তিনি সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা by নেহাল করিম
আজ
অধ্যাপক কে এ এম সা’দউদ্দিন স্যারের ৮০তম জন্মবার্ষিকী, এই বয়সেও অবসর
নেই তাঁর। তিনি এখনো শিক্ষকতা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও
সংস্কৃতি বিভাগে। উল্লেখ্য, ৫৫ বছরের বেশি সময় ধরে যাঁরা সমাজবিজ্ঞান
বিভাগে পড়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাঁর ছাত্র।
অন্য অনেকের মতো আমিও তাঁর ছাত্র। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন এবং আমিও। ২৫০ ফুটের দূরত্বে ছিল আমাদের বসবাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে জানতাম না তিনি কোন বিভাগের শিক্ষক। চেনা মানুষকে দেখলাম আবার নতুন রূপে। তিনি দৃঢ়চিত্তের অধিকারী। ছাত্রজীবনে তাঁকে গম্ভীর বা রাশভারী মনে হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সহকর্মী হওয়ার সুবাদে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
শিক্ষকদের বিষয়ে জানার কৌতূহল বরাবরই শিক্ষার্থীদের থাকে। কিন্তু স্যারকে জানার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল অনেকটা সময়। যখন তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেন, তখন তাঁর ও অধ্যাপক ড. রংগলাল সেনের বিদায় অনুষ্ঠান একসঙ্গে হয়েছিল।
অধ্যাপক সা’দউদ্দিনের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৩ অক্টোবর। তাঁর আদি নিবাস বৃহত্তর ফরিদপুরের বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলায়। তবে তিন পুরুষ ধরে বরিশাল শহরে স্থায়ী নিবাস গড়ে তুলেছেন। সব পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রাখেন। অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৩ সালে আইএ পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেছিলেন যথাক্রমে ১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালে।
উল্লেখ্য, ছাত্রাবস্থায় তিনি প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (ইপসু) জন্মলগ্ন থেকে জড়িত ছিলেন এবং কালক্রমে ১৯৫৬ সালে ইপসুর যুগ্ম সম্পাদক এবং ১৯৫৭ সাল থেকে সামরিক শাসনের আগ পর্যন্ত তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম সামরিক আইন জারি হওয়ার পর মাস তিনেক সা’দউদ্দিন আত্মগোপনে ছিলেন এবং এর মধ্য দিয়ে তাঁর ছাত্ররাজনীতির পরিসমাপ্তি ঘটে।
সা’দউদ্দিন মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন পরবর্তী জীবনেও। ১৯৫৯ সালে তিনি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সমগ্র পাকিস্তানে ‘সপ্তম স্থান’ অধিকার করেছিলেন। লিখিত, মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অত্যন্ত ভালো মেধার পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর ছাত্ররাজনীতি, বিশেষ করে সেই সময়ে নিষিদ্ধঘোষিত ‘কমিউনিস্ট পার্টির’ সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় তিনি আর পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দিতে পারেননি।
১৯৫৯-৬০ সালে তিনি নাটোর কলেজে অধ্যাপনা করেন এবং ষাটের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে একনাগাড়ে ৪২ বছর শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৪-৬৯ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষকতাও করেছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন, এরপর ১৯৬৬-৬৯ পর্যন্ত মোরটন বিশ্ববিদ্যালয় ও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে দেশে ফেরেন। পরে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দিয়ে ২০০২ সালে এই বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
অধ্যাপক সা’দউদ্দিন শিক্ষকদের সংগঠনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৭০-৭১ সাল পর্যন্ত দুবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাবের সম্পাদক ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৬৯-৭১-এর উত্তাল দিনগুলোতে তিনি স্বাধীনতার পক্ষে রাজনৈতিক আন্দোলন ও স্বাধীনতার সপক্ষে জনমত গঠনে সক্রিয় ছিলেন এবং দেশের ভেতরে থেকেই মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। ফলে তিনি কালো আইনের তালিকাভুক্ত হন এবং একাত্তরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা সেনানিবাসে অন্তরীণ ছিলেন। অন্তরীণ অবস্থায় অমানুষিক নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্বাস্থ্যও