রাজনীতিতে ব্যবসায়ী, দায় মুক্তবাজার অর্থনীতির by মইনুল ইসলাম
সম্প্রতি
মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, এ দেশের রাজনীতি এখন
ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে গেছে। এই সময়োপযোগী সত্য ভাষণের জন্য তাঁকে
অভিনন্দন। পরিস্থিতি জানান দিচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের
দৌরাত্ম্য আরও বহুদিন বহাল থাকবে। টাকার জোর না থাকলে এ দেশে নির্বাচনে
জেতা অসম্ভব হয়ে গেছে, এমনকি এখন প্রধান দলগুলোর মনোনয়নও পাওয়া যায় না।
প্রান্তীয় পুঁজিবাদের যে স্তর এখন বাংলাদেশ অতিক্রম করছে, তাতে এটা হতেই
পারে। বিশেষত, সামরিক শাসন বারবার পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক
প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার কারণেই এ সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, ভারতে এ সমস্যা
নেই। তবে এটা বেশি দিন স্থায়ী হবে না, মানুষের রাজনৈতিক চেতনা বিকশিত হলে
এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতি জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক ও জনগণের কাছে
জবাবদিহিমূলক সরকার কায়েমের ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দিতে পারলে
রাজনীতির এই শনির দশা কেটে যাবে।
প্রকৃতপক্ষে এ সমস্যাটার মূল রয়ে গেছে অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়নের মধ্যে, যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হলো রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও বৈশ্যকরণ। বিশেষত, এ দেশের ব্যবসায়ীরা যেহেতু প্রধানত বাণিজ্যনির্ভর ‘মুৎসুদ্দি পুঁজিপতি’ হিসেবে বিকশিত হয়ে থাকেন, তাই রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন মহল ও আমলাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তাঁদের বিকাশ দুরূহ। রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণও তাঁদের ব্যবসায়িক সাফল্য ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনেই। ১৯৯১ সালে ভোটের রাজনীতি চালু হওয়ার পর এ প্রবণতায় আরও গতি সঞ্চার হয়েছে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে কারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, আর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৪-এর নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কত শতাংশ সংসদ সদস্যের প্রার্থিতার মনোনয়ন বাগিয়েছেন, তা বিবেচনা করলেই রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের ক্রমবর্ধমান দাপট কোথায় পৌঁছে গেছে, তা বুঝতে অসুবিধা হবে না। এ সম্পর্কে সুসংবদ্ধ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে অনুন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতির তত্ত্বগুলোতে। আমাদের দেশের পুঁজিপতিদের রাষ্ট্রের ওপর ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে বোঝার জন্যই এই তত্ত্বগুলোর আলোকে উপস্থাপন করছি আজকের কলামের আলোচনা।
অনুন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি স্কুলের পথিকৃৎ পল বারান মুৎসুদ্দি পুঁজি ও মুৎসুদ্দি সরকার কনসেপ্ট দুটিকে অর্থনীতিশাস্ত্রে প্রবর্তন করেছেন। তিনি মুৎসুদ্দি পুঁজি বা প্রচলিত অর্থে দালাল পুঁজি কনসেপ্টটির সংজ্ঞা দিয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নব্য ঔপনিবেশিক বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শিল্পায়িত দেশগুলোর বহুজাতিক করপোরেশনের পণ্যের বাজারজাতকরণ নেটওয়ার্কে তৃতীয় বিশ্বের পুঁজিপতিদের ছোট তরফ বা এজেন্টের ভূমিকা পালনের বিষয়টিকে ফোকাস করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ইন্ডেন্টর, আমদানিকারক, সোল এজেন্ট, পরিবেশক, অ্যাসেমব্লি প্ল্যান্ট স্থাপনকারী শিল্পপতি, ফ্র্যাঞ্চাইজি কিংবা সেলস এজেন্টের ভূমিকা পালনের মাধ্যমে যেসব বাণিজ্যনির্ভর পুঁজিপতি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় মুনাফা আহরণে ব্যাপৃত থাকে, তাদেরই পল বারান মুৎসুদ্দি পুঁজির এই সংজ্ঞার মাধ্যমে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন, যেটা একটা প্রিন্সিপাল এজেন্ট সম্পর্ক নির্দেশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যে নব্য সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, তাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বহুজাতিক করপোরেশন, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা সংস্থা, এনজিও, মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়ন—এগুলো সবই সুনির্দিষ্ট ডাইমেনশন হিসেবে ভূমিকা পালন করে চলেছে। দু-দুবার স্বাধীনতা অর্জন সত্ত্বেও বাংলাদেশ আজও এই বিশ্বব্যবস্থার প্রান্তীয় পুঁজিবাদী একটি রাষ্ট্র।