দুই গল্প by আশান উজ জামান
সারা জীবন কালো ছিল। কিছুক্ষণ আগে নীল হয়ে গেছে আশ্রাফালি। আতঙ্কে। আশ্রাফালির নাম আশরাফ আলি। স্থায়ী ঠিকানা নয়াবাড়ি, বেলাবো। বসবাস কামরাঙ্গীরচর, ঢাকায়। রিকশা চালায়। মহজনের রিকশা। পেছনে আর্ট করে লেখা ‘মায়ের দোয়া’। যদিও মায়ের খোঁজ সে নেয় না। নেওয়া উচিত বলেও মনে করে না। এক রাতে পড়া ফেলে আলিফ লায়লা দেখতে গিয়েছিল। ফিরে এসে দেখে দরজায় তালা। অনেক ডাকাডাকির পর মা জানায়, তার জায়গা নেই ঘরে। যেখানে টিভি দেখতে গিয়েছিল সেখানে থাকতে হবে। মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল। রাগটা জ্বলে উঠেছিল দেশলাইয়ের কাঠিতে। খড়ের চাল। চৈতমাসের বেলা। দাউ দাউ করে পুড়ছিল ঘরটা।
কিন্তু পেছন ফিরে তাকায়নি সে। সেই যে বেরিয়েছে, আর ওমুখো হয়নি। মা কি এখনো আছে? থাকতেও পারে। না-ও পারে। না থাকলে তার আপন বলতেও কেউ নেই। বউয়ের কথা বলা যায়। তবে বউকে সে আপন মনে করে না। বউ হলো পরের মেয়ে। ভাতকাপড়ের অভাব হলেই চম্পট দেবে। পরশু যেমন দিয়েছিল।গিয়েছিল আশ্রাফালি। বউয়ের জন্য এত ভাবার লোক সে না। কষ্ট হচ্ছিল তার ছেলের কথা ভেবে। রেসমিনার পেটে বাচ্চা। মাস তিনেক হলো বোধ হয় ছেলেটার বয়স। হ্যাঁ তার বিশ্বাস, ছেলেই হবে। কিন্তু জন্মানোর আগেই কি চলে যাবে ছেলেটা? মানতে পারছিল না। বিকেলে তাই মানত করেছিল একটা। মানতে কাজ হয়েছে। সন্ধ্যায় ফিরে এসেছে রেসি। দেখতে পেয়েই খানিক পিটিয়েছে আশ্রাফালি। তারপর বের হয়ে গেছে। মোড়ের মাথায় মিলনের ইস্টিশনের দোকান। বাকিতে একটা আরসি কিনেছে। রেসমিনার খুব পছন্দ এটা। কিছু একটা হলেই সে আরসি খেতে চায়। খেতে খেতে নানান গল্প করে। সেদিন করল তার নিরুদ্দেশ হওয়ার গল্প। রাহেলা বেগমের বাড়ি কাজ করে রেসমিনা। রাহেলা শপিংয়ে যাবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গী হয় কাজের ছেলেটা। কিন্তু হাত ভেঙে বসে আছে সে। জিনিসপত্র টানবে কীভাবে? নিরুপায় হয়ে রেসমিনাকেই যেতে হলো। বিকেলের মধ্যেই ফেরার কথা। কিন্তু শুক্রবারের চাঁদনি চক! নিজের শরীরের ঠিক রাখতে দেয় না, তা কাজের মেয়ে! রাহেলা হারিয়ে ফেললেন রেসমিনাকে। মোবাইল-টোবাইল নেই। ঢাকা শহরের কিছু চেনেও না সে। রাত কাটল ওভারব্রিজে। সকাল থেকে ঘোরাঘুরি। যেদিকে যায়, সব একরকম লাগে। মাথা ঘুরে যায়, তবু সে থামে না। ঘুরতে ঘুরতেই তো খোরশেদ ভাইর সঙ্গে দেখা। সে-ই নিয়ে এল তাকে। যাক, তা-ও ভালো। এদিকে কি-না-কি আকাশ-পাতাল ভাবছিল আশ্রাফালি!