ভেঙে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাবের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, স্যার একজন দক্ষ দাবাড়ু। অধ্যাপনা জীবনে তিনি একাধিকবার সিনেটের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৮-৮২ পর্যন্ত পরপর দুবার তিনি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নির্বাচিত ডিন ছিলেন। ডিন থাকাকালীন বর্তমানে প্রচলিত কোর্স-পদ্ধতি পরীক্ষা সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবর্তন করার ক্ষেত্রে অন্যতম পুরোধা ছিলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির তিনবার (১৯৮০-৮১) ও (১৯৮৬-৮৭) নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন এবং একই সঙ্গে তিন-তিনবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সামরিক আইন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে যেসব কালো আইন প্রবর্তন করা হয়েছিল, তা তাঁর সভাপতিত্বকালে আন্দোলন ও প্রতিবাদের মাধ্যমে সরকারকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়।
এ ছাড়া লেখালেখিতেও সা’দউদ্দিন সক্রিয় ছিলেন। সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে তাঁর অনেক মনস্বী নিবন্ধ সুধী মহলে সমাদৃত হয়। ১৯৬০ থেকে এ পর্যন্ত তিনি অনেক সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে মূল প্রবন্ধকার হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তাঁর রচিত গবেষণামূলক নিবন্ধ কিছু প্রকাশিত হয়েছে এবং বেশির ভাগই অপ্রকাশিত ও অগ্রন্থিত রয়ে গেছে।
অধ্যাপক সা’দউদ্দিন একজন নিবেদিত ও সার্থক শিক্ষক। পাশাপাশি সমাজসচেতন ও বড় মাপের মানুষ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক সমস্যার সমাধানে তিনি কখনো দলীয়ভাবে, কখনো এককভাবে কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চূড়ান্তভাবে অবসর গ্রহণ করার পরও তাঁর প্রয়াস থেমে নেই, তিনি ‘ফিলিস্তিনি জনগণের’ মুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশে যে সংহতি আন্দোলন হয়েছে, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে ইরাকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
অধ্যাপক সা’দউদ্দিনের উপস্থিতি আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। ৮০তম জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
নেহাল করিম: অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
অন্য অনেকের মতো আমিও তাঁর ছাত্র। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন এবং আমিও। ২৫০ ফুটের দূরত্বে ছিল আমাদের বসবাস। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে জানতাম না তিনি কোন বিভাগের শিক্ষক। চেনা মানুষকে দেখলাম আবার নতুন রূপে। তিনি দৃঢ়চিত্তের অধিকারী। ছাত্রজীবনে তাঁকে গম্ভীর বা রাশভারী মনে হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সহকর্মী হওয়ার সুবাদে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
শিক্ষকদের বিষয়ে জানার কৌতূহল বরাবরই শিক্ষার্থীদের থাকে। কিন্তু স্যারকে জানার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল অনেকটা সময়। যখন তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেন, তখন তাঁর ও অধ্যাপক ড. রংগলাল সেনের বিদায় অনুষ্ঠান একসঙ্গে হয়েছিল।
অধ্যাপক সা’দউদ্দিনের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৩ অক্টোবর। তাঁর আদি নিবাস বৃহত্তর ফরিদপুরের বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলায়। তবে তিন পুরুষ ধরে বরিশাল শহরে স্থায়ী নিবাস গড়ে তুলেছেন। সব পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রাখেন। অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৩ সালে আইএ পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেছিলেন যথাক্রমে ১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালে।
উল্লেখ্য, ছাত্রাবস্থায় তিনি প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (ইপসু) জন্মলগ্ন থেকে জড়িত ছিলেন এবং কালক্রমে ১৯৫৬ সালে ইপসুর যুগ্ম সম্পাদক এবং ১৯৫৭ সাল থেকে সামরিক শাসনের আগ পর্যন্ত তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম সামরিক আইন জারি হওয়ার পর মাস তিনেক সা’দউদ্দিন আত্মগোপনে ছিলেন এবং এর মধ্য দিয়ে তাঁর ছাত্ররাজনীতির পরিসমাপ্তি ঘটে।
সা’দউদ্দিন মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন পরবর্তী জীবনেও। ১৯৫৯ সালে তিনি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সুপিরিয়র সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সমগ্র পাকিস্তানে ‘সপ্তম স্থান’ অধিকার করেছিলেন। লিখিত, মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অত্যন্ত ভালো মেধার পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর ছাত্ররাজনীতি, বিশেষ করে সেই সময়ে নিষিদ্ধঘোষিত ‘কমিউনিস্ট পার্টির’ সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় তিনি আর পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দিতে পারেননি।
১৯৫৯-৬০ সালে তিনি নাটোর কলেজে অধ্যাপনা করেন এবং ষাটের শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে একনাগাড়ে ৪২ বছর শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৪-৬৯ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি শিক্ষকতাও করেছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন, এরপর ১৯৬৬-৬৯ পর্যন্ত মোরটন বিশ্ববিদ্যালয় ও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে দেশে ফেরেন। পরে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দিয়ে ২০০২ সালে এই বিভাগ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
অধ্যাপক সা’দউদ্দিন শিক্ষকদের সংগঠনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৭০-৭১ সাল পর্যন্ত দুবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাবের সম্পাদক ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৬৯-৭১-এর উত্তাল দিনগুলোতে তিনি স্বাধীনতার পক্ষে রাজনৈতিক আন্দোলন ও স্বাধীনতার সপক্ষে জনমত গঠনে সক্রিয় ছিলেন এবং দেশের ভেতরে থেকেই মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য-সহযোগিতা করেন। ফলে তিনি কালো আইনের তালিকাভুক্ত হন এবং একাত্তরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা সেনানিবাসে অন্তরীণ ছিলেন। অন্তরীণ অবস্থায় অমানুষিক নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্বাস্থ্যও ভেঙে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাবের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, স্যার একজন দক্ষ দাবাড়ু। অধ্যাপনা জীবনে তিনি একাধিকবার সিনেটের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৮-৮২ পর্যন্ত পরপর দুবার তিনি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নির্বাচিত ডিন ছিলেন। ডিন থাকাকালীন বর্তমানে প্রচলিত কোর্স-পদ্ধতি পরীক্ষা সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবর্তন করার ক্ষেত্রে অন্যতম পুরোধা ছিলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির তিনবার (১৯৮০-৮১) ও (১৯৮৬-৮৭) নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন এবং একই সঙ্গে তিন-তিনবার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সামরিক আইন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে যেসব কালো আইন প্রবর্তন করা হয়েছিল, তা তাঁর সভাপতিত্বকালে আন্দোলন ও প্রতিবাদের মাধ্যমে সরকারকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়।
এ ছাড়া লেখালেখিতেও সা’দউদ্দিন সক্রিয় ছিলেন। সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে তাঁর অনেক মনস্বী নিবন্ধ সুধী মহলে সমাদৃত হয়। ১৯৬০ থেকে এ পর্যন্ত তিনি অনেক সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে মূল প্রবন্ধকার হিসেবে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তাঁর রচিত গবেষণামূলক নিবন্ধ কিছু প্রকাশিত হয়েছে এবং বেশির ভাগই অপ্রকাশিত ও অগ্রন্থিত রয়ে গেছে।
অধ্যাপক সা’দউদ্দিন একজন নিবেদিত ও সার্থক শিক্ষক। পাশাপাশি সমাজসচেতন ও বড় মাপের মানুষ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক সমস্যার সমাধানে তিনি কখনো দলীয়ভাবে, কখনো এককভাবে কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চূড়ান্তভাবে অবসর গ্রহণ করার পরও তাঁর প্রয়াস থেমে নেই, তিনি ‘ফিলিস্তিনি জনগণের’ মুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশে যে সংহতি আন্দোলন হয়েছে, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে ইরাকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
অধ্যাপক সা’দউদ্দিনের উপস্থিতি আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। ৮০তম জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
নেহাল করিম: অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments