে জঙ্গিরা বাড়ি দুটিতে অভিযান চালানোর পথ কঠিন করে তুলেছে। তারা আইইডি ফিক্স করেছে, তাতে ধারণা করা যাচ্ছে, জঙ্গি যারা আছে তারা ভালো জ্ঞান রাখে কীভাবে দুর্গম করে তুলতে হয়। সুতরাং অপারেশন শেষ করতে ভালো ঝুঁকি আছে, এজন্য সময় লাগছে। কখন নাগাদ অভিযান শেষ হতে পারে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের কমান্ডোরা চেষ্টা করছে। নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে অপারেশন কখন শেষ হবে। অপারেশন পরিচালনা বেশ ডিফিকাল্ট হচ্ছে। আজ সকাল থেকে বিভিন্ন টেকটিক অ্যাপ্লাই করছিলাম, রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে হোল তৈরি করে সুবিধা হচ্ছিল না। পরে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করি। তাতে জঙ্গিরা কিছুটা অসুবিধায় পড়ে। তাদের ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায়। ভবন হেলে পড়ার গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে ফখরুল আহসান বলেন, ভবন হেলে পড়ার খবর ঠিক নয়, ফায়ারিংয়ে সমস্যা হওয়ায় আমরা একটি দেয়াল ফেলে দিয়েছি। অভিযানে সেনাবাহিনীর কেউ হতাহত হয়নি উল্লেখ করেন। তিনি বাড়ির বাসিন্দাদের উদ্ধারের বর্ণনা দিয়ে বলেন, বাড়ির সামনে এবং বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিরা আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বসিয়েছে বলে সামনে দিয়ে ঢোকা নিরাপদ ছিল না। কমান্ডোরা কৌশলে মই ব্যবহার করে পাশের ভবনে গিয়ে গ্রিল কেটে লোকজনকে বের করে আনে। পাশের একটি ভবন থেকে রোববার এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল (শনিবার) অন্যদের উদ্ধারের সময় তাকে আনা যায়নি। ইনি আতিয়া মহলের নন।
বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে সিলেটের শিববাড়ির ওই জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। এরপর অভিযান পরিচালনা করতে ঢাকা থেকে সোয়াত টিমকে আনা হয়। পরে শুক্রবার রাতেই অভিযানের দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো টিমকে। শনিবার সকাল ৮টার দিকে প্যারা কমান্ডোরা অবস্থান নেন শিববাড়ি এলাকায়। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে তারা চূড়ান্ত অভিযান শুরু করেন। এরপর তারা আতিয়ার মহলে বন্দি থাকা ৭৮ জন বাসিন্দাকে ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই নিরাপদে উদ্ধার করেন। শনিবার রাতেও শিববাড়ির আতিয়ার মহলে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে প্রচন্ড গোলাগুলি হয় সেনা সদস্যদের। রাতে বেশ কয়েকটি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে করে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। ভেতর থেকে জঙ্গিরা প্যারা কমান্ডোকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা চালায়। জবাবে কমান্ডোরা জঙ্গিদের লক্ষ্য করে গুলি করে। শনিবার সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের কাছে সড়কে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনার পর আরো সতর্কতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সকাল থেকে আশপাশের এলাকায় সাধারণ কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকদেরও রাখা হয় নিরাপদ দূরত্বে। সকাল ১০টার দিকে গ্রেনেড ও গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। এরপর দিনে থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এদিকে গতকাল আতিয়া মহলের পাশের ভবনের ৪ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে আটকে থাকা এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মহিলাকে সিলেট এম এম জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় অবস্থান করছে বোম ডিসপজাল টিমও। রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি ও কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স। অভিযানের সময় আতিয়া মহল থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ওদিকে ভেতরে অভিযানের সময় বাইরেও তল্লাশি চালানো হয়। পাঠানপাড়া, শিববাড়ি সহ কয়েকটি রুটের প্রবেশ মুখে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
৪০ ঘণ্টা পর উদ্ধার বৃদ্ধা: আতিয়া মহলের ঠিক পাশেই রয়েছে আরেকটি বাসা। যে বাসাটি শুক্রবার দুপুরেই নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। ওই বাসার এক কক্ষে আটকে পড়েছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধা জোছনা রাণী রায়। অভিযানের ৪০ ঘণ্টা পর গতকাল দুপুরের দিকে সেনা সদস্যরা জোছনা রাণী রায়কে ওই ভবন থেকে বের করে নিয়ে আসেন। তিনি চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে আটকা ছিলেন। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, না খেয়ে থাকার কারণে জোছনা রাণী রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
১৪৪ ধারা জারি: শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানার সামনেই সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক। এই সড়ক থেকে হুমায়ুন রশীদ চত্বর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় গতকাল সকাল থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এর মধ্যে হুমায়ুন রশীদ স্কয়ারে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। ওই চেকপোস্ট দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারছে না। স্থানীয়রা চলাচল করছেন। পুলিশে সদস্যরা সন্দেহভাজন যাকেই পাচ্ছেন তাকে তল্লাশি করছেন। রাস্তার দু’পাশের প্রায় ৪টি গ্রামের বাসিন্দারা বাসাবাড়িতে অবস্থান করছেন। পুলিশ জানায়, মেট্রো আইনে ওই সড়কে যানবাহন সহ জন সাধারণের চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়।
হাসপাতালে ছুটি বাতিল: সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান অব্যাহত থাকায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব চিকিৎসক-নার্সের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. দেবব্রত রায় জানান, ২৬শে মার্চ উপলক্ষে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারি ছুটি রয়েছে। জঙ্গি অভিযানের কারণে হাসপাতালের সব চিকিৎসক ও নার্সকে স্টেশন ত্যাগ না করতে বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে তাদেরকে কাজে যোগ দিতেও বলা হয়েছে। বিশেষ করে অর্থোপেডিকস, সার্জারি এবং এনেশথেশিস্ট বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সতর্ক রাখা হয়েছে। তিনি জানান, বোমা বিস্ফোরণে আহত ৪৪ জন এখনো ওসমানীতে চিকিৎসাধীন।
হামলা করেছে জঙ্গিরাই- পুলিশ কমিশনার: সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন হামলা করেছে জঙ্গিরাই। তাদের হামলার কারণেই মারা গেছেন দুই পুলিশ সদস্য সহ ৬ জন। তিনি বলেন, হামলাকারী কারা- নাম পাইনি। তবে তারা যে জঙ্গি সেটি সবাই জানেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ অনুসন্ধান করছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা না হলেও আজ-কালের মধ্যে মামলা হবে। কেউ আটক হয়নি বলে জানান। এদিকে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান জানিয়েছেন, জনগণের মধ্যে যাতে ভীতি না ছড়ায় এ কারণে পুলিশ কাজ করছে। তিনি বলেন, সিলেটের মানুষ শান্তিপ্রিয়। তাদের সঙ্গে নিয়ে সিলেটে জঙ্গিবাদের মোকাবিলা করা হবে। এছাড়া শিববাড়ি ঘটনার পর গোটা বিভাগে কেপিআই সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
নগরজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা: শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানায় হামলার ঘটনার পর থেকে সিলেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জঙ্গি আস্তানার চারপাশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পুলিশ জানায়, আশংকা রয়েছে বাইরে থেকে এসে আত্মঘাতী হামলা হতে পারে। এ কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়েও তল্লাশি চলছে। এদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকার পরও সিলেটের মানুষের মনে স্বস্তি ফিরছে না। গতকাল ২৬শে মার্চ হলেও রাস্তায় লোকজনের উপস্থিতি ছিল কম। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ঘরের বাইরে বের হননি।
No comments