ছেলেকে ফিরে পেয়েছে। সুখের অন্ত নেই তার। একদিন তাই ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিল। এত কিছুর মাঝেও কিন্তু মানতের কথা ভোলেনি সে। মানত অনুসারে একটা দিন তার আল্লাহর ওয়াস্তে কাটানোর কথা। ঠিক করল সেটা সে জুম্মাবারে করবে। যে যেখানে যেতে বলবে যাবে। এক টাকাও ভাড়া নেবে না। কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করবে না। আজ সেই জুম্মাবার। মানত পালনে বের হয়েছে আশ্রাফালি। কিন্তু পরিকল্পনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কোনো প্যাসেঞ্জারই কথা শুনছে না। ভাড়ার বদলে কিছু না কিছু দিচ্ছেই তারা। একজন বাদাম কিনে দিল। একজন ফুল! এই তো এক ছাত্রকে নিয়ে এল নিউমার্কেটে। ছেলেটা ভাত খাইয়ে ছাড়ল তাকে! এভাবেই চলছিল। বলা যায়, ভালোই চলছিল। ঝামেলাটা বাধল জুম্মার পর। খাওয়ার পর পান চিবুনো অভ্যাস তার। পানটা কেবল গুঁজেছে, এমন সময় একটা ছেলে এল। হাতে বিশাল ব্যাগ। ইরাকি মাঠ যাবে। কিছুদূর গিয়েই থামতে বলল ছেলেটা। ‘একটু আসছি’ বলে চন্দ্রিমা মার্কেটে ঢুকল। আপন মনে পান চিবুচ্ছিল আশ্রাফালি। কিছুক্ষণ পর খেয়াল হলো, অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। ছেলেটার দেখা নেই। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। তারপর নিজেই খুঁজতে গেল সে। পই পই করে খুঁজল সারা মার্কেট। পাওয়া গেল না। ফিরে এল রিকশার কাছে। দেখা নেই। নেই তো নেই। ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। দাঁড়িয়েই আছে সে। প্রচণ্ড রোদ। রোদের গায়ে মনে হচ্ছে জ্বর। তাপ তাই একটু বেশি। টিয়ারঙের জামাটা লেপ্টে গেছে গায়।
কী দোষ করেছে সে? এমন আজাব খাটতে হচ্ছে কেন?
না, আর আজাব খাটবে না আশ্রাফালি। ব্যাগটা রেখেই এবার চলে যাবে। কিন্তু ধরতে গিয়েই চমকে উঠল সে। মনে হলো, বোমটোম যদি থাকে?
তখনই টিক টিক শব্দটা শুনল! হ্যাঁ, স্পষ্টই শুনল। টিক টিক টিক!
তখনই রং বদলে গেল তার। আতঙ্কে। নীল শরীরটা নাড়াতে পারছে না সে। এই সেদিনও তো ফার্মগেটে বোম ফুটেছে। প্যাসেঞ্জারের সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছিল ভাড়া নিয়ে। একটু দূরেই ফুটল বোমটা। অল্পের জন্য রক্ষে। কিন্তু আজ? তার রিকশায়ই বোম! কাউকে বলতেও ভয় হচ্ছে। কী করবে সে?
একটা পুলিশের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। শাহনেওয়াজ হলের দিকে। ওদিকে গেল হাঁটতে হাঁটতে। একবার ফিরে এল। আবার গেল। সাহস হচ্ছে না। পুলিশ যদি ওকেই ধরে নিয়ে যায়? না, পুলিশকে বলা যাবে না। নিজে নিজেই সমাধা করতে হবে। একটা তামিল ছবি দেখেছিল। মনে পড়ল। নায়কের গাড়িতে বোম ফিট করেছিল হারামিরা। জানতে পেরে গাড়িটা সে ফেলে দিল নদীতে। বোমটাও ফাটল, আবার মানুষও মরল না। চারপাশে দেখল আশ্রাফালি। প্রচুর মানুষ। বাচ্চা-বুড়ো, ছেলে-মেয়ে। এখানে বোম ফাটলে ম্যাসাকার হয়ে যাবে! কী করা যায়? ঢাকা শহরে পানিরও তো অভাব। কিছু ভেবে পায় না সে। তবু কিছু একটা করতে হবে। ব্যাগের মুখটা বাঁধল সিটের সঙ্গে। তারপর চালানো শুরু করল। এখান থেকে কাঁটাবন। তারপর শাহবাগ। তারপর রমনা। রমনার পুকুরটাতে এখন অনেক পানি।
চিন্তা একটাই। ওই পর্যন্ত পৌঁছোনো যাবে তো? সময় দেবে তো বোমটা?
