অপব্যবহারের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের by দীন ইসলাম
মোবাইল কোর্ট আইন সংশোধনের মাধ্যমে এটি অপব্যবহারের মাত্রা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মোবাইল কোর্টকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। এটা হলে সাধারণ মানুষও এর ভুক্তভোগী হবেন। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে সংশোধিত মোবাইল কোর্ট আইন অনুমোদন দেয়া হয়। আইনে বলা হয়েছে, দোষ স্বীকার না করলেও সাক্ষী ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে শাস্তি দেয়া যাবে। এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে মোবাইল কোর্টের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইল কোর্টকে এমন ক্ষমতা দেয়া হলে এর অপপ্রয়োগ বাড়ার আশঙ্কা থাকে। বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী সংশোধিত আইনটি সম্পর্কে বলেন, এ আইনটি আরও গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাস্তবায়ন করা উচিত। এজন্য বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আইনটি সংশোধন করা উচিত। এ রকম একটি সময়ে আইনের সংশোধন নিয়ে নানা কথা উঠবে। মোবাইল কোর্ট আইনের সংশোধনী সম্পর্কে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, মোবাইল কোর্ট আইনের সংশোধনের মাধ্যমে ওই অর্থে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা বাড়ছে না। এটাকে আমরা বলতে পারি লিমিটেড ক্ষমতা। আমি মনে করি ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সংশোধিত মোবাইল কোর্ট আইন বেশ কাজ দেবে। বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক মোবাইল কোর্ট আইনের সংশোধনীর বিষয়ে বলেন, মোবাইল কোর্ট আইনের কারণে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাক্ষ্যের সত্যতা যাচাই করা বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু তাৎক্ষণিক বিচারে তা সম্ভব না। এ কারণে মোবাইল কোর্ট আইন অপব্যবহার হতে বাধ্য। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি সংশোধনের পেছনে হয়তো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে। আমি মনে করি এর মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের বাইরে একপাক্ষিকভাবে বিচার করা হতে পারে। এ কারণে সংশোধিত আইনটি নিয়ে ঝুঁকি থাকতে পারে। আমরা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ এজন্য যে, সাংবিধানিকভাবে মানুষের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া উচিত। আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে মানুষের ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েই যায়। আমার উদ্বেগের কারণটা হলো, যাদেরকে আইনটি প্রয়োগ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষতা সব সময় বিতর্কিত। এ কারণে এর প্রয়োগ ঠিকভাবে হবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, এ আইনে পর্যাপ্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না থাকায় মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহৃত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। আমরা মনে করি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আইনটি সংশোধন করা যেতে পারে।
No comments