ইলিশ হতে পারে জাতীয় সমৃদ্ধির হাতিয়ার by মিজানুর রহমান
মৎস্য
অধিদফতরের হিসাবে দেশের মোট মাছ উৎপাদনে ইলিশের অবদান ১১ শতাংশ। ২০১৩-১৪
অর্থবছরের হিসাবে বর্তমানে বছরে ইলিশ উৎপাদন হচ্ছে ৩ দশমিক ৮৫ লাখ টন, এর
বাজার দাম ১৭ হাজার কোটি টাকা। জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। পাঁচ লাখ
জেলে সরাসরি ইলিশ ধরার সাথে জড়িত। পরোক্ষভাবে আরো ২০ লাখ মানুষের জীবিকার
প্রধান উৎস ইলিশ। ২০০৭ সাল থেকে জাটকা রক্ষায় সরকার নানা পদক্ষেপ নেয়। এর
মধ্যে বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়।
প্রজনন ও বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মাছের রাজা ইলিশ উৎপাদন কমে যায়। গতিপথ পরিবর্তন হয়ে মা-ইলিশ অভিবাসী হয়ে চলে যাচ্ছে মিয়ানমারের দিকে। এতে বাংলাদেশের নদী মোহনায় মা-ইলিশের আসা কমে যাচ্ছে। ফলে ভরা মওসুমেও কম ইলিশ পাওয়া যায়। দক্ষিণাঞ্চলে সাগর ও নদীর সংযোগস্থলে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় মা-ইলিশেরা ডিম ছাড়তে ঝাঁক বেঁধে ঠিকমতো নদীতে আসতে পারছে না। গবেষকেরা বলছেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে প্রতি বছর ২৫০ কোটি টন পলি উজান থেকে ধেয়ে আসছে। এ পলি দেশের নদীপথ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ভরাট করছে তলদেশ এবং মোহনায় পতিত হয়ে ইলিশের গতিপথে সৃষ্টি করছে ডুবোচর। প্রাকৃতিক নিয়মে প্রজনন মওসুমে ইলিশ উজান ঠেলে মিঠাপানিসমৃদ্ধ গভীর নদীতে ছুটে আসে। ডিম ছাড়ার পর মা-ইলিশ আবার বাচ্চাসহ ফিরে যায় সাগরের লোনা পানিতে। কিন্তু উজানের পথে ডুবোচরে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ইলিশ গতিপথ পরিবর্তন করছে। মা-ইলিশ চলে যাচ্ছে মিয়ানমার ও ভারতীয় সমুদ্র সীমানায়।
ফারাক্কায় বাঁধ দেয়ার ফলে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বারবার পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। অসংখ্য ডুবোচরের সৃষ্টি হয়ে ইলিশের প্রজনন বাধাগ্রস্ত করছে। আগে সাগর, মোহনা ও নদ-নদীর মিঠাপানির মধ্যে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, খাদ্য, তাপমাত্রা, পি-এইচ, কার্বন ডাই-অক্সাইড, স্রোত, ক্ষার, ঘোলাত্ব ঠিক থাকায় ইলিশের বিচরণ ছিল ব্যাপক; ফলে এর উৎপাদন ছিল আশাতীত। ইলিশের ডিম থেকে পোনা বের হয়েই তা উজানে চলতে শুরু করত। এ পোনা জাটকা (খোকা ইলিশ) হয়ে একটি সময়ে ফিরে যেত আপন ঠিকানার গভীর সমুদ্রে। ডিম ছাড়তে আসা এবং ডিম ছেড়ে চলে যেতেই বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, মধুমতি, হালদাসহ বিভিন্ন গভীর নদী ইলিশসমৃদ্ধ হতো।
ইলিশ সমতলে বিচরণে অভ্যস্ত। দিনে প্রায় ৭১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সে খোঁজে তার বিশ্বস্ত ঠিকানা। পরিমিত বৃষ্টির অভাবে এখন লবণের আধিক্য এসেছে পানিতে। মোহনায় যান্ত্রিক লঞ্চ-স্টিমার, ট্যাঙ্কার, ইঞ্জিনচালিত নৌকার আধিক্যে ইলিশ এখানে নিজেকে আর স্বাচ্ছন্দ্যময় মনে করে না। শিল্পদূষণে একসময় টেমস নদী থেকে হারিয়ে গিয়েছিল স্যামন মাছ। দায়মুক্তির কারণে কয়েক বছরের মধ্যে দূষণ কমিয়ে ব্রিটেন ওই মাছ টেমস নদীতে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে এখনো যদি ইলিশ প্রজননের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় এক ইলিশ থেকেই প্রতি বছর লাখো কোটি টাকা অর্জন সম্ভব।
একটি মা-ইলিশ একসাথে কমপক্ষে তিন লাখ ও সর্বোচ্চ ২১ লাখ ডিম ছাড়ে। এসব ডিমের ৭০-৮০ শতাংশ ফুটে রেণু ইলিশ হয়। সর্বনিম্ন তিন লাখ পোনার ৭০ ভাগ রেণু ধরলে দুই লাখ ১০ হাজার রেণু উৎপাদন হয়। তাহলে একটি মা-ইলিশ থেকে ১০ শতাংশ হিসাবে দুই লাখ ১০ হাজার জাটকা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ১১ দিন ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকায় প্রায় এক কোটি ৬৫ লাখ মা-ইলিশ রক্ষা পায়। সে হিসাবে এক কোটি ৬৫ লাখ মা-ইলিশ থেকে ৩৪ হাজার ৬৫০ কোটি ইলিশ পাওয়া যাওয়ার কথা।
