দোষ স্বীকার না করলেও মোবাইল কোর্টে শাস্তি
দোষ
স্বীকার না করলেও সাক্ষী ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তকে
দণ্ড দিতে পারবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযুক্ত পালিয়ে গেলে তার
বিরুদ্ধে মামলা করার হুকুম দিতে পারবেন তিনি। মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে
আমলে নিতে পারবেন সংঘটিত অপরাধের ছবি, অডিও-ভিডিও ক্লিপ। মোবাইল কোর্টের
এসব ক্ষমতা বাড়িয়ে গতকাল মোবাইল কোর্ট (সংশোধন) আইন ২০১৫-এর খসড়া ভেটিং
সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এদিন সকালে জাতীয় সংসদে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পরে দুপুরে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সভার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা বলেন, মোবাইল কোর্ট আইন
২০০৯ সালে প্রণয়ন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ আইনের বিধান অনুযায়ী
বিচারযোগ্য ব্যক্তি দোষ স্বীকার করলেই কেবল মোবাইল কোর্টে শাস্তি দেয়া যায়।
অনেকেই দোষ করে তা স্বীকার করেন না; স্বীকার না করলে মোবাইল কোর্টের আওতায়
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি দিতে পারেন না। এখানে একটি সীমাবদ্ধতা
রয়েছে। সংশোধিত খসড়া আইনে বলা হয়েছে, দোষ স্বীকার করলে শাস্তি তো পাবেনই,
দোষ স্বীকার না করলে সাক্ষ্য নিয়ে এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে
ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি দিতে পারবেন। তিনি বলেন, সংশোধিত আইনে মোবাইল কোর্টের
মাধ্যমে বিচারের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি
যুক্ত করা হয়েছে। মানে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর ও বায়োমেট্রিক্স মোবাইল কোর্টের
কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনে তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভিত্তিতে নেই, তবে এটি একেবারে নতুন বিষয় নয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)
আইনে ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর ও বায়োমেট্রিক্স ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। মোবাইল
কোর্টে এটি যুক্ত করা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এছাড়া প্রস্তাবিত আইনে বলা
হয়েছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় বিশেষজ্ঞদের
মতামত নিতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন
ভূঁইঞা বলেন, ভেজালবিরোধী অভিযান, ইভটিজিং প্রতিরোধ, দুর্নীতিমুক্তভাবে
পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ, নির্বাচনকালীন সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা,
জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিতে মোবাইল কোর্ট আইন
প্রণয়ন করা হয়। আইনটি প্রয়োগ করতে গিয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা হয়।
আইনের সীমাবদ্ধতা দূর এবং আইনটি আরও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে সংশোধনী আনা
হয়েছে। মোবাইল কোর্ট সংশোধনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,
মোবাইল কোর্ট আরও কার্যকর করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন, মন্ত্রিসভা
বৈঠক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি ওয়ার্কশপ থেকে মোবাইল কোর্ট
আইন সংশোধনের সুপারিশ পাওয়া যায়। সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় সংশোধিত আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত
মোবাইল কোর্ট আইনের অধীনে সাড়ে পাঁচ লাখ কেস (মামলা) নিষ্পত্তি হয়েছে
জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মামলা নিষ্পত্তির হার খুব হাই (বেশি) ও
স্পিডি (গতিময়)। মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলে ৯৩টি আইন অন্তর্ভুক্ত করা
হয়েছে। সংশোধিত মোবাইল কোর্ট আইনটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে
ব্যবহারের সুযোগ বাড়াবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
‘এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের কোন আশঙ্কা নেই। আইনটির
সংশোধনী বিচারিক আদালতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে কিনা- এমন
প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোন কনফ্লিক্ট (দ্বন্দ্ব) হবে না।
মোবাইল কোর্ট আইন সংশোধনীতে যা থাকছে: বিদ্যমান মোবাইল কোর্ট আইনের ১২(১) ধারায় সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট- পুলিশ বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট সরকারি বা বেসরকারি কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা চাহিলে পুলিশ বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কাজে আবশ্যিকভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য নিয়োগ নিশ্চিত করিবে এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি বা বেসরকারি কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান অনুরূপ চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে’। আইনের ৬(১) সংশোধন করে বলা হয়- ‘ধারা ৫ এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ধারা ১১-এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা করিবার সময় তফসিলে বর্ণিত আইনের অধীন কোন অপরাধ, যাহা কেবল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য, তাহার সম্মুখে সংঘটিত বা উদ্ঘাটিত হইয়া থাকিলে তিনি উক্ত অপরাধ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলেই আমলে গ্রহণ করিয়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে, স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে, অথবা চাক্ষুস ঘটনা, উপস্থিত সাক্ষীদের বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিচারে, দোষী সাব্যস্ত করিয়া, এই আইনের নির্ধারিত দণ্ড আরোপ করিতে পারিবেন।’ উল্লেখ্য, বিদ্যমান আইনে ‘অথবা চাক্ষুস ঘটনা, উপস্থিত সাক্ষীদের বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিচারের’ বিষয়টি উল্লেখ নেই। সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান আইনে এ অংশটুকু সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়। অপরাধী পালিয়ে গেলে তার বিষয়ে মোবাইল কোর্ট আইনের ৬ ধারায় নতুন উপধারা সংযোজনের কথা বলা হয়েছে। সংযোজনীতে বলা হয়েছে- ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করিবার সময় যদি এইরূপ কোন অপরাধ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে সংঘটিত বা উদ্ঘাটিত হয় বা প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায় কিন্তু অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তাহা হইলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ এজাহার হিসেবে গণ্য করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করিতে পরিবেন।’ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে নতুনভাবে সংযোজন করা ৭(৫) ধারায় বলা হয়েছে- ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক অভিযোগ অস্বীকার করিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য প্রদান করিলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট চাক্ষুস ঘটনা, উপস্থিত সাক্ষীদের বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিচারে তাহার বিবেচনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করিয়া যথোপযুক্ত দণ্ড আরোপ করিয়া লিখিত আদেশ প্রদান করিবেন।’ কোর্ট পরিচালনাকালে উপস্থিত যে কোন সংস্থার বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে উপধারা-৬ এ। এতে বলা হয়েছে ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট পরিচালনাকালে উপস্থিত বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে পারবেন।’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো ছবি, অডিও-ভিডিও ক্লিপকে সাক্ষ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিধান রেখে বিদ্যমান আইনের ৭ ধারায় নতুন আরও একটি উপধারা সংযোজন করা হয়েছে। উপধারায় বলা হয়েছে- ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও আপিল আদালত কার্যক্রমে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করা যাইবে। মোবাইল কোর্টে কোন ছবি, অডিও অথবা ভিডিও ক্লিপ সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, প্রসিকিউটিং এজেন্সি, অভিযুক্ত ব্যক্তি, কোন সাক্ষী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তির স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক স্বাক্ষর এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপসহ বায়োমেট্রিক্স ব্যবহার করা যাইবে।’
ডব্লিউএসআইএস পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর: জাতীয় তথ্য বাতায়নের একসেস টু ইনফরমেশন অ্যান্ড নলেজ ক্যাটাগরিতে জয় করা ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) পুরস্কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত ২৬শে মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের পরিচালক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কার দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টালে (জাতীয় তথ্য বাতায়ন) ২৫ হাজার অফিস যুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের আওতায় ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সরকারি ওয়েব পোর্টাল উল্লেখ করে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, বিভিন্ন দেশের ৪৬টি উদ্ভাবনী প্রকল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তথ্য বাতায়ন পুরস্কার জিতেছে বাংলাদেশ। গত বছর ‘ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার’ প্রকল্পের জন্য এটুআই কর্মসূচি ডব্লিউএসআইএস পুরস্কার জিতেছিল। মন্ত্রিসভা এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ভারতের সঙ্গে সিরিজ জয়ে সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে সিরিজ জয়ে মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম, ম্যানেজার, কোচসহ সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এছাড়া, সভায় বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন ২০১৫-এর খসড়া ও পাট আইন ২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
মোবাইল কোর্ট আইন সংশোধনীতে যা থাকছে: বিদ্যমান মোবাইল কোর্ট আইনের ১২(১) ধারায় সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট- পুলিশ বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট সরকারি বা বেসরকারি কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা চাহিলে পুলিশ বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কাজে আবশ্যিকভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য নিয়োগ নিশ্চিত করিবে এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি বা বেসরকারি কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান অনুরূপ চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে’। আইনের ৬(১) সংশোধন করে বলা হয়- ‘ধারা ৫ এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ধারা ১১-এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা করিবার সময় তফসিলে বর্ণিত আইনের অধীন কোন অপরাধ, যাহা কেবল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য, তাহার সম্মুখে সংঘটিত বা উদ্ঘাটিত হইয়া থাকিলে তিনি উক্ত অপরাধ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলেই আমলে গ্রহণ করিয়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে, স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে, অথবা চাক্ষুস ঘটনা, উপস্থিত সাক্ষীদের বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিচারে, দোষী সাব্যস্ত করিয়া, এই আইনের নির্ধারিত দণ্ড আরোপ করিতে পারিবেন।’ উল্লেখ্য, বিদ্যমান আইনে ‘অথবা চাক্ষুস ঘটনা, উপস্থিত সাক্ষীদের বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিচারের’ বিষয়টি উল্লেখ নেই। সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান আইনে এ অংশটুকু সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়। অপরাধী পালিয়ে গেলে তার বিষয়ে মোবাইল কোর্ট আইনের ৬ ধারায় নতুন উপধারা সংযোজনের কথা বলা হয়েছে। সংযোজনীতে বলা হয়েছে- ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করিবার সময় যদি এইরূপ কোন অপরাধ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে সংঘটিত বা উদ্ঘাটিত হয় বা প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায় কিন্তু অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তাহা হইলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ এজাহার হিসেবে গণ্য করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করিতে পরিবেন।’ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে নতুনভাবে সংযোজন করা ৭(৫) ধারায় বলা হয়েছে- ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক অভিযোগ অস্বীকার করিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য প্রদান করিলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট চাক্ষুস ঘটনা, উপস্থিত সাক্ষীদের বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিচারে তাহার বিবেচনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করিয়া যথোপযুক্ত দণ্ড আরোপ করিয়া লিখিত আদেশ প্রদান করিবেন।’ কোর্ট পরিচালনাকালে উপস্থিত যে কোন সংস্থার বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে উপধারা-৬ এ। এতে বলা হয়েছে ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট পরিচালনাকালে উপস্থিত বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে পারবেন।’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো ছবি, অডিও-ভিডিও ক্লিপকে সাক্ষ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিধান রেখে বিদ্যমান আইনের ৭ ধারায় নতুন আরও একটি উপধারা সংযোজন করা হয়েছে। উপধারায় বলা হয়েছে- ‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও আপিল আদালত কার্যক্রমে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করা যাইবে। মোবাইল কোর্টে কোন ছবি, অডিও অথবা ভিডিও ক্লিপ সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, প্রসিকিউটিং এজেন্সি, অভিযুক্ত ব্যক্তি, কোন সাক্ষী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তির স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক স্বাক্ষর এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপসহ বায়োমেট্রিক্স ব্যবহার করা যাইবে।’
ডব্লিউএসআইএস পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর: জাতীয় তথ্য বাতায়নের একসেস টু ইনফরমেশন অ্যান্ড নলেজ ক্যাটাগরিতে জয় করা ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) পুরস্কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত ২৬শে মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের পরিচালক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ পুরস্কার দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টালে (জাতীয় তথ্য বাতায়ন) ২৫ হাজার অফিস যুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের আওতায় ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সরকারি ওয়েব পোর্টাল উল্লেখ করে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, বিভিন্ন দেশের ৪৬টি উদ্ভাবনী প্রকল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তথ্য বাতায়ন পুরস্কার জিতেছে বাংলাদেশ। গত বছর ‘ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার’ প্রকল্পের জন্য এটুআই কর্মসূচি ডব্লিউএসআইএস পুরস্কার জিতেছিল। মন্ত্রিসভা এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ভারতের সঙ্গে সিরিজ জয়ে সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে সিরিজ জয়ে মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম, ম্যানেজার, কোচসহ সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এছাড়া, সভায় বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন ২০১৫-এর খসড়া ও পাট আইন ২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
No comments