রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: দালালে জিম্মি টাকায় মুক্তি by আরিফুল হক
গতকাল
শুক্রবার সকাল ১০টা। শ্বাসকষ্ট নিয়ে কুড়িগ্রাম থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে এলেন আহমেদ আলী। চিকিৎসক পরামর্শ দিলেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার।
ভর্তির যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ। কিন্তু ওয়ার্ডে যেতে পারছেন না রোগী। দুই
দালালের ২০০ টাকা দাবি। টাকা না দিলে ওয়ার্ডে নেওয়া যাবে না। এ নিয়ে
দালালদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের চলল কথা-কাটাকাটি। শেষমেশ টাকা দিয়েই মিলল
অনুমতি।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রাজীবপুর গ্রাম থেকে আসা হায়দার আলীও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তাঁকে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় জরুরি বিভাগে এলেন তাঁর ভাই মনোয়ারুল ইসলাম। দালালদের ২০০ টাকা দিয়ে তবেই ভাইকে ওয়ার্ডে নেওয়ার অনুমতি পেলেন তিনি।
দালালদের খপ্পরে পড়ে রংপুরের বদরগঞ্জের মোমেনা বেগমের পরিবারের ২০০ টাকা খোয়া গেছে। এ ঘটনা বেলা সাড়ে ১১টার। পা ভেঙে যাওয়া মোমেনার মেয়ে দালালদের হাতে ২০০ টাকা তুলে দেন।
শুধু আহমেদ আলী, হায়দার আলী ও মোমেনা বেগম বা তাঁদের পরিবার নয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীই এমন ভোগান্তির শিকার। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এমন ঘটনা প্রতিদিনের। গতকাল দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে এ তিনটি ঘটনাই এই প্রতিবেদকের সামনে ঘটেছে।
হাসপাতাল সূত্র ও ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, শুধু জরুরি বিভাগে নয়, হাসপাতালটির সর্বত্র দালালদের দৌরাত্ম্য। তাদের কারণে ওয়ার্ডে ওষুধ, মুঠোফোন ও টাকা চুরির ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। গত অক্টোবর মাসেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৫০টির বেশি চুরির ঘটনা ঘটেছে।
গত মঙ্গলবার ২ নম্বর মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে একজন রোগীর স্বজনের কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কর্মচারী (এমএলএসএস) তাপসী রায়কে ওই ওয়ার্ড থেকে প্রত্যাহার করা হয়। আগের দিন চুরি হয় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের একজন রোগীর মুঠোফোন। এসব ঘটনায় পরিচালকের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করা হয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে গত বছরের ১৫ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘১০০ দালালের দাপট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। কিন্তু এখনো অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বলে জানালেন কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
হাসপাতালের পরিচালক আ স ম বরকতুল্লাহ বলেন, ‘দালালদের কাছে রোগী ও তাঁদের স্বজন, এমনকি আমরাও জিম্মি হয়ে পড়েছি। তাদের রুখতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।’
অভিযোগ পাওয়া গেছে, হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারীর নেতৃত্বে বিভিন্ন ওয়ার্ডে এসব দালাল দিনরাত ঘোরাফেরা করে। তারা হাসপাতালের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। পরে বাইরে থেকে ওষুধ নিয়ে আসার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। চুরি করে ওষুধ, টাকা ও মুঠোফোন।
দালালদের খপ্পরে পড়ে টাকা খোয়ানো এক রোগীর স্বজন আশরাফুল ইসলাম বলেন, কর্মচারী পরিচয় দিয়ে জরুরি ওষুধ কিনে এনে দেওয়ার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালালেরা।
বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জন রোগী দালালদের খপ্পরে পড়েন। মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে রোগী ভর্তির পর ওয়ার্ডে নিতে লাগে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। দিনে ২০০ টাকা করে নিলেও রাতে টাকার অঙ্ক বেড়ে যায়।
দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে এক সমন্বয় সভা হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে রোগীদের কাছ থেকে দালালদের টাকা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গতকাল জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় সোহেল ও মিনহাজুল নামের দুই দালালের সঙ্গে। তাঁরা দাবি করেন, জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন বলেই তাঁরা রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেন। কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি জানে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান বলেন, দালালদের বিতাড়িত করতে শিগগিরই অভিযান শুরু করা হবে।
