বুড়িগঙ্গার তীর ভরাট করে রিকশা গ্যারেজ by অরূপ দত্ত
বুড়িগঙ্গার পাড় দখলের পর এর মালিকানা দাবি করে তোলা হয়েছে সাইনবোর্ড l প্রথম আলো |
হাইকোর্টের
নির্দেশ অমান্য করে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পাঁচ বিঘা জায়গা ভরাট করে গড়ে
উঠেছে রিকশার বিশাল গ্যারেজ। লালবাগের ইসলামপুর এলাকায় নদীর এই জায়গার
মালিক দাবিদার ব্যক্তি রীতিমতো সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সেখানে মালিকানা চিহ্নিত
করেছেন। নদীর তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ
(বিআইডব্লিউটিএ) এ বিষয়ে বর্তমানে চুপচাপ রয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল
সাড়ে নয়টায় সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে অন্তত পাঁচ শ
রিকশা ও ভ্যান রয়েছে। গাবতলী থেকে মিটফোর্ড হয়ে পোস্তাগোলা পর্যন্ত ৩২
কিলোমিটার রাস্তার পাশে অনেক স্থানেই নদীর পাড়ে বন্যা প্রতিরোধ দেয়াল
(ফ্লাড ওয়াল) দেওয়া আছে। মদিনা পেট্রলপাম্পের অদূরে ইসলামপুরে এই
দেয়ালের ভেতরের জায়গা পুরোটাই পাকা করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে পানি
উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সেখানে সারি দিয়ে রাখা হয়েছে
রিকশা ও ভ্যান। রিকশা নিতে আসা পাঁচজন চালকের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা
প্রথমে কথা বলতে আপত্তি জানান। পরে তাঁরা বলেন, জায়গাটি সরকারি বলেই তাঁরা
জানতেন। পরে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে রিকশা ও ভ্যান রাখার জন্য মাসে কমপক্ষে পাঁচ শ করে টাকা নেওয়া। আর ব্যাটারিচালিত রিকশা রাখতে দিতে হয় দুই হাজার টাকা করে। বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ নিয়ে ব্যাটারি চার্জের মাধ্যমেও প্রতিদিন অনেক টাকা উপার্জন হয়। গ্যারেজের সামনে বিশালাকৃতির বৈদ্যুতিক টাওয়ার। টাওয়ারের সামনেই নদীর তীরে খুঁটিতে কালো রঙের সাইনবোর্ডে সাদা অক্ষরে বড় করে লেখা—‘এই জমির মালিক মো. জুলহাস মোল্লা’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলহাস মোল্লা স্থানীয় শ্রমিক লীগের স্থানীয় নেতা। ঘটনাস্থলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। গ্যারেজ থেকে তাঁর একটি মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নম্বরটি বন্ধ ছিল। লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জুলহাস মোল্লা প্রথমে এখানে স্বল্প পরিসরে রিকশা গ্যারেজ করেন। পরে নদীর তীরে মাটি ফেলে ফেলে নদী ভরাট করে গ্যারেজের আয়তন বাড়িয়েছেন। এখন তিনি দাবি করেন, এই জায়গার মালিক তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে রিকশা ও ভ্যান রাখার জন্য মাসে কমপক্ষে পাঁচ শ করে টাকা নেওয়া। আর ব্যাটারিচালিত রিকশা রাখতে দিতে হয় দুই হাজার টাকা করে। বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ নিয়ে ব্যাটারি চার্জের মাধ্যমেও প্রতিদিন অনেক টাকা উপার্জন হয়। গ্যারেজের সামনে বিশালাকৃতির বৈদ্যুতিক টাওয়ার। টাওয়ারের সামনেই নদীর তীরে খুঁটিতে কালো রঙের সাইনবোর্ডে সাদা অক্ষরে বড় করে লেখা—‘এই জমির মালিক মো. জুলহাস মোল্লা’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জুলহাস মোল্লা স্থানীয় শ্রমিক লীগের স্থানীয় নেতা। ঘটনাস্থলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। গ্যারেজ থেকে তাঁর একটি মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নম্বরটি বন্ধ ছিল। লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জুলহাস মোল্লা প্রথমে এখানে স্বল্প পরিসরে রিকশা গ্যারেজ করেন। পরে নদীর তীরে মাটি ফেলে ফেলে নদী ভরাট করে গ্যারেজের আয়তন বাড়িয়েছেন। এখন তিনি দাবি করেন, এই জায়গার মালিক তিনি।
লালবাগের ইসলামবাগ এলাকায় বুড়িগঙ্গার পাড় ভরাট করে এভাবেই রিকশা-ভ্যানের অবৈধ গ্যােরজ তৈরি করা হয়েছে। ছবিটি গতকাল তোলা l সাইফুল ইসলাম |
ওই
তিন নেতা ছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা
যায়, জুলহাস মোল্লা স্থানীয় সাংসদ হাজি মো. সেলিমের ছত্রচ্ছায়ায় নদীর
জায়গার মালিকানা দাবি করছেন এবং ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