এসব ইলিশ যদি এক কেজি ওজন করে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যেত, তাহলে দুই কোটি সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা আয় হতো, যা বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় ৮৩ গুণ বেশি। অর্থাৎ ৮৩ বছরের বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের সমান। কারণ বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় বাজেট আড়াই লাখ কোটি টাকার। এমনটা বাস্তবে না হলেও ইলিশ মাছ রক্ষা করে আমরা জাতীয় অর্থনীতে এক বিরাট অবদান রাখতে পারতাম। অন্তত দেশে ব্যাপক চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করতে পারতাম। এখন উৎপাদিত ইলিশ দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে পারে না।
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিনের জন্য নদীতে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এ বছর। এর সুফল নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ নিয়ম দৃঢ়ভাবে কার্যকর করা গেলে মাছ সম্পদের বিরাট উন্নতি ঘটত তাতে সন্দেহ নেই। নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত আট মাস নদীতে অভিযান চলে। আর সরকার মাত্র চার মাস ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দিচ্ছে। এর মধ্যে আবার কেউ পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না। প্রত্যেক জেলের জন্য ভিজিএফের ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও অনেককে ২০-২৫ কেজি করে দেয়া হচ্ছে। অনেক সময় এক মাসের চাল আরেক মাসে দেয়া হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই জাতীয় সমৃদ্ধির হাতিয়ার ইলিশ রক্ষায় এসব অনিয়ম দূর করা উচিত। বিশেষ নজর দেয়া উচিত। সর্বোচ্চ ও সার্বিক পৃষ্ঠপোষতা করা উচিত। শুধু মাছের স্বাদ হিসেবেই নয়, অর্থনৈতিকভাবে ইলিশের সমৃদ্ধির সুফলের স্বাদ জাতিকে দেয়া উচিত।
প্রজনন ও বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মাছের রাজা ইলিশ উৎপাদন কমে যায়। গতিপথ পরিবর্তন হয়ে মা-ইলিশ অভিবাসী হয়ে চলে যাচ্ছে মিয়ানমারের দিকে। এতে বাংলাদেশের নদী মোহনায় মা-ইলিশের আসা কমে যাচ্ছে। ফলে ভরা মওসুমেও কম ইলিশ পাওয়া যায়। দক্ষিণাঞ্চলে সাগর ও নদীর সংযোগস্থলে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় মা-ইলিশেরা ডিম ছাড়তে ঝাঁক বেঁধে ঠিকমতো নদীতে আসতে পারছে না। গবেষকেরা বলছেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে প্রতি বছর ২৫০ কোটি টন পলি উজান থেকে ধেয়ে আসছে। এ পলি দেশের নদীপথ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ভরাট করছে তলদেশ এবং মোহনায় পতিত হয়ে ইলিশের গতিপথে সৃষ্টি করছে ডুবোচর। প্রাকৃতিক নিয়মে প্রজনন মওসুমে ইলিশ উজান ঠেলে মিঠাপানিসমৃদ্ধ গভীর নদীতে ছুটে আসে। ডিম ছাড়ার পর মা-ইলিশ আবার বাচ্চাসহ ফিরে যায় সাগরের লোনা পানিতে। কিন্তু উজানের পথে ডুবোচরে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ইলিশ গতিপথ পরিবর্তন করছে। মা-ইলিশ চলে যাচ্ছে মিয়ানমার ও ভারতীয় সমুদ্র সীমানায়।
