এখনকার মেয়েদের ভনিতা নেই; ওরা আত্মবিশ্বাসী by খুজিস্তা-নূর-ই-নাহরিন
সময়টা
৭০ এর দশকের মধ্যভাগে। আমি তখন খুব ছোট। আমাদের পাড়ায় একটি বাড়ীতে নতুন বৌ
এলো। বিয়ের পরদিন আমার মায়ের সাথে আমিও গেলাম বৌ দেখতে। মনে ভীষণ
উত্তেজনা, নতুন বৌ দেখবো বলে। বাড়ী ভর্তি লোক জন, সবাই বৌ দেখতে এসেছে।
কিন্তু এ কি নতুন বৌ চোখ খুলছে না কিছুতেই। মাথায় ঘোমটা পড়া বৌ চোখ বন্ধ
করে আছে। মনে মনে ভাবলাম আমি যখন বৌ হবো এমন চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে হবে।
এবার আরেকটি বিয়েতে গেলাম। আমরা কন্যা পক্ষ। যদিও প্রেমের বিয়ে তবুও বেচারা মেয়েটি বরের সাথে যাওয়ার সময় আত্মীয়- স্বজনকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছিল বারে বারে। বুঝলাম শুধু চোখ বন্ধ রাখলে হবে না, এমন কাঁদতে কাঁদতে ফিট হয়ে যেতে হবে। তখন সবাই বলবে মেয়েটি ভীষণ নরম, কোমল প্রাণ একটি মেয়ে।
যতবার বিয়েতে যাই ততোবারই নিজেকে কান্নার জন্য তৈরি করি। বিয়ের কণেরা কতোভাবে কাঁদে, কেমন সলজ্জ ভঙ্গীতে বসে থাকে, ভীষণ সাধনায় অপরিসীম যত্ন নিয়ে একটু একটু করে রপ্ত করি, নিজেকে বিশেষ দিনের জন্য তৈরি করি। ৯০ এর দশকে সত্যি সত্যিই যখন আমার বিয়ের সময় হলো আমার পরিবারের সবাই এমন কান্না কাটি শুরু করে দিলো, যেন মনে হল আমার বিয়ে নয়, চল্লিশা হচ্ছে। আমি এতোদিনের প্রস্তুতি জলাঞ্জলি দিয়ে কাঁদতে ভুলে গেলাম। আমার বিয়েটা আমার পরিবারের অমতে, কিন্তু আমার পছন্দে হয়েছিল। তাই এই কান্না। উল্টো আমি সবাইকে সান্ত্বনা আর অভয়ের বাণী শুনাতে লাগলাম। পরিবারের বিপক্ষে যেয়ে বিয়ে করার অপরাধবোধের তাৎক্ষনিক পতিক্রিয়ায় খানিকটা কিংকর্তব্যবিমুরও হয়ে পরেছিলাম বুঝিবা। আর নিজের পছন্দের বিয়েতে কাঁদতে হবে কেন? শুধু মাত্র লৌকিকতা, লোক দেখানো? নাকি নিজেকে নরম, কোমল, অবলা, অসহায় হিসেবে তুলে ধরাটাই নিয়ম? কিছুতেই আমার কান্না এলো না ভিতর থেকে। অল্প কিছুদিনের ভিতর আরও কয়েকটি বিয়ে হলো। ওদেরটা অর্ধেক প্রেমের বিয়ে। অর্থাৎ বিয়ে ঠিক হওয়ার পর একসাথে ঘুরেছে ফিরেছে কথা বলেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ওদের তিন জনের বৌ বিয়েতে ভীষণ কান্না কাটি করলো। প্রায় ফিট হয় হয় অবস্থা। আমি ওদের কান্নায় চিন্তিত হয়ে পড়লাম, আর কান্নার কারণ খোঁজার চেষ্টা করতে লাগলাম।
এবার অনেকেই আমার সাথে অন্য নতুন বৌদের তুলনা করতে লাগলো। ওরা এতো ভালো, এতো কোমল, এতো কেঁদেছে; আর আমি কাঁদিনি। আমি বললাম, "ওদের সাথে আমিও সমব্যাথী, আমিও ওদের কষ্টে কষ্টিত।" কারণ একজনের বরের মাথায় চুল নেই, একজনের বর ছাতার মত কুচকুচে কালো, অপরজন লম্বায় খাটো। ওরা কাঁদবে নাতো কে কাঁদবে। আমারতো এসব সমস্যা নেই, তবে কাঁদতে হবে কেন?
কয়দিন আগে বসুন্ধরা সিটি সেন্টারে এক বিয়েতে গেছি, আমার মেয়ে নাছোড় বান্দা কাছে যেয়ে বৌ দেখবে। আমি বললাম তুমি একা যাও। ফিরে এসে বললো, "জানো বৌটা বসে বসে ফেসবুক করছে।" আমি আঁতকে উঠলাম, আমার মেয়ে নিজের বিয়েতে ফেসবুক করার কথা ভাবছে নাতো! সময় এগিয়ে গেছে বহুদূর। যাই হোক এখনকার মেয়েদের ভনিতা নেই কিংবা হতে পারে ওরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।
এবার আরেকটি বিয়েতে গেলাম। আমরা কন্যা পক্ষ। যদিও প্রেমের বিয়ে তবুও বেচারা মেয়েটি বরের সাথে যাওয়ার সময় আত্মীয়- স্বজনকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছিল বারে বারে। বুঝলাম শুধু চোখ বন্ধ রাখলে হবে না, এমন কাঁদতে কাঁদতে ফিট হয়ে যেতে হবে। তখন সবাই বলবে মেয়েটি ভীষণ নরম, কোমল প্রাণ একটি মেয়ে।
যতবার বিয়েতে যাই ততোবারই নিজেকে কান্নার জন্য তৈরি করি। বিয়ের কণেরা কতোভাবে কাঁদে, কেমন সলজ্জ ভঙ্গীতে বসে থাকে, ভীষণ সাধনায় অপরিসীম যত্ন নিয়ে একটু একটু করে রপ্ত করি, নিজেকে বিশেষ দিনের জন্য তৈরি করি। ৯০ এর দশকে সত্যি সত্যিই যখন আমার বিয়ের সময় হলো আমার পরিবারের সবাই এমন কান্না কাটি শুরু করে দিলো, যেন মনে হল আমার বিয়ে নয়, চল্লিশা হচ্ছে। আমি এতোদিনের প্রস্তুতি জলাঞ্জলি দিয়ে কাঁদতে ভুলে গেলাম। আমার বিয়েটা আমার পরিবারের অমতে, কিন্তু আমার পছন্দে হয়েছিল। তাই এই কান্না। উল্টো আমি সবাইকে সান্ত্বনা আর অভয়ের বাণী শুনাতে লাগলাম। পরিবারের বিপক্ষে যেয়ে বিয়ে করার অপরাধবোধের তাৎক্ষনিক পতিক্রিয়ায় খানিকটা কিংকর্তব্যবিমুরও হয়ে পরেছিলাম বুঝিবা। আর নিজের পছন্দের বিয়েতে কাঁদতে হবে কেন? শুধু মাত্র লৌকিকতা, লোক দেখানো? নাকি নিজেকে নরম, কোমল, অবলা, অসহায় হিসেবে তুলে ধরাটাই নিয়ম? কিছুতেই আমার কান্না এলো না ভিতর থেকে। অল্প কিছুদিনের ভিতর আরও কয়েকটি বিয়ে হলো। ওদেরটা অর্ধেক প্রেমের বিয়ে। অর্থাৎ বিয়ে ঠিক হওয়ার পর একসাথে ঘুরেছে ফিরেছে কথা বলেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ওদের তিন জনের বৌ বিয়েতে ভীষণ কান্না কাটি করলো। প্রায় ফিট হয় হয় অবস্থা। আমি ওদের কান্নায় চিন্তিত হয়ে পড়লাম, আর কান্নার কারণ খোঁজার চেষ্টা করতে লাগলাম।
এবার অনেকেই আমার সাথে অন্য নতুন বৌদের তুলনা করতে লাগলো। ওরা এতো ভালো, এতো কোমল, এতো কেঁদেছে; আর আমি কাঁদিনি। আমি বললাম, "ওদের সাথে আমিও সমব্যাথী, আমিও ওদের কষ্টে কষ্টিত।" কারণ একজনের বরের মাথায় চুল নেই, একজনের বর ছাতার মত কুচকুচে কালো, অপরজন লম্বায় খাটো। ওরা কাঁদবে নাতো কে কাঁদবে। আমারতো এসব সমস্যা নেই, তবে কাঁদতে হবে কেন?
কয়দিন আগে বসুন্ধরা সিটি সেন্টারে এক বিয়েতে গেছি, আমার মেয়ে নাছোড় বান্দা কাছে যেয়ে বৌ দেখবে। আমি বললাম তুমি একা যাও। ফিরে এসে বললো, "জানো বৌটা বসে বসে ফেসবুক করছে।" আমি আঁতকে উঠলাম, আমার মেয়ে নিজের বিয়েতে ফেসবুক করার কথা ভাবছে নাতো! সময় এগিয়ে গেছে বহুদূর। যাই হোক এখনকার মেয়েদের ভনিতা নেই কিংবা হতে পারে ওরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।
No comments