রিকশা দৌড়াচ্ছে। প্যাডেল মারছে আশ্রাফালি। অনবরত। তার মাথায় তখন রেসমিনা নেই। ছেলে নেই। মা নেই। আছে শুধু রমনার পুকুর। কিন্তু সে তো আশ্রাফালি। নায়ক না। রং সাইডে গেলে তাকে ডান্ডা খেতে হয়। খেতে হলো। জ্যামে পড়তে হয়। এলিফ্যান্ট রোডে পড়ে থাকল অনেকক্ষণ। শাহবাগ মোড়েও। সিগন্যাল ছাড়তেই দে ছুট। রাস্তা ক্রস করছিল একটা ১২ নম্বর। ধাক্কা দিল তাকে। উল্টে গেল আশ্রাফালি। আর তার রিকশা। আর তার বোমের ব্যাগ।
২. একসঙ্গে পড়ে রুমা আর আজিম। কিছুদিন হলো সম্পর্কে জড়িয়েছে। শুরুটা অবশ্য আগেই হয়েছিল। প্রথম বছরেই প্রস্তাব দিয়েছিল আজিম। রাজি হয়নি রুমা। কিন্তু আজিমও কি ছাড়ার পাত্র? লেগেই ছিল। প্রতিদিনই একবার করে বলত, ‘আরেকটু ভেবে দ্যাখো।’ এর ফাঁকে আরও তিনজনের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে ও। দুটো ভেঙেও দিয়েছে। কিন্তু রুমার পিছু ছাড়েনি। শেষ পর্যন্ত তা-ই হলো, যা হওয়ার। সম্মতি জানাল রুমা। কিন্তু ওর পরিবারে কিছু সমস্যা আছে, শুনতে হবে। সব শুনেও যদি আজিম চায়, তবেই এগোবে সম্পর্কটা। কিসের এত শোনাশুনি! আজিম শুধু রুমাকে চায়। তারপর থেকেই ছুটছে সম্পর্কটা। সময়ের মতো। বাধাহীন। প্রায়ই দেখা করে ওরা। বেড়াতে যায়। বাদাম-আইসক্রিম-চানাচুর খায়। সব ঠিক আছে। তবু আর ভাল্লাগছে না আজিমের। চুপচাপ স্বভাবের এই মেয়েটা বড় বেশি মায়াবী। এক মাসও যায়নি। এর মধ্যেই কেমন একটা বউ বউ ভাব চলে এসেছে। মাতবরি ফলায়। ক্লাস ফাঁকি দেওয়া যাবে না। রাত জাগা যাবে না। সিগারেট খাওয়াও নিষিদ্ধ।
সে না হয় মানা গেল। কিন্তু চুমুও যে নিষিদ্ধ! মানবে কী করে?
এসব নিয়েই তর্ক বাধে। সেদিনও বেধেছিল। রোববারের ঘটনা। মেঘলা বিকেল। বাতাসে ঠান্ডা ভাব। বটমূলে বসে তর্কবিলাসে মেতে ছিল ওরা। হঠাৎ বৃষ্টি এল। আশ্রয় নিল কলাভবনের গেটে। এত মানুষ! দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়!
নাহ্, এখানে থাকা যাবে না। একটা রিকশা ডাকল আজিম। রুমাকে সুফিয়া কামাল হলে নামাতে হবে। তার আগে ঘুরবে একটু। বৃষ্টির মধ্যে রিকশায় ঘুরতে ভালো লাগে খুব। ফুলার রোড দিয়ে ঢুকল ওরা। রাস্তায় পানি জমেছে। তাতে বৃষ্টি পড়ছে। পড়তেই ছলকে যাচ্ছে পানি। মনে হচ্ছে ফুল ফুটছে। পানির ফুল! বন্ধু স্বপনের কবিতাটা মনে করতে চেষ্টা করল আজিম, ‘ভালোবাসি এই জলের বুকে বৃষ্টি ফোঁটার ফুল...’। পরের লাইনটা যেন কী? মনে আসছে না। আসলেই চমকে দেবে রুমাকে। বলবে ওর জন্যই লেখা। জগন্নাথ হলের পাশ দিয়ে যাচ্ছে রিকশাটা। রুমার দিকে তাকালো ও। রুমাও ওর দিকেই চেয়ে আছে। কত কাছে ওরা! আরও একটু কাছে এলে ক্ষতি কী!
তারপর কতক্ষণ পার হয়েছে? খেয়াল করেনি। হঠাৎ থেমে গেল রিকশাটা। নামতে বলছে রিকশাওয়ালা। মানে কী? অবাক হয়ে গেল ও। বৃষ্টির মধ্যে নামবে কীভাবে? আর এই মাঝপথে নামবেই বা কেন?
নামতে হবে। রিকশাওয়ালার এক কথা।
কারণ কী?
গায়ের রক্ত পানি করে এই রিকশা কেনা। এতে কোনো ফালতু কাজ হতে দেবে না সে। লজ্জায় লাল হয়ে গেল রুমা। আর মাথায় রক্ত উঠে গেল আজিমের। একটা চড় বসিয়ে দিল লোকটার গালে, ‘শুয়োরের বাচ্চা! কুত্তা! তুই চিনস আমারে?’