মোট ৪০ ওয়ার্ডের এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী রোগী ভর্তি থাকে। বিভাগের আট জেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য এখানে আসে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রাজীবপুর গ্রাম থেকে আসা হায়দার আলীও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তাঁকে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় জরুরি বিভাগে এলেন তাঁর ভাই মনোয়ারুল ইসলাম। দালালদের ২০০ টাকা দিয়ে তবেই ভাইকে ওয়ার্ডে নেওয়ার অনুমতি পেলেন তিনি।
দালালদের খপ্পরে পড়ে রংপুরের বদরগঞ্জের মোমেনা বেগমের পরিবারের ২০০ টাকা খোয়া গেছে। এ ঘটনা বেলা সাড়ে ১১টার। পা ভেঙে যাওয়া মোমেনার মেয়ে দালালদের হাতে ২০০ টাকা তুলে দেন।
শুধু আহমেদ আলী, হায়দার আলী ও মোমেনা বেগম বা তাঁদের পরিবার নয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীই এমন ভোগান্তির শিকার। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এমন ঘটনা প্রতিদিনের। গতকাল দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে এ তিনটি ঘটনাই এই প্রতিবেদকের সামনে ঘটেছে।
হাসপাতাল সূত্র ও ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, শুধু জরুরি বিভাগে নয়, হাসপাতালটির সর্বত্র দালালদের দৌরাত্ম্য। তাদের কারণে ওয়ার্ডে ওষুধ, মুঠোফোন ও টাকা চুরির ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। গত অক্টোবর মাসেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৫০টির বেশি চুরির ঘটনা ঘটেছে।
গত মঙ্গলবার ২ নম্বর মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে একজন রোগীর স্বজনের কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কর্মচারী (এমএলএসএস) তাপসী রায়কে ওই ওয়ার্ড থেকে প্রত্যাহার করা হয়। আগের দিন চুরি হয় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের একজন রোগীর মুঠোফোন। এসব ঘটনায় পরিচালকের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করা হয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে গত বছরের ১৫ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘১০০ দালালের দাপট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। কিন্তু এখনো অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বলে জানালেন কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
হাসপাতালের পরিচালক আ স ম বরকতুল্লাহ বলেন, ‘দালালদের কাছে রোগী ও তাঁদের স্বজন, এমনকি আমরাও জিম্মি হয়ে পড়েছি। তাদের রুখতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।’
অভিযোগ পাওয়া গেছে, হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারীর নেতৃত্বে বিভিন্ন ওয়ার্ডে এসব দালাল দিনরাত ঘোরাফেরা করে। তারা হাসপাতালের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। পরে বাইরে থেকে ওষুধ নিয়ে আসার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। চুরি করে ওষুধ, টাকা ও মুঠোফোন।
দালালদের খপ্পরে পড়ে টাকা খোয়ানো এক রোগীর স্বজন আশরাফুল ইসলাম বলেন, কর্মচারী পরিচয় দিয়ে জরুরি ওষুধ কিনে এনে দেওয়ার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালালেরা।
বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জন রোগী দালালদের খপ্পরে পড়েন। মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে রোগী ভর্তির পর ওয়ার্ডে নিতে লাগে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। দিনে ২০০ টাকা করে নিলেও রাতে টাকার অঙ্ক বেড়ে যায়।
দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে গত ৩১ অক্টোবর হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে এক সমন্বয় সভা হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে রোগীদের কাছ থেকে দালালদের টাকা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গতকাল জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় সোহেল ও মিনহাজুল নামের দুই দালালের সঙ্গে। তাঁরা দাবি করেন, জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন বলেই তাঁরা রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেন। কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি জানে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান বলেন, দালালদের বিতাড়িত করতে শিগগিরই অভিযান শুরু করা হবে।
মোট ৪০ ওয়ার্ডের এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী রোগী ভর্তি থাকে। বিভাগের আট জেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য এখানে আসে।
No comments