প্রতি বছর বাড়ছে চার লাখ শিক্ষিত বেকার: দায়ী পুঁথিগত শিক্ষা ব্যবস্থা by এম মামুন হোসেন
উচ্চ
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষা শেষে দেশে নতুন করে
প্রতি বছর যুক্ত হচ্ছে চার লাখ শিক্ষিত বেকার। যারা ১০ বছরের মাধ্যমিক ও
দুই বছরের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে লেখাপড়া করেও সমাজে অনুৎপাদনশীল হয়ে
দেশের অর্থনীতিতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারছেন না। বর্তমান শিক্ষা
পদ্ধতি দেশে শিক্ষিত বেকার তৈরি করছে। আর এজন্য দেশের পুঁথিগত শিক্ষা
ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের মতে,
প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা
বৃত্তিমূলক জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। এতে করে বাস্তব জীবনে পুঁথিগত জ্ঞান
কাজে আসে না। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে অষ্টম শ্রেণী শেষে দেশে বৃত্তিমূলক
শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান।
লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যমতে, বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৪৭ জন বেকার। ভারত ও পাকিস্তানে প্রতি ১০ জন শিক্ষিত তরুণের তিনজন বেকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, বেকারদের মধ্যে চিকিৎসক প্রকৌশলীদের হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। নারী চিকিৎসক প্রকৌশলীদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। এর পরই আছেন উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রিধারীরা। তাদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০টি সর্বাধিক বেকারত্বের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বাদশ।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসনসংখ্যার স্বল্পতার কারণে অনেকেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। তবে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিতদের জন্য ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে কেবল সরকারি উদ্যোগ নয়, বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। উচ্চশিক্ষার আরো সুযোগ সৃষ্টি করতে মান ধরে রেখে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে এইচএসসির পরে ঝরে পড়াদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপ দেয়া যেতে পারে। বিদেশে যে ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে তা শেখানো এবং বিদেশি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করে এইচএসসি পরীক্ষার পরে যারা আর লেখাপড়া করবে না কিংবা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে না তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি মনে করেন, মাধ্যমিক স্তর থেকেই দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপরে জোর দেয়া উচিত।
গত রোববার প্রকাশিত আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম ও কারিগরি বোর্ডের এইচএসসি (বিএম) ও ডিআইবিএস পরীক্ষায় ১০ লাখ ৬১ হাজার ৬১৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭২ জন। যাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪২ হাজার ৮৯৪ জন। আর ফেল করেছে ৩ লাখ ২২ হাজার ৭৪২ জন। এ হিসাবে দেখা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করা শিক্ষার্থীর মধ্যে সিংহভাগ ঝরে পড়ে। আর পাস করা শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি অংশ পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন কারণে উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কোনো কলেজে ভর্তি হয় না। এই পরিসংখ্যানে এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থী এইচএসসির পরপর উচ্চশিক্ষায় আর যুক্ত থাকে না। আরেক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এইচএসসির পর কয়েক বছর বেকার থাকার পর ‘ছাত্র’ ভিসায় কিছু শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমায়। তবে তারা অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাওয়ায় নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া অদক্ষ শ্রমিক হওয়ার দেশ অধিক হারে রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্যক্রম পুঁথিগত বিদ্যা নির্ভর। আর এ কারণেই ঝরে পড়া ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পাওয়ারা দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারে না। বরং বেকার হয়ে দেশে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষানীতিতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা ও পরবর্তী ধাপে কর্মমুখী শিক্ষার কথা উল্লেখ রয়েছে। বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষিত বেকার তৈরি হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষায় ভালো ফোকাস দিয়েছে। তবে তা অপ্রতুল। তিনি মনে করেন, সরকারের পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিষয়ে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। আমাদের মধ্যে একটি বদ্ধমূল ধারণা আছে সন্তানকে বিএ, এমএ পাস করাতে হবে। কিন্তু দেশে বৃত্তিমূলক শিক্ষার চাহিদা বাড়ছে। তবে শিক্ষা বাজেটে সবচেয়ে কম বরাদ্দ বৃত্তিমূলক শিক্ষায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় জনশক্তি দেশে ও দেশের বাইর অদক্ষ হয়ে থাকছে। এরা দেশের জন্য শিক্ষিত বেকার হিসেবে বোঝা বাড়াচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এ বছর কারিগরিতে পাসের হার বেড়েছে। ছয় বছর আগেও কারিগরি শিক্ষায় দেশের মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১ শতাংশ লেখাপড়া করত। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে কারিগরি শিক্ষা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যমতে, বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৪৭ জন বেকার। ভারত ও পাকিস্তানে প্রতি ১০ জন শিক্ষিত তরুণের তিনজন বেকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, বেকারদের মধ্যে চিকিৎসক প্রকৌশলীদের হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। নারী চিকিৎসক প্রকৌশলীদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। এর পরই আছেন উচ্চ মাধ্যমিক ডিগ্রিধারীরা। তাদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০টি সর্বাধিক বেকারত্বের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বাদশ।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসনসংখ্যার স্বল্পতার কারণে অনেকেই উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। তবে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিতদের জন্য ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে কেবল সরকারি উদ্যোগ নয়, বেসরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। উচ্চশিক্ষার আরো সুযোগ সৃষ্টি করতে মান ধরে রেখে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি বলেন, বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে এইচএসসির পরে ঝরে পড়াদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপ দেয়া যেতে পারে। বিদেশে যে ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে তা শেখানো এবং বিদেশি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করে এইচএসসি পরীক্ষার পরে যারা আর লেখাপড়া করবে না কিংবা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে না তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি মনে করেন, মাধ্যমিক স্তর থেকেই দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপরে জোর দেয়া উচিত।
গত রোববার প্রকাশিত আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম ও কারিগরি বোর্ডের এইচএসসি (বিএম) ও ডিআইবিএস পরীক্ষায় ১০ লাখ ৬১ হাজার ৬১৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭২ জন। যাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪২ হাজার ৮৯৪ জন। আর ফেল করেছে ৩ লাখ ২২ হাজার ৭৪২ জন। এ হিসাবে দেখা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করা শিক্ষার্থীর মধ্যে সিংহভাগ ঝরে পড়ে। আর পাস করা শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি অংশ পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন কারণে উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কোনো কলেজে ভর্তি হয় না। এই পরিসংখ্যানে এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থী এইচএসসির পরপর উচ্চশিক্ষায় আর যুক্ত থাকে না। আরেক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এইচএসসির পর কয়েক বছর বেকার থাকার পর ‘ছাত্র’ ভিসায় কিছু শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমায়। তবে তারা অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাওয়ায় নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া অদক্ষ শ্রমিক হওয়ার দেশ অধিক হারে রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্যক্রম পুঁথিগত বিদ্যা নির্ভর। আর এ কারণেই ঝরে পড়া ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ না পাওয়ারা দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারে না। বরং বেকার হয়ে দেশে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষানীতিতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা ও পরবর্তী ধাপে কর্মমুখী শিক্ষার কথা উল্লেখ রয়েছে। বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষিত বেকার তৈরি হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষায় ভালো ফোকাস দিয়েছে। তবে তা অপ্রতুল। তিনি মনে করেন, সরকারের পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিষয়ে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। আমাদের মধ্যে একটি বদ্ধমূল ধারণা আছে সন্তানকে বিএ, এমএ পাস করাতে হবে। কিন্তু দেশে বৃত্তিমূলক শিক্ষার চাহিদা বাড়ছে। তবে শিক্ষা বাজেটে সবচেয়ে কম বরাদ্দ বৃত্তিমূলক শিক্ষায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় জনশক্তি দেশে ও দেশের বাইর অদক্ষ হয়ে থাকছে। এরা দেশের জন্য শিক্ষিত বেকার হিসেবে বোঝা বাড়াচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এ বছর কারিগরিতে পাসের হার বেড়েছে। ছয় বছর আগেও কারিগরি শিক্ষায় দেশের মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১ শতাংশ লেখাপড়া করত। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে কারিগরি শিক্ষা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
No comments