হলের জুনিয়ররা চেনে। ক্যান্টিনবয়রা চেনে। যাদের সঙ্গে মিছিলে-মিটিংয়ে যায় তারা চেনে। কিন্তু আজিমকে চেনার কোনো কারণ নেই রিকশাওয়ালার। তা সে শুয়োরের বাচ্চাই হোক বা কুত্তা। কোনো উত্তর দেয় না ষাটোর্ধ্ব লোকটা। তাকিয়ে থাকে। নিষ্পলক। সে চোখে চোখ রাখা যায় না। আজিমও পারে না। সরিয়ে নেয়। তারপর নেমে যায়। তারপর চলে যায় রিকশাটা।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে ওরা। কথা নেই কারও মুখে। সোজা তাকিয়ে আছে রুমা। সামনেই দোয়েল চত্বর। তারপর বাঁয়ে শিশু একাডেমি। ডানে কার্জন হল। কিছুদূর এগিয়ে ডানে ঘুরলেই ওর হল। হেঁটেই যাওয়া যাবে। হাঁটা শুরু করে ওরা। বৃষ্টি বেড়েছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হাজার হাজার ফুল ফুটছে কালো রাস্তায়। মিলিয়েও যাচ্ছে। সবই আগের মতো। কিন্তু সবই বদলে গেছে। রুমার দিকে তাকালো আজিম। মাথা নিচু করে হাঁটছে। কাঁদছে নাকি? হ্যাঁ, কাঁদছেই তো। না, বৃষ্টির পানি না। বৃষ্টি আর অশ্রুর পার্থক্য আজিম বোঝে। পরদিন থেকেই নিখোঁজ রুমা। সেদিন থেকেই এলোমেলো লাগছে আজিমের। ভুলে ভুলে যাচ্ছে সবকিছু। কিছু ব্যাপার আবছা মনে থাকছে, কিছু একদমই না। কদিন পর পরীক্ষা। থার্ড ইয়ার ফাইনাল। এটাও মনে থাকছে না। যখনই মনে পড়ছে, পড়তে বসছে ও। কিন্তু পড়া হচ্ছে না। ঘুম পাচ্ছে শুধু। ঘুম আসতে না আসতেই ভেঙেও যাচ্ছে। ছারপোকার কামড়। রুমমেটদের পাকামো। টি ট্যা প্যা পো রিং টোন। কারণের অভাব নেই। মাঝেমধ্যে পড়ার টেনশনেও ঘুম ভাঙে। আজ ভাঙল চিৎকারে। শত শত মানুষ যেন গলা ফাটাচ্ছে। কিসের এত চিৎকার আজ? খোঁজ নেওয়া দরকার। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছে না। ভার ভার লাগছে। সারা গায়ে ব্যথা। কাঁচা ঘুম ভাঙলে ওর এমন হয়। বিরক্তি লাগছে। আড়মোড়া ভেঙে উঠল আজিম। বিছানার পাশেই জানালা। বাইরে তাকিয়েই খুশি হয়ে গেল ও। কী চমৎকার! এ গাছ সে গাছ ভরে রেখেছে আঙিনাটা। গাঢ় সবুজ চারদিক। শিউলি, বকুল, কৃষ্ণচূড়া—ফুলের গাছও অনেক। কোনো না কোনো ফুল ফুটেই থাকে। রঙিন করে রাখে হলটাকে। জানালার সামনেই বকুলগাছ। ঝাঁকড়া মাথাটার পাশ কাটিয়ে তাকালেই দূরে টিভিরুম। ওখান থেকেই আসছে চিৎকারটা। আরে, বাংলাদেশের খেলা নাকি? কাদের সঙ্গে?
আর একটা শোর উঠল। হাতমুখ ধুয়ে বের হলো আজিম। ডিমবন খেল একটা। আর চা। সিগারেট ধরাল। টিভিরুমে ঢুঁ মারল একটু। ভারত-পাকিস্তান খেলা হচ্ছে! ধুর! ও কি না ভেবেছে বাংলাদেশের!