সন্ধ্যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজি মো. সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, জুলহাস মোল্লা ঘাটশ্রমিক লীগের নেতা বলে তিনি জানেন। কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় জুলহাস মোল্লা রিকশা গ্যারেজ পরিচালনা করছে—এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। নিজ সংসদীয় এলাকায় এ ধরনের গ্যারেজ পরিচালনার বিরুদ্ধে তিনি কিছু করছেন না কেন, এমন প্রশ্নে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) গুলজার আলী প্রথম আলোকে বলেন, অতীতের স্বল্প পরিসরে নদীর জায়গায় রিকশা গ্যারেজ করা হয়েছিল। উচ্ছেদও করা হয়েছিল। আবার বিশাল জায়গা ভরাট করে গ্যারেজ করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে এলাকা পরিদর্শন করে আবারও উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।
বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশে শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদের অংশে ও তীরে কোনো ধরনের স্থাপনা বা ব্যবসাকেন্দ্র নির্মাণ করা যাবে না—হাইকোর্টের এমন একটি নির্দেশনা রয়েছে। এসব নদীর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করার বিষয়ে হাইকোর্টের প্রথম নির্দেশ আসে ২০০৯ সালের মে মাসে। ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল নিশি জারি করেন। মামলাটির আদেশের মূল কথা ছিল ব্রিটিশ আমলের ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে (সিএস) অনুসারে আইনানুগ বন্দোবস্ত ছাড়া কোনো দখলদার থাকলে তাকে অবিলম্বে উচ্ছেদ করতে হবে। এর মাধ্যমে আদালত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদেরও নির্দেশ দেন। প্রথম দফায় ২০১০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে আরও পাঁচ দফায় নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নেতা সংশ্লিষ্ট ‘রিভারকিপার’ শরীফ জামিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদীর এলাকা ঘুরলে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দখল আর দূষণের চিত্র দেখা যাবে। হাইকোর্টের নির্দেশ কীভাবে অমান্য হচ্ছে, তা-ও এসব স্থান ঘুরলেই বোঝা যায়। এ বিষয়ে নিয়মিত প্রতিবাদ জানালেও নদী রক্ষার দায়িত্বে থাকা সব কর্তৃপক্ষই নীরব।’
সন্ধ্যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজি মো. সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, জুলহাস মোল্লা ঘাটশ্রমিক লীগের নেতা বলে তিনি জানেন। কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় জুলহাস মোল্লা রিকশা গ্যারেজ পরিচালনা করছে—এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। নিজ সংসদীয় এলাকায় এ ধরনের গ্যারেজ পরিচালনার বিরুদ্ধে তিনি কিছু করছেন না কেন, এমন প্রশ্নে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) গুলজার আলী প্রথম আলোকে বলেন, অতীতের স্বল্প পরিসরে নদীর জায়গায় রিকশা গ্যারেজ করা হয়েছিল। উচ্ছেদও করা হয়েছিল। আবার বিশাল জায়গা ভরাট করে গ্যারেজ করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে এলাকা পরিদর্শন করে আবারও উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।
বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশে শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদের অংশে ও তীরে কোনো ধরনের স্থাপনা বা ব্যবসাকেন্দ্র নির্মাণ করা যাবে না—হাইকোর্টের এমন একটি নির্দেশনা রয়েছে। এসব নদীর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করার বিষয়ে হাইকোর্টের প্রথম নির্দেশ আসে ২০০৯ সালের মে মাসে। ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল নিশি জারি করেন। মামলাটির আদেশের মূল কথা ছিল ব্রিটিশ আমলের ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে (সিএস) অনুসারে আইনানুগ বন্দোবস্ত ছাড়া কোনো দখলদার থাকলে তাকে অবিলম্বে উচ্ছেদ করতে হবে। এর মাধ্যমে আদালত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদেরও নির্দেশ দেন। প্রথম দফায় ২০১০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে আরও পাঁচ দফায় নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নেতা সংশ্লিষ্ট ‘রিভারকিপার’ শরীফ জামিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদীর এলাকা ঘুরলে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দখল আর দূষণের চিত্র দেখা যাবে। হাইকোর্টের নির্দেশ কীভাবে অমান্য হচ্ছে, তা-ও এসব স্থান ঘুরলেই বোঝা যায়। এ বিষয়ে নিয়মিত প্রতিবাদ জানালেও নদী রক্ষার দায়িত্বে থাকা সব কর্তৃপক্ষই নীরব।’
No comments