সুবিধাবঞ্চিত বাংলাদেশী শিশুদের পাশে একজন ইভা কেরনোভা by হাসনাইন মেহেদী
বাংলাদেশের
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করার স্বপ্ন লালন করেন স্লোভাকিয়ান এক নারী। নাম ইভা কেরনোভা। তার সে স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তবে
রূপ নিতে চলেছে। ঢাকায় এক সফরে এসে বিভিন্ন বস্তিতে শিশুদের পরিস্থিতি দেখে
বিস্মিত হয়েছিলেন ইভা। নিজের ভেতরে তীব্র এক তাড়না অনুভব করেছিলেন। আর সেই
তাড়না থেকেই গোড়াপত্তন করেন ‘দ্য চয়েস চু চেঞ্জ’ নামের একটি দাতব্য
প্রতিষ্ঠানের। ২০১০ সালে ২৫ জন শিশু নিয়ে শুরুটা করেছিলেন জরাজীর্ণ এক
ভবনে। আর তাদের জন্য শিক্ষক ছিলেন মাত্র একজন। এখন সেটা পুরোদস্তুর এক
স্কুলে পরিণত হয়েছে। এখানে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে ১৫০ শিশু। ফুলটাইম
কর্মকর্তা আছেন মোট ১০ জন। ইভা কেরনোভা শিক্ষার্থী শিশুদের সংখ্যা ৫০০-তে
নিয়ে যেতে চান। দাতব্য এ প্রতিষ্ঠানটির সহায়তা শুধু শিক্ষা প্রদানেই
সীমাবদ্ধ নয়। এবারের রমজানে ইভা নিশ্চিত করেছেন- স্থানীয় সম্প্রদায়ের তিন
শতাধিক মানুষ যেন তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইফতারের খাবার পায়।
স্লোভাকিয়ার এ ব্যক্তিটি কিভাবে সুবিধাবঞ্চিত বাংলাদেশী শিশুদের পাশে এসে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত হলেন স্বভাবতই সেটা জানার আগ্রহ জন্মায়। শুরুটা কাকতালীয় বলা যায়; তবে বিধাতার ইশারা বললেও বোধ হয় ভুল হবে না। ইভা থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। আগে এতিহাদ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্র হিসেবে কাজ করতেন। বাংলাদেশে প্রথম সফরটা ইভার ইচ্ছাকৃত ছিল না। রীতিমতো বাধ্য হয়েছিলেন বাংলাদেশে আসতে। ২০১০ সালের কথা। যাওয়ার কথা ছিল ইউরোপে। আইসল্যান্ডে সে বছর এইজাফজাল্লাজোকুল আগ্নেয়গিরি থেকে অতিমাত্রায় ভস্ম উদগিরণের কারণে অনেক ফ্লাইট বাতিল হয়। এ সময় ইভার ফ্লাইট অবতরণ করে ঢাকায়। আর এভাবেই হয়েছিল তার প্রথম ঢাকা সফর। ইভা বলেন, ঢাকার কাছাকাছি একটি স্থানে গিয়েছিলাম। সেখান ২ হাজারেরও বেশি বস্তি ছিল। প্রথম সে স্কুলটিতে আমি গিয়েছিলাম সেটা ছিল লালমাটিতে। জায়গাটা ছিল অত্যন্ত সাধারণ। ছোট্ট একটা ঘর। আর তার মেঝেতে মাদুর বিছানো। শিক্ষার্থীদের কোন ইউনিফর্ম ছিল না। বস্তি এলাকায় মানুষকে যে পরিস্থিতিতে বাস করতে দেখেছি তা নরক সমতুল্য।
ইভা সহায়তা শুরু করেছিলেন ৫০০ দিরহাম অনুদান দিয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়েছেন তিনি। প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুলটি পরিচালনা করতে বছরে ব্যয় হতো ১ হাজার ডলারের মতো। এ অর্থ থেকে একজন শিক্ষকের মজুরি দেয়া হতো যিনি ২৫ জন শিশুকে মৌলিক শিক্ষা দান করতেন। এরপর ধীরে ধীরে প্রাথমিক শিক্ষা, ইউনিফর্ম, স্কুল ব্যাগ, বই, স্টেশনারি, মৌলিক চিকিৎসা সেবা, প্রাত্যহিক সকালের নাস্তা ও মাঝে মাঝে খাবার খরচ বাবদ মাসে খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ডলারে। এ অর্থ প্রদানে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ডিএমএস গ্লোবালের সিইও মোহাম্মদ লোচ। তিনি ২০১৩ সালে ইভার উদ্যোগে সামিল হন। তিনি জানান, আমাদের দুজনের পরিচিত এক বন্ধু আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন। বাংলাদেশে ইভার পরিচিত এক ব্যক্তি ছিলেন যার ওপর আস্থা রাখতে পারতেন তিনি। আর আমার প্রতিষ্ঠান ওই স্কুলটির কার্যক্রম প্রচারণায় সহায়তা করেছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এতে সম্পৃক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেছে। মোহাম্মদ লোচ একজন ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেছেন আবুধাবিতে। এখন পর্যন্ত তিনি স্কুল ভবনটিতে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য এডিআইপিইসি-কে অনুপ্রাণিত করেছেন। আর ‘ক্রোকস’ বস্তিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোর জন্য ৩০০ জোড়া জুতা অনুদান দিয়েছে। এ প্রকল্পে আরও যোগ দিয়েছে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান এতিহাদ। প্রতি দুই মাস অন্তর প্রতিষ্ঠানটি ইভাকে স্কুলটিতে সফর করার জন্য বিনামূল্যে টিকিট দিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি তাদের অতিথিদের এয়ার মাইলস স্কিম থেকে স্কুলের বাসের জন্য অনুদান দিয়েছে। বাসটি বস্তি থেকে শিশুদের স্কুলে আনা নেয়া করে। মি. লোচ বলেন, স্কুলটি শিশুদের শিশুশ্রম থেকে দূরে রাখছে। আর আমরা সব থেকে মেধাবী শিশুকে এক দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করতে চাই।
আবুধাবির ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল শিশুদের জন্য ইউনিফর্ম কিনতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। আবুধাবির এ স্কুলটির পরিচালক এলিজাবেথ রেয়্যার বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের থেকে কম সৌভাগ্যবান শিশুদের সহায়তা দেয়ার মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা অর্জন করেছে। এটা অসাধারণ একটা উদ্যোগ। আর এ উদ্যোগে সহায়তা করতে পেরে আমাদের স্কুল গর্বিত। এ কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে আবুধাবির শিশুদের সঙ্গে বাংলাদেশের শিশুদের একটি যোগসূত্র স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। এটা দারুণ শিক্ষনীয় একটা উপায় যার মাধ্যমে এখানের শিশুরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাদের জীবনধারা নিয়ে একটা উপলব্ধি অর্জন করতে পারছে। এটা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করছে যে তারা কতটা সৌভাগ্যবান।’
তবে সৌভাগ্যবান কিন্তু বাংলাদেশের ওই শিশুরাও যাদের পাশে মমতামাখা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন একজন ইভা কেরনোভা।
[তথ্যসূত্র: সংযুক্ত আরবে আমিরাতের দৈনিক দ্য ন্যাশনাল]
স্লোভাকিয়ার এ ব্যক্তিটি কিভাবে সুবিধাবঞ্চিত বাংলাদেশী শিশুদের পাশে এসে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত হলেন স্বভাবতই সেটা জানার আগ্রহ জন্মায়। শুরুটা কাকতালীয় বলা যায়; তবে বিধাতার ইশারা বললেও বোধ হয় ভুল হবে না। ইভা থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। আগে এতিহাদ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্র হিসেবে কাজ করতেন। বাংলাদেশে প্রথম সফরটা ইভার ইচ্ছাকৃত ছিল না। রীতিমতো বাধ্য হয়েছিলেন বাংলাদেশে আসতে। ২০১০ সালের কথা। যাওয়ার কথা ছিল ইউরোপে। আইসল্যান্ডে সে বছর এইজাফজাল্লাজোকুল আগ্নেয়গিরি থেকে অতিমাত্রায় ভস্ম উদগিরণের কারণে অনেক ফ্লাইট বাতিল হয়। এ সময় ইভার ফ্লাইট অবতরণ করে ঢাকায়। আর এভাবেই হয়েছিল তার প্রথম ঢাকা সফর। ইভা বলেন, ঢাকার কাছাকাছি একটি স্থানে গিয়েছিলাম। সেখান ২ হাজারেরও বেশি বস্তি ছিল। প্রথম সে স্কুলটিতে আমি গিয়েছিলাম সেটা ছিল লালমাটিতে। জায়গাটা ছিল অত্যন্ত সাধারণ। ছোট্ট একটা ঘর। আর তার মেঝেতে মাদুর বিছানো। শিক্ষার্থীদের কোন ইউনিফর্ম ছিল না। বস্তি এলাকায় মানুষকে যে পরিস্থিতিতে বাস করতে দেখেছি তা নরক সমতুল্য।