ছয়টা বাজে। কাকে পড়ানোর কথা আজ? রাহিদকে? না না, আজ তো শুক্রবার। রুকসানাকে পড়াতে হবে। ইরাকি মাঠের পাশে। জায়গাটা খুব নোংরা। রুকসানাও গাধা টাইপের ছাত্রী। তবু ওকে পড়াতে যেতে ভালো লাগে। রুকসানার জন্য না, ওর ভাবির জন্য। ভাবিটা বেশ যত্ন করে আজিমকে। ভালো ভালো নাশতা দেয়। আচ্ছা, গত দুদিন ভাবিকে দেখল না যে! নিশ্চয় বাসায় নেই। তাই তো, ওদের বাসার সবাই যে এখন গ্রামে! একা থাকতে হচ্ছে রুকসানাকে। কেউ ডেকে দেয় না। অ্যালার্ম ঘড়িটাও নষ্ট। তাই ঘুম ভাঙে না সকালে। পড়া হচ্ছে না। আগেরবার তো টেনেটুনে পাস করেছিল। এবার তা-ও করবে না। তাহলেই টিউশনিটা যাবে। না, তা হতে দেওয়া যাবে না। কিছু একটা করতে হবে। জুম্মার নামাজের পরই তাই বের হয়েছিল আজিম। বিকট চিৎকার করা একটা অ্যালার্ম ঘড়ি কিনেছে। রিসিটটা পকেটেই আছে। ৭৯০ টাকা দাম। কিন্তু কোথায় রাখল সেটা? ভুলে গেছে। শুধু মনে আছে চন্দ্রিমায় ঢুকেছিল। একটা শোপিস কিনেছে। সেটা নিয়েই হলে ফিরেছে। তারপর ঘুমিয়ে গেছে।
শোপিসটা কার জন্য কিনেছে? কার যেন জন্মদিন আজ?
আরেকটু মনোযোগ দিয়ে ভাবার চেষ্টা করে ও। জিনস আর পাঞ্জাবির পকেটগুলো হাতড়ায়। কিছু টাকা পায়। আর একটা টুপি। আর একটা লিস্ট। মনে পড়েছে, রুকসানার নাকি খাওয়া বন্ধের উপক্রম। কাজের লোকটাও নেই। ওকে তাই অনুরোধ করেছিল একটু বাজার করে দিতে। বাজার করবে আজিম! তা-ও আবার ছাত্রীর জন্য! মুখের ওপর না বলে দিয়েছিল। কিন্তু মায়া লাগছিল আজ। ঘড়ি কিনতে গিয়ে তাই বাজারও করেছে। মাছ-মাংস-সবজি। ইয়াবড় এক প্যাকেট।
কিন্তু কোথায় রাখল প্যাকেটটা?
মনে পড়ছে না।
ছেলেকে ফিরে পেয়েছে। সুখের অন্ত নেই তার। একদিন তাই ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিল। এত কিছুর মাঝেও কিন্তু মানতের কথা ভোলেনি সে। মানত অনুসারে একটা দিন তার আল্লাহর ওয়াস্তে কাটানোর কথা। ঠিক করল সেটা সে জুম্মাবারে করবে। যে যেখানে যেতে বলবে যাবে। এক টাকাও ভাড়া নেবে না। কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করবে না। আজ সেই জুম্মাবার। মানত পালনে বের হয়েছে আশ্রাফালি। কিন্তু পরিকল্পনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কোনো প্যাসেঞ্জারই কথা শুনছে না। ভাড়ার বদলে কিছু না কিছু দিচ্ছেই তারা। একজন বাদাম কিনে দিল। একজন ফুল! এই তো এক ছাত্রকে নিয়ে এল নিউমার্কেটে। ছেলেটা ভাত খাইয়ে ছাড়ল তাকে! এভাবেই চলছিল। বলা যায়, ভালোই চলছিল। ঝামেলাটা বাধল জুম্মার পর। খাওয়ার পর পান চিবুনো অভ্যাস তার। পানটা কেবল গুঁজেছে, এমন সময় একটা ছেলে এল। হাতে বিশাল ব্যাগ। ইরাকি মাঠ যাবে। কিছুদূর গিয়েই থামতে বলল ছেলেটা। ‘একটু আসছি’ বলে চন্দ্রিমা মার্কেটে ঢুকল। আপন মনে পান চিবুচ্ছিল আশ্রাফালি। কিছুক্ষণ পর খেয়াল হলো, অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। ছেলেটার দেখা নেই। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। তারপর নিজেই খুঁজতে গেল সে। পই পই করে খুঁজল সারা মার্কেট। পাওয়া গেল না। ফিরে এল রিকশার কাছে। দেখা নেই। নেই তো নেই। ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। দাঁড়িয়েই আছে সে। প্রচণ্ড রোদ। রোদের গায়ে মনে হচ্ছে জ্বর। তাপ তাই একটু বেশি। টিয়ারঙের জামাটা লেপ্টে গেছে গায়।
কী দোষ করেছে সে? এমন আজাব খাটতে হচ্ছে কেন?
না, আর আজাব খাটবে না আশ্রাফালি। ব্যাগটা রেখেই এবার চলে যাবে। কিন্তু ধরতে গিয়েই চমকে উঠল সে। মনে হলো, বোমটোম যদি থাকে?
তখনই টিক টিক শব্দটা শুনল! হ্যাঁ, স্পষ্টই শুনল। টিক টিক টিক!
