বিভক্তির কবলে বিশ্বাস ৮: ‘কোথায় যেন একটা চাওয়া-পাওয়ার হিসাব’ by উৎপল রায়
বিভক্তির
রেখাটি এখন একেবারেই স্পষ্ট। ভেতর থেকেই যেন ভাগ হয়ে গেছে বাংলাদেশের
সমাজ। সিভিল সোসাইটির বিভক্তিকে সবচেয়ে বড় ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন
অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের মতে, সিভিল
সোসাইটি বা সুশীল সমাজের চরিত্রটাই নষ্ট হয়ে গেছে। একে এখন আর সুশীলসমাজ
বলতে নারাজ তিনি। তিনি বলেন, যারা আদর্শিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে কাজ করে
তারাই মূলত সুশীলসমাজ। কিন্তু সুশীলসমাজ এখন চরম বিতর্কিত হয়ে গেছে। এর
আদর্শও নষ্ট হয়ে গেছে। তাই একে সুশীলসমাজ বলতে আমার ঘোর আপত্তি রয়েছে। আর
যদিওবা বলি তাতে কয়েকটা শর্ত দিয়ে তবেই একে সুশীলসমাজ বলতে চাই আমি। তিনি
বলেন, একটা প্রবাহের শেষ মাথায় চলে এসেছি আমরা। বর্তমান সুশীলসমাজ আদর্শের
জন্য কাজ করছে না। করছে নিজের সুবিধার জন্য। এই সমাজের আদর্শ চলে গেছে। এর
আদর্শগত বিষয় নিয়েও ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। কোথায় যেন একটা চাওয়া-পাওয়ার
হিসাব। গাড়ি-বাড়ির হিসাব। সুশীলসমাজ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে- এটাই কথা
ছিল। কিন্তু তারা তা করছে না। তারা এখন রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করছে। ড.
সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে সুশীলসমাজের বিভাজনটা শুরু হয় মূলত
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে। এটারও একটা রাজনৈতিক কারণ ছিল। তখন একদল
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। আরেক দল বিপক্ষে। এরপর সত্তর দশকে জিয়াউর রহমানের
আমলে এদের অনেককেই টাকা দিয়ে কেনা হয়। তেমনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও
বিপক্ষের দলও তখন তৈরি হয়। বিভাজনও এভাবেই শুরু হয়। আশির দশকে এরশাদের
আমলেও সুশীলসমাজের একাংশকে কিনে নেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ ভাগ
করা হয়। তখনই শুরু হয় সুবিধাবাদিতার রাজনীতি। শাসকদের রাজনৈতিক কৌশলের
ফাঁদে তখন অনেকেই পা দেন। এভাবে সুশীলসমাজের অনেকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার
শুরু হয়। আর বিভাজন ও বিভক্তির শুরুও এভাবেই। এর ধারাবাহিকতা চলছে এখনও।
যদিও বাম রাজনীতির অনেকেই ছিলেন, এখনও আছেন যাদের আদর্শকে কখনও কেনা যায়নি।
ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। কিন্তু এ সংখ্যা খুবই নগন্য।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আতাউর রহমান মনে করেন, অনেক কারণেই বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি বা সুশীলসমাজে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে জাতীয় ঐক্যই গঠন না হওয়াই প্রধান কারণ। তিনি বলেন, যে কোন দেশের বিভাজন, বিভক্তি দূর করতে পারে জাতীয় ঐক্য। কিন্তু দুখঃজনক হলেও সত্য আমাদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের অভাব রয়েছে। স্বাধীনতার চার দশক পরেও এখন পর্যন্ত আমাদের মধ্যে এ বিষয়টি সঠিকভাবে গড়ে উঠেনি। যার প্রভাব পড়ছে সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজের মধ্যেও। আর আমাদের মূল সমস্যা এখানেই। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোই প্রধানত দায়ী। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে সিভিল সোসাইটির ভূমিকা অত্যন্ত দুর্বল। তার কারণ বাংলাদেশে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে তারা নিজেদের প্রয়োজনে সুশীলসমাজকে ব্যবহার করার জন্য তাদের বিভক্ত করে ফেলে। নিজেদের স্বার্থের কারণে রাষ্ট্র পেশাদার গ্রুপকে প্রভাবিত করে। আর রাষ্ট্র যদি সামাজিক শক্তিগুলোকে মতামত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে সিভিল সোসাইটি কোন ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখতে পারে না। আর যেখানে সামাজিক শক্তি এবং পেশাদার গ্রুপের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয় সেখানে সিভিল সোসাইটি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় অনুগ্রহ পাওয়ার জন্যও সিভিল সোসাইটির অনেকেই অপেক্ষায় থাকেন। ফলে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের অনুরক্ততা বাড়ে। স্বভাবতই এভাবেও বিভাজন ও বিভক্তি তৈরি হয়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. আতাউর রহমান মনে করেন, অনেক কারণেই বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি বা সুশীলসমাজে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে জাতীয় ঐক্যই গঠন না হওয়াই প্রধান কারণ। তিনি বলেন, যে কোন দেশের বিভাজন, বিভক্তি দূর করতে পারে জাতীয় ঐক্য। কিন্তু দুখঃজনক হলেও সত্য আমাদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের অভাব রয়েছে। স্বাধীনতার চার দশক পরেও এখন পর্যন্ত আমাদের মধ্যে এ বিষয়টি সঠিকভাবে গড়ে উঠেনি। যার প্রভাব পড়ছে সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজের মধ্যেও। আর আমাদের মূল সমস্যা এখানেই। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোই প্রধানত দায়ী। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে সিভিল সোসাইটির ভূমিকা অত্যন্ত দুর্বল। তার কারণ বাংলাদেশে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে তারা নিজেদের প্রয়োজনে সুশীলসমাজকে ব্যবহার করার জন্য তাদের বিভক্ত করে ফেলে। নিজেদের স্বার্থের কারণে রাষ্ট্র পেশাদার গ্রুপকে প্রভাবিত করে। আর রাষ্ট্র যদি সামাজিক শক্তিগুলোকে মতামত প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে সিভিল সোসাইটি কোন ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখতে পারে না। আর যেখানে সামাজিক শক্তি এবং পেশাদার গ্রুপের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয় সেখানে সিভিল সোসাইটি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় অনুগ্রহ পাওয়ার জন্যও সিভিল সোসাইটির অনেকেই অপেক্ষায় থাকেন। ফলে রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের অনুরক্ততা বাড়ে। স্বভাবতই এভাবেও বিভাজন ও বিভক্তি তৈরি হয়।
No comments