ইভা সহায়তা শুরু করেছিলেন ৫০০ দিরহাম অনুদান দিয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়েছেন তিনি। প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুলটি পরিচালনা করতে বছরে ব্যয় হতো ১ হাজার ডলারের মতো। এ অর্থ থেকে একজন শিক্ষকের মজুরি দেয়া হতো যিনি ২৫ জন শিশুকে মৌলিক শিক্ষা দান করতেন। এরপর ধীরে ধীরে প্রাথমিক শিক্ষা, ইউনিফর্ম, স্কুল ব্যাগ, বই, স্টেশনারি, মৌলিক চিকিৎসা সেবা, প্রাত্যহিক সকালের নাস্তা ও মাঝে মাঝে খাবার খরচ বাবদ মাসে খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ডলারে। এ অর্থ প্রদানে সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ডিএমএস গ্লোবালের সিইও মোহাম্মদ লোচ। তিনি ২০১৩ সালে ইভার উদ্যোগে সামিল হন। তিনি জানান, আমাদের দুজনের পরিচিত এক বন্ধু আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন। বাংলাদেশে ইভার পরিচিত এক ব্যক্তি ছিলেন যার ওপর আস্থা রাখতে পারতেন তিনি। আর আমার প্রতিষ্ঠান ওই স্কুলটির কার্যক্রম প্রচারণায় সহায়তা করেছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এতে সম্পৃক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেছে। মোহাম্মদ লোচ একজন ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেছেন আবুধাবিতে। এখন পর্যন্ত তিনি স্কুল ভবনটিতে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য এডিআইপিইসি-কে অনুপ্রাণিত করেছেন। আর ‘ক্রোকস’ বস্তিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোর জন্য ৩০০ জোড়া জুতা অনুদান দিয়েছে। এ প্রকল্পে আরও যোগ দিয়েছে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান এতিহাদ। প্রতি দুই মাস অন্তর প্রতিষ্ঠানটি ইভাকে স্কুলটিতে সফর করার জন্য বিনামূল্যে টিকিট দিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি তাদের অতিথিদের এয়ার মাইলস স্কিম থেকে স্কুলের বাসের জন্য অনুদান দিয়েছে। বাসটি বস্তি থেকে শিশুদের স্কুলে আনা নেয়া করে। মি. লোচ বলেন, স্কুলটি শিশুদের শিশুশ্রম থেকে দূরে রাখছে। আর আমরা সব থেকে মেধাবী শিশুকে এক দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করতে চাই।
আবুধাবির ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল শিশুদের জন্য ইউনিফর্ম কিনতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। আবুধাবির এ স্কুলটির পরিচালক এলিজাবেথ রেয়্যার বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের থেকে কম সৌভাগ্যবান শিশুদের সহায়তা দেয়ার মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা অর্জন করেছে। এটা অসাধারণ একটা উদ্যোগ। আর এ উদ্যোগে সহায়তা করতে পেরে আমাদের স্কুল গর্বিত। এ কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে আবুধাবির শিশুদের সঙ্গে বাংলাদেশের শিশুদের একটি যোগসূত্র স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। এটা দারুণ শিক্ষনীয় একটা উপায় যার মাধ্যমে এখানের শিশুরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাদের জীবনধারা নিয়ে একটা উপলব্ধি অর্জন করতে পারছে। এটা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করছে যে তারা কতটা সৌভাগ্যবান।’
তবে সৌভাগ্যবান কিন্তু বাংলাদেশের ওই শিশুরাও যাদের পাশে মমতামাখা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন একজন ইভা কেরনোভা।
[তথ্যসূত্র: সংযুক্ত আরবে আমিরাতের দৈনিক দ্য ন্যাশনাল]
No comments