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেলেও বাংলাদেশকে ২৪ বছর ধরে পাকিস্তানের নব্য ঔপনিবেশিক শোষণ-লুণ্ঠনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে স্বাধীনতার পথ বেছে নিতে হয়েছিল। আর তাই রাষ্ট্রের চার মূলনীতিতে গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়েছিল। কিন্তু পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানের স্টাইলে পুঁজিবাদী বিশ্ব প্রভুদের মক্কেলরা এই রাষ্ট্রের কর্ণধার হয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুঁজিবাদের যে মডেলটা আবারও চালু করে দিয়েছিল, তাতে যে ধরনের পুঁজির বিকাশ এ দেশে ঘটেছে, তার চরিত্র প্রধানত মুৎসুদ্দি পুঁজির। এই পুঁজি চরিত্রগতভাবেই বাণিজ্যমুখী হবে অধিক মুনাফার লোভে। এই পুঁজিকে শিল্প খাতের বিকাশে নিয়োজনের যত প্রয়াসই চালানো হোক না কেন, তাকে শিল্প খাতে ধরে রাখা কঠিন হবে। তাই শিল্প স্থাপনের জন্য উদার ব্যাংকঋণ প্রদান করা হলেও পাচার হয়ে গেছে বাণিজ্যে এবং অনেকে ক্ষেত্রে চোরাচালানে। ব্যাংকঋণের সহায়তায় আমদানি করা শিল্প প্ল্যান্ট-যন্ত্রপাতির খরচ ওভার ইনভয়েসিং করে বিদেশে পুঁজি পাচার করে দেওয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমানের আমলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও উন্নয়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই উদার পৃষ্ঠপোষকতার জোয়ারে শামিল হতে বাধ্য করা হয়েছিল।
আবার আশির দশকে স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে আমদানি উদারীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে; রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানাকে বেসরকারি মালিকানায় অর্পণের প্রক্রিয়াকে জোরদার করা হয়েছে; বেসরকারি মালিকানার ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এতত্সত্ত্বেও উদার সহায়তাপুষ্ট শিল্পায়নের প্রয়াস কয়েকটা ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে তেমন সফলতা পায়নি। বরং দ্রুত আমদানি উদারীকরণ করতে গিয়ে চোরাচালানকে উসকে দেওয়া হয়েছে, কারণ আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় এ দেশের উদারীকরণের গতি মাত্রাতিরিক্ত থাকায় নতুন নতুন পণ্য চোরাচালানিদের কাছে আদান-প্রদানের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ আমদানি-বিকল্প দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্পগুলো রুগ্ণতার নিশান তুলে দিয়ে ঋণখেলাপি পুঁজিপতিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। এখানেই মুৎসুদ্দি পুঁজির কনসেপ্টটা আমাদের বিষয়টি ব্যাখ্যায় সাহায্য করবে। বিশ্ব পুঁজিবাদ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে জাতীয় বুর্জোয়ার বিকাশের চেয়ে মুৎসুদ্দি পুঁজির বিকাশেই আগ্রহী। এ জন্যই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে অবাধ করার তাগিদে গ্যাট-এর আট রাউন্ড পার হয়ে এসে ১৯৯৫ সাল থেকে ডব্লিউটিওর সাম্রাজ্যে প্রবেশ করেছে বিশ্ববাসী। বাজার দখলের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে উন্নত দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বকে আধিপত্য-পরনির্ভরতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখতে চাইছে।
