এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ by ইফতেখার আহমেদ টিপু
ইফতেখার আহমেদ টিপু
|
বিশ্ব
অর্থনীতিতে দ্রুত এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। মাত্র দুই বছর আগে জিডিপির নিরিখে
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের স্থান ছিল ৫৮তম। দুই বছরের ব্যবধানে এ স্থান
এখন ৪৪তম। ১৪ এপ্রিল বিশ্বব্যাংক এবং একই মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের
(আইএমএফ) প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। গত দুই বছরে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে
বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬ থেকে ৩৩তম স্থানে এগিয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে
জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে স্থিরমূল্যে ৮ লাখ ২৪ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। এ
পরিমাণ জিডিপি নিয়ে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে ৪৪তম স্থানে রয়েছে। এর আগের বছর
স্থিরমূল্যে জিডিপির আকার ছিল ৭ লাখ ৭৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। তখন বিশ্ব
অর্থনীতিতে জিডিপির দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৫৮তম। কয়েক বছর ধরে
ধারাবাহিকভাবে ছয় শতাংশের ওপরে জিডিপি অর্জন করেছে সারা বিশ্বে এমন মাত্র
চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির
আভাস দিয়েছে সংবাদ সংস্থা সিএনএন। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল
নাগাদ জিডিপি অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বে নিজের অবস্থান আরো সুসংহত করবে।
আইএমএফ এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সিএনএন
বলেছে, প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে
বিশ্বে দ্বিতীয়। ওই সময় প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ। একই সময়ে ৯ দশমিক ২ শতাংশ
প্রবৃদ্ধি নিয়ে ইরাক থাকবে শীর্ষে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দ্রুত
এগিয়ে চলছে দেশ। গার্মেন্টস শিল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর
ক্ষমতায়ন করেছে। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাও বেড়েছে। বিদেশের শ্রম বাজারেও
রয়েছে বাংলাদেশের অসংখ্য শ্রমশক্তি এবং তাদের প্রেরিত রেমিট্যান্স জাতীয়
অর্থনীতির চাকা রাখছে গতিশীল। ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের উত্তরোত্তর বিকাশ
ঘটছে। চায়নার মতো বাংলাদেশের ধোলাইখাল-জিনজিরার পণ্য উৎপাদন অর্থনীতিতে
রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কৃষিভিত্তিক শিল্পও দ্রুত গতিতে বিকশিত হচ্ছে।
এছাড়া শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে প্লাস্টিক, লেদার, টেক্সটাইল, পাট, বস্ত্র,
ওষুধ, ইঞ্জিনিয়ারিং, লবণ, রিয়েল এস্টেট, মোটরসাইকেল, জাহাজনির্মাণ,
পর্যটনসহ বিভিন্ন শিল্প এই দেশে গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প দেশের সামগ্রিক
অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যথেষ্ট
উপাদান ও উপকরণ বাংলাদেশের রয়েছে। সঠিক ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে পারলে
আমাদের অগ্রগতি কেউ ঠেকাতে পারবে না। রাজনৈতিকসহ নানা রকম প্রতিকূলতা
সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির এই অগ্রগতি বজায়
থাকায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। অর্থনীতির নানা সূচকে
বাংলাদেশ ক্রমাগত এগিয়ে চলছে। তবে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা
প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ব্যাংক কেলেঙ্কারি
অন্যতম। এতকিছুর পরও আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে অবস্থান
করছে। মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে, যা বর্তমানে সিঙ্গেল ডিজিটে অবস্থান করছে। এর
সবই বর্তমান সরকারের সফলতা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী ও পুরুষের মধ্যে
সমতা ফিরে আসছে। নারী উন্নয়নে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর লিঙ্গ বৈষম্যে অনেকটাই সমতা এসেছে। রাজনৈতিক
অঙ্গনে জেন্ডার সমতা এমনভাবে বাংলাদেশে আর দেখা যায়নি। সরকারের
গুরুত্বপূর্ণ পদসহ কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখন সমান গুরুত্বপূর্ণ। ’৯৬-এর পর
কৃষিক্ষেত্রে নারীর অবদানের প্রতিফলন সমাজে পড়তে শুরু করে। ২০০৫-০৬ শ্রম
জরিপ অনুসারে মোট শ্রমশক্তির ৪১.৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৮.১ শতাংশ নারী সরাসরি
কৃষির সঙ্গে যুক্ত। গত এক দশকে কৃষি খাতে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস
পেয়েছে ১০.৪ শতাংশ, যা নারীদের দ্বারা বর্তমানে সম্পাদিত হচ্ছে। এক
সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্রচাষি পরিবারের নারীরা নিজ উদ্যোগে
বসতবাড়ির আঙিনায় বাগানে ফলানো সবজি চাহিদার ৯০-১০০ ভাগ মোটানোর পাশাপাশি
অতিরিক্ত আয়ে অবদান রাখছে ১৫ থেকে ৩০ ভাগ। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে এই
মুহূর্তে আমাদের করণীয় হচ্ছে: উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
ব্যক্তি, দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য সবাইকে আত্মনিয়োগ করা। সৎ ও
নিষ্ঠাবান হওয়া। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করা। উন্নয়ন নীতি-কৌশল
হিংসা-বিদ্বেষের ঊর্ধ্বে থেকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সম্ভাবনাময়
শিল্প খাত উন্নয়নে সঠিক নীতি-কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। জাতীয় উন্নয়নমূলক
কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল্যায়ন
করা। সম্পদের সুষম বণ্টন করা। বিদেশিরা যাতে আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে সে
জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা। বিশ্ব দরবারে দেশকে সুন্দরভাবে
উপস্থাপন করা। পুঁজিবাজারের সমস্যা দূর করে পুঁজিবাজার সম্পর্কে মানুষের
আস্থা তৈরি করা। কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে অধিক চাঙ্গা রাখা।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী জাতি গঠন। স্বাধীনতার ৪৪
বছরে নানা বাধা ও ষড়যন্ত্র ঠেলে ফেলে বাংলাদেশ এখন সুখী সমৃদ্ধিশালী জাতি
গঠন করতে সক্ষম। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ২৭ বিলিয়ন ডলার
ছাড়িয়ে গেছে। দেশের প্রায় ১ কোটি শ্রমজীবী মানুষ বিদেশে কাজ করে
রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। পোশাকশিল্পের ৪০ লাখেরও
বেশি নারী শ্রমিকের অক্লান্ত ভূমিকা বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পোশাক তৈরির দেশ
হিসেবেই শুধু প্রতিষ্ঠিত করেনি দেশের অর্থনীতিকে স্ফীত করছে। হরতাল-অবরোধ,
জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো নেতিবাচক রাজনীতি দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত
করলেও বাংলাদেশের সাফল্য দুনিয়ার সব দেশের জন্যই ঈর্ষণীয়। সাফল্যের এ ধারা
যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে। আর এজন্য দরকার রাজনৈতিক ও সামাজিক
স্থিতিশীলতা।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ এবং চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ এবং চেয়ারম্যান, ইফাদ গ্রুপ
No comments