বৃক্ষ কেন আমাদের পরম বন্ধু by আফতাব চৌধুরী
বৃক্ষনিধন
ও বনাঞ্চল উজাড়ের খবর প্রায়শই পত্র-পত্রিকায় চোখে পড়ে। ক’দিন আগে এমন খবর
প্রকাশিত হয়েছিল একটি জাতীয় দৈনিকে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে যে,
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সিলেট বন বিভাগের অধীনে বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল
থেকে সমানে গাছ কাটা চলছে। একশ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে বন
থেকে কোটি কোটি টাকার কাঠ ও বাঁশ অবৈধভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সরকার
ইতোপূর্বে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও বনজ সম্পদ রক্ষার্থে গাছ কাটা
নিষিদ্ধ করেছে। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল।
সরকারের এ শিথিলতার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট
বিভাগের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশের বনজ সম্পদ উজাড় করে
চলেছে এবং সারাদেশের বনাঞ্চলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরিবেশের
ভারসাম্য রক্ষার্থে যে মুহূর্তে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব সোচ্চার সেই
মুহূর্তে এমন খবর আমাদের জন্য ভীষণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের
প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনজ সম্পদের গুরুত্ব
অপরিসীম এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের প্রায় ৫ হাজার বর্গমাইল
এলাকাজুড়ে বনাঞ্চল রয়েছে। এ বনাঞ্চল দেশের মোট জমির ৭ ভাগ মাত্র। দেশে
বনাঞ্চলের পরিমাণ থাকার কথা ৩০ ভাগ কিন্তু আমাদের তা নেই। উপরন্তু এ ৭ ভাগ
বনাঞ্চল থেকে বৃক্ষনিধন করা হচ্ছে। যেভাবে বৃক্ষনিধন ও বনাঞ্চল উজাড়ের খবর
পাওয়া যাচ্ছে তাতে বনাঞ্চলের পরিমাণ বর্তমানে ৭ ভাগ আছে কিনা, তাতে যথেষ্ট
সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো ছাড়াও বৃক্ষ এদেশের
প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক পরিবেশকে বহুলাংশে প্রভাবিত করে। বনভূমি বৃষ্টিপাতে
সাহায্য করে এবং বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি হতে প্রাণিকুলকে রক্ষা
করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃক্ষ ও বনাঞ্চলের অভাবে প্রায় প্রতি বছরই আমাদের
প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে পরিত্রাণ
পাওয়ার জন্য বনাঞ্চল সম্প্রসারণ করা ছাড়া কোনো গতি নেই। সিলেট বিভাগের
হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, সাতগাঁও, জুরী, সিলেটের টিলাগড়,
খাদিমনগর এলাকার বনাঞ্চল হতে বন বিভাগের কিছুসংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ
কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে চোরাকারবারীরা কাঠ কেটে অবাধে চোরাই পথে
বিক্রি করে চলেছে এই অভিযোগ পত্র-পত্রিকায় বারবার ওঠার পরও নেই কোনো
প্রতিকার! চোরাই কাঠের বেশিরভাগই অবৈধভাবে বসানো স’মিলগুলোতে জড়ো করে তা
করাতকলের মাধ্যমে সাইজ করে সড়ক ও নদীপথ দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি
করে। এতে সিলেট অঞ্চলের বনাঞ্চল সংকুচিত হয়ে আসছে এবং এভাবে চলতে থাকলে
সিলেট বিভাগের বনভূমির অস্তিত্ব ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন হবে অচিরেই।
ইতোমধ্যে সরকার বৃক্ষরোপণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নিকট অতীতে বৃক্ষমেলা উদ্বোধনকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতি নাগরিককে অন্তত ১টি ফলদ, ১টি বনজ ও ১টি ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের বনভূমির পরিমাণ ৭ থেকে বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশে উন্নীত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা তো বাস্তবায়ন হয়ইনি বরং দিনে দিনে বনভূমির পরিমাণ সংকুচিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এবং পরিবেশকে সুস্থ, সুন্দর, সবল ও প্রাণিকুলের বসবাস উপযোগী করার লক্ষ্যে জনগণকে সচেতন করে তোলার জন্য গণমাধ্যমগুলোও যথাসাধ্য প্রচারকার্য চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু লাভ খুব একটা হচ্ছে বলে মনে হয় না। বৃক্ষরোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বনভূমি সম্প্রসারণের ব্যাপারে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর হরহামেশা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার মূলোৎপাটন করে সব পর্যায়ের নাগরিককে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে না পারলে শুধু বিবৃতি বা বক্তৃতা দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বিভিন্ন পর্যায়ের দেশপ্রেমিক নাগরিকের বক্তব্য থেকে জানা যায়, বন বিভাগের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বনভূমি উজাড় হচ্ছে। তাদের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় প্রশ্ন জাগে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নীরব বা উদাসীন কেন? অবস্থা যা-ই হোক এর কোনোটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাদের দুর্নীতির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষ। জানা যায়, বন বিভাগ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বনাঞ্চল সৃষ্টির জন্য প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে থাকেন। বিভিন্ন স্থানে মৌসুমের শেষ পর্যায়ে গাছের চারা রোপণ করা হলেও এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এমনকি একটি গাছের চারা রোপণ করার পর একটি বছর অতিবাহিত হলেও এ গাছের চারাটির ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হয় না। এর ফলে বনাঞ্চল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যয় করা টাকার ১০ ভাগও যথাযথভাবে কাজে আসছে না।
বিভিন্ন সূত্র ও মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায়, মরুর দেশগুলোতেও আজ প্রচুর বৃক্ষচারা রোপণ করা হচ্ছে। বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রয়াস চলছে অব্যাহত গতিতে আর এর বিপরীতে অত্যধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত আমাদের দেশে বৃক্ষনিধন করে বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। মানুষের বসবাসের জন্য যেমন বাড়িঘরের প্রয়োজন পরবর্তী পর্যায়ে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যও বনভূমির প্রয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষের প্রয়োজনে বহু অরণ্য বৃক্ষহীন হয়ে পড়লেও তারা আজ বনাঞ্চল সম্প্র্রসারণ ও সংরক্ষণের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। আমরা জানি, গাছ কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এর বিনিময়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে প্রাণিকুলের বাঁচার পথ সুগম করে। আমাদের দেশে গাছপালার অভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরূপ ও বৈরী হয়ে উঠছে। এ অবস্থা মোকাবিলা করতে আমাদের অবশ্যই যেখানে সম্ভব গাছের চারা রোপণ করতে হবে। বৃক্ষই আমাদের পরম বন্ধু। আমাদের অফিস-আদালত, কল-কারখানা, রেল ও সড়কপথের উভয় পাশে, বেড়িবাঁধে, বসতবাড়ির আঙিনায়, সরকারি খাস জমিতে এবং চা-বাগানের অনাবাদী ভূমিতে বৃক্ষ রোপণ করে বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রয়াস চালাতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। বৃক্ষ রোপণে জাতীয় স্বর্ণপদক (প্রথম) প্রাপ্ত
ইতোমধ্যে সরকার বৃক্ষরোপণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। নিকট অতীতে বৃক্ষমেলা উদ্বোধনকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতি নাগরিককে অন্তত ১টি ফলদ, ১টি বনজ ও ১টি ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের বনভূমির পরিমাণ ৭ থেকে বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশে উন্নীত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা তো বাস্তবায়ন হয়ইনি বরং দিনে দিনে বনভূমির পরিমাণ সংকুচিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এবং পরিবেশকে সুস্থ, সুন্দর, সবল ও প্রাণিকুলের বসবাস উপযোগী করার লক্ষ্যে জনগণকে সচেতন করে তোলার জন্য গণমাধ্যমগুলোও যথাসাধ্য প্রচারকার্য চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু লাভ খুব একটা হচ্ছে বলে মনে হয় না। বৃক্ষরোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বনভূমি সম্প্রসারণের ব্যাপারে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর হরহামেশা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার মূলোৎপাটন করে সব পর্যায়ের নাগরিককে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে না পারলে শুধু বিবৃতি বা বক্তৃতা দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বিভিন্ন পর্যায়ের দেশপ্রেমিক নাগরিকের বক্তব্য থেকে জানা যায়, বন বিভাগের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় বনভূমি উজাড় হচ্ছে। তাদের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায় না। এমতাবস্থায় প্রশ্ন জাগে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নীরব বা উদাসীন কেন? অবস্থা যা-ই হোক এর কোনোটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাদের দুর্নীতির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও দেশের মানুষ। জানা যায়, বন বিভাগ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বনাঞ্চল সৃষ্টির জন্য প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে থাকেন। বিভিন্ন স্থানে মৌসুমের শেষ পর্যায়ে গাছের চারা রোপণ করা হলেও এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এমনকি একটি গাছের চারা রোপণ করার পর একটি বছর অতিবাহিত হলেও এ গাছের চারাটির ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হয় না। এর ফলে বনাঞ্চল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যয় করা টাকার ১০ ভাগও যথাযথভাবে কাজে আসছে না।
বিভিন্ন সূত্র ও মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায়, মরুর দেশগুলোতেও আজ প্রচুর বৃক্ষচারা রোপণ করা হচ্ছে। বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রয়াস চলছে অব্যাহত গতিতে আর এর বিপরীতে অত্যধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত আমাদের দেশে বৃক্ষনিধন করে বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। মানুষের বসবাসের জন্য যেমন বাড়িঘরের প্রয়োজন পরবর্তী পর্যায়ে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যও বনভূমির প্রয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষের প্রয়োজনে বহু অরণ্য বৃক্ষহীন হয়ে পড়লেও তারা আজ বনাঞ্চল সম্প্র্রসারণ ও সংরক্ষণের জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। আমরা জানি, গাছ কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এর বিনিময়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে প্রাণিকুলের বাঁচার পথ সুগম করে। আমাদের দেশে গাছপালার অভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরূপ ও বৈরী হয়ে উঠছে। এ অবস্থা মোকাবিলা করতে আমাদের অবশ্যই যেখানে সম্ভব গাছের চারা রোপণ করতে হবে। বৃক্ষই আমাদের পরম বন্ধু। আমাদের অফিস-আদালত, কল-কারখানা, রেল ও সড়কপথের উভয় পাশে, বেড়িবাঁধে, বসতবাড়ির আঙিনায়, সরকারি খাস জমিতে এবং চা-বাগানের অনাবাদী ভূমিতে বৃক্ষ রোপণ করে বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রয়াস চালাতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। বৃক্ষ রোপণে জাতীয় স্বর্ণপদক (প্রথম) প্রাপ্ত
No comments