আমাদের বুঝতে হবে, মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করার নামে দেশের বিনিয়োগযোগ্য পুঁজিকে মুৎসুদ্দি পুঁজিপতির সিন্দুকে পাচার করার ব্যবস্থা জোরদার করলেই শিল্পায়ন হয়ে যাবে, এটা অতি সরলীকরণ। ওই পুঁজির একাংশ হয়তো অ্যাসেমব্লি প্ল্যান্ট টাইপের ‘পার্ভার্স’ শিল্প স্থাপনে অপচয় হবে, বাকিটা দুর্নীতির অর্থনীতির নিয়ম অনুসারে লুণ্ঠিত হয়ে যাবে। আমি আবারও বলছি, বাংলাদেশে বর্তমানে বাজার অর্থনীতি নিয়ে যে ধরনের মাতামাতি চলেছে, তাতে পুঁজি সর্বোচ্চ মুনাফা পাচ্ছে বাণিজ্য এবং চোরাচালান থেকে। এ বাজারে দেশীয় পণ্য মার খাচ্ছে, অথচ বাজারের ক্রমবর্ধমান অংশ চলে যাচ্ছে বিদেশি পণ্যের দখলে। পুঁজি পাচার হয়ে যাচ্ছে চোরাচালানে, নয়তো পালিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। এ দেশের পুঁজি গিয়ে জমা হচ্ছে রাজনীতিবিদ, সামরিক অফিসার এবং সিভিল আমলার গোপন সিন্দুকে, নয়তো তাঁদের এবং ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পলাতক পুঁজির অবয়বে বিশ্বের নানা দেশে, টরন্টোর ‘বেগমপাড়া’ কিংবা মালয়েশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম’ যার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের চলতি হিসাব বা কারেন্ট অ্যাকাউন্টে উদ্বৃত্ত থাকার প্রবণতা পরিবর্তিত হয়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, যার পেছনে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির পাশাপাশি আমদানি প্রবৃদ্ধির হারের বিশাল উল্লম্ফন প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। খাতওয়ারি আমদানির প্রবৃদ্ধি বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে, শূন্য শুল্কহার সুবিধাভোগকারী মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পরিষ্কারভাবে জানান দিচ্ছে যে ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে দেশ থেকে পুঁজি পাচার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি কানাডাপ্রবাসী এক আত্মীয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল টরন্টোর বেগমপাড়া সম্পর্কে। তিনি টরন্টোয় থাকেন, তাই বেগমপাড়া সম্পর্কে ভালোই খোঁজখবর রাখেন। তিনি জানালেন, ওখানকার প্রায় ৮০ শতাংশই পোশাকমালিকদের পরিবার, বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে প্রকৌশলী, আমলা এবং রাজনীতিবিদদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনই সংখ্যাগুরু।
তবু বলব, বাংলাদেশ গত সাড়ে তিন দশকে তৈরি পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, কৃষিজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সিরামিকস, জাহাজ নির্মাণ, চামড়াজাত দ্রব্য ও পাদুকাশিল্পের মতো রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর বিকাশে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু অনেক জ্ঞানপাপী স্বীকারই করতে চায় না যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের চমকপ্রদ বিকাশ মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে হয়নি, মাল্টি ফাইবার অ্যারেঞ্জমেন্টের (এমএফএ) কোটাব্যবস্থার সুযোগ নিয়েই এর দ্রুত বিকাশ সম্ভব হয়েছে। এমএফএ বিলুপ্ত হওয়ার পর এখন বাংলাদেশের ওভেন গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার শিল্প তুলনামূলক সুবিধা এবং ‘প্রতিযোগিতা সক্ষমতার’ জোরেই এগিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দয়ায় বা করুণায় নয়।
শিল্পায়নের এই সাফল্যকে আমরা খাটো করছি না, কিন্তু তারপরও মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলব, রাজনীতিকে ব্যবসায়ীদের মুনাফা অর্জনের লোভনীয় ক্ষেত্রে পরিণত করার যে প্রবণতা জোরদার হয়ে চলেছে, তা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না। তৈরি পোশাকশিল্পের সাফল্যের আসল দাবিদার এ দেশের নারী শ্রমিকেরা হলেও এই সাফল্যের জোয়ারে অবগাহন করে এ দেশে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী অতি দ্রুত কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। একই সঙ্গে ওনারা এবং অন্যান্য বাণিজ্যনির্ভর মুৎসুদ্দি পুঁজিপতি গোষ্ঠী প্রধানত ব্যাংকঋণের ফায়দাভোগী হয়ে এ দেশে গত চার দশকে পুঁজি লুণ্ঠনে কামেলিয়ত হাসিল করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মোতাবেক দেশে এখন ৫৪ হাজারের বেশি কোটিপতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ত্যাগী ও জনদরদি রাজনীতিবিদদের হটিয়ে দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক আমলা ও সিভিল আমলা এবং মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ক্রমেই রাষ্ট্রক্ষমতার প্রবল প্রতাপান্বিত ভাগীদারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এখন দখলদারি প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা চলছে প্রধানত এঁদের মধ্যেই।