তখনই রং বদলে গেল তার। আতঙ্কে। নীল শরীরটা নাড়াতে পারছে না সে। এই সেদিনও তো ফার্মগেটে বোম ফুটেছে। প্যাসেঞ্জারের সঙ্গে ঝগড়া হচ্ছিল ভাড়া নিয়ে। একটু দূরেই ফুটল বোমটা। অল্পের জন্য রক্ষে। কিন্তু আজ? তার রিকশায়ই বোম! কাউকে বলতেও ভয় হচ্ছে। কী করবে সে?
একটা পুলিশের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। শাহনেওয়াজ হলের দিকে। ওদিকে গেল হাঁটতে হাঁটতে। একবার ফিরে এল। আবার গেল। সাহস হচ্ছে না। পুলিশ যদি ওকেই ধরে নিয়ে যায়? না, পুলিশকে বলা যাবে না। নিজে নিজেই সমাধা করতে হবে। একটা তামিল ছবি দেখেছিল। মনে পড়ল। নায়কের গাড়িতে বোম ফিট করেছিল হারামিরা। জানতে পেরে গাড়িটা সে ফেলে দিল নদীতে। বোমটাও ফাটল, আবার মানুষও মরল না। চারপাশে দেখল আশ্রাফালি। প্রচুর মানুষ। বাচ্চা-বুড়ো, ছেলে-মেয়ে। এখানে বোম ফাটলে ম্যাসাকার হয়ে যাবে! কী করা যায়? ঢাকা শহরে পানিরও তো অভাব। কিছু ভেবে পায় না সে। তবু কিছু একটা করতে হবে। ব্যাগের মুখটা বাঁধল সিটের সঙ্গে। তারপর চালানো শুরু করল। এখান থেকে কাঁটাবন। তারপর শাহবাগ। তারপর রমনা। রমনার পুকুরটাতে এখন অনেক পানি।
চিন্তা একটাই। ওই পর্যন্ত পৌঁছোনো যাবে তো? সময় দেবে তো বোমটা?
রিকশা দৌড়াচ্ছে। প্যাডেল মারছে আশ্রাফালি। অনবরত। তার মাথায় তখন রেসমিনা নেই। ছেলে নেই। মা নেই। আছে শুধু রমনার পুকুর। কিন্তু সে তো আশ্রাফালি। নায়ক না। রং সাইডে গেলে তাকে ডান্ডা খেতে হয়। খেতে হলো। জ্যামে পড়তে হয়। এলিফ্যান্ট রোডে পড়ে থাকল অনেকক্ষণ। শাহবাগ মোড়েও। সিগন্যাল ছাড়তেই দে ছুট। রাস্তা ক্রস করছিল একটা ১২ নম্বর। ধাক্কা দিল তাকে। উল্টে গেল আশ্রাফালি। আর তার রিকশা। আর তার বোমের ব্যাগ।
২. একসঙ্গে পড়ে রুমা আর আজিম। কিছুদিন হলো সম্পর্কে জড়িয়েছে। শুরুটা অবশ্য আগেই হয়েছিল। প্রথম বছরেই প্রস্তাব দিয়েছিল আজিম। রাজি হয়নি রুমা। কিন্তু আজিমও কি ছাড়ার পাত্র? লেগেই ছিল। প্রতিদিনই একবার করে বলত, ‘আরেকটু ভেবে দ্যাখো।’ এর ফাঁকে আরও তিনজনের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে ও। দুটো ভেঙেও দিয়েছে। কিন্তু রুমার পিছু ছাড়েনি। শেষ পর্যন্ত তা-ই হলো, যা হওয়ার। সম্মতি জানাল রুমা। কিন্তু ওর পরিবারে কিছু সমস্যা আছে, শুনতে হবে। সব শুনেও যদি আজিম চায়, তবেই এগোবে সম্পর্কটা। কিসের এত শোনাশুনি! আজিম শুধু রুমাকে চায়। তারপর থেকেই ছুটছে সম্পর্কটা। সময়ের মতো। বাধাহীন। প্রায়ই দেখা করে ওরা। বেড়াতে যায়। বাদাম-আইসক্রিম-চানাচুর খায়। সব ঠিক আছে। তবু আর ভাল্লাগছে না আজিমের। চুপচাপ স্বভাবের এই মেয়েটা বড় বেশি মায়াবী। এক মাসও যায়নি। এর মধ্যেই কেমন একটা বউ বউ ভাব চলে এসেছে। মাতবরি ফলায়। ক্লাস ফাঁকি দেওয়া যাবে না। রাত জাগা যাবে না। সিগারেট খাওয়াও নিষিদ্ধ।
সে না হয় মানা গেল। কিন্তু চুমুও যে নিষিদ্ধ! মানবে কী করে?
