‘ট্রাফিক ধরলে বইলেন মিটারে যাইতেছি’ by একরামুল হুদা
একটি
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আবদুল মালেক খন্দকার ও তাঁর বন্ধু মিরপুর
পল্লবী থেকে শাহবাগ যাবেন। মিটারে যেতে রাজি না হওয়ায় ১৭০ টাকা ভাড়ায় একটি
সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠেছেন তাঁরা দুজন। দর-কষাকষি করে ভাড়া ঠিক করা
হলেও সিএনজিতে উঠেই চালক ভাড়ার মিটারটি চালু করে দিলেন। যাত্রীদের উদ্দেশে
বললেন, ‘ট্রাফিক ধরলে বইলেন মিটারে যাইতেছি’।
ওপরের ঘটনা নতুন কিছু নয়। রাজধানী ঢাকায় সিএনজি অটোরিকশায় যাওয়া নিয়ে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা কমবেশি সবারই আছে। বিশেষ করে যাঁরা এই তিন চাকার যানে নিয়মিত যাতায়াত করেন। বর্তমানে মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে এসব অটোরিকশা পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। প্রায় সব যাত্রীকে পড়তে হয় এ ধরনের দুরবস্থায়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অটোরিকশা সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭ অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত সড়কপথে যেকোনো দূরত্বে এ পরিবহনের চালক যেতে বাধ্য। কিন্তু রাস্তায় নামলে দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। যাত্রীর নয়, বরং চালকের মর্জি ছাড়া কোথাও যান না অটোরিকশা চালকেরা। আর যাঁরা যান, তাঁরাও মিটারে নন, বরং দর-কষাকষি করে ভাড়া নির্ধারণ করে তারপর যান।
সরকার ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিএনজি/পেট্রল চালিত ৪-স্ট্রোক তিন চাকার ভাড়া নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সে অনুযায়ী প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা, পরবর্তী প্রতি কিমি সাত টাকা ৬৪ পয়সা এবং বিরতিকালের জন্য ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হয় প্রতি মিনিট এক টাকা ৪০ পয়সা। এ ছাড়া দৈনিক জমার হার নির্ধারণ করা হয় ৬০০ টাকা।
সরকারের নির্ধারিত এ ভাড়া অনুযায়ী উল্লিখিত যাত্রী আবদুল মালেক খন্দকারের পল্লবী থেকে শাহবাগ পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পথের ভাড়া আসে ১০০ টাকা। মিটারেও ভাড়া দেখায় ১০০ টাকা। কিন্তু তাঁকে পরিশোধ করতে হয় ১৭০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে প্রতি কিলোমিটারে তাঁকে ছয় টাকা ৮৬ পয়সা করে বেশি ভাড়া পরিশোধ করতে হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন যাত্রীরা প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে অটোরিকশায় যাতায়াত করছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে বর্তমানে নিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যা আট হাজার ২৯১ টি। কিন্তু ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় চলছে ১৩ হাজার অটোরিকশা। এ সংস্থাটির তথ্যমতে, প্রতিটি অটোরিকশা দৈনিক কমপক্ষে ১৬০ কিলোমিটার চলে। প্রতি কিলোমিটারে ছয় টাকা ৮৬ পয়সা বেশি ধরে যাত্রীরা দৈনিক এক কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার ৮০০ টাকা বেশি ভাড়া দিচ্ছে। মাসে যে টাকার অঙ্কটি গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৪২ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার টাকায়।
মিটারে না গিয়ে দর-কষাকষি করে বেশি ভাড়ায় কেন যাচ্ছেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল মালেক খন্দকার বলেন, ‘কী করব বলেন? কোনো উপায় নাই। আমরা তো তাঁদের কাছে জিম্মি। মিটারে কেউ যেতে রাজি না। হয় বেশি ভাড়া দিয়ে যাবেন। নয় তো গরমের মধ্যে ঝুলে ঝুলে লোকাল বাসে যাবেন।’