ফারাক্কায় বাঁধ দেয়ার ফলে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় বারবার পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। অসংখ্য ডুবোচরের সৃষ্টি হয়ে ইলিশের প্রজনন বাধাগ্রস্ত করছে। আগে সাগর, মোহনা ও নদ-নদীর মিঠাপানির মধ্যে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, খাদ্য, তাপমাত্রা, পি-এইচ, কার্বন ডাই-অক্সাইড, স্রোত, ক্ষার, ঘোলাত্ব ঠিক থাকায় ইলিশের বিচরণ ছিল ব্যাপক; ফলে এর উৎপাদন ছিল আশাতীত। ইলিশের ডিম থেকে পোনা বের হয়েই তা উজানে চলতে শুরু করত। এ পোনা জাটকা (খোকা ইলিশ) হয়ে একটি সময়ে ফিরে যেত আপন ঠিকানার গভীর সমুদ্রে। ডিম ছাড়তে আসা এবং ডিম ছেড়ে চলে যেতেই বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, মধুমতি, হালদাসহ বিভিন্ন গভীর নদী ইলিশসমৃদ্ধ হতো।
ইলিশ সমতলে বিচরণে অভ্যস্ত। দিনে প্রায় ৭১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সে খোঁজে তার বিশ্বস্ত ঠিকানা। পরিমিত বৃষ্টির অভাবে এখন লবণের আধিক্য এসেছে পানিতে। মোহনায় যান্ত্রিক লঞ্চ-স্টিমার, ট্যাঙ্কার, ইঞ্জিনচালিত নৌকার আধিক্যে ইলিশ এখানে নিজেকে আর স্বাচ্ছন্দ্যময় মনে করে না। শিল্পদূষণে একসময় টেমস নদী থেকে হারিয়ে গিয়েছিল স্যামন মাছ। দায়মুক্তির কারণে কয়েক বছরের মধ্যে দূষণ কমিয়ে ব্রিটেন ওই মাছ টেমস নদীতে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে এখনো যদি ইলিশ প্রজননের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় এক ইলিশ থেকেই প্রতি বছর লাখো কোটি টাকা অর্জন সম্ভব।
একটি মা-ইলিশ একসাথে কমপক্ষে তিন লাখ ও সর্বোচ্চ ২১ লাখ ডিম ছাড়ে। এসব ডিমের ৭০-৮০ শতাংশ ফুটে রেণু ইলিশ হয়। সর্বনিম্ন তিন লাখ পোনার ৭০ ভাগ রেণু ধরলে দুই লাখ ১০ হাজার রেণু উৎপাদন হয়। তাহলে একটি মা-ইলিশ থেকে ১০ শতাংশ হিসাবে দুই লাখ ১০ হাজার জাটকা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ১১ দিন ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকায় প্রায় এক কোটি ৬৫ লাখ মা-ইলিশ রক্ষা পায়। সে হিসাবে এক কোটি ৬৫ লাখ মা-ইলিশ থেকে ৩৪ হাজার ৬৫০ কোটি ইলিশ পাওয়া যাওয়ার কথা।
এসব ইলিশ যদি এক কেজি ওজন করে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যেত, তাহলে দুই কোটি সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা আয় হতো, যা বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় ৮৩ গুণ বেশি। অর্থাৎ ৮৩ বছরের বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের সমান। কারণ বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় বাজেট আড়াই লাখ কোটি টাকার। এমনটা বাস্তবে না হলেও ইলিশ মাছ রক্ষা করে আমরা জাতীয় অর্থনীতে এক বিরাট অবদান রাখতে পারতাম। অন্তত দেশে ব্যাপক চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করতে পারতাম। এখন উৎপাদিত ইলিশ দেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে পারে না।
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিনের জন্য নদীতে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এ বছর। এর সুফল নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ নিয়ম দৃঢ়ভাবে কার্যকর করা গেলে মাছ সম্পদের বিরাট উন্নতি ঘটত তাতে সন্দেহ নেই। নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত আট মাস নদীতে অভিযান চলে। আর সরকার মাত্র চার মাস ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দিচ্ছে। এর মধ্যে আবার কেউ পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না। প্রত্যেক জেলের জন্য ভিজিএফের ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও অনেককে ২০-২৫ কেজি করে দেয়া হচ্ছে। অনেক সময় এক মাসের চাল আরেক মাসে দেয়া হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই জাতীয় সমৃদ্ধির হাতিয়ার ইলিশ রক্ষায় এসব অনিয়ম দূর করা উচিত। বিশেষ নজর দেয়া উচিত। সর্বোচ্চ ও সার্বিক পৃষ্ঠপোষতা করা উচিত। শুধু মাছের স্বাদ হিসেবেই নয়, অর্থনৈতিকভাবে ইলিশের সমৃদ্ধির সুফলের স্বাদ জাতিকে দেয়া উচিত।
No comments