ব্যবসায়ীদের রাষ্ট্রক্ষমতার ভাগীদার হওয়ার এই প্রতিযোগিতা রাজনীতির মাধ্যমে জনকল্যাণে ব্রতী হওয়ার প্রতিযোগিতা নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবসার কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্যই এই রাজনীতি। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষোভ এই অশুভ প্রবণতার বিরুদ্ধে। তাঁকে এ জন্য সাধুবাদ জানাতেই হবে। তবে আজন্ম একটি রাজনৈতিক পরিবারের ত্যাগ-তিতিক্ষার পরিবেশে জীবন কাটানো প্রধানমন্ত্রী রাজনীতিকে এভাবে ব্যবসার হাতিয়ারে পরিণত করা যে জাতির জন্য অমঙ্গলজনক, তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন, আশা করি।
ড. মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকৃতপক্ষে এ সমস্যাটার মূল রয়ে গেছে অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়নের মধ্যে, যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হলো রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও বৈশ্যকরণ। বিশেষত, এ দেশের ব্যবসায়ীরা যেহেতু প্রধানত বাণিজ্যনির্ভর ‘মুৎসুদ্দি পুঁজিপতি’ হিসেবে বিকশিত হয়ে থাকেন, তাই রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন মহল ও আমলাদের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তাঁদের বিকাশ দুরূহ। রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণও তাঁদের ব্যবসায়িক সাফল্য ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনেই। ১৯৯১ সালে ভোটের রাজনীতি চালু হওয়ার পর এ প্রবণতায় আরও গতি সঞ্চার হয়েছে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে কারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, আর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৪-এর নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কত শতাংশ সংসদ সদস্যের প্রার্থিতার মনোনয়ন বাগিয়েছেন, তা বিবেচনা করলেই রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের ক্রমবর্ধমান দাপট কোথায় পৌঁছে গেছে, তা বুঝতে অসুবিধা হবে না। এ সম্পর্কে সুসংবদ্ধ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে অনুন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতির তত্ত্বগুলোতে। আমাদের দেশের পুঁজিপতিদের রাষ্ট্রের ওপর ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে বোঝার জন্যই এই তত্ত্বগুলোর আলোকে উপস্থাপন করছি আজকের কলামের আলোচনা।
অনুন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি স্কুলের পথিকৃৎ পল বারান মুৎসুদ্দি পুঁজি ও মুৎসুদ্দি সরকার কনসেপ্ট দুটিকে অর্থনীতিশাস্ত্রে প্রবর্তন করেছেন। তিনি মুৎসুদ্দি পুঁজি বা প্রচলিত অর্থে দালাল পুঁজি কনসেপ্টটির সংজ্ঞা দিয়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নব্য ঔপনিবেশিক বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শিল্পায়িত দেশগুলোর বহুজাতিক করপোরেশনের পণ্যের বাজারজাতকরণ নেটওয়ার্কে তৃতীয় বিশ্বের পুঁজিপতিদের ছোট তরফ বা এজেন্টের ভূমিকা পালনের বিষয়টিকে ফোকাস করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ইন্ডেন্টর, আমদানিকারক, সোল এজেন্ট, পরিবেশক, অ্যাসেমব্লি প্ল্যান্ট স্থাপনকারী শিল্পপতি, ফ্র্যাঞ্চাইজি কিংবা সেলস এজেন্টের ভূমিকা পালনের মাধ্যমে যেসব বাণিজ্যনির্ভর পুঁজিপতি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় মুনাফা আহরণে ব্যাপৃত থাকে, তাদেরই পল বারান মুৎসুদ্দি পুঁজির এই সংজ্ঞার মাধ্যমে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন, যেটা একটা প্রিন্সিপাল এজেন্ট সম্পর্ক নির্দেশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যে নব্য সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, তাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বহুজাতিক করপোরেশন, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা সংস্থা, এনজিও, মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়ন—এগুলো সবই সুনির্দিষ্ট ডাইমেনশন হিসেবে ভূমিকা পালন করে চলেছে। দু-দুবার স্বাধীনতা অর্জন সত্ত্বেও বাংলাদেশ আজও এই বিশ্বব্যবস্থার প্রান্তীয় পুঁজিবাদী একটি রাষ্ট্র।