এসব নিয়েই তর্ক বাধে। সেদিনও বেধেছিল। রোববারের ঘটনা। মেঘলা বিকেল। বাতাসে ঠান্ডা ভাব। বটমূলে বসে তর্কবিলাসে মেতে ছিল ওরা। হঠাৎ বৃষ্টি এল। আশ্রয় নিল কলাভবনের গেটে। এত মানুষ! দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়!
নাহ্, এখানে থাকা যাবে না। একটা রিকশা ডাকল আজিম। রুমাকে সুফিয়া কামাল হলে নামাতে হবে। তার আগে ঘুরবে একটু। বৃষ্টির মধ্যে রিকশায় ঘুরতে ভালো লাগে খুব। ফুলার রোড দিয়ে ঢুকল ওরা। রাস্তায় পানি জমেছে। তাতে বৃষ্টি পড়ছে। পড়তেই ছলকে যাচ্ছে পানি। মনে হচ্ছে ফুল ফুটছে। পানির ফুল! বন্ধু স্বপনের কবিতাটা মনে করতে চেষ্টা করল আজিম, ‘ভালোবাসি এই জলের বুকে বৃষ্টি ফোঁটার ফুল...’। পরের লাইনটা যেন কী? মনে আসছে না। আসলেই চমকে দেবে রুমাকে। বলবে ওর জন্যই লেখা। জগন্নাথ হলের পাশ দিয়ে যাচ্ছে রিকশাটা। রুমার দিকে তাকালো ও। রুমাও ওর দিকেই চেয়ে আছে। কত কাছে ওরা! আরও একটু কাছে এলে ক্ষতি কী!
তারপর কতক্ষণ পার হয়েছে? খেয়াল করেনি। হঠাৎ থেমে গেল রিকশাটা। নামতে বলছে রিকশাওয়ালা। মানে কী? অবাক হয়ে গেল ও। বৃষ্টির মধ্যে নামবে কীভাবে? আর এই মাঝপথে নামবেই বা কেন?
নামতে হবে। রিকশাওয়ালার এক কথা।
কারণ কী?
গায়ের রক্ত পানি করে এই রিকশা কেনা। এতে কোনো ফালতু কাজ হতে দেবে না সে। লজ্জায় লাল হয়ে গেল রুমা। আর মাথায় রক্ত উঠে গেল আজিমের। একটা চড় বসিয়ে দিল লোকটার গালে, ‘শুয়োরের বাচ্চা! কুত্তা! তুই চিনস আমারে?’
হলের জুনিয়ররা চেনে। ক্যান্টিনবয়রা চেনে। যাদের সঙ্গে মিছিলে-মিটিংয়ে যায় তারা চেনে। কিন্তু আজিমকে চেনার কোনো কারণ নেই রিকশাওয়ালার। তা সে শুয়োরের বাচ্চাই হোক বা কুত্তা। কোনো উত্তর দেয় না ষাটোর্ধ্ব লোকটা। তাকিয়ে থাকে। নিষ্পলক। সে চোখে চোখ রাখা যায় না। আজিমও পারে না। সরিয়ে নেয়। তারপর নেমে যায়। তারপর চলে যায় রিকশাটা।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে ওরা। কথা নেই কারও মুখে। সোজা তাকিয়ে আছে রুমা। সামনেই দোয়েল চত্বর। তারপর বাঁয়ে শিশু একাডেমি। ডানে কার্জন হল। কিছুদূর এগিয়ে ডানে ঘুরলেই ওর হল। হেঁটেই যাওয়া যাবে। হাঁটা শুরু করে ওরা। বৃষ্টি বেড়েছে। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হাজার হাজার ফুল ফুটছে কালো রাস্তায়। মিলিয়েও যাচ্ছে। সবই আগের মতো। কিন্তু সবই বদলে গেছে। রুমার দিকে তাকালো আজিম। মাথা নিচু করে হাঁটছে। কাঁদছে নাকি? হ্যাঁ, কাঁদছেই তো। না, বৃষ্টির পানি না। বৃষ্টি আর অশ্রুর পার্থক্য আজিম বোঝে। পরদিন থেকেই নিখোঁজ রুমা। সেদিন থেকেই এলোমেলো লাগছে আজিমের। ভুলে ভুলে যাচ্ছে সবকিছু। কিছু ব্যাপার আবছা মনে থাকছে, কিছু একদমই না। কদিন পর পরীক্ষা। থার্ড ইয়ার ফাইনাল। এটাও মনে থাকছে না। যখনই মনে পড়ছে, পড়তে বসছে ও। কিন্তু পড়া হচ্ছে না। ঘুম পাচ্ছে শুধু। ঘুম আসতে না আসতেই ভেঙেও যাচ্ছে। ছারপোকার কামড়। রুমমেটদের পাকামো। টি ট্যা প্যা পো রিং টোন। কারণের অভাব নেই। মাঝেমধ্যে পড়ার টেনশনেও ঘুম ভাঙে। আজ ভাঙল চিৎকারে। শত শত মানুষ যেন গলা ফাটাচ্ছে। কিসের এত চিৎকার আজ? খোঁজ নেওয়া দরকার। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছে না। ভার ভার লাগছে। সারা গায়ে ব্যথা। কাঁচা ঘুম ভাঙলে ওর এমন হয়। বিরক্তি লাগছে। আড়মোড়া ভেঙে উঠল আজিম। বিছানার পাশেই জানালা। বাইরে তাকিয়েই খুশি হয়ে গেল ও। কী চমৎকার! এ গাছ সে গাছ ভরে রেখেছে আঙিনাটা। গাঢ় সবুজ চারদিক। শিউলি, বকুল, কৃষ্ণচূড়া—ফুলের গাছও অনেক। কোনো না কোনো ফুল ফুটেই থাকে। রঙিন করে রাখে হলটাকে। জানালার সামনেই বকুলগাছ। ঝাঁকড়া মাথাটার পাশ কাটিয়ে তাকালেই দূরে টিভিরুম। ওখান থেকেই আসছে চিৎকারটা। আরে, বাংলাদেশের খেলা নাকি? কাদের সঙ্গে?
আর একটা শোর উঠল। হাতমুখ ধুয়ে বের হলো আজিম। ডিমবন খেল একটা। আর চা। সিগারেট ধরাল। টিভিরুমে ঢুঁ মারল একটু। ভারত-পাকিস্তান খেলা হচ্ছে! ধুর! ও কি না ভেবেছে বাংলাদেশের!
ছয়টা বাজে। কাকে পড়ানোর কথা আজ? রাহিদকে? না না, আজ তো শুক্রবার। রুকসানাকে পড়াতে হবে। ইরাকি মাঠের পাশে। জায়গাটা খুব নোংরা। রুকসানাও গাধা টাইপের ছাত্রী। তবু ওকে পড়াতে যেতে ভালো লাগে। রুকসানার জন্য না, ওর ভাবির জন্য। ভাবিটা বেশ যত্ন করে আজিমকে। ভালো ভালো নাশতা দেয়। আচ্ছা, গত দুদিন ভাবিকে দেখল না যে! নিশ্চয় বাসায় নেই। তাই তো, ওদের বাসার সবাই যে এখন গ্রামে! একা থাকতে হচ্ছে রুকসানাকে। কেউ ডেকে দেয় না। অ্যালার্ম ঘড়িটাও নষ্ট। তাই ঘুম ভাঙে না সকালে। পড়া হচ্ছে না। আগেরবার তো টেনেটুনে পাস করেছিল। এবার তা-ও করবে না। তাহলেই টিউশনিটা যাবে। না, তা হতে দেওয়া যাবে না। কিছু একটা করতে হবে। জুম্মার নামাজের পরই তাই বের হয়েছিল আজিম। বিকট চিৎকার করা একটা অ্যালার্ম ঘড়ি কিনেছে। রিসিটটা পকেটেই আছে। ৭৯০ টাকা দাম। কিন্তু কোথায় রাখল সেটা? ভুলে গেছে। শুধু মনে আছে চন্দ্রিমায় ঢুকেছিল। একটা শোপিস কিনেছে। সেটা নিয়েই হলে ফিরেছে। তারপর ঘুমিয়ে গেছে।
শোপিসটা কার জন্য কিনেছে? কার যেন জন্মদিন আজ?
আরেকটু মনোযোগ দিয়ে ভাবার চেষ্টা করে ও। জিনস আর পাঞ্জাবির পকেটগুলো হাতড়ায়। কিছু টাকা পায়। আর একটা টুপি। আর একটা লিস্ট। মনে পড়েছে, রুকসানার নাকি খাওয়া বন্ধের উপক্রম। কাজের লোকটাও নেই। ওকে তাই অনুরোধ করেছিল একটু বাজার করে দিতে। বাজার করবে আজিম! তা-ও আবার ছাত্রীর জন্য! মুখের ওপর না বলে দিয়েছিল। কিন্তু মায়া লাগছিল আজ। ঘড়ি কিনতে গিয়ে তাই বাজারও করেছে। মাছ-মাংস-সবজি। ইয়াবড় এক প্যাকেট।
কিন্তু কোথায় রাখল প্যাকেটটা?
মনে পড়ছে না।
No comments