কয়েকজন অটোরিকশা চালকের ভাষ্য, বর্তমানে নির্দিষ্ট কোনো নির্ধারিত দৈনিক ভাড়া নেই। অনেকটা নিলামের মতো করে দৈনিক জমার হার নির্ধারিত হচ্ছে। অটোরিকশার তুলনায় চালকের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় অটোরিকশা পেতে চালকেরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি টাকা মালিকদের দিতে প্রস্তুত। মালিকেরাও যার কাছ থেকে বেশি টাকা পান, তাঁকেই ভাড়া দেন তাঁর অটোরিকশাটি।
চালকদের অভিযোগ, সরকার এক দিনের জন্য ৬০০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও মালিকেরা আধা বেলাতেই ৬০০ টাকা নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকে। চালকেরা এই টাকাটি তুলে নিচ্ছেন যাত্রীদের কাছ থেকেই।
এই অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মো. বরকত উল্লাহ বলেন, ‘মালিক নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়ার জন্য তো চালকেরাই দায়ী। তারাই মালিকদের অভ্যাস খারাপ করেছে। সিএনজি অটোরিকশা আছে ১৩ হাজার, আর চালক আছে ৩৭ হাজারের মতো। যে যেভাবে পারে, মালিককে টাকা দিচ্ছে আর সিএনজি নিয়ে যাচ্ছে।’
মো. বরকত উল্লাহর ভাষ্য, সরকার ভাড়া নির্ধারণ করেছিল পাঁচ বছর আগে। এর মধ্যে তেল, গ্যাস ও যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে। ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একটি অটোরিকশার পেছনে দৈনিক খরচ হয় ৭৪৪ টাকা। সেখানে ৬০০ টাকা নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সরকার যদি নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করে, তবে প্রতিটি অটোরিকশা মিটারে চলবে—এটা নিশ্চিত করা যাবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দৈনিক জমাসহ অটোরিকশার ভাড়া নতুন করে নির্ধারণ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু মালিক সমিতির কর্তারা মন্ত্রীকে অঙ্গীকার করেছিলেন, নতুন ভাড়া নির্ধারণ করার সময়টাতে অটোরিকশা মিটারে চলবে। এরপরও তারা মিটারে না যাওয়াটা অন্যায়।’
ওপরের ঘটনা নতুন কিছু নয়। রাজধানী ঢাকায় সিএনজি অটোরিকশায় যাওয়া নিয়ে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা কমবেশি সবারই আছে। বিশেষ করে যাঁরা এই তিন চাকার যানে নিয়মিত যাতায়াত করেন। বর্তমানে মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে এসব অটোরিকশা পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। প্রায় সব যাত্রীকে পড়তে হয় এ ধরনের দুরবস্থায়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অটোরিকশা সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭ অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত সড়কপথে যেকোনো দূরত্বে এ পরিবহনের চালক যেতে বাধ্য। কিন্তু রাস্তায় নামলে দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। যাত্রীর নয়, বরং চালকের মর্জি ছাড়া কোথাও যান না অটোরিকশা চালকেরা। আর যাঁরা যান, তাঁরাও মিটারে নন, বরং দর-কষাকষি করে ভাড়া নির্ধারণ করে তারপর যান।
সরকার ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিএনজি/পেট্রল চালিত ৪-স্ট্রোক তিন চাকার ভাড়া নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সে অনুযায়ী প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা, পরবর্তী প্রতি কিমি সাত টাকা ৬৪ পয়সা এবং বিরতিকালের জন্য ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হয় প্রতি মিনিট এক টাকা ৪০ পয়সা। এ ছাড়া দৈনিক জমার হার নির্ধারণ করা হয় ৬০০ টাকা।
সরকারের নির্ধারিত এ ভাড়া অনুযায়ী উল্লিখিত যাত্রী আবদুল মালেক খন্দকারের পল্লবী থেকে শাহবাগ পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পথের ভাড়া আসে ১০০ টাকা। মিটারেও ভাড়া দেখায় ১০০ টাকা। কিন্তু তাঁকে পরিশোধ করতে হয় ১৭০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে প্রতি কিলোমিটারে তাঁকে ছয় টাকা ৮৬ পয়সা করে বেশি ভাড়া পরিশোধ করতে হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন যাত্রীরা প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে অটোরিকশায় যাতায়াত করছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে বর্তমানে নিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যা আট হাজার ২৯১ টি। কিন্তু ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় চলছে ১৩ হাজার অটোরিকশা। এ সংস্থাটির তথ্যমতে, প্রতিটি অটোরিকশা দৈনিক কমপক্ষে ১৬০ কিলোমিটার চলে। প্রতি কিলোমিটারে ছয় টাকা ৮৬ পয়সা বেশি ধরে যাত্রীরা দৈনিক এক কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার ৮০০ টাকা বেশি ভাড়া দিচ্ছে। মাসে যে টাকার অঙ্কটি গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৪২ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার টাকায়।
মিটারে না গিয়ে দর-কষাকষি করে বেশি ভাড়ায় কেন যাচ্ছেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল মালেক খন্দকার বলেন, ‘কী করব বলেন? কোনো উপায় নাই। আমরা তো তাঁদের কাছে জিম্মি। মিটারে কেউ যেতে রাজি না। হয় বেশি ভাড়া দিয়ে যাবেন। নয় তো গরমের মধ্যে ঝুলে ঝুলে লোকাল বাসে যাবেন।’
কয়েকজন অটোরিকশা চালকের ভাষ্য, বর্তমানে নির্দিষ্ট কোনো নির্ধারিত দৈনিক ভাড়া নেই। অনেকটা নিলামের মতো করে দৈনিক জমার হার নির্ধারিত হচ্ছে। অটোরিকশার তুলনায় চালকের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় অটোরিকশা পেতে চালকেরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি টাকা মালিকদের দিতে প্রস্তুত। মালিকেরাও যার কাছ থেকে বেশি টাকা পান, তাঁকেই ভাড়া দেন তাঁর অটোরিকশাটি।
চালকদের অভিযোগ, সরকার এক দিনের জন্য ৬০০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও মালিকেরা আধা বেলাতেই ৬০০ টাকা নিচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকে। চালকেরা এই টাকাটি তুলে নিচ্ছেন যাত্রীদের কাছ থেকেই।
এই অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মো. বরকত উল্লাহ বলেন, ‘মালিক নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়ার জন্য তো চালকেরাই দায়ী। তারাই মালিকদের অভ্যাস খারাপ করেছে। সিএনজি অটোরিকশা আছে ১৩ হাজার, আর চালক আছে ৩৭ হাজারের মতো। যে যেভাবে পারে, মালিককে টাকা দিচ্ছে আর সিএনজি নিয়ে যাচ্ছে।’
মো. বরকত উল্লাহর ভাষ্য, সরকার ভাড়া নির্ধারণ করেছিল পাঁচ বছর আগে। এর মধ্যে তেল, গ্যাস ও যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে। ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একটি অটোরিকশার পেছনে দৈনিক খরচ হয় ৭৪৪ টাকা। সেখানে ৬০০ টাকা নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সরকার যদি নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করে, তবে প্রতিটি অটোরিকশা মিটারে চলবে—এটা নিশ্চিত করা যাবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দৈনিক জমাসহ অটোরিকশার ভাড়া নতুন করে নির্ধারণ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু মালিক সমিতির কর্তারা মন্ত্রীকে অঙ্গীকার করেছিলেন, নতুন ভাড়া নির্ধারণ করার সময়টাতে অটোরিকশা মিটারে চলবে। এরপরও তারা মিটারে না যাওয়াটা অন্যায়।’
No comments