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পেলেও বাংলাদেশকে ২৪ বছর ধরে পাকিস্তানের নব্য ঔপনিবেশিক শোষণ-লুণ্ঠনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে স্বাধীনতার পথ বেছে নিতে হয়েছিল। আর তাই রাষ্ট্রের চার মূলনীতিতে গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়েছিল। কিন্তু পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানের স্টাইলে পুঁজিবাদী বিশ্ব প্রভুদের মক্কেলরা এই রাষ্ট্রের কর্ণধার হয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুঁজিবাদের যে মডেলটা আবারও চালু করে দিয়েছিল, তাতে যে ধরনের পুঁজির বিকাশ এ দেশে ঘটেছে, তার চরিত্র প্রধানত মুৎসুদ্দি পুঁজির। এই পুঁজি চরিত্রগতভাবেই বাণিজ্যমুখী হবে অধিক মুনাফার লোভে। এই পুঁজিকে শিল্প খাতের বিকাশে নিয়োজনের যত প্রয়াসই চালানো হোক না কেন, তাকে শিল্প খাতে ধরে রাখা কঠিন হবে। তাই শিল্প স্থাপনের জন্য উদার ব্যাংকঋণ প্রদান করা হলেও পাচার হয়ে গেছে বাণিজ্যে এবং অনেকে ক্ষেত্রে চোরাচালানে। ব্যাংকঋণের সহায়তায় আমদানি করা শিল্প প্ল্যান্ট-যন্ত্রপাতির খরচ ওভার ইনভয়েসিং করে বিদেশে পুঁজি পাচার করে দেওয়া হয়েছে। জিয়াউর রহমানের আমলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও উন্নয়ন অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই উদার পৃষ্ঠপোষকতার জোয়ারে শামিল হতে বাধ্য করা হয়েছিল।
আবার আশির দশকে স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে আমদানি উদারীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে; রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানাকে বেসরকারি মালিকানায় অর্পণের প্রক্রিয়াকে জোরদার করা হয়েছে; বেসরকারি মালিকানার ব্যাংক ও বিমা কোম্পানি গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু এতত্সত্ত্বেও উদার সহায়তাপুষ্ট শিল্পায়নের প্রয়াস কয়েকটা ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে তেমন সফলতা পায়নি। বরং দ্রুত আমদানি উদারীকরণ করতে গিয়ে চোরাচালানকে উসকে দেওয়া হয়েছে, কারণ আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় এ দেশের উদারীকরণের গতি মাত্রাতিরিক্ত থাকায় নতুন নতুন পণ্য চোরাচালানিদের কাছে আদান-প্রদানের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ আমদানি-বিকল্প দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্পগুলো রুগ্ণতার নিশান তুলে দিয়ে ঋণখেলাপি পুঁজিপতিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। এখানেই মুৎসুদ্দি পুঁজির কনসেপ্টটা আমাদের বিষয়টি ব্যাখ্যায় সাহায্য করবে। বিশ্ব পুঁজিবাদ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে জাতীয় বুর্জোয়ার বিকাশের চেয়ে মুৎসুদ্দি পুঁজির বিকাশেই আগ্রহী। এ জন্যই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে অবাধ করার তাগিদে গ্যাট-এর আট রাউন্ড পার হয়ে এসে ১৯৯৫ সাল থেকে ডব্লিউটিওর সাম্রাজ্যে প্রবেশ করেছে বিশ্ববাসী। বাজার দখলের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে উন্নত দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বকে আধিপত্য-পরনির্ভরতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখতে চাইছে।
আমাদের বুঝতে হবে, মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করার নামে দেশের বিনিয়োগযোগ্য পুঁজিকে মুৎসুদ্দি পুঁজিপতির সিন্দুকে পাচার করার ব্যবস্থা জোরদার করলেই শিল্পায়ন হয়ে যাবে, এটা অতি সরলীকরণ। ওই পুঁজির একাংশ হয়তো অ্যাসেমব্লি প্ল্যান্ট টাইপের ‘পার্ভার্স’ শিল্প স্থাপনে অপচয় হবে, বাকিটা দুর্নীতির অর্থনীতির নিয়ম অনুসারে লুণ্ঠিত হয়ে যাবে। আমি আবারও বলছি, বাংলাদেশে বর্তমানে বাজার অর্থনীতি নিয়ে যে ধরনের মাতামাতি চলেছে, তাতে পুঁজি সর্বোচ্চ মুনাফা পাচ্ছে বাণিজ্য এবং চোরাচালান থেকে। এ বাজারে দেশীয় পণ্য মার খাচ্ছে, অথচ বাজারের ক্রমবর্ধমান অংশ চলে যাচ্ছে বিদেশি পণ্যের দখলে। পুঁজি পাচার হয়ে যাচ্ছে চোরাচালানে, নয়তো পালিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। এ দেশের পুঁজি গিয়ে জমা হচ্ছে রাজনীতিবিদ, সামরিক অফিসার এবং সিভিল আমলার গোপন সিন্দুকে, নয়তো তাঁদের এবং ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পলাতক পুঁজির অবয়বে বিশ্বের নানা দেশে, টরন্টোর ‘বেগমপাড়া’ কিংবা মালয়েশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম’ যার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের চলতি হিসাব বা কারেন্ট অ্যাকাউন্টে উদ্বৃত্ত থাকার প্রবণতা পরিবর্তিত হয়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, যার পেছনে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির পাশাপাশি আমদানি প্রবৃদ্ধির হারের বিশাল উল্লম্ফন প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। খাতওয়ারি আমদানির প্রবৃদ্ধি বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে, শূন্য শুল্কহার সুবিধাভোগকারী মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পরিষ্কারভাবে জানান দিচ্ছে যে ওভার ইনভয়েসিং পদ্ধতিতে দেশ থেকে পুঁজি পাচার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি কানাডাপ্রবাসী এক আত্মীয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল টরন্টোর বেগমপাড়া সম্পর্কে। তিনি টরন্টোয় থাকেন, তাই বেগমপাড়া সম্পর্কে ভালোই খোঁজখবর রাখেন। তিনি জানালেন, ওখানকার প্রায় ৮০ শতাংশই পোশাকমালিকদের পরিবার, বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে প্রকৌশলী, আমলা এবং রাজনীতিবিদদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনই সংখ্যাগুরু।
তবু বলব, বাংলাদেশ গত সাড়ে তিন দশকে তৈরি পোশাকশিল্প, ওষুধশিল্প, কৃষিজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সিরামিকস, জাহাজ নির্মাণ, চামড়াজাত দ্রব্য ও পাদুকাশিল্পের মতো রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর বিকাশে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু অনেক জ্ঞানপাপী স্বীকারই করতে চায় না যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের চমকপ্রদ বিকাশ মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে হয়নি, মাল্টি ফাইবার অ্যারেঞ্জমেন্টের (এমএফএ) কোটাব্যবস্থার সুযোগ নিয়েই এর দ্রুত বিকাশ সম্ভব হয়েছে। এমএফএ বিলুপ্ত হওয়ার পর এখন বাংলাদেশের ওভেন গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার শিল্প তুলনামূলক সুবিধা এবং ‘প্রতিযোগিতা সক্ষমতার’ জোরেই এগিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দয়ায় বা করুণায় নয়।
শিল্পায়নের এই সাফল্যকে আমরা খাটো করছি না, কিন্তু তারপরও মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলব, রাজনীতিকে ব্যবসায়ীদের মুনাফা অর্জনের লোভনীয় ক্ষেত্রে পরিণত করার যে প্রবণতা জোরদার হয়ে চলেছে, তা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না। তৈরি পোশাকশিল্পের সাফল্যের আসল দাবিদার এ দেশের নারী শ্রমিকেরা হলেও এই সাফল্যের জোয়ারে অবগাহন করে এ দেশে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী অতি দ্রুত কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। একই সঙ্গে ওনারা এবং অন্যান্য বাণিজ্যনির্ভর মুৎসুদ্দি পুঁজিপতি গোষ্ঠী প্রধানত ব্যাংকঋণের ফায়দাভোগী হয়ে এ দেশে গত চার দশকে পুঁজি লুণ্ঠনে কামেলিয়ত হাসিল করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মোতাবেক দেশে এখন ৫৪ হাজারের বেশি কোটিপতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ত্যাগী ও জনদরদি রাজনীতিবিদদের হটিয়ে দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক আমলা ও সিভিল আমলা এবং মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ক্রমেই রাষ্ট্রক্ষমতার প্রবল প্রতাপান্বিত ভাগীদারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এখন দখলদারি প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা চলছে প্রধানত এঁদের মধ্যেই।
ব্যবসায়ীদের রাষ্ট্রক্ষমতার ভাগীদার হওয়ার এই প্রতিযোগিতা রাজনীতির মাধ্যমে জনকল্যাণে ব্রতী হওয়ার প্রতিযোগিতা নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবসার কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্যই এই রাজনীতি। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষোভ এই অশুভ প্রবণতার বিরুদ্ধে। তাঁকে এ জন্য সাধুবাদ জানাতেই হবে। তবে আজন্ম একটি রাজনৈতিক পরিবারের ত্যাগ-তিতিক্ষার পরিবেশে জীবন কাটানো প্রধানমন্ত্রী রাজনীতিকে এভাবে ব্যবসার হাতিয়ারে পরিণত করা যে জাতির জন্য অমঙ্গলজনক, তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন, আশা করি।
ড. মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments