মাসুক মিয়ার বিলাত যাওয়ার স্বপ্ন এবং ...
টাকা গেছে। লন্ডনি কন্যার সঙ্গে বিলাত যাওয়ার স্বপ্নও গুঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু যারা তার সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৮ বছর পর সেই প্রতারকদের শাস্তি হওয়ায় কমলগঞ্জের মাসুক মিয়া নিজের সব যন্ত্রণা ভুলে এখন খুশি। প্রতারণার মামলায় কদমহাটার আলমগীর ও মুন্সিবাজারের মছব্বিরকে আদালত এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের মৃত বধু মিয়ার ছেলে মাসুক মিয়ার কাছে ২০০৮ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে একই উপজেলার মুন্সিবাজারের মছব্বির ঘটক সংবাদ নিয়ে যায় যে মৌলভীবাজারে এক লন্ডনি কন্যাকে তার পরিবার বিয়ে দিতে দেশে নিয়ে এসেছে। পাত্র খুঁজছে। পছন্দ হলে দ্রুত বিয়ের কাজ শেষ করা হবে এবং বরকেও সঙ্গে সঙ্গে লন্ডন নিয়ে যাবে। এইচএসসি পাস মাসুক মিয়া ঘটকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন কন্যার ভাইয়ের সঙ্গে। সে পরিচয় দেয় তার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বনগাঁও গ্রামে। তার নাম আকিক মিয়া, যদিও পরে মামলার তদন্তে প্রমাণ হয় তার আসল নাম জুনায়েদ আহমদ আলমগীর, বাড়ি কদমহাটা। বাড়িতে না ওঠার কারণ হিসাবে জানায়, তার এক চাচাতো ভাই তার বোনকে বিয়ে করতে চায়। তাই ভয়ে মৌলভীবাজার দর্জি মহল্লায় ভাড়া বাসায় উঠেছেন। চুপি সারে বোনের বিয়ে সারতে চান। মাসুক মিয়া জানান, ঘটক যে প্রতারকচক্রের একজন সদস্য তা বুঝতে না পেরে ঘটককেই তিনি পাঠান লন্ডনি কন্যার বাড়ির খোঁজখবর আনতে। এরপর মৌলভীবাজার শহরের শ্রীমঙ্গল সড়কের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে কন্যা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। মাসুক মিয়া যথারীতি উপস্থিত হন। লন্ডনি কন্যা দেখানো হয়। এই কন্যাও যে প্রতারক দলের সদস্য বুঝতে পারেননি মাসুক। এর দুদিন পর ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে দর্জি মহল্লার কন্যার ভাড়া বাসায় বিয়ে হয়। বলা হয়, সেই চাচাতো ভাইয়ের ভয়ের কথা। লন্ডন যাওয়ার ঘোরের মধ্যে থাকা মাসুক মিয়া সব বিশ্বাস করেন সরল মনে। ৯ ভরি স্বর্ণ ও বিয়ের কাপড় বাবদ ২ লাখ টাকা খরচ করেন। তবে বিয়ে করা স্ত্রীকে সঙ্গে নিতে দেননি কন্যার ভাইয়ের ভূমিকায় থাকা প্রতারক আকিক মিয়ারূপী আলমগীর। জানান, বাসায় বৃদ্ধা মা অসুস্থ। তাই একদিন পর পাঠানো হবে লন্ডনি কন্যাকে শ্বশুরবাড়ি। সব মেনে নেন মাসুক মিয়া ও তার পরিবার। পরের দিন ঠিকই কন্যা যায় শ্বশুরবাড়ি। সঙ্গে কথিত নিকটাত্মীয়ের বহর (প্রতারক চক্র)। খাবার-দাবার পর আবার বায়না। অসুস্থ মা বাসায় ফিরতে হবে। লন্ডন যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর মাসুক ও তার পরিবার তাদের সব কথা বিশ্বাস করে। একদিন পর লন্ডনি কন্যার ভাই মাসুক মিয়াকে বাসায় এনে জানায়, লন্ডন থেকে যে টাকাপয়সা নিয়ে এসেছিলেন তার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন তাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা যদিও কন্যার পরিবারের দায়িত্ব তবুও একান্ত বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে পাঁচ লাখ টাকা ২-৩ দিনের মধ্যে জোগাড় করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। লন্ডনি কন্যাও সুনিপুণভাবে অভিনয় করে যান। ৫ই মার্চ ২০০৮ সালের ঘটনা। জায়গা বিক্রি ও ধারদেনা করে ৬ই মার্চ টাকা যোগাড় করে লন্ডনি কন্যার ভাই, কন্যা ও মাসুক মিয়া ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার প্রাক্কালে আবারও কন্যার বাহানা। মা অসুস্থ। আপনারা যান। পরের দিন আসবো। কিছুই বুঝতে পারে না মাসুক মিয়া। তার হৃদয় জুড়ে শুধু লন্ডনের স্বপ্ন। ঢাকায় গিয়ে ওঠেন আবাসিক হোটেলে। টাকাপয়সা সব আগেই দিয়ে দেন লন্ডনি কন্যার ভাইরূপী কথিত আকিক মিয়ার কাছে। কাগজপত্র ঠিক করা হচ্ছে বলে তিন দিন হোটেলে রাখা হয় মাসুক মিয়াকে। পরে এম্বেসির কথা বলে সন্ধ্যায় ডেকে নিয়ে লোকজন দিয়ে হুমকি দিয়ে কয়েকটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে চলে যান লন্ডনি কন্যার ভাইরূপী প্রতারক। মাসুক মিয়া লন্ডন যাওয়ার আশা ত্যাগ করে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেন। এ দিকে একই বছরের ২৫শে মে আবার ৫০ হাজার টাকা দাবি করে এই চক্র। ওই টাকা না দিলে সেই স্বাক্ষর করা স্ট্যাম্পের ভয়ভীতি দেখায় তারা। এই ঘটনার পর মাসুক মিয়া কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেন। তখনো মাসুক মিয়া জানতেন না আকিক মিয়ারূপী কথিত লন্ডনি কন্যার ভাইয়ের প্রকৃত পরিচয়। বিস্তারিত তদন্তের পর পুলিশ জানতে পারে তার আসল নাম জুনেদ আহমদ আলমগীর। প্রতারক দলের বাকি সদস্য ছিলেন মতিন, আকলু মিয়া, সাফাত ইসলাম এবং ঘটক মছব্বির। জুনেদ আহমদ আলমগীরের বাড়ি রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকায়। লন্ডনি কন্যার পরিচয় মিলেনি। এই জুনেদ ২০০৭ সালে নিজেকে লন্ডনি যুবক (লন্ডনি সিটিজেন) পরিচয় দিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার এক তরুণীকে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করে এবং অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সে সটকে পড়ে। এই ঘটনারও মামলা আদালতে চলছে। এ দিকে বাদী মাসুক মিয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের পর ঘটনার সত্যতা পেয়ে কমলগঞ্জ থানা ২০০৯ সালের ১৬ই মার্চ ৪ আসামি মছব্বির, আলমগীর, মতিন ও আকলু মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ১লা অক্টোবর মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলার রায় হয়। আদালত আসামি মছব্বির ও কথিত লন্ডনি কন্যার ভাই আলমগীরকে দণ্ডবিধি ৪২০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদেরকে এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন মাস সশ্রম কারাাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
এর মধ্যে আলমগীর পলাতক থাকায় তার বিরূদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার নির্দেশ দেন আদালত। মাসুক মিয়া ২১শে অক্টোবর রায়ের নকলের কপি দেখিয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন, প্রতারকরা তাকে প্রতারিত করে জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
প্রতারকদের আসল পরিচয় বের করতে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতায় এবং মামলায় শাস্তি হওয়ার তিনি খুশি। তার দাবি প্রতারণার শিকার হয়ে মর্মে মর্মে এর জ্বালা উপলব্ধি করেছেন। ছল ছল চোখে মাসুক মিয়া বলেন, লন্ডনের মোহে তার মতো অবস্থা যেন আর কারও না হয়। বাদী মাসুক মিয়ার কথা, এই প্রতারকরা লন্ডনি কন্যা ও লন্ডনি পাত্রের পরিচয় দিয়ে আরও অনেক পরিবারকে সর্বস্বান্ত করেছে।
এর মধ্যে আলমগীর পলাতক থাকায় তার বিরূদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার নির্দেশ দেন আদালত। মাসুক মিয়া ২১শে অক্টোবর রায়ের নকলের কপি দেখিয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন, প্রতারকরা তাকে প্রতারিত করে জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
প্রতারকদের আসল পরিচয় বের করতে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতায় এবং মামলায় শাস্তি হওয়ার তিনি খুশি। তার দাবি প্রতারণার শিকার হয়ে মর্মে মর্মে এর জ্বালা উপলব্ধি করেছেন। ছল ছল চোখে মাসুক মিয়া বলেন, লন্ডনের মোহে তার মতো অবস্থা যেন আর কারও না হয়। বাদী মাসুক মিয়ার কথা, এই প্রতারকরা লন্ডনি কন্যা ও লন্ডনি পাত্রের পরিচয় দিয়ে আরও অনেক পরিবারকে সর্বস্বান্ত করেছে।
No comments